মাসকাওয়াথ আহসান:
প্রণয় নিকেতনে উপস্থিত সবার মুখ গম্ভীর। এতো সফলভাবে একটা নারী সম্মেলন হয়ে গেলো। এতে পুরো বিশ্বের কাছে খবর গেলো, নারী অধিকার বাস্তবায়নের মতো অনুকূল পরিবেশ বাংলাদেশে রয়েছে। ফলে নয় মাস ধরে ভারতীয় মিডিয়ায় যে প্রোপাগান্ডা চলছে, হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলেই দেশটা আফঘানিস্তান হয়ে যাবে; সেই প্রচারণা নেতিয়ে পড়লো। অন্যদিকে জয় শংকর আফঘানিস্তানে গিয়ে নেতিয়ে পড়েছে। পুরো বিশ্ব দেখছে ভারত ইজরায়েল আর আফঘানিস্তানের বাহুলগ্ন হয়ে কট্টর ভাবনার এভারেস্টে আরোহন করেছে।
প্রণয় নিকেতনে উপস্থিত হয়ে ললিতাদিদি পতঞ্জলির গো-মুত্রের একটি বোতল উপহার দেয় রতি অগ্নিহোত্রী দাদাকে। চুক চুক করে বলে, পিঠখোলা মেয়েরা মৈত্রী মিছিল করেছে, আর বিকাশে চাঁদা তুলেছে বলে জানালো জয়িতা লীগের মেয়েরা।
অগ্নিহোত্রী দাদা রেগে বলে, ঠিকমতো গান্ধা করে দিতে পারছো কই! আজতক টিভি দেখে শিখতে পারো না! রীতা আউর সীতা নামে ফিলিম বানাও; তাতে দেখাও সতী নারী কেমন পতিব্রতা হয়।
ললিতাদি বলে, সতী নারীর পতি নামে একটা ফিলিম অবশ্য ছিলো; কিন্তু কাজ হলো কই! আমি দেখুন কোজাক ধনঞ্জয়কে নিয়ে সারাটা জীবন পার করে দিলুম।
কফিলের সান্ডার তেল নিয়ে হাজির শরিয়ত ভাই। চোখ ও কান ক্রোধে লাল হয়ে আছে তার।
–কী হয়েছে ভাইয়ু!
–কী হতে আর বাকি আছে! মৈত্রী মিছিলে প্ল্যাকার্ড দেখলাম, আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নেবো হিস্যা!
অগ্নিহোত্রী দাদা চুকচুক করে বলে, ইসলাম শেষ হয়ে গেলো গো! তা তোমরা ভাই কী করলে! এতো ঢিলে দিলে তোমরা তো বিজেপির মতো ক্ষমতায় যেতে পারবে না। সারাজীবন দুটি আসন নিয়ে পড়ে থাকতে হবে।
শিবব্রত দাদা ও নেয়ামত ভাই একসঙ্গে প্রবেশ করে। শিবব্রত ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে বলে, ও দাদা চুইংগাম যা দিয়েছিলেন, তা তো চিবিয়ে চিবিয়ে তেতো হয়ে গেলো!
অগ্নিহোত্রী দাদা বলে, ওরে শিবু রাজাকার-পাকিস্তানপন্থী চুইংগাম চিবিয়ে যেতে হবে। যাতে ২০২৪-এর আওয়ামী কোলাবরেটর আর ভারতপন্থীর আলাপটা সামনে আসতে না পারে।
নেয়ামত আড়ষ্ঠ হয়ে বলে, ও দাদা আমার চুইংগামও তো শেষ।
–কেন শেষ হবে কেন, তুমি গোলাম আজমের বাংলাদেশ ও জাতীয় সংগীত হিন্দুর লেখা চুইংগাম চিবিয়ে যাও; যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দোলা দেয়া যায়। যারাই এই চুইংগাম চিবানোতে বাধা দেবে, তাদের ভারতপন্থী তকমা দিবা। তাহলে ভারতপন্থীর সংখ্যা বাড়বে। রাজাকার বলে গালি দিলে যদি তুমি কে আমি কে রাজাকার শ্লোগান ওঠে, বেশ্যা বলে গালি দিলে যদি, আমরা সবাই বেশ্যা শ্লোগান দেয়, তাহলে ভারতপন্থী বলে গালি দিলে একদিন সমস্বরে শ্লোগান উঠবে, আমরা সবাই ভারতপন্থী। হিউম্যান সাইকি এভাবেই কাজ করে গো ভাই।
-তবু নতুন কোন চুইংগাম দেন না!
–এই নাও, নারী মৈত্রী যাত্রা আওয়ামী পুনর্বাসনের ছল চুইংগামটা নাও। বলবে, এমেরিকা ষড়যন্ত্র করে ট্রান্স জেন্ডার নিয়ে এসেছে এই মিছিলে আর ভারত ষড়যন্ত্র করে আদিবাসীদের দাবী আনিয়েছে। দেও প্যাঁচ বাধাইয়া।
শরিয়ত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
অগ্নিহোত্রী দাদা বলে, ওগো শরিয়ত ভাই, এই নারী সম্মেলনে একটু খোলামেলা পোশাকের যে দু’চারটি মেয়ে ছিলো; ওদের ভিডিওগুলো বার বার শেয়ার দিন। যাতে হিজাবি মেয়েরা ভয় পেয়ে যায়। তারাও এগুলো শেয়ার করে “আমরা বনাম ওরা” করতে পারে। ৫১ শতাংশ নারীকে ডিভাইড না করতে পারলে রুল করবেন কি করে!
শিবব্রত কুঁচ কুঁচ করে বলে, এক দাড়ি টুপিওয়ালা দেখলাম মাদ্রাসায় ধর্ষণ বন্ধের দাবির পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে।
অগ্নিহোত্রী দাদা টেনশনে পড়ে যায়, প্ল্যাকার্ড দেখছি সব এঙ্গেলেই আছে। এরা এতো গুছিয়ে কাজটা করলো কি করে! এমেরিকান ফান্ড পেলো নাকি!
ওদিকে ট্রাম্প দেখলাম সৌদি আরবের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব জমাচ্ছে। বাঁচন আর নাইরে শিবু, বাঁচন আর নাই!
ললিতাদি মুখ ফ্যাকাশে করে বলে, ঈদের শোভাযাত্রা, আনন্দ শোভাযাত্রা ইনক্লুসিভ ছিলো। এবার এই বেসরকারি নারী মৈত্রী যাত্রাও ইনক্লুসিভ। চা বাগানের নারী শ্রমিকও যোগ দিয়েছে এখানে। আর মিডিয়ায় আমাদের কাঁচামালগুলো উলটাপালটা প্রশ্ন করে মনমতো বাইট নিয়ে নারী মৈত্রী পণ্ড করে দেবে; তারও উপায় রাখেনি। মিডিয়া সেন্টারের সুনির্দিষ্ট নারী ছাড়া আর কেউ কথা বলেনি। দু’একটি কাঁচামাল মিডিয়া চেষ্টা করেও বিতর্কিত কামড় দিতে পারেনি। আমরা কি তবে হেরে গেলাম দাদা! আমাদের যে দিন গেছে; তা কি একেবারেই গেছে!
-এতো ভেবো না; তোমরা চুইংগাম চেবাতে থাকো; দেখবে আমাদের রাতের তারারা আছে দিনের আলোর মাঝে।
মাসকাওয়াথ আহসান: রম্যলেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট