শহীদ জননীর স্মৃতি আজ ফুটপাতে, কী এক বিষণ্ণ সময়ে আমরা!

ড. লুবনা ফেরদৌসী: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ব্যক্তিগত সংগ্রহ, যেগুলো একসময় বাংলা একাডেমিকে দেওয়া হয়েছিল জাতির…

ক্রিকেট শুধু ক্রিকেট নয়, জয়ের অন্তরালে মেয়েদের ৫০ বছরের লড়াই

শতাব্দী দাশ: ‘ICC Women’s World Cup India 2025: ভয় হয়, মেয়েদের ক্রিকেটের বিস্তার যদি এই বিশ্বকাপ…

আমার চোখে আজ চৌকাঠ ডিঙানোর জল

সুপ্রীতি ধর: “এই জয়টা আর পাঁচটা জয়ের মত সাধারণ নয়। কারণ এই জয়ের পথে মেয়েগুলোকে শুধু…

তবুও আশপাশটা বদলাবে … এভাবেই

ছন্দক চ্যাটার্জি: হরিয়ানায় এতো নারী কুস্তিগির কেন? হরিয়ানা এমন একটা প্রদেশ যেখানে কন্যা ভ্রুণ হত্যা, পণ…

জুলাই সনদ, গণভোট ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে নতুন অনিশ্চয়তা — নারী-অধিকার কি নতুন পরীক্ষার মুখে?

তানভীন হোসেন: জুলাই সনদ একসময় বাংলাদেশে অনেকের মনে রাজনৈতিক সংস্কারের নতুন আশা জাগিয়েছিল। সনদে প্রস্তাব ছিল—…

পাঁচ ঘণ্টার মায়া: মায়েদের জন্য ফাঁদ?

সুমিত রায়: মানুষের মন বড় অদ্ভুত এক জায়গা। সরল সমাধান দেখলেই সেদিকে ঝুঁকে পড়ে। বিশেষ করে…

কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন: নীরবতার সংস্কৃতি এবং প্রতিরোধের কথকতা

সুমিত রায়:

অফিসের আট তলার জানালার কাঁচটা আজকাল কেমন যেন ঝাপসা লাগে। হয়তো শীতের সকালের কুয়াশা এখনো কাটেনি, অথবা হয়তো মালিহার চোখ দুটোই ঝাপসা হয়ে আসে। তার ডেস্কটা জানালার পাশেই। এই কোণটা সে নিজেই পছন্দ করে নিয়েছিল। এখান থেকে নিচের ব্যস্ত শহরটাকে দেখতে তার একসময় খুব ভালো লাগতো। চলমান গাড়ির স্রোত, ফুটপাত ধরে ছুটে চলা পিঁপড়ের মতো মানুষ – সবকিছুর মধ্যে একধরনের প্রাণবন্ত ছন্দ খুঁজে পেত সে। মনে হতো, সেও এই বিশাল কর্মযজ্ঞের, এই ছুটে চলার পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এখন এই শহরটাকে তার কাছে একটা বিবর্ণ ক্যানভাস বলে মনে হয়, যেখানে কেউ একজন অদৃশ্য কালি দিয়ে শুধু বিষাদের ছবি এঁকে রেখেছে।

মালিহা নামের এই মেয়েটির গল্পটা আমাদের অনেকেরই চেনা। সে খুব মেধাবী, পরিশ্রমী। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে নিজের যোগ্যতা দিয়ে এই বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। তার চোখে ছিল অনেক স্বপ্ন – বাবা-মাকে একটা ভালো জীবন দেবে, নিজে আর্থিকভাবে স্বলম্বী হবে, কর্মক্ষেত্রে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবে। কিন্তু স্বপ্নেরা আজকাল তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তার বস, ধরা যাক তার নাম জনাব করিম, অফিসের সবার কাছে একজন আদর্শ ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। তার কথার জাদুতে, তার অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয় না এমন মানুষ কমই আছে। জুনিয়রদের কাছে তিনি একজন মেন্টর, সিনিয়রদের কাছে তিনি একজন নির্ভরযোগ্য সহকর্মী। কিন্তু সেই জাদুকরী কথাগুলোই মালিহার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো শোনায়। যখন তিনি খুব কাছে এসে ঝুঁকে কাজের প্রশংসা করেন, তার দামী পারফিউমের গন্ধের সাথে মিশে থাকা নিঃশ্বাসের উষ্ণ বাতাস মালিহার ঘাড়ে লাগে। যখন তিনি “সহকর্মীর মতো” কাঁধে হাত রেখে বলেন, “কোনো সমস্যা হলে আমাকে নির্দ্বিধায় বলবে,” তখন সেই আপাত ‘স্নেহের’ স্পর্শের নিচে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতার দাপটে মালিহার শরীর বরফের মতো জমে যায়।

এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। একবার নয়, দুবার নয়, এটা যেন তার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হয়ে গেছে। একদিন মিটিং শেষে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর জনাব করিম তাকে একা ডেকে বলেছিলেন, “তোমার চোখ দুটো খুব সুন্দর, মালিহা। একেবারে হরিণীর মতো।” মালিহা অপ্রস্তুত হাসিতে ধন্যবাদ বলে দ্রুত বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি দরজার কাছে পথ আটকে দাঁড়ালেন। মৃদু হেসে বললেন, “তোমার মতো স্মার্ট আর সুন্দরী মেয়েরা জীবনে অনেক উন্নতি করে। শুধু জানতে হয়, সঠিক সময়ে সঠিক মানুষকে কীভাবে খুশি রাখতে হয়।” এই ‘উন্নতি’ আর ‘খুশি রাখা’ শব্দ দুটোর মধ্যে যে কী ভয়ানক ইঙ্গিত লুকিয়ে ছিল, তা বুঝতে মালিহার এক মুহূর্তও দেরি হয়নি। সে হাসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই হাসিটা তার নিজের কাছেই কান্না বলে মনে হয়েছিল। সেদিন থেকে তার মনে এক অদৃশ্য ভয় বাসা বেঁধেছে।

এই যে দমবন্ধ করা অস্বস্তি, এই যে না বলতে পারার যন্ত্রণা, এই যে প্রতি মুহূর্তে নিজের সম্মান আর চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় থাকা – এটাই হলো কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন (Sexual Harassment)-এর সেই ধূসর, কুৎসিত রূপ। এটি কেবল চরম কোনো শারীরিক আক্রমণ নয়; এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ, যা একজন মানুষকে ভেতর থেকে একটু একটু করে নিঃশেষ করে দেয়। এর শেকড় আমাদের সমাজের অনেক গভীরে – ক্ষমতার কাঠামোতে, লিঙ্গীয় বৈষম্যে এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের দীর্ঘদিনের নীরবতার সংস্কৃতিতে।

এই লেখাটি সেই নীরবতার দেয়াল ভাঙার একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা এখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট মালিহার গল্প বলবো না, বরং হাজারও মালিহার না বলা কথাগুলোকে বোঝার, শোনার এবং প্রতিকার খোঁজার চেষ্টা করবো। আমরা ব্যবচ্ছেদ করবো – নিপীড়ন আসলে কত প্রকারের হতে পারে? এর সূক্ষ্ম এবং স্থূল রূপগুলো কী কী? এর পেছনে কোন মনস্তত্ত্ব কাজ করে? একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি কীভাবে একে জিইয়ে রাখে বা প্রতিরোধ করতে পারে? আইনের বইতে এর জন্য কী প্রতিকার আছে, আর সেই আইন প্রয়োগের বাস্তবতাই বা কতটুকু? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই অদৃশ্য কারাগার থেকে মুক্তির উপায় কী? এটি কোনো নীরস অ্যাকাডেমিক আলোচনা নয়; এটি আমাদের কর্মক্ষেত্রের সম্মান, নিরাপত্তা এবং মানবিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ের একটি রূপরেখা।

চলুন, এই জটিল কিন্তু অতি জরুরি বিষয়টির প্রতিটি স্তর উন্মোচন করা যাক, যেন আর কোনো প্রতিভাকে অফিসের ঝাপসা কাঁচের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে না হয়।

পুরো লেখাটির লিংক নিচে দেয়া হলো:

https://www.bibortonpoth.com/22311?fbclid=IwY2xjawNsPvlleHRuA2FlbQIxMABicmlkETFMdVNRcGszS2VrT0c2enRlAR58Aqa8hv2ywVlrLV7SxfU4ahiksUr6AX-BfqUsanJ0_VNizQ6fOU3ica4aNA_aem__VXktAuNZcOTXs8MpI3qYg

 

আমাদের যূথবদ্ধ আন্দোলন নেই কেন?

সুপ্রীতি ধর: ঢাকা স্ট্রিমের একজন নারীকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনায় অনলাইন এখন বেশ উত্তপ্ত। পক্ষে-বিপক্ষে মানুষ বিভক্ত হয়ে…

যৌন নিপীড়নের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সুনামি: ভেতরের ঝড়

সুমিত রায়: এটিই সম্ভবত যৌন নিপীড়নের সবচেয়ে মারাত্মক এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব। প্রতিনিয়ত অপমান, ভয়, উদ্বেগ এবং…

এই নীরবতা পুরো সাংবাদিক সমাজেরই নৈতিক আত্মহত্যা!

ড. লুবনা ফেরদৌসী: Sexual harasser আলতাফ শাহনেওয়াজের এক মন্তব্য আজ বাংলাদেশে নারীর কর্মক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির নগ্ন…