ভারতীয় নয়া আইনে কারা থাকবে, কারা থাকবে না

উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক:

ভারত জ্বলছে। দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে জ্বালাও-পোড়াও-হতাহতের খবর আসছে প্রতিনিয়ত। মূলত নাগরিকত্ব বিল নিয়েই এই হাঙ্গামা।

এরকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ তে স্বাক্ষর করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর ফলে বিলটি এখন আইনে পরিণত হলো। ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অনুমোদনের পর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিলটিতে সম্মতি দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি।

বিলটির মূল উদ্দেশ্য হলো সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়া। বিলের বিরুদ্ধে উত্তর-পূর্ব ভারতে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। আসাম অগ্নিগর্ভ। ত্রিপুরাসহ ‘সেভেন সিস্টার’ এবং ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী এ বিল রাজ্যসভায় পাশ হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করবার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

কী রয়েছে এই বিলে? বিল নিয়ে বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে?

এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। এতে বলা হয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধসহ আরও কিছু অমুসলিম ধর্মাবলম্বীরা, যারা নিজের দেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে, তারা যদি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে প্রবেশ করে থাকে, তবে তারা এই আইনের আওতায় ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কর্মরত একটি সংগঠন থেকে আশংকা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ভারতের এই নয়ানীতির বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এদেশে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, ভারতের সংশোধিত আইন একটি গোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি দখল, ধর্মান্তরকরণ অব্যাহত রেখে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করতে অধিক উৎসাহী করবে। তিনি আরও বলেন, দেশত্যাগ কম বেশি অব্যাহতই রয়েছে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নও চলছে।

বিল নিয়ে বিতর্ক কেন? কারা সোচ্চার?

এ বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হলো এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বলছে, এই আইন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের প্রতি ‘পক্ষপাতমূলক’। সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী।

তবে সরকারের বক্তব্য, “মুসলিম প্রধান বিদেশে যেসব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হন তাঁদের নাগরিকত্বদানই এ বিলের লক্ষ্য”। নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপি নেতারা বলে চলেছেন, দেশভাগের ফলে যাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, “মা ভারতী”র সেই সব পুত্র কন্যাদের আশ্রয়দানের মাধ্যমে ইতিহাসের ভুলকে সংশোধন করাই বিলের লক্ষ্য।

অনলাইন মাধ্যমে সংগৃহীত একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব এখানে তুলে দেয়া হলো আইনটি সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝার জন্য। চলুন একনজরে দেখে আসা যাক:

প্রশ্ন: CAB বিলটি কি ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে?

উত্তর: না, এটি নাগরিকত্ব দেওয়ার বিল। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিল নয়।

প্রশ্ন: CAB বিলটি তাহলে কাদের জন্য? ভারতে যারা বসবাস করে তাদের জন্য নয়?

উত্তর: না, এই বিলটি ভারতীয়দের জন্য নয়। পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান এই তিনটি বর্ডার শেয়ারিং দেশে “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” কোনো সংখ্যালঘু(ওখানে সংখ্যালঘু মানেই হিন্দু,খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈন) যারা, ক্যাবের সুযোগ নিয়ে ভারতে থাকতে পারবে।

প্রশ্ন: তার মানে “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিতরা” ভারতে এলে সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে?

উত্তর: না না, ছয় বছর ভারতে থাকার পর তবেই ওরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।

প্রশ্ন: আচ্ছা, পৃথিবীর সব হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী, জৈন তাহলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে?

উত্তর: না না, শুধু ওই তিন দেশের “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ,বৌদ্ধ,পার্সী,জৈন ছয় বছর থেকে নাগরিকত্ব পাবে। বাকি দেশের লোকদের ১১ বছর থাকার পর নাগরিকত্ব পাবে।

প্রশ্ন: ওই তিন দেশের মুসলিম নাগরিকরা তাহলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না?

উত্তর: হ্যাঁ, মুসলিমরাও পাবে। ওই মুসলিমদের ১১ বছর ভারতে থেকে তবেই নাগরিকত্ব পাবে। এমনিতেই
২০১৪-২০১৯ সালের মধ্যে ওই তিন দেশের ৫৬৬ জন মুসলিমকে ভারত সরকার নাগরিকত্ব দিয়েছে।

প্রশ্ন: আমাদের দেশ তো “ধর্মনিরপেক্ষ দেশ”, তাহলে ওই তিন দেশের মুসলিমরা কেন ১১ বছর থাকার পর নাগরিকত্ব পাবে?

উত্তর: সব হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ,পার্সী, জৈনকে তো নাগরিকত্ব দেবে না। যারা “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হবে তারা ছয় বছরে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। আর ওই তিনটি দেশের রাষ্ট্র ধর্ম হলো ইসলাম। তাহলে একটি মুসলিম দেশে একজন মুসলিম কি “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হবে?

আর রইলো বাকি ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা। ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কি শুধুই মুসলিম থাকলে হয়? খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ,পার্সী, জৈন ধর্মও তো এই বিলের আওতায়। এর পরেও বলবে এই বিল ধর্ম নিরপেক্ষ নয়?

প্রশ্ন : আচ্ছা যারা ২০১৪ সালের আগে থেকে “ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত” হয়ে বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে বাস করছে তাদের কি আবার তাড়িয়ে দেবে??

উত্তর: না না, এই বিলটি তো স্পেশালভাবে ওই নিপীড়িত মানুষদের জন্যই পাশ করা হয়েছে। যাতে তারা এখন নিশ্চিন্তে এই দেশে বসবাস করতে পারে।

প্রশ্ন : তবে অনেকে বলছে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হবে। ওটা ভুল?

উত্তর: হ্যাঁ ওটা ভুল। CAB এর জন্য কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে না। আর এই ডিটেনশন ক্যাম্পের তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়া। কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ মানুষকে ক্রমাগত ভয় দেখাচ্ছে। নিশ্চিন্তে থাকুন, কোনো ভারতীয়কে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে না।

সংগৃহীত।।

শেয়ার করুন: