শামীমা মিতু: ঘটনা-১:গত ২০ আগস্ট হবিগঞ্জে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় রাস্তায় ফেলে কলেজ ছাত্রীকে চড় থাপ্পড়, মারধর করেছে এক যুবক।
ঘটনা-২: গত ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে থানা জামে মসজিদের ইমাম।
ঘটনা-৩: গত ১ জুন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বিচার চাইতে গিয়ে সালিশ বৈঠকে পুত্র ও অন্তসত্ত্বা কন্যার সামনে ছায়মা খাতুন(৩৪) নামে এক গৃহবধুকে নষ্টা উপাধি দিয়ে চড়- থাপ্পড় মেরে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে লাথি মেরে কাচারী ঘরের বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দিয়েছেন পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোফাখখারুল ইসলাম ফারুক।
ঘটনা-৪: গত ২ আগস্ট নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগরে এক প্রেমিক ও তার বন্ধুদের দ্বারা প্রেমিকা ও প্রেমিকার বোন গণধর্ষণের শিকার।
নতুন এক ফ্যাশন চালু হয়েছে । একটা ধর্ষণ হলো কি না হলো শুরু হয়ে গেল কোরাস হুক্কা হুয়া। কী এক নতুন জীব আমদানি হল, নারীবাদী। শুরু হয়ে গেল গলাবাজি। আর আকাইম্মা মিডিয়াগুলোও হামলে পড়ল ওমনি। ধর্ষকের শাস্তি চাই, মহিলাদের নিরাপত্তা চাই। মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ল একদল । আরে বাবা ধর্ষণটা হলো কেন, সেটা একবারও ভাববা না?
নিরাপত্তার চাবিকাঠি তো তোমার নিজের হাতেই মেয়ে। তুমি সভ্য-ভব্য হয়ে থাকো। বাঙ্গালী সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে শরীর ঢেকেঢুকে রাখো। সন্ধ্যে নামার আগে বাড়ি ঢোকো। ব্যাস! নিশ্চিন্ত । তা নয়, তুমি সমাজ রীতিনীতিকে তুড়ি মেরে আধুনিক হবে। নিজেকে পুরুষের সমান ভাববে। বাসের ভাড়া বা কাঁচাবাজারে সবজির দাম নিয়ে মুখে মুখে চোপা করবে আর পার পেয়ে যাবে?
সে তুমি প্লেন চালাতে পারো, উকিল-জজ হতে পারো, মাল্টিন্যাশনালের টপে বসে ছড়ি ঘোরাতে পারো। কিন্তু ভুললে চলবে না ফাইনালি তুমি মেয়েছেলে। তোমার দপদপানি সহ্য করার থেকে মৃত্যুও শ্রেয়। হ্যাঁ, পড়াশোনা করতে দেওয়া হচ্ছে, চাকরি-বাকরি করছ সেটাও মেনে নিচ্ছি। কিন্তু লিমিটটা তো ভুললে চলবে না। দু’পয়সা রোজগার করছ বলে সংসারে মতামত দেবে বা দু’পাতা পড়াশোনার সুযোগ দিচ্ছি বলে নিজের পছন্দের ছেলের মাঝে মৌজ করবে, এই বেলেল্লাপনা সহ্য করি কী করে! তাই শিক্ষা দিতে হবে। উচিত শিক্ষা। দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা। যাতে আর কোনও মেয়েমানুষ এই নচ্ছারপনার সাহস আর না পায়।

আরে বাবা এই সমাজটাকে গড়তে যুগ যুগ ধরে কত ঘাম, রক্ত, বীর্য ঝরাতে হয়েছে পূর্বপুরুষদের(মহিলাদের নয়)। বেলেল্লা ক’টা মেয়ের জন্য সেইসব মূল্যবোধ রসাতলে যাবে আর হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব সে বান্দা পাওনি। স্বাধীনতাটা তোদের দিল কে?
নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ ভাববে, এত আশা করো না। বিদ্যাবুদ্ধির যতই বড়াই করো, মনে রেখো, ওপরওয়ালা আমায় পৌরুষ দিয়ে পাঠিয়েছে। ওখানেই তোমাদের পারমানেন্ট ল্যাক। পেটে ভাত না থাকলে সহ্য করতে পারি। কিন্তু পৌরুষে ঘা! এ মেনে নেওয়া যায় না।
এই যে কথায় কথায় পুরুষতন্ত্রকে কাঠগড়ায় তুলছ, বুকে হাত দিয়ে বল তো পুরুষ বিনে কি হাল হবে তোমার? তোমার রক্ষাকর্তা কে? বিপদে পড়লে কাতর চোখে চাও ঝাঁপিয়ে পড়ব তোমায় রক্ষা করতে। কিন্তু বাছা, নিজে যদি রুখে দাঁড়াও, প্রতিবাদ করো, অতটা সহ্য করা যাবে না। তখন কিন্তু দল বেঁধে বলবো, আসলে তোমারই চরিত্র খারাপ ছিল। সমাজে বীরপুরুষেরা থাকতে তুমি অবলা নারী নিজেই নিজের দায়িত্ব নেবে? ওটা পৌরুষে ঘা দেয়। অসহায় অসহায় মুখ করে আশ্রয় চাও। কাঁধ বাড়িয়ে দেব, কিন্তু নিজের মতো চলতে চাইবে, এত বাড় বেড়ো না। উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো।
তোমার চাকরি, পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট কি কাজের জোরে? ধাপ্পা দেওয়ার জায়গা পাওনি? আসল তো তোমার ৩৪-২৪-৩৬! বাসে ট্রেনে লঞ্চে ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে অত শুচিবাই কীসের? আর আবদার দেখ! তুমি ডিভোর্সি, স্বামী তোমায় রিজেক্ট করলো কেন তা পরখ করতে চাইলেই শ্লীলতাহানি!!! আমায় ছাড়ো। একশোটা মহিলাকেই জিজ্ঞেস করো, নব্বইজন তোমাকেই দুষবে।
একবার ভেবে দেখ দেখি কত স্বাধীনতা দেওয়া হয় তোমাদের? ঘরের বাইরে পা রাখছ এই তো ঢের। কিন্তু বাঁধা গরু ছাড়া যা খুশি তাই করবে একি মগের মুল্লুক? জেনে রেখ বেয়াড়া মেয়েমানুষকে শিক্ষা দেওয়া পবিত্র কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
তবে হ্যাঁ, একপাল কুলাঙ্গারও আজকাল আমদানি হয়েছে পুরুষসমাজে। চেহারায় পুরুষ, কিন্তু মিনমিনে কিছু পাবলিককে ওই মোমবাতি মিছিল-টিছিলে দেখা যাচ্ছে। পুরুষজাতের কলঙ্ক ওগুলো।
আর ফাঁসি চাই, ফাঁসি বলে চমকিও না! ওসবে ভয় পেলে কীসের পৌরুষ? বেয়াদপ মেয়েকে উদোম করে দল বেঁধে ছবক শেখানোয় যে মজা, তার জন্য দশ বার ফাঁসিতে ঝুলতেও পিছপা নই।
লেখক: সাংবাদিক, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট