জয়িতা শিল্পী: বাংলাদেশ পুলিশে নারীর যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। তখন মাত্র ১৪ জন নারী সদস্য যোগদান করেন যার মধ্যে ৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর এবং ৭ জন কনস্টেবল। এর দু’বছর পর ১৯৭৬ সালে আরও ১৫ জন নারী সদস্য ডিএমপিতে যোগদান করে ইউনিফর্ম সার্ভিসে সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল পদে। ১৯৮৬ সালে ৬ষ্ঠ বিসিএস-এর মাধ্যমে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন ফাতেমা বেগম। ৭ম বিসিএস-এর মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে চারজন নারী সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দশ বছর বিরতির পর আবার ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস-এর মাধ্যমে ৮ জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। এরপর আর তেমন বেগ পেতে হয়নি। প্রায় প্রতিবছর নারী কর্মকর্তা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এরই মধ্যে মেয়েরা তাদের পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। এসকল কর্মকর্তা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বিভাগে যেমন নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন তেমনি তাদের এই দৃঢ় অবস্থান অন্যান্য নারী পুলিশের মধ্যে আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি করেছে। দেশেই শুধু নয় কেউ কেউ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্যের সাথে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে করে বিশ্বে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং হাইতিতে দু’টি ফিমেল ফরম পুলিশ ইউনিট (ফিমেল এফপিইউ) সাফল্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। মোটকথা দেশে-বিদেশে নারী পুলিশ কর্মকর্তা সমভাবে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রমাণ করে যাচ্ছে।
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে BPWN (Bangladesh Police Women Network) যাত্রা শুরু করে সেগুলো হলো :আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নারীর ভূমিকা বৃদ্ধি, নারী নেতৃত্বের বিকাশ, পুলিশিং-এ নারীর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, নারীর কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি, অধিক সংখ্যক নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি, সেবার মান উন্নত করা, নারীর প্রতি বিরোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন, নারী ও শিশু ভিকটিমের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট প্রদান।
বর্তমানে BPWN-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মিলি বিশ্বাস পিপিএম, অতিঃপুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক, ডিএমপি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন রেবেকা সুলতানা, সহ-সভাপতি এআইজি (ক্রাইম-ওয়েস্ট), পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স ঢাকা, ফরিদা ইয়াসমিন বিপিএম, যুগ্ম নির্বাহী সচিব এসএস প্রটেকশন, এসবি মালিবাগ ঢাকা। বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়াতে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কই প্রথম। এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা ২৩ জন। পিআরপি এবং বিপিডব্লিউএন-এর যৌথ উদ্যোগে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত BPWN-এর প্রথম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে যে সকল বিষয় গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে সেগুলো হলো : উইমেন পুলিশের ভূমিকা, নেতৃত্ব, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের উন্নয়ন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, পেশাদারিত্ব, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
এই সংগঠনের দ্বিতীয় বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন ১১ ও ১২ জুন ২০১৪। সংগঠনের লক্ষ্য রাখতে হবে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রত্যেককে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য স্পেশালাইজড তৈরি করা প্রয়োজন। বর্তমানে পুলিশকে বহু ডিপার্টমেন্টে বহুমুখী কাজ সম্পাদন করতে হয়। যারা যে ক্ষেত্রে ভাল করছেন তাদেরকে উক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে ঐ সেক্টরেই কাজের সুযোগ করে দেয়া উচিত। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক নারীর কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি এবং দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এজন্য নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো খুব জরুরি। সেইসাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীকে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। BPWN যুগোপযোগী দক্ষ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী নারী পুলিশ রূপে নিজেদের দেখতে চায়। এজন্য নারীদের প্রস্তুত করতে হবে এবং পুলিশ বিভাগসহ সকলের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সহযোগিতার হাত সকলে প্রসারিত করবেন এবং BPWN (Bangladesh Police Women Network)-এর জয়যাত্রায় হাতে হাত মেলাবেন এটাই প্রত্যাশা সকলের কাছে।
লেখক : এসি এডমিন, রমনা ডিভিশন, ডিএমপি এবং ব্যানএফপিইউ-১, রোটেশন-৭, কিনসাসা, ডিআর কঙ্গো ফেরত