প্রভাতী দাস: আজকের দিনটি একটুও পৌষের কোন দিনের মতো ছিলনা। ঘুমে ভেঙেই মেঘে ঢাকা ছাই রঙ্গা আকাশ, হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বরঙ শ্রাবণের কোন উতল হাওয়ার দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। এই উত্তর গোলার্ধে মধ্য জানুয়ারিতে আজ তাপমাত্রা ৫০ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে ছিল অবিশ্বাস্য ভাবে। ‘আজি বরিষন মুখরিত শ্রাবণ রাতি স্মৃতিবেদনার মালা একলা গাঁথি’ ভেবে ভেবেই কাটিয়ে দিতে পারতাম সারাদিন।
কিন্তু বাদ সাধল ফেসবুক। খুলতেই বুঝলাম, পৌষ তো পৌষ আজ একেবারে পৌষ সংক্রান্তি, পিঠের পার্বণ। মন বৃষ্টি ভেজা ভুলে ছুটে গেল কুয়াশা মোড়ানো শীতের অলৌকিক কিছু মিঠে রোদের ভোরে, পৌষের পার্বণে……, কত সব স্মৃতি ভিড় করে দাঁড়ালো মনের দুয়ারে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে। তবে স্মৃতির হাটে আজ আর পসরা খুলে বসা বসা যায়নি সুস্থিরে। হাসপাতাল, রুগী এবং বকেয়া নোটের ঝাঁপি গুছিয়ে নিতেই ব্যস্ত-সমস্ত দিন কেটে গেছে। ভেবেছিলাম, এবারেও কিছু করা হবে না, অন্য সব বারের মতোই এবং সেটাই স্বাভাবিক এই প্রবাসে।

ফিরবার পথে মনে পড়ল, ছোট মেয়ের আবদারে পাটিসাপটা (ওর ভাষায় রোল পিঠা বা ক্রিম পিঠা) বানানোর জন্য ক্ষীর বানিয়ে রেখেছিলাম সপ্তাহ দুয়েক আগে। কিন্তু নানা কারণে আর পিঠা বানানো হোয়ে উঠেনি। ঘরে ফিরেই পিঠা বানাতে বসে গেলাম তাই। পাটিসাপটা’র ক্ষীর থাকলে বানানো আর তেমন কষ্ট বা সময় সাপেক্ষ কিছু না, হোয়ে গেল তাড়াতাড়িই। এরপর মালপোয়া-ও বানিয়ে ফেললাম কয়েকটি। গত শনিবারে নীলার জন্মদিনের রাঁধা খেজুর গুড়ের পায়েস-ও কিছুটা ছিল।
সব মিলিয়ে পৌষ পার্বণে আমার আয়োজন খুব কম হয়নি শেষ পর্যন্ত। যদিও সব শেষ হতে হতে বেশ একটু দেরীই হোয়ে গেছে। দেশে পৌষ শেষ হয়ে মাঘ এসে গেছে। এই রাতে আর পিঠে খাবার তেমন ইচ্ছেও নেই কারো, তবু আমার উৎসব পালনের ইচ্ছে পূরণ তো হোল। আর ওই যে কথায় বলে না ‘প্রবাসে নিয়ম নাস্তি’, তাই মাঘেই না হয় হোক আমার পৌষের পিঠের পার্বণ। সবাইকে মাঘ ছুঁয়ে যাওয়া পৌষ পার্বণে প্রবাসীর সদ্য বানানো পিঠের শুভেচ্ছা…।
লেখক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক।