অস্থায়ী স্ত্রী ( The Temporary Wife)

নাসরিন শাপলা:

খাদিজা শাহলা জাহেদ-ইরানী বংশোদ্ভূত নারী। ৪০ বছর বয়সী শাহলা ছিলেন পেশায় একজন নার্স। ২০১০ সালের ১লা ডিসেম্বর ইরানে শাহলাকে দীর্ঘ কারাবাসের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। শাহলার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো প্রেমিকের স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার।

ইরানের এক সময়কার বিখ্যাত ফুটবলার নাসির মুহাম্মদ খানীর ‘অস্থায়ী স্ত্রী’ ছিলেন শাহলা। ইরানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সুনির্দিষ্ট সময়কালের জন্য পুরুষরা ‘অস্থায়ী স্ত্রী’ রাখতে পারেন। ইরানী আইন অনুযায়ী একজন পুরুষ একসাথে চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি পেলেও ‘অস্থায়ী স্ত্রী’র সংখ্যার ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ নেই। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে শুধু একবারে একজনের বেশী স্বামী রাখার অনুমতি দেয়া হয় না।

শাহলা জাহেদ

২০০২ সালে নাসির মুহাম্মদ খানী জার্মানিতে ফুটবল খেলছিলেন। ঠিক সময়ে ইরানে তার স্ত্রী লালিহ শাহারখাইজানের মৃত্যু ঘটে আততায়ীর ছুরিকাঘাতে। লালিহকে ছুরিকাঘাতে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে শাহলা জাহেদকে জেলে পাঠানো হয়। প্রথমে শাহলা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে চাপের মুখে সকল অভিযোগ স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন। যদিও ইরানের আইন বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্ট্যারন্যাশনাল’এর মতে শাহলার পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ছিলো অন্যায্য।

২০০৪ সালে আদালতে শাহলার ফাঁসির আদেশ হয়। শাহলার সাথে নাসিরের সম্পর্কটি পরকীয়া বিবেচনায় নাসিরকেও শুরুতে গ্রেফতার করা হয়। পরে শাহলা নাসিরের ‘অস্থায়ী স্ত্রী’ প্রমাণ করতে পারায় তাকে বেক্সুর খালাস দেয়া হয়। তবে আদালতে শাহলা তার জবানবন্দিতে জানান তিনি এবং নাসির একত্রে ‘ওপিয়াম’ সেবন করতেন। এই অভিযোগে নাসিরকে ৭৪টি বেত্রঘাত করে ছেড়ে দেয়া হয়।

নাসরিন শাপলা

দীর্ঘ ৮ বছর কারাবাসের সময়টিতে শাহলার মৃত্যুদন্ডাদেশ জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শাহলার ফাঁসির আদেশ মুওকুফ করার জন্য আবেদন জানান। সবগুলোই কতৃপক্ষের কাছে নাকচ হয়ে যায়।

২০১০ সালের ১লা ডিসেম্বর ভোর পাঁচটায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শাহলার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর আগে শাহলা শান্তভাবে নামাজ আদায় করেন। এরপরেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বার বার তার জীবন ভিক্ষা চান। শাহলার আইনজীবীরা এই সময় দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে শাহারখাইজানের পরিবারের কাছে শাহলার জীবন ভিক্ষা চান। কিন্তু শাহারখাইজানের পরিবার তাঁদের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন।

‘চোখের বদলা চোখ’ এই নীতির উপর ভিত্তি করে প্রণীত আইন ‘Qisas’ অনুযায়ী ফাঁসির দঁড়িতে ঝোলানো শাহলার পায়ের নিচের চেয়ারটি সরিয়ে দেয়ার কাজটি করে শাহারখাইজানের পুত্র। ও হ্যাঁ, এই ফাঁসির অনুষ্ঠানে অতিথিদের তালিকায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহলার ‘অস্থায়ী স্বামী’ নাসির মুহাম্মদ খানী।

তথ্যসূত্র: সিবিসি নিউজ

শেয়ার করুন: