ঘরের কোনে কাঁদিস নে আর, লাইভে এসে কাঁদ

শামীমা জামান:

গত বছরের ডিসেম্বর মাস। আমেরিকা আসার আগে মেজো মামা তার নিকেতন এর বাসায় আমার জন্য গেট টুগেদার এর আয়োজন করলেন। বিদায় এর মুহূর্তে লিফট চেপে পাশের দরজা দেখিয়ে বললেন, ‘এই ফ্লাটে কে থাকে জানো? অপু বিশ্বাস! গোপনে, বাচ্চাসহ! দারোয়ানদের কড়া নির্দেশ দেয়া আছে কাউকে না বলতে…।

সময়টা ঠিক তখন, যখন অপু বিশ্বাস নামটি একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি। মিডিয়া তন্ন তন্ন করেও তার অবস্থান জানতে পারছে না। শুধু অনুমান করছে দেশের বাইরে আছে। বাসায় ফিরে বিনোদন সাংবাদিক গানের মানুষ তানভীর তারেককে বিষয়টি না জানিয়ে পারলাম না! সে তখন প্রথম নিউজটি করে ‘অপু বিশ্বাস ঢাকায়’ শিরোনামে।

যে কানাঘুষা এতোদিন চলছিল অপু গত সোমবার তার বোমাটি ফাটালেন একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল এর সরাসরি অনুষ্ঠানে। অপু কেন বাচ্চা নিয়ে অসহায় এর মতো এসে কাঁদলেন, অনেক রুচিশীলদেরই তা দেখি পছন্দ হয়নি। কিন্তু অপু তো কাঁদতে আসেননি, এসেছিলেন সন্তানের পিতার পরিচয় দিতে।

কতটুকু কথা তিনি বলতে পেরেছেন, আর কতটুকু কান্না ডুকরে বেরিয়ে এসেছে স্ক্রিপ্ট ছাড়া, সেটা যারা উপলব্ধি করতে পারেন না, তারা তার কান্না নিয়ে হাসতেই পারেন। এক ফেসবুক সেলিব্রেটি লেখিকা তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ’লম্বা ব্রেকের পর নতুন কামব্যাক প্লান হিসেবে অসাধারণ!’ একজন নারী লেখক হয়েও অপুর কান্না তাকে ছুঁতে পারেনি! আর আম পাবলিক এর মন্তব্য পড়তে রুচি হয় না। কিছুক্ষণ পড়বার পর মনে হয় বাংলাদেশের সব পুরুষ কি ট্রাক চালায়?

খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম শাকিব খানকে পুরুষ সাংবাদিকরা ফোনে জী ভাই, জী ভাই করতে ব্যস্ত, আর তিনি তার মিথ্যাচার আওড়াচ্ছেন পাড়ার ছিঁচকে সরকারি দলের ছাত্র নেতার মতোন উদ্ধত কন্ঠে। ‘আমি ওকে বিয়েই করিনি, স্ত্রী হলে আমার কথা ছাড়া কোথাও যেত সে? আপনার স্ত্রী যায়?’, ‘ও তো নায়িকা হতে চায়, শাকিব খানের স্ত্রী হতে চায় না…’।

কী অসংলগ্ন কথাবার্তা! ৭১ টিভির উপস্থাপিকার মোক্ষম সব প্রশ্নে তার একই উত্তর ‘সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করেন’।

যে মেয়েটি তার সন্তানের মা হতে যেয়ে তার ছিপছিপে শরীর ছেড়ে মাতৃত্বের ফোলাফাঁপা রূপ ধারণ করেছে শরীরে, সে সুন্দরের দিকে মুগ্ধ চেয়ে থাকতে মন আর রুচি লাগে। আর ঢালিউডের দর্শকেরা (!) নাদুস-নুদুস নায়িকা দেখতেই পছন্দ করে বলে জানতাম, এখন তারা উন্নত মানের হয়ে জিরো ফিগার এর রুচিতে উঠে গেছে, তাও জানা ছিল না। কিন্তু শাকিব খান যে প্রচণ্ড ঘৃণা নিয়ে অপুর বর্তমান শারীরিক গঠনের কথা তুলে ধরলেন (আমি কী করে নায়িকা বানাবো এরকম মোটা একটা মানুষকে …), তাতে বুঝতে বাকি থাকে না, নতুন নায়িকার বাঁকানো কোমরে সিঁধেছে যে চোখ, অপুর মাতৃত্বে বেড়ে ওঠা কোল বালিশের মতো দু বাহুতে কী আর করে সে ছোক ছোক!

এ পর্যন্ত লিখে ফেসবুকে চোখ বুলাতেই দেখলাম শাকিব অপুকে মেনে নিয়েছেন! কাল তিনি খুব রাগান্বিত ছিলেন, আজ বুঝেছেন (নারী নির্যাতনকারীর ডিম থেরাপি) তার সংসার ,তার স্ত্রী, তার সন্তান! তাকে তাদের সাথেই থাকতে হবে।

যাক লাইভে অপুর কান্না তাহলে একেবারে বিফলে যায়নি। অপু আসলে খুব মোক্ষম সময়ে সঠিক কাজটি করেছেন। সবে নতুন প্রেমে মন মজেছে। এখনো মস্ত ভুলটা হয়তো করেননি শাকিব। নতুবা আরেকটি মেধাবী অভিনেত্রীর জীবনও বিপন্ন হয়ে যেত।

যে ছাগল্গুলো প্রশ্ন তোলে এতদিন কোথায় ছিলেন অপু বিশ্বাস স্ত্রীর দাবি না করে, তাদের কি জানা নেই একটা মেয়ের মাতৃত্বের পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন তার স্বামী বস্তুটি কতটা অপরিহার্য শারীরিক মানসিক বেদনার দাওয়াই হিসেবে! বাচ্চাটি যখন ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, এই বেড়ে ওঠা একা উপভোগ এর বিষয় নয়। দুজন নর-নারীর জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় এটি। মুম্বাই এর ছবির শ্যুটিং এর দিনগুলো নয় রে সুপারস্টার!  

শেয়ার করুন: