আপনারা কি বিবাহিত? কাবিননামা দেখান?

ভানুলাল দাস:

কোনো দম্পতির বিয়ের কাবিননামা চাওয়ার এখতিয়ার পুলিশের নেই।
নিতান্ত উজবুক ছাড়া কোনো দম্পতি কাবিননামা সঙ্গে নিয়ে কোথাও বেড়াতেও যায় না। বাংলাদেশের আইন বিয়ের প্রমাণ নিয়ে চলাফেরা করতে তাগিদও দেয় না।

পুলিশকে মনে রাখতে হবে কারও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা অন্যায়। দু’জন সাবালক নর-নারী (প্রেমিক-প্রেমিকা হলেও দোষ নেই) একত্রে চলাফেরা করলে, একই হোটেল রুমে থাকলে কিংবা সী-বিচে ঘনিষ্ট হলেই তাদের আটক করা যায় না। আটক করলে এটি হবে বেআইনি এবং আইন সম্মত কারণ ছাড়া আটকের জন্য পুলিশ দায়ী হবে। যে অফিসার এমন করবেন, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের চার্জ আনাসহ কঠোর বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া চলে।

পুলিশ প্রায়শই দণ্ডবিধি আইনের ২৯০ ধারার অপপ্রয়োগ করে এই সকল ক্ষেত্রে।
প্রকাশ্য স্থানে নারী-পুরুষ বেলেল্লাপনা বা অশ্লীল আচরণ করলে এবং মেয়েটি যদি যৌনকর্মী হয়, তবেই দ.বি. ২৯০ ব্যবহার করা যায়। দু’জন সাবালক নরনারী বিয়ে ছাড়া হোটেলের একই রুমে রাত্রিযাপন করলে বাংলাদেশের আইনে কোনো অপরাধ হয় না, যদি না নারীটি যৌনকর্মী হয়।

এখন প্রশ্ন হলো, বিয়ে ছাড়া দু’জন নরনারী একত্রে বসবাস করা কি অনৈতিক?
হ্যাঁ, আমাদের দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক আইনে তা অনৈতিক হতে পারে, কিন্তু এটি অপরাধ নয়, তাই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে না। সকল অপরাধই অনৈতিক, কিন্তু সকল অনৈতিক কর্ম অপরাধ নয়।

এখন দেখা যাক, বিবাহের প্রমাণ কী? নিচের যে কোনো একটি প্রমাণ দিলে আইন ধরে নেবে তারা বিবাহিত:
১. কাবিন নামা দেখালে।
২. বিয়ের দুজন সাক্ষী যদি বলে তারা বিবাহিত।
৩. নরনারী যদি পরস্পর পরস্পরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে মৌখিক স্বীকৃতি দেয়।
৪. পাড়া প্রতিবেশি লোকজন ও বন্ধুবান্ধবরা যদি বলে যে, দু’জনকে বিবাহিত হিসেবে তারা জানে।

কাজেই দেখা গেল, দু’জন নরনারী পুলিশের জিজ্ঞাসার উত্তরে যদি বলে তারা বিবাহিত, তা হলে পুলিশকে মেনে নিতে হবে তারা বিবাহিত। অন্তত দেশের আইন তাই বলে। গ্রেফতার, আটক, হয়রানি চলবে না।

কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের এ এস আই এতোদিন যা করছিল:
কাবিননামা চাওয়া,
বিবাহিত কিনা জিজ্ঞাসা করা,
বিবাহিত নয় সন্দেহে আটক করা,
এতদ সংক্রান্ত দম্পতিকে হয়রানি করা ইত্যাদি
সম্পূর্ণ বেআইনী কার্যকলাপ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

পুলিশকে মনে রাখতে হবে, তারা শুধু আইন শৃংখলা রক্ষা করে না, তারা নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতারও রক্ষক। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পুলিশের কিছু সদস্য নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমুন্নত না করে নিজেরা সেখানে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে। আসলে কোনো রকম অভিযোগ ছাড়া কারা বিবাহিত, কারা বিবাহিত নয়, কিংবা দু’জন কি প্রেমিক প্রেমিকা– নাগরিকদের এমন প্রশ্ন করা পুলিশের জন্য অনধিকার চর্চা এবং অভদ্রতাও বটে।

লেখক পরিচিতি: ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, সিআইডি

শেয়ার করুন: