আপনি কি বাটপার?

শান্তা মারিয়া:

আপনি কি বাটপার? আপনি কি ধান্দাবাজ ও তেলবাজ? আপনি কি কপি পেস্ট করতে দক্ষ? আপনি কি কিছু না জেনেও অনর্গল চাপা পিটাতে পারেন? আপনি কি মালিকপক্ষকে ‘আব্বা’ ডাকতে ডাকতে তাদের পদতল নিজের জিহ্বা দিয়ে চেটে পরিষ্কার করতে খুব আনন্দ বোধ করেন?
আপনি কি এমন একজন নারী যিনি বগলে মাদুর নিয়ে ঘোরেন, যাতে চট করে প্রভাবশালী কারও সঙ্গে শুয়ে পরা যায়? আপনি কি আপনার অধীনস্ত নারীদের যৌন হয়রানি করে অপার প্রশান্তি লাভ করেন? আপনি কি রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পশ্চাৎদেশ শুঁকে সেখানকার সুরভির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে পারেন?
তাহলে আর দেরি না করে অবিলম্বে সাংবাদিকতা পেশায় চলে আসুন। এ পেশায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। আপনি যে কোনো পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত কর্মদক্ষ সাংবাদিকদের জীবন ধারণ হারাম করে দেওয়ার জন্য একাই যথেষ্ট।

বিপরীত ক্রমে আপনি যদি সৎ, বস্তুনিষ্ঠ, কাজপাগল মানুষ হয়ে থাকেন, যদি আপনি হোন প্রতিবাদী ও স্বাধীনচেতা, যদি লুচ্চাদের সঙ্গে ঢলানো আপনার অসহ্য বোধ হয়, যদি আপনার ঘটে সামান্য হলেও বিদ্যাবুদ্ধি থাকে, আপনি যদি এখনও সাংবাদিকতা পেশায় দাঁত কামড়ে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে বলি, ‘কী হিন্দিচুল ছিঁড়তে এখানে পড়ে আছেন?’ এর চেয়ে যা পুঁজি আছে, তা নিয়ে একটা মুদির দোকান খুলুন। তাতে বরং পাড়ার মাস্তানদের সিগারেট বিনামূল্যে দেওয়ার পরও নুন-ভাত খেয়ে টিকে থাকতে পারবেন।

সাংবাদিকতা পেশা আপনার জন্য নয়। এখানে পদে পদে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে টার্মিনেশন লেটার, এখানে অযোগ্যরা আপনাকে ঠ্যালা গুঁতা মারবে, এখানে আপনি তরতর করে ধান্দাবাজদের এগিয়ে যাওয়া দেখবেন, আর বসে বসে আঙুল চুষবেন। (আমি নিজে যেমন জনকণ্ঠে ১০ বছর কাজ করার পর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও পাইনি, পাঁচ মাসের বকেয়া বেতনও পাইনি। সব মিলিয়ে ১১ লাখ টাকার দাবি নিয়ে আজও মামলা ঝুলে আছে। আপনারও তেমন হবে)।

আপনি মরবেন বেকারত্ব নিয়ে, আপনি মরবেন রোগে শোকে ধুঁকে ধুঁকে। সাংবাদিকদের প্রাপ্য প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট কোনকিছুই আপনি পাবেন না। সেসব গুঁড়ে অনেক আগেই বালি পড়েছে। ওসব আপনার জন্য নয়। ওসব আপনার নাকের ডগা দিয়ে বহু আগেই বাগিয়ে নিয়ে গেছে সাংবাদিক নামধারী ধান্ধাবাজেরা।

ও, আপনার ভিতরে এখনও আদর্শ নামক মারাত্মক ভাইরাসটি টিকে আছে? আরে ব্রাদার/সিস্টার, আপনি তো করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছেন। আপনাকে বহু আগেই নষ্টদের সমাজে আজীবনের জন্য কোয়ারেনটাইন করা হয়েছে। টের পাননি বুঝি? আপনি কি দেখেননি আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় চাকরি করে, বেতন না পেয়েও অসংখ্য ‘সাংঘাতিক’ কীভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে? আপনি কি দেখেননি নিজে বড় মিডিয়ার পদ বাগিয়ে অন্য সাংবাদিকদের মার খাওয়াকেও কীভাবে হেলাতুচ্ছ করতে হয়? আপনি কি দেখেননি নাইকো টাইপের দেশবিরোধী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রিপোর্ট করে কীভাবে মালদার হতে হয়?

যদি আপনি এখনও না বুঝে থাকেন তাহলে আফসোস আপনার জন্য। আপনি মরুন। দড়ি কলসির দরকার নেই। বুড়িগঙ্গার পচা পানি খেয়ে মরুন। আর দয়া করে সততা, আদর্শ, জ্ঞান, বুদ্ধি, লেখার ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসবেন না, টিকে থাকতেও চাইবেন না। আপনার এসব ‘বদ’ বৈশিষ্ট্য ধান্দাবাজ, বাটপারদের মনে ব্যথা দেয়। অযোগ্যদের মনোকষ্ট হয়। কারও মনে কষ্ট দেওয়া কি ভালো?

এখনও সময় আছে, কবরে যাওয়ার আগেই, চিতায় পোড়ার আগেই সাংবাদিকতা পেশা থেকে সরুন। সাংবাদিকতা পেশায় মাগীবাজ, ঠগীবাজ, ঢলানিবাজ, ধান্দাবাজ, দালালদের পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.