কুকীর্তি বাড়াতে সাহায্য করবেন, নাকি কষে দুইটা চড় লাগাবেন!

ফারজানা নীলা:

“কেউ আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে অশ্লীলভাবে ছুঁয়েছে, আমি তাতে শারীরিক এবং মানসিক আঘাত পেয়েছি, আমি এর বিচার চাই” এটা বলা যাবে না। কারণ মেয়েদের শরীর ছোঁয়াছুঁয়ি এগুলো খারাপ ব্যাপার। খারাপ ব্যাপার বলে বেড়াতে নেই। যত কম বলা যায় তত মঙ্গল। খুব সুন্দর যুক্তি। আসলেই তো শরীরে হাত দেওয়া খারাপ।

এখন প্রশ্ন হলো আপনারা কেন বলেন এসব কাউকে বলতে নেই? বললে নাকি আমাকেই খারাপ বলবে সবাই! আজব ব্যাপার! আমার গায়েই হাত দিলো আবার আমাকেই খারাপ বলবে! যেন যার চুরি গেল সে খারাপ, যে চুরি করছে সে ভাল! সবচেয়ে আপন যে মা তাকে জানালেও শুনতে হয়, খবরদার কাউকে বলবে না। অর্থাৎ শিক্ষা দিচ্ছেন আপনার সন্তানকে সব অন্যায়ের বিচার করতে নেই। তোমার সাথে খারাপ হইছে কিন্তু তুমি প্রতিবাদ করলে লোকে উলটা তোমাকেই খারাপ বলবে। কারণ শরীর তো তোমার, হাত অন্যজনের হইছে তো কি হইছে। হাত যেকোনো জায়গা থেকে আসতে পারে , তোমার উচিত শরীর সর্বদা রক্ষা করে চলা। প্রয়োজনে লোহার বর্ম পরে চলা। তার পরেও যদি কিছু হয় তোমার সাথে তাহলে ওই হাতকে বা হাতের মালিককে দোষারোপ করা যেতে পারে, এর আগে না!!!

সমাজের মুখে এক আর মনে আরেক চিন্তা নিয়ে চলা পুরাণ স্বভাব। গায়ে হাত দেওয়া খারাপ বলে ঘোষণা দিলেন আর সব খারাপ ছেলে ভাল হয়ে যাবে এমন আকাশ বাণী কোথায় দেওয়া আছে? কাউকে শাস্তি না দিয়ে শুধু বাণী বর্ষণ করলেই সবাই সাধু হয়ে যাবে না। শাস্তি দিয়ে উদাহরণ স্থাপণ করতে হয়।

যে চাচা –মামা- ফুফু- দারোয়ান- আঙ্কেল- ড্রাইভারের আপনারা বিচার করেন না শুধুমাত্র “লোকে খারাপ বলবে” বলে সে চাচা- মামা -আঙ্কেলরা এই কুৎসিত কাজ করেই যায় একেকবার একেক জনের সাথে আপনাদের চুপ থাকার জন্য। এটাই তাদের শক্তি, এটাই তাদের উস্কে দেয় নতুন ভাবে নতুন কারও গায়ে হাত দিতে।

লোকের কথা ভাবেন, অথচ এটা ভাবেন না আপনার মেয়েটার মানসিক অবস্থা কী ভয়াবহ হচ্ছে। ভাবেন না যে আপনার মেয়েটা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, শাস্তি পাচ্ছে কোন আপরাধ ছাড়া। এবং আপনার মেয়ে আপনাকে জানানোর পরও যখন কোনও বিচার পায় না তখন আপনারাও দায়ী আপনার মেয়ের শারীরিক নির্যাতনের জন্য। মেয়ের চাচা- মামা- আঙ্কেল- দুলাভাই- খালাত ভাই -মামাত ভাই গায়ে হাত দিয়ে প্রত্যক্ষ নির্যাতন করে, আপনারা বাবা মা হয়ে এর কোনও প্রতিবাদ না করে পরোক্ষ নির্যাতন করেন।

কী হতো যদি ওই আত্মীয়ের কলার চেপে দুইটা চড় লাগায় দিতেন সবার সামনে। সম্পর্ক খারাপ হত? এর চেয়ে খারাপ সম্পর্ক আর কি হতে পারে যে সম্পর্কের আড়ালে আপনার মেয়ের শরীরে হাত দেয়। এমন সম্পর্ক যাদের জীবনে থাকে তাদের রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে হয় না পুরো জীবনটাই দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। অসভ্য লোক লজ্জাকে তুচ্ছ করে যদি প্রতিবাদ করতেন তাহলে ওই নির্যাতক আত্মীয় দ্বিতীয় বার কারও দিকে হাত বাড়াতে সাহস পেতো না। আর আপনার মেয়েটাও জানতে পারত তাঁর পরিবার তাঁর সাথে আছে।

সুরাহা শুধু প্রতিবাদে। সে যেই হোক যত কাছের আত্মীয়ই হোক না কেন তাকে সবার সামনে শাস্তি দেওয়া উচিত। যেন তার আসল রূপ সবাই চিনতে পারে। যত গোপন করবেন ততই তার মুখোশ পাকাপোক্ত হবে, ততই তার কুকীর্তি বাড়তে থাকবে। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নেন। কুকীর্তি বাড়াতে সাহায্য করবেন নাকি কষে দুইটা চড় লাগাবেন।

শেয়ার করুন: