‘ক্লিন ইমেজ আসলে কতটা ক্লিন হবে?’

Newspaper pixলিটন ভৌমিক: সবাই বলছে- ‘করাপ্টেড পারসনদের সরিয়ে ক্লিন ইমেজগুলোকে সামনে আনা হচ্ছে… যার ফলে আর দুর্নীতি হবে না; বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে’। বাংলাদেশ আগামীতে নাকি কি কি সব দেখিয়ে দেবে; কাঁপিয়ে দেবে!!

ঈশপের একটি গল্প আছে- ‘এক বিশাল গরু ঘাস খাচ্ছে। তার গায়ে অজস্র জোঁক থোকায় থোকায় ঝুলছে। জোঁকগুলো দীর্ঘক্ষণ রক্তচুষে ফুলে ফেঁপে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। এক পাখি বলছে- তুমি গা ঝারা দিলেও তো সব পড়ে যাবে। গরুটি বলছে- হাঁ পড়বে, কিন্তু নিচে তাকিয়ে দেখুন, আরও অসংখ্য জোঁক আমার রক্ত খাওয়ার জন্য গায়ে উঠার অপেক্ষায়। আমি এদের গা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলে নতুন ক্ষুধার্ত জোঁক উঠবে। এই জোঁকগুলো যা খাওয়ার খেয়েছে, এরা আর খাবে না’।

আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক; রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগগুলোকে পরিবর্তন না করে কেবলমাত্র লোকজন পরিবর্তন করলে দুর্নীতি কমবে না। টিআইবি পুঙ্গু, দুদক মুমূর্ষু, জনগণের তথ্যজানার অধিকার নেই; কোনখাতে কত বরাদ্ধ তার জবাবদিহিতা নেই; প্রকল্প আয়-ব্যয়-সময়ের সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই; এই সিস্টেমে দুর্নীতি অবধারিত। তার মানে আমি বলছি না- পুরনো দুর্নীতিবাজদের রাখার জন্য।

একবার কিউবার ফিডেল কাস্ত্রোকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলো- ‘আপনাদের দুর্নীতি না হওয়ার কারন কি?’
ফিদেল- আমাদের কেন্দ্র কত টাকা দেয়, তার খবর প্রান্তের সবমানুষই জানে’
আমাদের এসব ব্যবস্থা আছে কি? কেন্দ্র থেকে ১০০ টাকা ছাড়লে প্রান্তের মানুষটি পায় মাত্র ৫ টাকা। রেলওয়েতে ১২০০ কোটি বরাদ্ধ হলে, প্রান্তে ১২০০ কোটি’র হিসাব পাওয়া যায় কি?

জিরো করাপশন কান্ট্রি ডেনমার্কের অর্থমন্ত্রী করিডন BBC কে বলেছেন- ‘Our distributions are sleepy, we throw money that directly reach to where this will be implimented’.
আমাদের কেন্দ্র থেকে বরাদ্দ হবে; মন্ত্রী পাবে; এরপর এলাকার এমপি; থানার দলীয় নেতা; ইউনিয়নের নেতা; গ্রামের নেতা; পাড়ার দলীয় কর্মী…

এই সিস্টেমে সর্বোচ্চ ক্লিন ইমেজগুলো হয়ে যাবে ড্যামেজ ইমেজ; ‘বোস্টন ইউনিভার্সিটি’ পিএচডি প্রাপ্ত ও দুনিয়াবিখ্যাত অর্থনীতিবিদ সামুয়েলসনের ছাত্র মখাও এক সিস্টেমে পচে গেছে। অক্সফোর্ডের শিক্ষার্থী দিপুমনিও এই সিস্টেমের কল্যাণে কেবলই দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন; সবচে মেধাবী হাছান মাহমুদও এই সিস্টেমে পাঁচ বছরে ৮০ গুণ ধনী হয়েছেন।

ক্লিন ইমেজের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল- ক্লিন ব্যুরোক্রেসি, ক্লিন স্টেট পলিসি, ক্লিন ল, ক্লিন ডিস্ট্রিবিউশন, ক্লিন ইমপ্লিমেন্টেশন… … এসব। কিন্তু রাস্ট্র এসব কিছুই করে না; কেবল লোক দেখানো ‘ব্যক্তি পরিবর্তন’ ছাড়া ।।
এখানে ‘করাপ্টেড ইমেজ’ গুলোকে সরিয়ে ক্লিন ইমেজ আনা হবে; সিস্টেমের কারনে ‘ক্লিন ইমেজ’ আবার করাপ্টেড ইমেজ’ হবে; সেটি সরিয়ে আবার ‘ক্লিন ইমেজ’ আনা হবে; তা আবার ‘করাপ্টেড ইমেজ’ হবে। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে… আর নতুন নতুন ক্লিন ইমেজগুলো পুরনো কায়দায় আমাদের বাজেট, বরাদ্দ ক্লিন করবে শুধু।

শেয়ার করুন: