মুকুল কি ভালো বাবা?

Mukulগোধূলি খানঃ আমি জানি ও আমার আপন সন্তান না, কিন্তু আমি আমার বউকে খুব ভালবাসি, আর আমার বউয়ের ভালবাসার ধন যা আমারো পরম ভালবাসার, তাছাড়া একটা শিশুকে চোখের সামনে মরতে দেব কি করে? আমাদের একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বাচ্চাটা তো কিছুদিন বেশি মা-বাবার আদর পাবে।

আসল বিষয়ে অবতরণের আগে ভূমিকা নিয়ে বাড়াবাড়ি আমার খুব বিরক্ত লাগে। যদিও জানি ক্ষেত্রবিশেষ ভুমিকায় মুখ্য ভূমিকা রাখে। তাই আমিও আজ আসল বিষয়ে আসার আগে ভূমিকার সাহায্য নিলাম।

বড় মেয়েটার জমানো ডলার দিয়ে খেলনা কিনবে, ছোট বোনকে কিনে দেবে, সেই সাথে মা আর ড্যাডাকেও রেখেছে লিস্টে। কিছুদিন ধরে তার ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান চলে আসছিল, যদিও বাবা দিবসে তার নিজের পিগি ব্যাংক থেকে ৪৫ ডলার দিয়ে বাবার জন্য একটা কেক কিনেছিল। এবার বাকি ডলারগুলি খরচের পালা। মেয়ে একদম তার মায়ের মত, হাতে টাকা পয়সা রাখতে পারে না। খরচ করার জন্য অস্থির হয়ে পরে। কাজের চাপে বাচ্চাদের সময় দিতে ও বাসায় ইফতার করতে না পারায় জুয়েল নিজেও মনকষ্টে ছিল। ঠিক হল রবিবার হবে আইয়ান-অ্যালিনের ফান ডে। মেয়ে জু তে যাবে। পার্ক, চাকি চীজ, শপিং, বাইরে ইস্টার ডিনার (ইফতার ডিনার) অনেক লম্বা লিস্ট।

আমি বললাম তাহলে ম্যানহাটানের দিকে যাই, ফিফথ স্ট্রিট অথবা ব্রডওয়েতে শপিং করবো কারণ এখানে আমি গেলেও খুব একটা সময় কাটাতে পারিনি বাচ্চা ছোট বলে। ব্রডওয়ে পপুলার শপিং স্পট আর ম্যানহাটানের সব থেকে লম্বা রাস্তা। সেখান থেকে যাবো, সেন্ট্রাল পার্ক চিলড্রেন জু’তে। যদিও ম্যানহাটানে আসতে জুয়েল বা আমি কেউ খুব একটা পছন্দ করিনা, কারণ পারকিং সমস্যা।   আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টে দুইটা ছোট বাচ্চা ও তাঁদের এক গাদা জিনিস নিয়ে ঘোরা সহজ না।

একঘন্টা দশ মিনিট ঘুরে একটা পারকিং স্পট পেলাম, সেখান থেকে হেঁটে ব্রডওয়ে আসতে পনের মিনিট গেল। চারদিক দেখতে দেখতে হাঁটছি, আমার বুকের সাথে ক্যারি ব্যাগে ঝুলছে ছোট মেয়ে, কাধে আমার ব্যাগ, একহাতে সেটা চেপে ধরা, আরেক হাতে বাচ্চাসহ ক্যারি ব্যাগ টাকে বেড় দিয়ে ধরা, আইয়ান ক্লান্ত গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে, সে হাঁটবে না তাই জুয়েল ওকে কাঁধে নিয়ে হাটছে। হঠাৎ করে, একলোক সামনে যেন ঝুপ করে পড়লো। চিৎকার দিতে যেয়েও চুপ করে গেলাম, লোকটার হাতে একটা A4 সাইজের পোস্টার দেখে, সেখানে হেল্প প্লিজ, ইয়োর হেল্প ক্যান এ্যাড সাম মোর ডেইস অফ মাই সন’স লাইফ, লেখার সাথে একটা ছবিও আছে। লোকটির গায়ের পোশাক মলিন, চেহারা শুকনো, একমাথা এলোমেলো চুল। কিন্তু চোখ দুটি খুব উজ্জ্বল।

লোকটি বারবার সরি বলছে। আমি তাকে ঠিক আছে বলে জিজ্ঞ্যেস করলাম, তোমার ছেলের কি হয়েছে? সে ম্যাক্সিক্যান মনে হল, ইংরেজি খুবই কম জানে, যেমন আমি খুব অল্প জানি স্প্যানিশ। জুয়েল আমি দুইজনই তার সাথে কথা বলার চেস্টা করছি, আমার মেয়ে আমাদের থেকে বেটার স্প্যানিশ বোঝে। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম লোকটি কি বলছে?

আইয়ান বলল, মা হিস বয় ইস ভেরী সিক, নিড হেল্প। আমি তাকে বল্ললাম, জিজ্ঞাসা কর কি হইছে বাচ্চাটার?

মেয়ে বলল, আই নো দ্যাট মাচ, সো এই কান্ট হেল্প। সে মহা বিরক্ত কেন বাপ-মা থেমে গেছে, কেন খেলনার দোকানে যাচ্ছে না। বাবাকে সমানে পা দিয়ে গুঁতা দিচ্ছে কাঁধে বসে।

সাড়ে চার বছরের মেয়ে তাকে আর কি বলবো? ঢাকায় হলে না হয় কান টেনে দিয়ে একটা কঠিন বকা দেয়া যেত। এই দেশে পাবলিক প্লেসে সম্ভব না কি আর করা, তাই আমার নিজের ভুলভাল স্প্যানিশে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, কমতে লামাস ( তোমার নাম কি?) সে জানাল তার নাম ফ্রেডেল। আবার প্রশ্ন করলাম, কুয়ান্তস আনস এয়েন্তস? সে উত্তর দিল, আমার ছেলের বয়স সাত বছর। এর পর সে আমাকে ইশারাই একটু ওয়েট করতে বলল, এবং কাউকে ফোনে আসতে বলল।

সাত আট মিনিট পরে এক লোক আসল, তাকে দেখে আমার বাংলাদেশি বা কলকাতার মানুষ মনে হল, উনি স্প্যানিশে কিছু কথা বলল ফ্রেডেলের সাথে, বুঝলাম কেন ডেকেছে কি বিত্তান্ত এইসব।

তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি বাংলাদেশি?

Godhulyউনি এক গাল হেসে বললেন, ক্যামনে বুঝলাইন আপা, আমি তো চুস্ত ইংরেজি বলি কেউ বুজতে পারতো না, আমি কুথাকার মানুষ। আমারে সগগলে আমেরিক্যানি মনে করে।

আমি হেসে বললাম, আমিও ভেবেছিলাম, কিন্তু চান্স নিলাম আরকি। উনি নিজের নাম জানালেন হায়দার চোধুরি, এইদেশে আছেন ২২ বছর। আগে অনেক অড জব করেছেন, কিন্তু গত ছয় বছর ধরে ম্যানহাটানে নিজ ফুডকার্টে খাবার বিক্রি করেন। রাতের শিফটে ট্যাক্সি চালান। আগে অনেক কস্ট করে দেশে টাকা পাঠাতেন, অনেক লোন করে ফেলেছেন বন্ধুদের কাছে। তাই শোধ করছেন ইদানিং, এতো বছর পর বউ মেয়ের কাগজ হয়ে গেছে। তাঁদের আনবেন সামনের বছরের শেষে, কারণ সব লোন শেষ হয়ে যাবে তখন।  

আমেরিকাতে এসে উনি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তেমন একটা সাহায্য পাননি। আত্মীয় থাকলেও সেখান থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। আমেরিকাতে আসার তিন দিনের মাথায় তাকে মেসে উঠে যেতে হয়। যদিও সে সময় কোন কাজ ছিল না। জেট ল্যাগই কাটেনি। জ্যাকসান হাইটের আশেপাশে থেকে আত্মীয়র বাসার পথও চেনেন না। কিন্তু নিরুপায় হয়ে  তিনদিন পরের এক সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যান, হেঁটে হেঁটে ঘুরেন পথে পথে, পরে লজ্জার মাথা খেয়ে বাঙালি দোকান দেখে যেয়ে থাকার বা কাজের চেস্টা করেন, সেই সময় এতো বাঙালি দোকানপাটও ছিলো না। কেউ কিছুর ব্যবস্থা না করে দিলে উনি এক ভিন্ন ভাষী লোকের কাছে অল্পসল্প ইংলিশে জানান কাজ পাওয়া যাবে কিনা, বা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে কিনা। ওই লোক যার নাম এডওয়ার্ড, সে ওকে নিয়ে যায় ওদের মেসে। সেখানে ম্যাক্সিকান ও সালভাদরে লোকজন থাকে।

তারা ভাড়া ছাড়ায় থাকতে দিল, শুধু ঠিক হলো ওদের জন্য সে খাবার রান্না করবে। হায়দার চৌধুরি সেখানেই থাকলেন ছয়বছর। ওদের রান্না করার পাশাপাশি ওদের সাথে মালটানার কাজ করেন। শিখে জান স্প্যানিশ ভাষা। স্প্যানিশ দোকানে ভাল কাজ পান। এরপর জীবনের সবগুলি চড়াই উৎড়াই পার হয়ে আর কিছুদিনের মধ্যে সাংসারিক জীবন শুরু করতে পারবেন ১২ বছরের সন্তান নিয়ে, যাকে জন্মের পর মাত্র তিনবার দেখেছেন। বউকে সশরীরের দেখেছেন মাত্র চারবার। কিন্তু দেখলাম, উনার বউ মেয়ের কথা বলতে যেয়ে চোখ ভিজে যায়, আবার আনন্দে ঝকমক করে ওঠে।

যে মেসে উনি ছিলেন ছয় বছর, সেই মেসের এক এল সালভাদরিয়ানের চাচাতো ভাই ফ্রেডেল। ৮ মাস আগে আমেরিকায় আসে, বউ ও সৎছেলেসহ। ছেলের নাম  জুলিয়াস। ছেলের ক্যান্সার ধরা পরে তিন বছর আগে। দেশে চিকিৎসা করেছে সবকিছু বেঁচে বিক্রি করে, শুধু বসত বাড়িটা ছিল। তাও বিক্রি করে দিয়ে আমেরিকায় আসে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবৈধ পথে। কিন্তু আমেরিকায় এসে পরে পানিতে। চাচাত ভাইয়ের মাধ্যমে আশ্রয় জোটে জ্যামাইকাতে। কিন্তু এখানে নগদ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানো খুবই ব্যয়বহুল। জমানো টাকা শেষ হতে থাকে অনেকের পরামর্শ মত অবশেষে ব্যবস্থা হয় ৮০ ভাগ ফ্রি চিকিৎসার। বাকি ২০ ভাগ ব্যয়বহন করার জন্য সপ্তাহে পাঁচদিন তিনটা কাজ করে জামাই-বউ। দিন মজুরির চুক্তিতে। আর শনি রবিবার শহরের বড় বড় শপিং এরিয়াতে যায় ভিক্ষে করতে। এখানে উল্লেখ্য যে বাচ্চাটা বাঁচবেনা, বলেছিল দেশের ডাক্তার, এমন কি এখানকার ডাক্তারো তাই বলেছে। কিন্তু রক্ত বদলে বদলে হয়ত তার বেঁচে থাকার মেয়াদ কিছুদিন বাড়ানো যাবে।

বিশেষ একজনের কথা মনে পরায় তাকে বললাম প্রশ্ন করলাম, তোমার আপন ছেলে না তাও তুমি তোমার সব কিছু বিক্রি করে এখন ভিক্ষে করছো, তা ছাড়া সে তো বাঁচবেও না? আমার আশানুরূপ উত্তর দিল ফ্রেডেল, চোখে পানি নিয়ে, যার অনুবাদ করলেন হায়দার ভাই।

আমি জানি ও আমার আপন সন্তান না, কিন্তু আমি আমার বউকে খুব ভালবাসি, আর আমার বউয়ের ভালবাসার ধন যা আমারো পরম ভালবাসার, তাছাড়া একটা শিশুকে চোখের সামনে মরতে দেব কি করে? আমাদের একটু কস্ট হচ্ছে কিন্তু বাচ্চাটা তো কিছুদিন বেশি মা-বাবার আদর পাবে। সৃস্টিকর্তার সাথে লড়াই করছি ছেলের জীবন ঘড়ি যেন সহজে না থামে। শরীরের যতক্ষণ শক্তি আছে লড়াই করবো, তোমরা প্রে করো আমার ছেলের জন্য।  তোমাদের সাথে কথা বলে ভালো লাগলো বলে সে চোখের পানি মুছে ঘুরে দাঁড়ালো চলে যাবার জন্য।

আমি জুয়েল কে কিছু বলার আগেই দেখি সে ওয়ালেট বের করছে। সব সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার ফলে ক্যাশ নিয়ে ঘোরা হয়ই না প্রায়। তবুও জুয়েল গুনে দেখে ওর পকেটে তিনশ ডলার আছে, সে ২০ ডলার রেখে বাকিটা দিয়ে দেয় ফ্রেডেল কে। ডলার দেয়া দেখে কাঁধের উপর থেকে আইয়ান তার বাবা ড্যাডা কে জিগেসা করে কেন ওকে টাকা দিচ্ছি জুয়েল ওকে অর ছেলের গল্প বলতেই বলে ই ওয়ান্ট টু গিভ হিম মাই মানি টু। মেয়ে তার পকেট থেকে ১৮৮ ডলার বের করে দেয়, ফ্রেডেল কিছুতেই আইয়ানের টাকা নেবে না। আমি আর জুয়েল তাকে বলি, আমার মেয়ের দুইটার জন্য দোয়া করো।

আমরা তাতেই অনেক খুশি হব, আর তোমার ছেলেকে আমার মেয়ের টাকা থেকে একটা টয় কিনে দিও তাহলে আমার মেয়ে আরো খুশি হবে। ফ্রেডেল ফোন বের করে কাউকে ফোন করে উত্তেজিত হয়ে দ্রুত কিছু বলতে থাকে, আর কাঁদতে থাকে। দুই তিন মিনিট পরে বলে একটু কথা বল ফোনে আমার বউ থ্যাঙ্কস দিবে (হায়দার ভাই দোভাষীর কাজ করতে থাকেন, ঊনার চোখেও পানি) আমি ফোন নিয়ে হ্যালো বলতেই মহিলা হাউমাউ করে চীৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দেন, সেই সাথে কি যে বলেন আমি কিচ্ছুই বুঝি না শুধু একটা শব্দই বুঝি গ্রাসিয়াস ম্যাম গ্রাসিয়াস। মহিলার কান্না চলতেই থাকে।

আমি সহ্য করতে না পেরে ফোন হায়দার ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলি আপনি উনাকে কান্না করতে না করেন, আর আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করতে বলেন।

ফ্রেডেল তার বউকে এতোই ভালবাসে যে বউয়ের আগের পক্ষের সন্তানের জন্য ভালবাসার কোন কমতি অনুভব করেনা। আর করে না বলেই নিজের সব কিছু বেঁচে দিয়েছে বাচ্চাটা যাতে একটু বেশি দিন বাঁচে, একটু বেশি দিন মা বাবার আদর পায়। বাবা কি একেই বলে? হুমায়ুন আহমেদ লিখেছিলেন, পৃথিবীতে একটাও খারাপ বাবা নেই। কথাটা সত্যি হলেই ভাল হতো।

এবার ফিরি আসল ঘটনায়, ফ্রেডেল যেমন সন্তান পাগল বাবা, তেমনি মনে হয়েছিল, রকিবুল ইসলাম মুকুল, দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নাজনীন আখতার তন্বীর স্বামী, দুইদিন আগেও গাজী টিভির নিউজ এডিটর ছিলো, সেও তেমন একজন বাবা।

 

২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সপরিবারে আমেরিকা আসে তন্বী। সদ্য পাঁচে পা দেয়া মেয়ে চন্দ্রমুখী বাবা-মায়ের হাত ধরে উড়ে আসে।  অনেক প্ল্যান ঘুরবে তন্বী মেয়েকে নিয়ে। লম্বা ট্যুর, মেয়ের সব শখ পূরণের চেস্টা মায়ের। মেয়ের ভিসা করানো থেকে সব কিছু করে তন্বী। কারণ ও আসার আগে থেকেই যোগাযোগ করছিল। ওদের প্ল্যান ছিলো, তিন চারদিন আমাদের বাড়িতে (ম্যারিলান্ডে তখন আমরা) বেড়ানোর, সেই সাথে ওয়াশিংটন ডিসি।  প্লেনে মেয়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। আগের থেকেই ও ভুগছিল লিভার সিরোসিসে। বাচ্চা একটু সুস্থ হতেই বাবা-মা কোন মতে শেষ করে ইউএন সামিট। তারপর বাচ্চাকে নিয়ে বেড়া্নো শুরু কিন্তু চন্দ্রমুখী আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে।

তন্বীর জোরাজুরিতে ডাক্তার দেখানো হয়, ডাক্তার টেস্ট দেয়, তা করানোও হয়। বিল আসে ১ হাজার ডলার।  বিল দেখে চিকিৎসা করতে আর রাজি হয় না মুকুল, বলে এখানে অনেক খরচ বেশি, দেশে গিয়ে চিকিৎসা করাবো, তন্বী অনেক কান্নাকাটি করলেও মন গলেনি মুকুলের।

তন্বী আমেরিকায় বেড়াতে আসে লোন করে। এ নিয়ে আমি বলি পাগলের কাণ্ড, এতো টাকা লোন করেছো? তন্বী বলে, মেয়ের জন্য করেছি, মেয়ের শখ মেটাবো। আমি বলি, তুমি লোন করেছো। মুকুলও কি লোন করেছে? তন্বী উত্তর দেয় না, হাসে, বলে, রাখো তো এইসব কথা। সে কথা ঘুরিয়ে নেয়।

যদিও ওদের কিছু বন্ধু যাদের এখানে ছিল তন্বী-মুকুল তারা ফ্রি চিকিৎসার কথা বলে, কিন্তু মুকুল রাজী হয় না তার একমাত্র সন্তানকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাতে।

আমাকে তন্বী বলে, এই মাসের (অক্টোবর) শেষে আসবো তোমার ওখানে, কিন্তু আসে না। বলে ঠাণ্ডা বেশি, মেয়ের কষ্ট হচ্ছে ঠাণ্ডায়, আমরা ফ্লোরিডা যাচ্ছি, ওখানে ওয়েদার ভাল, আর মেয়েও ডিজনি ওয়ার্ল্ড দেখতে চাইছে। ওখান থেকে ফিরে তোমার ওখানে যাবো।  ওরা ঘোরে ওখানে, নিউইয়র্কে ফিরে আসে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায়, বাচ্চা নিয়ে বাসায় থাকে তন্বী দিনের পর দিন, মেয়ে একটু ভাল হতেই চলে যায় ঢাকায়, কারণ এখানে মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছিল না। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ছিল সেটা।

লক্ষণীয়, খরচ বেশির কারণে মুকুল চন্দ্রমুখীর চিকিৎসা উন্নত দেশে করায়নি। আর ফ্রেডেল সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে দেশ থেকে চলে আসে অবৈধ পথে। ছেলের চিকিৎসা করাতে। ছেলেটি ফ্রেডেলের নিজের বায়োলজিক্যাল না, কিন্তু চন্দ্রমুখী মুকুলের নিজের সন্তান।

ঢাকা ফিরেই যে মুকুল চিকিৎসা করে তা না, মেয়ের চিকিৎসা করে নানা-নানী। চন্দ্রমুখীর শরীর খারাপ হলে তন্বীর আম্মা বলতেন, মুকুল চন্দ্রের শরীর ভাল না, ইউরিন হলুদ ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

মুকুল উত্তর দিতো, খালি ডাক্তার ডাক্তার করেন কেন? পানি খাওয়ান পেসাব ঠিক হয়ে যাবে।

তন্বী মেয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখে  মুকুলকে রিকোয়েস্ট করে জমি বেঁচে মেয়ের ভালো ও উন্নত চিকিৎসা করাতে। কিন্তু মুকুল ভাল দাম পাবে না বলে জমি বেচতে রাজি হয়নি। এসময় তন্বী মুকুলের পা ধরেও কেঁদেছে, সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য। মুকুল টাকার জন্য মেয়েকে চিকিৎসা করেনি, কিন্তু এপ্রিল মাসে আবার আমেরিকাতে আসে একা একা, কারণ অসুস্থ মেয়ের জন্য আগের বার প্রাণ খুলে বেড়াতে পারেনি।

তন্বীকে বলি, এখন তো ওয়েদার ভাল এখন তো তোমরা সবাই আরাম করে ঘুরতে পারতে, তুমি এলে না কেন? তন্বী বলে, না আবার এতো দূর বাচ্চাকে নিয়ে যাবো, মুকুল একাই ঘুরুক।

মুকুলের বেড়ানোর সময় কি টাকা খরচ হয়নি? (ওর টাকা কোথায় খরচ করবে না করবে তাতে কি আমার বলার আছে)

সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ চন্দ্র অজ্ঞান হয়ে যায়, তারপরের কথা সবার জানা, হাসপাতাল থেকে ফেরে না চন্দ্রমুখী, উড়াল দেয় অচেনা দেশে একা একেবারে একা, মেয়ে একা হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারে না তন্বী, লাফ দেয় পাঁচতলা থেকে।

তন্বী যে কয়দিন ঢাকা মেডিকেলে ছিল, মুকুল সেবা যত্নে ভরিয়ে রাখত তন্বীকে। বাড়ি ফিরে রাতে সেফবুকে স্ট্যাটাস দিত যা পড়ে মন বেদনায় আর্দ্র হয়ে যেত। তন্বী আরো চিকিৎসার জন্য সিআরপি যায়, সাভারে। এরপর থেকে তন্বীকে বা চন্দ্রমুখীকে নিয়ে লেখা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে থাকে মুকুল, অদ্ভুত ঠেকে মেয়েকে নিয়ে এমন কবিতা লিখেছে মুকুল (পরে বুঝলাম মেয়েকে নিয়ে নয় পরস্ত্রী নিয়ে লিখেছে)।

মুকুল সবাইকে বলতে থাকে, তন্বী আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। তন্বী আর কোনদিন মা হতে পারবে না। তন্বী পঙ্গু হয়ে যাবে। খুব ধীরে ধীরে সবার মনে ঢুকাতে থাকে, তন্বী মানসিক রুগী হয়ে গেছে, সবখানে সবসময় চন্দ্রমুখীকে দেখে। ও ভাল হবে না। আর প্রায় প্রতি রাতে লিখতে থাকে, কিছু খায়নি, না খেয়ে আছে, হাত পুড়িয়ে রান্না করছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। মুকুলের জন্য তন্বীর মা প্রতিদিন রাতের খাবার পাঠাতেন, এমনকি ঢাকা মেডিকেলও মুকুল তন্বীর মায়ের রান্না করে পাঠানো খাবারই খেয়েছে।

সূত্রমতে, মেহেরুন বিনতে সিঁথি নামের মেয়েটি প্রায়দিন মুকুলের অফিসে দুপুরে খাবার নিয়ে আসত। আর মুকুল তার সাথে তন্বীর হাসপাতালে থাকার সময়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সাভারে মুকুল তন্বীকে আর নিয়ম করে যেত না দেখতে, কাজের অজুহাত দিত। ব্যস্ততার কথা বলে কাটিয়ে দিত।

তন্বী সিআরপি থেকে বাড়ি ফেরে জোর করেই, মুকুল চাইছিল আরো কিছু দিন থাকুক, ডাক্তার বাড়িতে যেতে বললেও মুকুল চায়নি তন্বী ফিরে আসুক। চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো আবার সন্তান নেয়ার চেষ্টা করে ওরা।  মুকুল হতবাক হয়ে যায় তন্বীর প্রেগন্যান্সির খবরে।

আর তারপর থেকেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। নানানভাবে তন্বীকে অপমান করতে থাকে। তন্বী কাউকেই কিছু বলে না মুখ বুঁজে সহ্য করে। মানুষ মুকুল হয়ে ওঠে ভয়াল। বাইরে আবার লক্ষ্মীটি। তন্বীকে বারবার প্রোভোক করে আত্মহত্যা করার জন্য। কারণ চন্দ্রমুখীর জন্য সুইসাইড করাটা বেশ বিশ্বাসযোগ্য কারণ তন্বী একবার করেছেও। কিন্তু তন্বী পেটের সন্তানের কথা ভেবে চুপ করে থাকে, কারন ও বিশ্বাস করে চন্দ্রমুখী আবার ফিরে আসছে নতুন করে। ভাবে বাচ্চার মুখ দেখলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মুকুল অবশেষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, এ সন্তানের দায় তার না। তন্বী ওর কাগজের বউ মাত্র। সে নতুন করে সুখ খুঁজে পেয়েছে, তাকে না পেলে সে জীবন শেষ করে দেবে। তা পড়ে আমরা সবাই জেনে যাই। এর আগ পর্যন্ত কাক-পক্ষীকেও জানতে দেয়নি তন্বী।

সব থেকে কাছের বন্ধু মন্টিও জানত না। জানল মুকুলের ফেসবুক ওয়াল থেকে। মুকুল সব সময় তন্বীকে বলেছে বাচ্চা হবার পর ওকে ডিভোর্স করবে, সিঁথিকে বিয়ে করবে। যে কোন দিন তালাকনামা পাবে, বাচ্চা হবার ওয়েট করছে মুকুল।

অনেকেই দেখি লিখছে কেউ কেন তাদের মিলিয়ে দেয়নি, দুপক্ষের কথা শোনা দরকার, প্রায় ৩০০ মানুষ লাইক করেছিল ওই স্ট্যাটাসে। ৯৯% মানুষ তাকে নতুন জীবনের সাধুবাদ জানিয়েছিল। কেউ  লিখেছিল, যা ভাল লাগবে তাই করেন, কেউ লিখছিল, আপনার জীবনে কি করবেন না করবেন তা আপনার ব্যাপার, কাউকে ভয় করেন না আছি সাথে।

তন্বী মুকুলের প্রকৃত বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী তারাই শুধু বলেছি কি হচ্ছে? কেন হচ্ছে? সমস্যা কি জানতে চেয়েছে? মুকুল কে বোঝাতে চেয়েছে? আমি কক্ষনো মুকুলের সাথে হাই হ্যালো ছাড়া কোন কথা বলিনি, আমার ভাল রিলেশন ছিল তন্বীর সাথে। আমি মুকুলকে ফোন করেছি, ইমেইল করেছি, ফেসবুকে বলেছি, তাকে যে বোঝাতে গেছে তার সাথেই খারাপ আচরণ করেছে। আমাকে মুকুল বলে আমি খারাপ না, এতোদিন আমাকে এই চিনলেন, আমি কোন ভুল করিনি। মুকুলের ভাল রিলেশন যাদের সাথে তাঁদের কাছেও রিকোয়েস্ট করেছি মুকুলকে বোঝানোর জন্য। আমি সহ্য করতে না পেরে মুকুলকে আনফ্রেন্ড করি।

মনের মিল না হলে মুকুল তো পারতো তন্বীকে সঠিকভাবে ছেড়ে যেতে, কেউ থাকতে না চাইলে জোর করার কিছু নাই। কিন্তু এ কি পথ? সবার কাছে তন্বীকে ছোট করতে চাওয়া? পুরা পারিবারিকভাবে বা আইনানুগভাবে মুকুল তন্বীকে ছেড়ে গেলে তো আজ এতো ঘটনা ঘটে না। নিজের ইমেজ বজায় রাখার জন্য নোংরা পথ বেছে নেয়ার কোন কি দরকার ছিল?

তন্বীর আমরা যারা বন্ধু, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী তারা তন্বী পাশে দাঁড়াই কিন্তু তন্বী সবসময় চেয়েছে সংসার টেকাতে। মুকুল তখন নিয়মিত গায়ে হাত তোলে, এক হাত পুরা অকেজো, আরেক হাত দিয়ে পেটটা বাঁচাতে চেষ্টা করে তন্বী, মুকুল মারধর করে আর নোংরা নোংরা গালি দিতে থাকে। ফোন করে সিঁথিকে শোনায় তন্বী কাঁদছে, পা ধরে অনুনয় করছে। এসব কথা তন্বী জানায় অনেক পরে।

দুই দিন পর পর তন্বীকে ফোন করি, কথা বলি, ওর মন ভাল করার জন্য চেষ্টা করি, হাসাতে চেষ্টা করি। সেসময় আমিও সেকেন্ড টাইম মা হবো। অগাস্ট মাসে মুকুল তন্বীকে বেদম মাইর দেয়। লাথি মারে পেটে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলার জন্য।

তন্বীর চিৎকারে বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশী ছুটে আসে, তন্বীর বন্ধুরা ছুটে যায় খবর পেয়ে, এটা সত্যি ওইদিন সবাই তন্বীকে মামলা করতে বলেছিল, আমিও বলেছিলাম, রক্তাক্ত তন্বীকে দেখে সবার মনে একই কথা এসেছিল, যে মুকুলকে পুলিশে দাও।

তন্বী রাজি হয়নি সেদিনও, কেননা তন্বী সংসার বাঁচাতে চেয়েছিল। কারো অনুরোধেই হ্যাঁ করেনি তন্বী। সে তখন ভেবেছিল মেয়ের মুখ দেখে মুকুল ফিরে আসবে।

কিছুদিন পরে মেয়ে আসে দুনিয়াতে, কিন্তু মুকুল মুখ ফিরিয়ে নেয়, হাসপাতালে যে কয়দিন ছিল মুকুল যায়নি, এমনকি বাসায় ফেরার পর মেয়ের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিশ টাকা খরচ করে একটা ঝুনঝুনিও কিনে আনেনি হাতে করে। তন্বীর অফিস সবসময় পাশে ছিল, ২১ মাস ধরে তন্বীর বেসিক স্যালারি দিয়ে গেছে। তন্বী সেই টাকায় আর মা-বোনের সাহায্যে সংসার চালাচ্ছিল। মুকুল মেয়ের দুধের টাকা দূরে থাক, সংসার খরচই দিচ্ছিল না, বাড়ি ভাড়াও বাকি রেখে দিয়েছিল।

এ সময় অনেক সিনিয়ার সাংবাদিক ও মুকুলের অফিসের শুভাকাঙ্ক্ষীরা চেয়েছেন মুকুলকে বোঝাতে। মুকুলকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে। আজ যারা দুই পক্ষকে শুনতে চান, তারা কোথায় ছিলেন? তন্বী দিনের পর দিন মার খেয়ে চোখের পানি ফেলেছে তখন কে গিয়েছিলেন সমব্যথী হয়ে?

অনেকেই সংসার, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে কথা বলছেন। এই একটা বছর কে কে ওদের জন্য এই কাজ গুলি করেছেন? তন্বী যখন দিল্লী যায় অপরেশনের জন্য তখন মুকুলকে জানালে সে বলেছে, তুমি মর কি বাঁচো তাতে আমার কিছু যায় আসে না, তুমি দিল্লী যাবা কি নরকে যাবা আমি জানতেও চাই না। ১মাস ১০ দিন তন্বী দিল্লী ছিল, মুকুল কি একবারো মেয়ের খবর নিয়েছে? খালার কাছে কেমন আছে জেনেছে?

তন্বী দিল্লী থেকে ফিরে দেখে, মুকুল বাসা খালি করে জিনিসপত্র নিয়ে বনশ্রী চলে গেছে, সাথে সিঁথি। এই সময় আপনারা কিছু জানতে চান নাই কেন? নাকি পুরুষ মানুষ ব্যভিচার করবেই আর নারী মুখ বুঝে সহ্য করবে। কান্নাকাটি করবে দেয়ালে মাথা ঠুকে রক্তাক্ত হবে? আর পতিদেব কবে সদয় হবেন তার প্রতিক্ষায় থাকবেন?

আবার অনেক সিনিয়র সাংবাদিক বলেছেন স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার, আমাদের কিছু বলা সাজে না। তারা কেউ কেউ আবার বলছেন, থানা-পুলিশ কেন আবার, কথা বলে সব ঠিক করে নিলেই হতো। রিয়েলি!

আজ মুকুল যা করেছে তার হাজার ভাগের একভাগ তন্বী করলে, নারী পুরুষ নির্বিবাদে মুকুলের পাশে থাকত, তন্বীকে পতিতা ট্যাগ দিতে কারো বাধত না। তন্বীকে একঘরে হয়ে থাকতে হতো।

আমাদের শত বোঝানোতেও  দিল্লী থাকা কালীন সে কেস দেয়নি, আমরাও হাল ছেড়েদি, ২০ দিন আগেও তন্বী কেস করতে রাজি হয়নি, কেউ জানতে চাইছেন না তাহলে এতো কিছুর পর যে মেয়ে কেস করল না তাহলে এখন কেন করল? কোন কষ্ট থেকে? মা ছাড়া সেই কষ্ট কেউ কি বুঝবেন?

মেয়ের চিকিৎসার জন্য যে জমি বিক্রি হয়নি, হয়তো চন্দ্রমুখী উন্নত চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেত, তন্বীর বুক খালি হত না, সেই জমি লুকিয়ে বেঁচে দিল, শুধু একটা অবৈধ রিলেশনকে নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করার জন্য।  নিজের সন্তানকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে। সেই মা কি করে সহ্য করবে? ওই জমি কেনার টাকা কি মুকুল দিয়েছিল একটিও?

আজ তন্বী নিজের মেয়ের মানের জন্য কেস করেছে। নিজের কন্যার ভবিষ্যতের জন্য কেস করেছে। ফেসবুকে মেয়ে মেয়ে করে মানুষের সহানুভুতি অর্জন করেছে। সেই মেয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কই ছিল মুকুল কেউ তা জানে কি? মুকুলকে বার বার রিকোয়েস্ট করেছিলাম চন্দ্রের মা-বাবা একসাথে বসে চন্দ্রকে মনে করুক। চন্দ্রের সব থেকে প্রিয়মানুষ দুইজন এক সাথে থাকলে চন্দ্র ওপার থেকেও খুশি থাকবে। সে ছিল সিঁথিকে নিয়ে।

মেয়ের প্রতি ভালবাসা এইভাবেই দেখালো মুকুল, বাহ এই না হলে আদর্শ পিতা।

আর আয়রা যার বয়স সাত মাস প্রায়, জানে না বাবা কি? চেনেই না বাবাকে? বাবা তো কোলে নিয়ে হামি দেয়নি? দোলাতে দোলাতে গান শুনিয়ে ঘুম পারায়নি, চুমুতে কচি গাল দুটি লাল করে দেয়নি। কাতুকুতু দিয়ে খিল খিল করে হাসায়নি, লুকিয়ে থেকে পিক এ বু বলেনি। বুকের সাথে ধরে চোখে চোখ রেখে কথা বলেনি, বাবার বুকের উপর বসে দোল খায়নি, ঝঁপিয়ে পড়ে বাবার কোলে যাওয়া হয়নি। বাবা বাবা করে ডাকেনি, বাবাটা তো তাকে মেয়ে বলে স্বীকারই করেনি। পৃথিবীর সব বাবাই ভাল হবার কথা কিন্তু মুকুল যে উদাহরণ হয়ে গেল?

আমরা তন্বীর বন্ধুরা সবসময় ওর পাশে থাকবো, এটা ওর জীবনের ব্যাপার, তন্বী যদি মামলা তুলে নিয়ে মুকুলকে মাফও করে দেয়, তাহলেও পাশে থাকবো, কারণ আমরা ওর বন্ধু, ওর জীবনের ডিসিশন মেকার না।

আপনারা রুনি মরার পর গসিপ করতে ছাড়েননি? খুন হয়ে যাওয়া রুনিকে নিয়ে কম পানি ঘোলা করা হয়নি? তাই প্লিজ এই মেয়েটাকে বাঁচতে দিন, ওকে ওর মত করে নিজের জীবনে চড়াইগুলি পার হতে দিন, আর নারী মানেই মুখ বুঝে মার খেয়ে যাবে আপনাদের, পরে এসে একটা কলিজা শিঙাড়া বা এক কাপ চা খাওয়ায়ে তার দুঃখ ভুলাতে চাবেন।

নিজের ঘরের দিকে তাকান, নিজ বউয়ের সাথে টাইম কাটান, তাঁদের মনের মানুষ হয়েও মনকে চিনেন না। চেনার চেষ্টা করুন, ফেসবুকে হ্যাপি ছবি দিয়ে না দিয়ে সত্যিকার হ্যাপি হোন। নারী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে বিচার করুন, তন্বীর মত আমরা রাজি আমিনের পাশেও থাকতে পারি যদি উনি চান। আমরা সত্যের ও মানবতার পাশে থাকছি, অন্যায় বা নিপীড়কের পাশে নয়।

সবার কাছে অনুরোধ আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিন। ক্ষমতা বা টাকার জোরে আইনকে প্রভাবিত করবেন না। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকুন, দোষী ব্যক্তি শাস্তি পাক। আর খারাপ কাজের দোসর সিঁথিকে বিচারের আওতায় আনুন, সে যা করেছে বুঝে শুনেই করেছে। সিঁথির মাকে তার মেয়ে ব্যাপারে কথা বললে, তিনি বলেন আমার মেয়ের পিছনে লাগছে সবাই।

মহিলা আরো বলেন, মুকুলের বউ তো তার হাজবেন্ডের সাথে থাকতে চায় নাই, তাই উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল, মহিলার কথা শুনে আমি পুরাই অবাক।

শেষ করি এদফায়, আমরা সন্তানের জন্য ফ্রেডেলের মতো বাবা চাই, নাকি রকিবুল ইসলামের মত? হুমায়ুন আহমেদের মত বলতে চাই পৃথিবীর সব বাবাই ভাল বাবা, একটাও খারাপ বাবা নাই, তন্বী মুকুল একসাথে থাকুক বা না থাকুক মুকুল যেন আয়রার একটা  ভাল বাবা হয়, তাহলে পৃথিবীতে আর একটা খারাপ বাবা থাকবে না।

(হাসপাতালের ডাক্তারের সাথে কথা হয়, জুলিয়াস খুব একটা ভালো নেই, ওর জন্য দোয়া করেন।)

সাংবাদিক ও লেখক।

 

শেয়ার করুন:

অনেক বেশি ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে। বাবা অথবা মা হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে যখন আমরা ভাল হতে পারবো তখন সব সম্পর্ককে আমরা শ্রদ্ধা করতে পারবো। পারবো অন্যের পাশে দাঁগাতে। কাছের মানুষটিকে ভালবাসতে। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।