উইমেন চ্যাপ্টার: বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ নামের সংগঠনটি । গত রোববার ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সভায় বক্তারা এ দাবি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, কবি ও লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন ও তানজিম উদ্দিন খান।
সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বাংলাদেশ অনেক দূরে সরে এসেছে। আমরা যখন বাঙালী হয়ে যাই, তখন অবাঙালিদের উপর আক্রমণ চালাই। যখন মুসলমান হয়ে যাই, তখন অন্য ধর্মের উপর আক্রমণ করি। এটা বন্ধ করতে হবে ।”
তিনি বলেন, “২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের যে প্রতিবেদন তৈরি হয়েছিল তার প্রেক্ষিতেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর একারণেই তাদের (আক্রমণকারীদের) সাহস বেড়েছে।”
এই সহিংসতা বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে সরকারের কাছে ‘প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগে’ প্রস্তাব করেন তিনি।
এজন্য তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর আওতায় অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, “আমরা সারাদেশে যে চিত্র পেয়েছি তা বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়। এটা হলে ভাবতে হবে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়েছে। এর দায় আমাদের সকলের।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের মনে রাখতে হবে এটা ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। আপনারা যদি এসব বন্ধ করতে না পারেন তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এমনকি পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবেন না ।
যশোর, সাতক্ষীরায় এবং দিনাজপুরে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, “বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করুন।”
যতদিন পর্যন্ত উৎপীড়নের চাকা থামবে না ততদিন ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ এর নির্বাহী সদস্য জিয়া উদ্দিন তারেক অনুষ্ঠানে একটি প্রস্তাবনা পাঠ করেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, সাম্পদায়িক নির্যাতনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়াতেও এদের ভূমিকা সুস্পষ্ট।
শিক্ষক কাবেরী গায়েন সভায় উপস্থিত গণ্যমান্যদের উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন।
১। যে দেশটি জন্ম নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মত মহান ঘটনার উপরে, সেই দেশে ‘সংখ্যালঘু’ নামের একটি প্রত্যয় তৈরী হয় কীভাবে? সেটাকে রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা কীভাবে দিতে পারে? রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ/অসাম্প্রদায়িক/অ-জামাত-বিএনপি মানুষেরা মেনে নিলেন কেমন করে?
২। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরীর আহবান কেমন শোনায়, তাই না?
৩। অর্পিত সম্পত্তি আইন কীভাবে থাকতে পারে?
৪। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হয়, এই স্বীকৃতি দিতে এতো বছর লাগলো কেন?
৪। সেমিনার-সভা-আলোচনা তো বছরের পর বছর ধরে চলছে এই প্রশ্নে। কেন অবস্থার পরিবর্তন হয় না?
তিনি বলেন, ‘যেসব উদ্যোগ বছরের পর বছর নেবার পরেও কোন পরিবর্তন হয় না, সেইসব উদ্যোগকে আমি সন্দেহ করি। প্রশ্ন করি’।
সন্ত্রাসী সংগঠনরূপে জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংস্থা ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করে ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’ ।