এরকম গল্প চলতেই থাকবে…..

ফেরদৌসী মাহজাবিন সুমনা: ‘মা’ নামক মানুষটি প্রতিদিন ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে। তারপর সে নামাজ পরে, এবং হাঁটতে বের হয়। হেঁটে ফিরতে ফিরতে তার প্রায় ৭ টা বাজে। অতঃপর সে রোজকার ঘরের সদাইপাতি থেকে শুরু করে সকালের নাস্তা তৈরী, ঘর পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, দুপুরের রান্না সব কিছু একের পর এক করতে থাকে। তার বয়স প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি এবং এই বয়সের গতানুগতিক অসুখগুলোর পাশাপাশি তার সর্বমোট তিনটি সার্জারির রেকর্ড রয়েছে।

sumonaবাবা নামক ব্যক্তিটি প্রতিদিন সকাল ৯ টায় উঠেন (রিটায়ার্ড পারসন)। তারপর সে খবরের কাগজে চোখ বুলাতে বুলাতে হালকা গরম পানির সাথে মেথির গুঁড়া মিশিয়ে পান করেন। বাসায় যখন সর্বমোট মানুষের সংখ্যা দুজন, এবং তার মধ্যে একজন সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন, তখনো তিনি খবরের কাগজ থেকে চোখ তুলতে তুলতে অতিশয় বিরক্ত ভঙ্গিতে মা নামক মানুষটির দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, কেন যে সকাল সকাল এমন বিরক্তিকর কলিংবেল এর আওয়াজ তাকে শুনতে হয়? কেন কলিংবেল এর আওয়াজ তার কানে পৌঁছানোর আগেই কেউ ঘরের দরজাটি খুলে দিচ্ছে না?

এমনি করে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে দিন গড়াতে থাকে। বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে রয়েছে, দুধওয়ালা অথবা খবরের কাগজ ওয়ালার সামনে বাবা নামক ব্যক্তিটির মায়ের উপর ধমক, কথায় কথায় “সারাদিন ঘরে বসে কি করো?” জাতীয় উক্তি এবং আরো নানাবিধ। অতঃপর বাবা নামক ব্যক্তিটির শরীরচর্চা, গোসল এবং দুপুরের নামাজের উদ্দেশ্যে চকচকে ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি পরে মসজিদে যাওয়া। আর এই সময়টুকুন মা নামক মানুষটি খরচ করেন রান্না, ঘর-পরিষ্কার, কাপড় কাচা ইত্যাদি কাজে।

অতঃপর দুপুরে খাবার টেবিলের খাবার ২ টায় না লেগে যখন ২.২০ অথবা ২.৩০ এ লাগে, তখনো বাবা নামক ব্যক্তিটির একই উক্তি! কী? করো কী সারাদিন ঘরে বসে? সময়মতো খাবারটাও দিতে পারো না! অথচ, মা নামক মানুষটি ততক্ষণে ঘর পরিষ্কার আর রান্নার তাড়ায় এইটাও ভুলে গেছে যে তার গোসলটাও ততক্ষণে হয়নি।

না, বাবা নামক ব্যক্তির উক্তিগুলো আমার ভাষায় কিছুটা অন্যরকম শোনালেও, কথাগুলো বাস্তবে শুনতে অনেক অনেক বেশি রূঢ়। আর হ্যাঁ, আমি কোনো গরিব অথবা অশিক্ষিত ঘরের গল্প বলছি না, গল্প বলছি এমন একটি পরিবারের, যেই পরিবার আমার অনেক বছরের পরিচিত, যদিও নিজের নয়। “বাবা নামক ব্যক্তি” এবং “মা নামক মানুষ” এর প্রতিচ্ছবি আমি প্রায় প্রতি ঘরেই দেখি। হয়তো রুঢ়তার রূপ কিছুটা ভিন্ন, কিন্তু গল্পগুলো অনেকটাই এক রকম।

এধরনের গল্প অনেক পুরোনো, অনেক আগে এসব গল্প অনেকে বলে গেছেন ভিন্নভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে। কিন্তু আমার গল্পটি আজ সকালের, একদম তাজা, গরমাগরম! আমার মৃত্যুর ১০০ বছর পরেও হয়তো আমার মতো কোনো মেয়ে এই ছোট্টো পৃথিবীর কোথাও বসে এই একই রকমের কোনো গল্প তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে লিখবে, কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না। যা হবে, তা হলো, মেয়েটির জামাই মেয়েটির উপর তার ইচ্ছা/আকাঙ্খা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা ডিসিশন চাপাবে।

তো বন্ধুরা, আসলে গল্পটা কি তখন বদলে যাবে? নাকি একই রকম রয়ে যাবে?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.