মালালাকে আবারও অভিনন্দন

Malala 2উইমেন চ্যাপ্টার: আবারও সংবাদ শিরোনাম কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানের এই কিশোরী এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। একের পর এক তার প্রাপ্তিতে উইমেন চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন মালালাকে।

শিশু ও তরুণদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে পুরস্কারটি পাচ্ছেন মালালা এবং তারই সাথে যৌথভাবে ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থী।

নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থরবিয়ন জাগল্যান্ড শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যৌথভাবে তাদের নাম ঘোষণা করেন। নাম ঘোষণা শেষে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিশু-কিশোর ও তরুণদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সব শিশুর জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দুজনকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

১৭ বছর বয়সী মালালা ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী, মেয়েদের মধ্যে ৪৭তম, আর পাকিস্তানের তৃতীয় ব্যক্তি। মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে মালালা তালেবান জঙ্গিদের রোষানলে পড়েন এবং একপর্যায়ে তাদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে ফিরে এসে নারী শিক্ষার জন্যই কাজ করে চলেছেন।

অন্যদিকে আর ৬০ বছর বয়সী কৈলাস গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছেন, গড়ে তুলেছেন ‘বাচপান বাঁচাও’ আন্দোলন।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, “একজন হিন্দু, অন্যজন মুসলমান; একদিকে একজন ভারতীয়, অন্যদিকে একজন পাকিস্তানি; একই লক্ষ্য নিয়ে, শিক্ষার অধিকারের দাবিতে এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন- যা নোবেল কমিটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।”

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, “শিশুদের অবশ্যই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং অবশ্যই তাদের শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের কম। বিশ্বের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের স্বার্থেই শিশু ও তরুণদের অধিকারকে সম্মান দেখাতে হবে।”

মালালা সম্পর্কে নোবেল কমিটি লিখেছে, “বয়সে তরুণ হলেও গত কয়েক বছর ধরে তিনি নারী শিক্ষার অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে আসছেন। শিশু ও তরুণদের সামনে তিনি এই নজির গড়েছেন, যে নিজেদের অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টায় তারাও অবদান রাখতে পারে। আর এই লড়াই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে।”

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নে মোট ২৭৮ জনের নাম আসে, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির খবর ফাঁস করে দেওয়া এডওয়ার্ড স্নোডেন, পোপ ফ্রান্সিস, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মাকোয়েজ ও রাশিয়ার সংবাদপত্র নভোয়া গেজেটার নামও ছিল।

গতবারের মনোনয়নের তালিকাতেও মালালার নাম ছিল। কিন্তু তা না পেলেও জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘শাখারভ’ মানবাধিকার পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি সম্মাননা পান এই পাকিস্তানি কিশোরী।

পুরস্কার বাবদ একটি সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবেন মালালা ও কৈলাস। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এ পুরস্কার।

পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মেয়ে মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্ম ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই।

নারী শিক্ষার বিরোধী তালেবান জঙ্গিদের এলাকায় বসে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার পক্ষে বিবিসি ব্লগে লেখালেখি করে তিনি যখন পশ্চিমা বিশ্বের নজর কাড়েন, তখন তার বয়স মাত্র ১১। কিন্তু নারী শিক্ষার পক্ষে কথা বলায় তাকে পড়তে হয় প্রাণনাশের হুমকির মুখে।

Malala 3২০১২ সালের ৯ অক্টোবর সোয়াত উপত্যকার মিনগোরাত এলাকায় ১৪ বছর বয়সী মালালা ও তার দুই বান্ধবীকে স্কুলের সামনেই গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা।

ওই ঘটনা বিশ্বেজুড়ে আলোড়ন তোলে। তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে ফিরতে না পারলেও মালালা যুক্তরাজ্যে থেকে তার লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, জর্ডান, সিরিয়া ও কেনিয়ার মেয়েদের শিক্ষার সহায়তায় গঠন করেন মালালা ফান্ড।

গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক বক্তৃতায় মালালা বলেন, “চরমপন্থিরা বই আর কলমকে ভয় পায়। তারা নারীদেরকে ভয় পায়।… তালেবানরা ভেবেছিল বুলেট দিয়ে আমাদের স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।”

প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মালালা বলেন, “আসুন আমরা খাতা-কলম হাতে তুলে নেই। এগুলোই আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সবার আগে শিক্ষা, শিক্ষাই সমস্যার একমাত্র সমাধান। একজন শিশু, একজন শিক্ষক, একটি কলম ও বই গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।”

(সংগৃহীত)

শেয়ার করুন: