প্রসঙ্গ সেক্স চ্যাট: মেয়েরা মুখ খুলুন প্লিজ

মুমিতুল মিম্মা:

যৌনতা কি খুব স্বাভাবিক বিষয়? এই স্বাভাবিক যৌনতাই অস্বাভাবিক তখন হয়, যখন আপনি রাত হলেই কথাপ্রসঙ্গে হুটহাট কাউকে যেচে চুমু খাওয়ার অনুরোধ জানান। দুদিনের ইনবক্স কথনে অহেতুক যৌনতার প্রসঙ্গ টেনে যৌনতায় মাখামাখি হয়ে যেতে চান। সবাই কিন্তু আপনার মত উদার যৌনতার নীতিতে বিশ্বাসী নাও হতে পারে, এই বোধটা রাতের বেলায় বেমালুম লুপ্ত হয়ে যায়।

কাজেই জীবনকে ‘থরোথরো’ উপভোগ করতে বলে আপনি যখন যাকে-তাকে সেক্স চ্যাটের অনুরোধ জানান তার আগে আপনার জেনে নেয়া উচিৎ তারাও আপনার মত করে জীবনকে ‘উপভোগ’ করতে চায় কি না! প্রস্তাবে রাজি না হলে আপনার মনে হতে পারে তারা সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা করেন। অনেকে তো আবার এও ভেবে নেন – মানুষটার কোন যৌনতাবোধই নেই।  

আপনি ‘লাভ এন্ড লাস্ট নট ফর দ্যা সেইম পারসন’ নীতিতে বিশ্বাসী হতেই পারেন। তবে কী জানেন – আমার মত অনেকেই প্রেমিকের সাথে মিলিত হওয়া ছাড়া ভিন্ন ‘জীবে মিলন’ এ বিশ্বাসী নয়। এজন্যে আবার আপনি ‘বিছানায় যাবার নিমিত্তে প্রেম অন্যথায় নয়’ ভেবে মাস্টারবেট করতে করতে প্রেম করতে ইনবক্সে চলে আসেন তাহলে আপনাকে আবার হতাশ হতে হবে।

ধুম প্রেমে ডুবে শরীরে মাখামাখি হতে দোষ নেই। তবে যদি এই ধুম প্রেম শুধু মাত্র শরীর থেকে শরীরে খোঁজে প্রেমে বার্তা তাহলে আপনার একটু সাবধান থাকতে হবে সবার সাথে। অনেকে আবার শরীরে বার্তা খোঁজার জন্যে আগে একটু মনেও প্রেমের রঙ লাগিয়ে নেন। কয়েকদিন প্রেম করে সেই গরুর রচনার মত শীৎকারের আহাউহু। দুটোতেই আমারমত অনেকের ঘোর আপত্তি আছে। বহুগামিতা এবং যেখানে সেখানে অহেতুক যৌনতার মাখামাখি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আপনার কাকে কীভাবে আদর করতে ইচ্ছে হয় কিংবা রাত হলে আপনার কেমন লাগতে থাকে শরীরে – এগুলো যেচে পড়ে কাউকে লিখে বোঝাবার দরকার নেই তো! শরীর একটা সবারই আছে। সেখানে আবেগ অনুভূতিও সবার থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

এক বন্ধু আছে যার প্রেমিক পৃথিবীর সবার চোখে নামাযি ভাল ছেলে কিন্তু প্রেমিকার কাছে এলেই দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা তার গা না ছুঁয়ে রাখলে তার চলে না, চ্যাট করতে গেলে “জান, আমি কী তোমার কাছে কখনও কিছু চেয়েছি। একটু দাও, দাও না!” ‘বউ তোমাকে খুব জড়ায় ধরতে মন চাচ্ছে’ “বউ তোমাকে কতদিন চুমু খাই না” যদি তাঁকে বলা হয়, “এগুলো ইসলামে হারাম”। তখন তার বক্তব্য “তুমি তো আমার বউ। তোমার সাথে এগুলো করলে কিছু হবে না।” শুধু ছেলেদের দোষ দিচ্ছি কেন? লাখে একটা দুষ্প্রাপ্য ঘটনা হিসেবে সেদিন এক জুনিয়রের সাথে আলাপ হল। চার বছরের প্রেম ভালোই চলছে তবে প্রেমিকার বিছানার ডাক উপেক্ষা করতে করতে বেচারা ভীষণ ক্লান্ত।

যারা চায় তাদের করতে দিন। কিন্তু যারা করতে চায় না তাদের কেন আপনারা জোর করে এই জিনিস গলাধঃ করাবেন?

একজন ছেলের কাছ থেকে এই প্রস্তাব পাওয়ার পর মেয়েটার দিনের পর দিন ঘুম হয় না। মেয়েটা কেঁদে কেটে একাকার হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। এটা স্পষ্ট মানসিক নির্যাতন। আপনি কিন্তু শুধু আপনার চাহিদাটাই দেখেছেন তাই আপনি সুস্থই থাকেন। অসুস্থ হয়ে যান যাকে প্রস্তাবটা দিচ্ছেন তিনি।

মানুষকে এসব শুনিয়ে আপনি যেচে সাইবার অপরাধে জড়াচ্ছেন নিজেকে। উইকি ঘেঁটে পেলাম – দেবারতি হালদার ও কে জয়শংকর সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন “আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেমন ইন্টারনেট (চ্যাট রুম, ইমেল, নোটিশ বোর্ড ও গ্রুপ) এবং মোবাইল ফোন (এসএমএস / এমএমএস) ব্যবহার করে, অপরাধমূলক অভিপ্রায়ে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, কিংবা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, বা ক্ষতির কারণ হওয়া“।

সুশান্ত পালের কথা তো স্ক্রিন শটের কল্যাণে সবাই জানি আমরা। এরকম অনেক অনলাইন ত্রাতা পাওয়া যাবে যারা সঞ্জীবনী স্ট্যাটাসে ঝড় বইয়ে দেন ভেঙ্গে পড়লে এই করতে হবে ঐ করতে হবে। একবার এক বিশাল লেখক আমাকে ইনবক্সে এসে জানতে চাইছিলেন আমার কোন গোপন অতীত আছে কিনা। তারপরে আমাকে উপদেশ দিলেন আমার প্রেমিকের সাথে বিছানায় যেতে। ভাবখানা এমন – বিছানাই হল সকল সমস্যা সমাধান। আমি তাঁকে বন্ধু তালিকা থেকে সম্মানের সাথে বিদায় করে দিয়ে উপযুক্ত সমাধান খুঁজে পেলাম।

মেয়েরা দয়া করে দয়া করে মুখ খুলুন। এসবকিছুর বিরুদ্ধে যূথবদ্ধ এবং জোটবদ্ধ হওয়াটা এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয়। সাইবার ক্রাইমের জন্য আইন তো আছেই, স্ক্রিনশট নামক একখানা বস্তু আছে। স্ক্রিন শট সেভ করে রাখুন। পারলে পোস্ট করুন। পোস্ট দেখেও সচেতন হবে মানুষ।

সুশান্তর “সেক্সি বুড়ি”র উত্তরে প্লিজ লিখবেন না “আপনি খুব অদ্ভুত।” বরং লিখুন “আপনি একটা ইতর”। যখন আপনার প্রেমিক “বাবু, তোমাকে এই করতে হবে ঐ করতে হবে” এই কথাগুলো বলে আপনি তখন মুখের উপরে বলুন আপনার এসব ভালো লাগে না। তারপরেও যদি কাজ না হয় এই অবদমিত যৌন জীব গুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করে দিন জীবন থেকে। নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে বোধগুলোকে মর্যাদা দিতে শিখুন। যে মানুষটা আপনাকে জোর করে সেক্সচ্যাট করাচ্ছে সেই মানুষটা ভবিষ্যতে আপনার বর হলে আপনাকে দাম্পত্য-ধর্ষণ করতেও তার দ্বিধা হবে না। কারণ সে জোর করায় বিশ্বাসী, আপনার মতামতকে গুরুত্ব দিতে নয়।   

মনে রাখবেন অনলাইন হলো একটা বিশাল সুবিধার জায়গা। জরুরি প্রয়োজনে এই বিশাল সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে কিছু বরাহ শাবকের কারণে প্ল্যাটফর্মটা অনেকেই ব্যবহার করতে ভয় পান। তাই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ব্যাপারে সাবধান হোন। মাথায় রাখুন “অাপনা মাংসে হরিণা বৈরি” (হরিণ তার নিজের মাংসের জন্যেই নিজের শত্রু।)

ছেলেরা ভদ্রতা বজায় রাখুন। কোন প্রস্তাব দেবার ক্ষেত্রে হাজার বার ভাবুন আপনি কী চাইছেন। কেন চাইছেন। হলি ক্রস কলেজের প্রিন্সিপাল সিস্টার শিখা ক্লাসে বলেছিলেন, “আমরা চাইলেই যার তার সাথে মিলিত হতে পারি না। যৌনতার এই বোধটাই অন্যান্য প্রাণীদের থেকে মানুষকে আলাদা করেছে।”

ইনবক্সে অকারণে কোনপ্রকার সেক্স চ্যাটের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। আপনার মাথায় সোনার অক্ষরে ঝালাই করে নিন যে, লেখালেখির ‘সিউডো-আহাউহু’ সবাইকে দিয়ে হয় না, জনাব।


মুমিতুল মিম্মা , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন: