উইমেন চ্যাপ্টার: ঢাকায় গতকাল থেকে শুরু হয়েছে নারী পুলিশদের এক সম্মেলন। বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পুলিশ সদস্যরা। মূলত কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বা অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সদস্যদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়ানোই এই সম্মেলনের লক্ষ্য।
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শায়লা রুখসানা তার রিপোর্টে তুলে ধরেছেন, এদেশের নারী পুলিশদের কাজের ক্ষেত্রে ঠিক কি ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়?
কাজের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে নারী পুলিশ সদস্যদের মূলত কি কি চ্যালেঞ্জ এর সামনে পড়তে হয় সে বিষয়ে কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। চট্টগ্রাম থেকে আসা পুলিশ পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার মনে করেন সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ ।
চট্টগ্রাম পুলিশের পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার বলেন, “মহিলা পুলিশদের মূল চ্যালেঞ্জ যেটা আমরা ফিল্ডে কাজ করতে গিয়ে দেখি অনেকসময় একজন পুরুষকে পাবলিক যেভাবে নিচ্ছে সেভাবে একজন মহিলা নিজেকে রিপ্লেস করতে পারে না বা অন্যরা তাকে সেভাবে গ্রহণ করে না”।
নীলফামারী থেকে আসা কনস্টেবল সোনালী খাতুন বলছিলেন তার কাজের একদিনের অভিজ্ঞতার কথা। “কয়েকদিন আগে আত্মহত্যার একটি ঘটনায় মৃত মহিলার চেহারা দেখে খুব ভয় লাগছিল। কিন্তু যেহেতু মহিলার মৃতদেহ তাই আমাকেই করতে হয়েছে”।
কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্য মাথায় রেখেই ২০০৮ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল নারী পুলিশ নেটওয়ার্ক। কনস্টেবল থেকে শুরু করে নারী পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন দুদিনের এক সম্মেলনে।
নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরুর সময় নারী পুলিশের সংখ্যা ছিল ২০০০ জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আট হাজারে। অর্থাৎ মোট পুলিশের সংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
এই নেটওয়ার্কের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিলি বিশ্বাস জানান, নারী পুলিশ সদস্যদের কাজের জটিলতাগুলো অনেকটাই কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিলি বিশ্বাস বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা যে হয়না তা বলবো না। যেমন একটি থানায় যখন একটি নারী অফিসার কাজ করে তার যখন রাতেও ডিউটি পড়ে তখন সে হয়তো নানান সমস্যায় পড়তেই পারে। অনেক সমস্যার কথা কিন্তু তারা আমাদের হেল্পলাইনে বলে। তবে শতভাগ না হলেও এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তৃণমূলের নারী সদস্যরা কিছুটা হলেও উপকৃত হচ্ছে”।
সদস্যদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও মনোবল তৈরি, দক্ষতা বাড়ানো ইত্যাদি উদেশ্যে বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
নেটওয়ার্কের সেক্রেটারি অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার আবিদা সুলতানা বলছিলেন, “বিগত সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে তাতে কিন্তু ১৮ থেকে ২০ ঘন্টাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
খাওয়ার বা চেঞ্জ করবারও উপায় ছিল না। তো এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার জন্য শুধু শারিরীক নয় মানসিকভাবেও তাদের উদ্বুদ্ধ রাখার প্রশিক্ষণ দরকার। যাতে তাদের মনোবল থাকে”।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও নারী পুলিশ সদস্যরা একন পুরুষ সহকর্মীদের মতই সব ধরনের জটিল পরিস্থিতিতেই দক্ষতা দেখাচ্ছেন।
নারী পুলিশ পরিদর্শকের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে প্রতিটি থানায় নারী পুলিশদের নিয়ে একটি আলাদা ডেস্ক চালুর লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছেন তারা।