নাহিদ দীপা:
সামগ্রিকভাবে দেশের প্রজনন বয়স-সীমায় থাকা নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করতে কীভাবে সরকার, এনজিও আর প্রাইভেট সেক্টর একসাথে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে একটা গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম আজ। স্কয়ার, বসুন্ধরা আর এসিআই এর কর্তারা বলছিলেন, স্যানিটারি প্যাডের দাম তারা কমাতে পারে যদি স্যানিটারি প্যাডকে বাজেটে বিলাসবহুল পণ্য হিসাবে গণ্য না করা হয় আর ১২৭% ট্যাক্স যদি স্যানিটারি প্যাডের কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত না হয়!
পাশের দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে তারা বলছিলেন, ভারতে দুই টাকা দামে একটা প্যাড আর আট-দশ টাকা দামে এক প্যাকেট প্যাড সহজেই তারা উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারছে। তাদের কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো, কীভাবে মানুষের হাতের নাগালে স্যানিটারি প্যাড নিয়ে যাওয়া যায়, তখন তারা বললেন, দাম কমলে মানুষ আগ্রহী হবে।
আমি যখন কথা বলার সুযোগ পেলাম, তখন তাদের জানালাম, ভারতের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২০১৫-১৬ অনুযায়ী তাদের ৩৩.৬ কোটি ঋতুমতি নারীর কেবল ৩৬ শতাংশের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে তারা। আর রুরাল ইন্ডিয়ার কেবল ২-৩ শতাংশ নারী স্যানিটারি প্যাড ইউজ করতে পারে। তাহলে দাম কমানোই কি আসল বাধা হতে পারে সেক্ষেত্রে? কেন আগ্রহী হয় না স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারে, সেখানে আর্থিক অবস্থা অবশ্যই মূল। তবে সমস্যা আরও আছে। সেগুলোও খুঁজে বের করতে হবে।
এই আলোচনার টেবিল ছেড়ে অফিসে ঢুকে খবরের কাগজে অভ্যাসবশত: চোখ বুলাতে গিয়ে চোখ পড়ে গেল এই খবরে..”ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য গুজরাটের একটি কলেজের আবাসিক ছাত্রীদের মাসিক হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ছাত্রীদের পরিধেয় পায়জামা ও অন্তর্বাস পরীক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নারী শিক্ষকেরা পরীক্ষা করে দেখেন কার মাসিক হয়েছে। হোস্টেলের ৬৮ ছাত্রীকে ক্লাস থেকে টেনে বাথরুমে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।”
সেই খবরে আরো আছে, “কলেজের নিজস্ব বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে মাসিকের সময় মেয়েরা মন্দির ও রান্নাঘরে ঢুকতে পারবেন না এবং অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে স্পর্শও করতে পারবেন না। খাবারের সময়েও এই মেয়েদের অন্যদের থেকে দূরে বসে খেতে হবে। তাদের নিজের থালাবাসন নিজেকেই পরিষ্কার করতে হবে। আর ক্লাসে তাদের বসতে হবে একদম পেছনের আসনে।
একজন শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানান, মাসিক চলছে—এমন মেয়েদের শনাক্ত করার জন্য একটি নিবন্ধন খাতা রেখেছে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। যাদের মাসিক চলছে, তাদের ওই খাতায় নাম লিখতে হয়। তবে গত দুই মাস ওই খাতায় কোনো নাম নিবন্ধন হয়নি।”
কলেজটি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত তার উপাচার্যও ছাত্রীদের দোষারোপ করেছেন, তারা কলেজের নিয়ম মানেননি।
আমার কথা হলো, আপনি আস্তিক হোন আর নাস্তিক, হোক আপনার যে ধর্মই, আপনি দুনিয়াতে এসেছেন একটাই প্রক্রিয়ায়। আর সেই প্রক্রিয়ার সাথে একান্ত সংশ্লিষ্ট হলো এই মাসিক। তো এই বিষয়টাকে এতো রাখঢাক করে, আড়ালে আবডালে রেখে, এত শৃংখলায় বেঁধে আদৌ কি কোনো লাভ আছে?
আর ভারতের উদাহরণ টেনে যে খুব একটা লাভ নেই, তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে। তাই দৃষ্টিসীমা আরো প্রশস্ত করার সময় এসেছে।