শিল্পী জলি:
বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা যেখানে ছেলেমেয়েরা চমৎকার একটি আধ্যাত্মিক/ঐশ্বরিক প্রেম শেখার পরিবেশ পায় ধরাছোঁয়া বাদ দিয়ে আবেগঘন হওয়া, মন বোঝা, জীবনকে শেয়ার করা, প্রতীক্ষা, ত্যাগ, কথা রাখা, রেসপেক্ট, ধৈর্য, বিশ্বাস,… এবং কেয়ারকে পুঁজি করে গড়ে ওঠে এই ভালোবাসার সম্পর্ক। ফলে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে একটি দৃঢ় আত্মিক বন্ধন তৈরি হবার সুযোগ ঘটে। যেটা পরবর্তীতে বিবাহিত জীবনে অনুশীলন করলে জীবন হয় মধুময় এবং একে অন্যের সুবিধা–অসুবিধা বা বিপদ–আপদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষের জীবন সব সময় একই ধারায় বা গতিতে প্রবাহিত হয় না। তাই, রিলেশনের ক্ষেত্রে মজবুত বন্ডিংটা অতি জরুরি।
লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি পুরুষই বিয়ের পরবর্তীতে নারীর কাছ থেকে নিঃশর্ত এই আত্মিক প্রেমটিই আশা করে, নারীরা এই করবে, সেই করবে— নিজে সেটার ধার ধারুক বা না ধারুক। অথচ বিয়ে হতেই অনেক পুরুষ নারী-পুরুষের প্রেমের ক্ষেত্রে এই প্রেমটিকেই প্রথমে ভুলে যায়। যেটুকু সহজে মনে রাখে, সেটা হলো দৈহিক প্রেম, তাও শুধু ডাইরেক্ট অ্যাকশন— সরাসরি পেনিট্রেশন, নো আবেগময় কথাবার্তা, রঙঢঙ, আহ্লাদ, পরিবেশ সৃষ্টি, মনরাঙানো, স্বীকৃতি, চুম্বন, আলিঙ্গন….।
যদি একজন পুরুষের শরীর আজীবন তাগড়া এবং সুস্হও থাকে, তার নারীটি কি শুধু এই দৈহিক প্রেমে সন্তুষ্ট থাকে?
এর মধ্যে সেকি কোনো নির্ভরতা চায় না?
এই দেহসর্বস্ব প্রেমে মন কি তার আসলেই পরিতৃপ্ত হয়?
সে কি এমন একটি জীবনকে ১০০% উপভোগ করতে পারে?
কমিটমেন্ট, রেসপেক্ট, এবং কেয়ার ছাড়া কোন পুরুষের পক্ষে কি কোন নারীকে শারীরিকভাবে সুখী করা সম্ভব?
তার মন এবং শরীর নীরবে কি সেই অনুমতি দেয়?
লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘরের মেয়েরই অভিযোগ তারা আমাদের বাচ্চা উৎপাদনের মেশিন মনে করে, কাজের বুয়া কাম যৌনদাসী ছাড়া আর কিছুই ভাবে না— জীবনটি একেবারে অর্থহীন হয়ে গেল।
কেন ?
তবে নারী কি যৌনতা উপভোগ করে না ? বা মা হতে চায় না ?
দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, আমাদের দেশীয় প্রায় প্রতিটি নারীই এসব চায়। তবে, সাথে আরও কিছু চায় যেমন কেয়ার, মনযোগ, কথা রাখা, স্বাধীনতা, আত্মনির্ভরশীলতা,প্রেম, মুগ্ধতা…. যেগুলোর কথা বিয়ে হতেই অনেক পুরুষ আর মনে রাখে না। অতঃপর সময় অতিবাহিত হয় আর পরস্পরের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে।
মানুষের জীবন সবসময় একই ধারায়, একই গতিতে, এবং একই দক্ষতায় প্রবাহিত হয় না। নানাবিধ চাপ, রোগ, শোক, ব্যর্থতা, উথ্থান–পতন জীবনেরই একটি অংশ, যখন পরস্পরকে ধরে রাখতে স্ট্রং বন্ডিংই একমাত্র ভরসা।
যদি যৌথ জীবনের শুরুতে তার ভিত্ মজবুত করে গড়ে তোলা না হয় তাহলে সেই সম্পর্কটি কি এই ভার বইতে পারে? নাকি আদৌও তা সম্ভব?
অধিকন্তু অমন বিয়ে থেকে যদি একমাত্র যোগাযোগ পদ্ধতি ‘ডাইরেক্ট পেনিট্রেশন, উইদাউট কেয়ার‘ সম্পর্কটি কখনও বাদ পড়ে যায়, তখন কী হবে?
হুবহু এই সম্পর্কটিরই লেনদেন হয় যৌনকর্মীদের সাথে— রাত শেষ, বাত শেষ, চুকে যায় লেনদেন!
আমাদের দেশে বিবাহিত জীবনে তেমনই ফিল করে অনেক মেয়ে। বিয়েতে তারা মনের খোরাক পায় না। ফলে দেহও তাদের কথা বলে না। অতঃপর হাতড়ে বেড়ায় নিজেকে, আর অহরহ জীবনকে মেলাবার চেষ্টা করে কিন্তু কোন কূল খুঁজে পায় না। অতঃপর সম্পর্কে দিন দিন তিক্ততা বাড়ে, একসময় হয়ত পার্টনারকেই নাম্বার ওয়ান শত্রু মনে হয়।
যখন ঢাবিতে পড়ি, আমাদের এক রুমমেট ছিল। মাঝে মাঝেই সে তার কাজিনের বাসায় গিয়ে থাকতো, আর সকালে ফিরে আসতো মন খারাপ নিয়ে। বলতো, আর যাবো না ঐ বাসায়, তারা এমন জঘন্য ঝগড়া করে যে কানে শোনা মুশকিল।
তার কাজিন দুই সন্তানের মা ঝগড়ায় বলতেন, ‘শু*** বাচ্চা, আমি চলে যাবো, তবে আমার বুক আগের মতো করে দে, আমার পেট আগের মতো করে দে, আমার….আগের মতো করে দে।‘
অর্থাৎ বিয়ের আগে যেমন ছিল সব কিছু তেমনই ফেরত চায়, নইলে যাবেও না, আবার ঝগড়াও অব্যাহত রাখবে।
ঐ সময়ে তার এই গল্প শুনে আমাদের হাসতে হাসতে পেটের খিল ধরে যেতো, কিন্তু অনুধাবন করতে পারতাম না তেমন কিছুই। সম্পর্কের খুঁটিনাটি বোঝার মতো তেমন প্রজ্ঞা আমাদের ছিল না তখন। কিন্তু এখন ভাবী হায়, যদি তলিয়ে দেখতাম!
কিছুটা কথাবার্তা এবং জীবন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই বোঝা যায়, আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ে ত্রিশ/বত্রিশের আগে যৌনজীবনে নিজের চাওয়া–পাওয়া নিয়ে তেমন কিছু বোঝে না—স্বামীর ইচ্ছেতেই সে উঠবস করে। আনুমানিক বত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত সে যৌনজীবনকে উপভোগ করতে শেখে— নিজের প্রাপ্তি এবং সন্তুষ্টির হিসেব কষে, নিখাঁদ ভালোবাসা হাতড়ে বেড়ায়। ততদিনে অধিকাংশ স্বামীই হয়তো চল্লিশ অতিক্রম করে ফেলে।
নানাবিধ জরিপ বলে, ছেলেদের চল্লিশ হতেই প্রায় ৪০% ছেলের কম/বেশী ইরেকটাল ডিসফাংশন দেখা দেয়। পঞ্চাশ বছরে ৫০%, আর ডায়াবেটিস থাকলে ৬০ % লোক এই সমস্যায় ভোগেন। দুঃখের সাথে বলতে হয় এই সমস্যা আজকাল ত্রিশ বছরের ছেলেদের মধ্যেও নাকি দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যারা আইটিতে স্ট্রেসফুল জব করে এবং দীর্ঘসময় বসে থাকে।
কথায় আছে, চল্লিশে ছেলেদেরকে ঠিকমতো নজরে রাখতে না পারলে অনেকেরই ভীমরতি ধরে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঐ সময় লো-টেসটসটরন, থাইরয়েড সমস্যা, স্ট্রেস লেভেল এবং নানাজাতীয় রোগবালাই ( BP/ ডাইবেটিস…) হয় ফলে সেক্সডিজায়ার কমে যায়। তখন দীর্ঘদিনের অতি পরিচিত আপন পার্টনারের চেয়ে আগন্তক রমণী সহসা শরীরে উদ্দীপনা জাগায়। আর নিজেকে আবার খুঁজে পাবার লক্ষ্যে ঐ দৌঁড় শুরু হয়—লোকে একে বলে প্রেম, নাম তার পরকীয়া।
যদিও এটা ঐ রমণীর প্রতি তার ভালোবাসা নয়, বরং নিজেকে আবিস্কারের নেশা— বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাতেকলমে যৌনজীবনকে নিরীক্ষণ !
এই সম্পর্কও দীর্ঘ সময় স্হায়ী হয় না। তখন আসল পার্টনারই স্হায়ী ঠিকানা— হয়ত বা সেক্সহীন দাম্পত্য জীবনের সূচনা।
কিন্তু কিভাবে?
দূরে দূরে থাকলে, খটমট করলে, কাছে না টানলে, মারধর করলে লেস সেল্ফস্টিম সম্পন্ন বউ যাদের, তারা ভাবেন, সে আমায় ভালোবাসে না—
আমি কি তার কাছে আর আকর্ষণীয় নই?
অথবা অন্য নারী কি এসেছে তার জীবনে— তাকেই কি সে
ভালোবাসে?
এই কি আমার আত্মত্যাগের প্রতিদান?
নানাবিধ চাপে থেকে সহসা বুঝতে পারেন না, এখন সমস্যা সমাধানের বিষয়টিই মূলত প্রধান।
অন্যদিকে কাছে যাবার প্রশ্ন এলেই স্বামীজি‘র টেনশন বাড়ে—
তিনি অবিরত ইরেকশনকে পর্যবেক্ষণ করেন— কী হয়, কী হয়?
যদি না হয়, তখন কী হবে?
ঐ এক টেনশনেই পুরো কিসসাই খতম—অর্জিত ইরেকশনও পালিয়ে যায়। অথচ বিষয়টি অটোমেটিক। মাত্র দু/এক মিনিটের কেস—
হলে হলো, না হলে অন্যকোন দিন হবে! হু কেয়ার্স?
দম্পতিদের দিনের প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই সময় থাকে ভালোবাসা দেখাবার, আবেগ ঢেলে দেবার, গল্পে গল্পে মেতে ওঠার, সমস্যা নিয়ে আলোচনার…. যদি সময়ে আত্মিক বন্ধনটি মজবুত করে গড়ে তোলা যায়।
পেনিট্রেশনের এক/দু মিনিটই কি জীবনের সবকিছু, যদি আত্মিক মিলন না ঘটে?
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পেনিট্রেশন ছাড়াও দাম্পত্য জীবনকে ধরে রাখা সম্ভব, শুধু ভালোবেসে যেমন করে প্রেমের সময় প্রেমিক–প্রেমিকা দৈহিক সম্পর্ক ছাড়া সম্পর্ককে ধরে রাখে।
স্বয়ং আমেরিকাতে ১৫%-২০% দম্পতি সেক্সলেস ম্যারেজ লিড করে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশেতো বিষয়টি আরও বিস্তৃত ।
তারপরও নিজের সুস্হতা বজায় রাখতে বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিটি পুরুষেরই কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। যেমন শারীরিক চেকআপ ( ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশার, ডিপ্রেশন, এবং নিউরোলজিক্যাল ), এবং হরমোনাল (টেসটসটরন…) চেকআপ নিশ্চিতকরণ, সুষম খাদ্য গ্রহণ , পর্যাপ্ত ভাইটামিনস এবং মিনারেল গ্রহণ, মানসিক হেলথ নিয়ন্ত্রণ, স্ট্রেস/এ্যংজাইটি রিলিজের ব্যবস্হাগ্রহণ, নিয়মিত ৩০ মিনিটের মতো এক্সারসাইজ (জগিং বা দ্রুত হাঁটা), পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান, সেবনকৃত ওষুধের সাইড এফেক্ট পর্যবেক্ষণ…..।
রিসার্চ করলে দেখা যায়, ইরেকশন প্রবলেমে তরমুজ অতুলনীয়। এছাড়া, ডালিম, ডার্ক–চকলেট,রেড–ওয়াইন, অয়েসটার, কফি, কলা, লেবুপানি, হলুদপানি, আদা–মধু পানি, মেথি, সেলারি এবং প্রচুর শাকসব্জিও নাকি অতীব উপকারী।
ইরেকশন ঘটে সেখানে রক্ত প্রবাহ দ্বারা।
শরীরে রক্তপ্রবাহে হার্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ইরেকশনে কোন সমস্যা দেখা দিলে এটা শুধু তথাকথিত লজ্জাজনক শব্দ সেক্স এবং ইগো‘র সাথে জড়িত থাকে না। বরং পুরো শরীর এবং সুস্হজীবনও হুমকির মুখোমুখি হয়। তাই এই জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে শুরুতেই ডাক্তার দেখানো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
আমাদের আশেপাশে চারিদিকে এই সমস্যা রয়েছে। আমরা দেখিও না, বলিও না, পদক্ষেপও নেই না—আমরা শুধু লজ্জা পাই। অথচ সচেতন হলে, একটু রিসার্চ করলে, অনেক কিছুই আমাদের হাতের মুঠোয়।
জীবনের চেয়ে কি আর বড় কিছু হতে পারে, নাকি হওয়া উচিত?