আকাশ-মিতু প্রসঙ্গে কয়েকটি দিক

শিল্পী জলি:

বাংলাদেশের পরকীয়া সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী কেউ পরকীয়ায় লিপ্ত হলে মেয়েটির বর যদি মামলা করে তাহলে পরকীয়ায় লিপ্ত ছেলেটি সাজা পাবে। সাজা পাঁচ বছরের জেল, জরিমানা, অথবা দুটোই। তবে স্বামীর অনুমতি নিয়ে কেউ যদি তার বউয়ের সাথে পরকীয়ায় (সঙ্গমে) লিপ্ত হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। আর মেয়েরা পরকীয়ায় লিপ্ত হলে তাদের কোন সাজা নেই। সেই সুবাদে এই আইনে মিতু কোন সাজাযোগ্য অপরাধ করেনি।

বর্তমান এই আইনে সাজা হলে প্যাটেলের হতো, যদি আকাশ কেস করতেন। যতদূর বোঝা যাচ্ছে, তাতে প্যাটেল আমেরিকার বাসিন্দা। তাই বাংলাদেশ নয়, নর্থ ক্যারোলিনার আইন অনুযায়ী বিচার-আচার হলে প্যাটেল ধরা খাবে কী খাবে না সেটা নির্ধারণ করা যাবে। যতোদূর জানি তাতে আমেরিকার ২১টি স্টেইটে পরকীয়া অপরাধ বলে গণ্য হয়, সবগুলোতে নয়। আবার স্টেইট ভেদে সাজা ভিন্ন ভিন্ন–দশ ডলার থেকে শুরু করে নানাবিধ। কোথাও জেল, কোথাও বা ফাইনের পরিমাণ বেশি হতে পারে। তবে একটি বিষয় আমেরিকার সবখানেই রয়েছে সেটি হলো, পরকীয়ার কারণ থাকলে সহজে ডিভোর্স পাওয়া যায় এখানে।

শিল্পী জলি

এবার মিতুর দিকটি নিয়ে কিছু বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। অনেকেই মিতুর ফাঁসি চাইছেন যদিও অভিযোগ একটিই তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। এই আইনে বাংলাদেশে কেস হলে প্যাটেলের সাজা হবার সম্ভাবনা, মিতুর নয়। তথাপি ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন!

বিয়ের একটি ভিডিওতে আকাশ বলেছিলেন, মিতু অনেক সহজ সরল একটি মেয়ে। তাই তাকে তার এতো ভালো লাগে। আত্মহত্যার আগেও তিনি লিখে গিয়েছেন,’ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকাদের নিয়ে!’ মৃত্যুর আগে নাকি কেউ মিথ্যে বলেন না। সেই বিবেচনায় বলা যায়, মিতু তার প্রেমিকাদের নিয়ে কী করে ভালো থাকবেন? ভালোবাসায় গদ গদ হয়ে আকাশ কী তাকে লেসবিয়ানও বলে গেলেন শেষ বিদায় বেলায়?

আকাশ আত্মহত্যার আগ দিয়ে মিতু বিয়ের আগে শোভন, মাহবুবের সাথে হোটেলে গিয়েছে, সবকিছু জেনে তারপরও তাকে বিয়ে করেছেন লোকলজ্জার ভয়ে সবই ভিডিও করে, লিখে রেখে গিয়েছেন। ছবি/ভিডিওতে দেখা যায়, মারের চোটে মিতুর ঠোঁটে রক্ত জমে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে, আরও মারের আশঙ্কায় ভয়ে সরে সরে যাচ্ছেন, তিনি যেটাকে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বলে– যেটা বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় সবখানেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এক্ষেত্রে জানতে চাই, দেশের মানবাধিকার কর্মীরা কই?
ভিডিও করেও তারা ছেড়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তির আইনে এটিও একটি গুরুতর অপরাধ।

সেইসাথে ভিডিওর ভাষার দিকে দৃষ্টিপাত না করলেই নয়।
তারা ডাক্তার দম্পতি ছিলেন। সভ্য উচ্চ স্তরের মানসিকতা ধারণ করার কথা ছিল তাদের। অথচ বউকে কী ভাষায় তিনি প্রশ্ন করেছেন দেখলেই থমকে যেতে হয়! বউয়ের সাথে যে লোক অন্যের সাথে যৌন সম্পর্ক ঘটেছে কিনা তদন্ত করতে ‘চ’ বর্ণ ছাড়া আর কোন শব্দই খুঁজে পান না, সেই লোকের সাথে অধিকাংশ মেয়েরই এমন হবার কথা। সেখানে তিনি যদি শিক্ষিতা বা ডাক্তার মেয়ে হোন, তাহলে তো কথাই নেই। ছয় বছর প্রেম করে এমন লোককে কেমন করে মেয়েরা বিয়ে করে ভাবতেই অবাক লাগে!

বিয়েতে রক্তের সম্পর্ক কাজ করে না। কাজ করে শব্দ, বাক্য, কথা, রোমান্টিকতা, আবেগ, অনুভূতি, অভিমান, অনুরাগ, আদর, সোহাগ, ভালোবাসা, নির্ভরতা, শ্রদ্ধা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ইত্যাদি। যাদের বর লাভ মেইকিং, ইন্টারকোর্স, যৌন মিলন, সঙ্গম, শারীরিক সম্পর্ক জাতীয় সাধারণ শোভন শব্দগুলো বাদ দিয়ে শুধু ‘চ’ দিয়েই কথা বলেন, তাদের বউদের মতো দুর্ভাগা কী আর হয় জগতে? এমন ভাষায় কথা বলা লোকদের কথায় নারীদের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাও প্রকাশিত হয় না। এমন শব্দ শুনেই নারীর মন উঠে যায়, কীসের সংসার? এদের সাথে আর যাই হোক, ঘর করা কঠিন। অবশ্যই বুঝেশুনে কাউকে বিয়ে করা উচিত।

শেষ কথাটি হলো কাবিনের উপর ভিত্তি করে বিয়ে ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজ সবকিছুর জন্যেই ক্ষতিকর। বিয়েতে রেজিস্ট্রিও জরুরি নয় যদি মেয়েরা স্বনির্ভর হয়। রেজিস্ট্রি বিয়ে মেয়েদের পরনির্ভরশীলতা বাড়ায়। রেজিস্ট্রি না থাকলে, মেয়েরা স্বনির্ভর হলে, তাদেরকে আর ব্যক্তিগত মালিকানাভুক্ত স্থায়ী আপদ মনে করার অবকাশ থাকে না। মনে হয় আলাদা সত্ত্বার একটি সম্পূর্ণ মানুষ। তখন হারাবার ভয়ে অত্যাচার আপনাআপনিই বন্ধ থাকে।

নারী শুধু একটি যৌনাঙ্গ নয়, আবেগ, অনুভূতি সম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ একটি স্বাধীন সত্ত্বা। একে কব্জা করে নয়, মন জয় করে আপন রাখতে হয়, নইলে সুযোগ পেলেই উড়ে যায় পাখি। যত যাই হোক জীবন একটাই!

শেয়ার করুন: