সুষুপ্ত পাঠক:
কক্সবাজারে স্বামী-স্ত্রী হানিমুন করতে গেলে সঙ্গে অবশ্যই কাবিননামা রাখবেন। না হলে শেখ হাসিনার শাসনে আপনাকে ইসলামী অনুশাসন লঙ্ঘনের অভিযোগে হেনস্থা করতে পারে পুলিশ।
কক্সবাজারে এক সময় পর্যটন মৌসুমে জেলা প্রশাসন সর্বস্তরের সরকারি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে নিশ্চিত করতো পর্যটকদের নির্বিঘ্ন আমোদ প্রমোদের। সরকারের নীতি তখন ছিলো, সি-বিচে মানুষ আসে আমোদ প্রমোদ করতে, তাগলীগ জামাতের চিল্লা করতে নয়। বিচ এরিয়াতে তাই মদ-বিয়ার প্রাপ্তিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ছিল শিথিল। দম্পতিদের নিভৃত যাপনে কখনই সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিলো না।
কিন্তু দিন এখন বদলেছে। শেখ হাসিনা মোল্লাদের খুশি করেই ক্ষমতায় থাকবেন। সারাদেশটাই তাই হাটহাজারি মাদ্রাসা হয়ে গেছে। মাদ্রাসার ছাত্রদের দাপটে সিলেটে নারীদের জন্য নির্মিত পাবলিক টয়লেট ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এতে পবিত্রতা নাকি নষ্ট হয়ে যাবে। নারীরা থাকবে বাড়িতে, তাদের জন্য তাই পথেঘাটে টয়লেট কেন বানানো হবে! সিলেট সিটি মেয়র বলেছেন, তিনি মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের অনুমতি নিয়েই টয়লেট নির্মাণ করেছিলেন। এরপর হয়তো হানিমুন যেতে হলে কক্সবাজারের কোনো মাদ্রাসা কিংবা মসজিদের বড় হুজুরের অনুমতি নিতে হবে!
চার্চের শিশু নিপীড়ন নিয়ে চার্চকে জবাবদিহি করতে হয়েছে, পোপকে কথা বলতে হয়েছে এবিষয়ে, কিন্তু মাদ্রাসায় শিশুদের ধরে মোল্লারা বলাৎকার করে মেরে ফেললেও একটা প্রশ্ন তোলার সাহস এদেশে কেউ পায় না। উচ্চ আদালতে কত জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে রিট হয়, আদালত স্বউদ্যোগী হয়ে অনেক বিষয়ে সরকারের কাছে জবাবদিহিতা চায়- কিন্তু হুজুরদের লালসার শিকার হওয়া শিশুদের একের পর এক ঘটনায় ঘটে গেলেও মাদ্রাসার অভ্যন্তরে শিশু নিপীড়নের কথা বলতে আদালত নারাজ। মাদ্রাসার হুজুররা একটা পাথরে নারী মূর্তি দেখে তাদের যৌন উত্তেজনা ঠিক রাখতে পারবে না বিধায় একটি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নারী আকৃতিকে পুরুষের রূপান্তর করা হচ্ছে। এর আগে হজ করে যাবার সময় হাজীদের লালন ভাস্কর্য দেখে অজু নষ্ট হয়ে যাবে এই কারণে লালন ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো। মূর্তি-ভাস্কর্য ইসলামে হারাম। তাই বকের ভাস্কর্য থেকে শুরু করে জাস্টিসিয়া নারী ভাস্কর্যটিকেও হুজুরদের আপত্তি-হুংকারে ভেঙ্গে ফেলা হয়…।
৪০ বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থা এমন ছিলো না। এমনকি পাকিস্তান আমলেও মানুষ ইসলাম নিয়ে এতোখানি পাগল হয়নি। এতো বোরখা-হিজাব পরেনি নারীরা। কিন্তু যেদিন থেকে মোল্লাদের ক্ষমতার গদির কাছাকাছি আনা হলো, তাদের অবাধ রাজনীতির সুযোগ করে দিলো সেদিন থেকে মূলধারার রাজনীতিও ইসলামকেন্দ্রিক হয়ে গেলো। কে বড় মুসলমান পর্দানশীন মহিলা এই হলো ভোটের আগের দলগুলোর প্রচারণা। কে ইসলামের খেদমত বেশি করেছে, কার পিতা বা কার স্বামী বড় মুসলমান ছিলো মেনিফেস্টোর চাইতে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়লো!
সেই একই আগুন নিয়ে খেলছে রাজনীতিবিদরা। এতো সমালোচনা হবার পরও নতুন বছরের শিশুদের বইতে ওড়না পড়াকে ফলা্ও করে দেখানো হয়েছে। শিশুদের মস্তিষ্কে এখন থেকেই ইসলামী শরীয়ার প্রতি সহজাত গ্রহণযোগ্যতা তৈরির এটা একটা সুপরিকল্পিত প্ল্যানের অংশ।
দেশের শিক্ষাক্রমকে সাম্প্রদায়িক, শরীয়াবান্ধব করে তোলার এজেন্ডাতে মোল্লাদের চাপের কাছে সরকারের নতি স্বীকার ছাড়াও সরকার যারা চালায় তাদের ব্যক্তিগত ধর্মাচার কি এখানে কোনো কাজ করে না? একজন তাহাজ্জুতের নামাজি ব্যক্তি অবশ্যই গোড়া মুসলমান। ওড়নাতে তার অনাস্থার কোনো প্রশ্নই আসে না। কাজেই মোল্লাদের চাপই কেবল নয়, রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছাও এই সব কিছুর একটা বহি:প্রকাশ।