সৌম্যজিৎ দত্ত:
শারীরিক বল প্রয়োগে বা ভয় দেখিয়ে স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত যৌনসহবাসকে বৈবাহিক ধর্ষণ বলা হয়। বল প্রয়োগে স্ত্রীকে যৌন ইচ্ছা পূরণের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাই বৈবাহিক ধর্ষণ।
পরিসংখ্যান বলছে স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর শারীরিক ভাবে অত্যাচারিত হয়ে মৃতের সংখ্যা, প্রতি ছয় ঘন্টায় একটা করে ঘটনা উঠে আসে। ইউ.এন ফান্ডের দাবি ভারতে ১৫-৪৯ বছরের মধ্যে বিবাহিত মহিলাদের দুইয়ের তিন অংশ মহিলা এই জোর পূর্বক বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের চিফ জাস্টিস ম্যাথিউ হেল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলেন, “স্বামীরা তাদের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক যৌনসহবাস করলে কখনই সেটাকে অপরাধ বলা যায়না। কারণ তারা পরস্পর বৈবাহিক চুক্তির মধ্যে আবদ্ধ।”
এই উক্তির ভিত্তিতে নারীদের তাদের বিবাহিত জীবনে জোরপূর্বক ও অনিচ্ছাকৃত ভাবে যৌন সঙ্গমে বাধ্য করা হলে সেটা কখনোই ধর্ষণের আওতায় পড়েনা। ১৯৭০ সালে আমেরিকাতে প্রথম নারীরা তাদের বিবাহিত জীবনে সমান অধিকারের পক্ষে ও বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তোলে।
ভারতীয় আইনবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, স্বামীর তার স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা ও যদি না সেই স্ত্রীর বয়স ১৬ এর কম হয়, তবে সেটা ধর্ষণের আওতায় পড়েনা। সেকশন ৩৭৬ ধর্ষণের শাস্তি প্রদান করে। এই ধারা অনুযায়ী, ধর্ষকের শাস্তি হওয়া উচিৎ অন্তত সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড যদি না ধর্ষিতা তার স্ত্রী হয়। সেকশন ৩৭৬ অনুযায়ী যদি স্ত্রীর বয়স ১৬ বছর বা তার বেশি হয়, তবে সেখানে বৈবাহিক ধর্ষণের কোনো ধারা প্রযোজ্য হবেনা।
এখন প্রশ্ন ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী মেয়েদের বয়স ১৬ হলেই ভারতীয় সংবিধান তাকে যৌন সম্পর্কের অনুমতি দেয়। তবে এই একই ধারা অনুযায়ী বিয়ের জন্য আঠারো বছর বয়সকে ধার্য কেন করা হয়েছে?
কিন্তু সংবিধানের দিকগুলো তুলে ধরলে দেখা যাবে বিবাহিত জীবনে নারীদের বিশেষ করে যাদের বয়স ১৬ বছর বা তার বেশি ও প্রাপ্তবয়স্ক নারী অর্থাৎ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের নারীদের বৈবাহিক ধর্ষণ থেকে সুরক্ষার নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।
সংবিধানের ধারা সংশোধনের মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা কিছু অংশে পূরণ ও সমাধানের ব্যবস্থা করা গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ উন্মোচন করতে পারেনা। পরিবেশ ও সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সংবিধানের ধারাগুলিকে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়মের বাইরে নিয়ে গিয়ে মানবিকভাবে বিচার করলেই সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসে।
এখন যদি একজন ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সের কোনো বিবাহিত মহিলা বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সুরক্ষা দাবি করে, তবে ৩৭৫ ও ৩৭৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতের সংবিধান সেই নারীর অভিযোগ গ্রহণ করে তাকে পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারবেনা, তখন পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানের রাস্তা বার করে আনতে হয়। কিন্তু সংবিধান যদি পরিস্থিতি বিচার করে দুপক্ষের সমান তদন্ত করে সমাধানের রাস্তা বার করে তবে তা বেশি কার্যকরি হবে।
মানবাধিকার কমিশনের এমন এক নারী সুরক্ষা আইন চালু করাটা অতি আবশ্যক। আমার সামনে আমি আজ অনেক মেয়েকেই দেখছি যারা তাদের বিবাহিত সম্পর্কে মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যু মুখে অগ্রসর হচ্ছে। নারী সুরক্ষা আইন যদি সচেতন ভাবে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয় তবে নারীরা সমাজে ভরসা পাবে ও বাঁচার প্রেরণা পাবে।