সুমিত রায়:
যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে বয়েস লকার রুমের প্রভাবটা আলোচনায় আসছে। সংক্ষেপে, লকার রুম টক হলো পুরুষদের মধ্যে প্রায়ই বন্ধুসুলভ পরিবেশে ঘটে এমন আলাপচারিতা, যেখানে নারীদের শরীর, যৌনতা, বা সম্পর্ক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, অপমানজনক, এবং অসম্মানজনক মন্তব্য করা হয়, যা এক ধরনের মজা বা হাস্যরস হিসেবে তুলে ধরা হয়। এর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আছে কুরুচিপূর্ণ ভাষা এবং যৌনতা নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য, নারীদের শরীর নিয়ে আলোচনা এবং ফ্যান্টাসি করা, পরিচিত নারীদের সম্পর্কেও অসম্মানজনক মন্তব্য করা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন করা আলোচনা। এটি বন্ধুসুলভ পরিবেশে ঘটলেও নারীদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক হয়, তবে ছেলেরা সাধারণত এই কথাবার্তাকে নিরীহ মজা হিসেবে দেখে, একে নিছক মজা বলে দাবি করে। কিন্তু কোন ছেলের আত্মীয় যেমন বা, বোন, গার্লফ্রেন্ড, ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিয়ে এরকম কিছু শুনলে তারা ক্ষেপে যায়।
এখন বয়েস লকার রুমের ফেনোমেনাটা ছেলেদের কাছে ‘নিছক মজা’ বলে মনে হলেও তা একভাবে রেইপ কালচার প্রমোট করছে। এটা ডিহিউম্যানাইজিং হচ্ছে কারণ নারীদের সেক্সুয়াল অবজেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তার মানবিক গুণাবলিকে ইগনোর করে।
মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ জিম্বারডোর মতে, এই ডি-হিউম্যানাইজেশন প্রক্রিয়া মানুষকে সহিংসতামূলক আচরণে প্ররোচিত করতে পারে, কারণ এতে অপরের প্রতি সহানুভূতির ঘাটতি তৈরি হয়। যখন নারীদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও যৌনতা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হয়, তখন তা সমাজে নারীদের মর্যাদা কমিয়ে দেয়, যা রেইপ কালচারের অন্যতম প্রধান উপাদান। এখানে যুক্ত হয় কনফরমিটি, যেখানে সমাজবিজ্ঞানী সোলোমন আশের কনফরমিটি থিওরি অনুযায়ী, মানুষ সামাজিক পরিবেশে অন্যদের সাথে মিল রেখে আচরণ করতে চায়, আর লকার রুম টক এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে যৌন আক্রমণাত্মক এবং নারীদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য করা গ্রহণযোগ্য মনে হয়, আর এই ধরনের আলাপচারিতা যখন প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত বা সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়, তখন অনেকেই এই ধরনের কথোপকথনে অংশ নিতে বাধ্য হন, এমনকি তারা ব্যক্তিগতভাবে এটি সমর্থন না করলেও।
এখানে চলে আসে টক্সিক মাসকুলিনিটির (Toxic Masculinity) কনসেপ্ট, এটি এমন একটি সামাজিক কাঠামো যেখানে পুরুষদেরকে শক্তিশালী, কঠোর, এবং অযৌক্তিকভাবে প্রাধান্যশীল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, সমাজবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেলের মতে, টক্সিক মাসকুলিনিটি পুরুষদের মধ্যে এমন একটি মনোভাব তৈরি করে যেখানে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে নারীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে। এই ধরনের মানসিকতা রেইপ কালচারের ভিত্তি গড়ে দেয়, কারণ এতে নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অবদমন করার প্রণোদনা জাগ্রত হয়। এখানে থাকে নর্মালাইজেশন এবং জাস্টিফিকেশনের ব্যাপার, যেখানে নারীদের প্রতি যৌন আক্রমণাত্মক মন্তব্য বা আচরণকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেমিনিস্ট থিওরিস্ট ক্যাথারিন ম্যাককিনন এ নিয়ে বলছেন, যখন যৌন সহিংসতার কথোপকথন বা উপস্থাপনা সমাজে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তখন তা রেইপ কালচারের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে। এটি যৌন সহিংসতাকে যৌক্তিক হিসেবে দেখানোর একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে। আর্ভিং জানিসের গ্রুপ থিংক তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি গ্রুপের সদস্যরা যখন একমত হওয়ার জন্য সমষ্টিগতভাবে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তখন ব্যক্তিগত নৈতিকতা বা বিচারবুদ্ধি দূরে সরে যায়। লকার রুম টকের মতো পরিবেশে ছেলেরা যখন গ্রুপের চাপে এমন আচরণে অংশ নেয়, তখন তারা যৌন সহিংসতাকে হালকাভাবে নেয়া এবং সহ্য করা শুরু করে, যা রেইপ কালচারের সহায়ক হয়। এই লকার রুম টকের মাধ্যমে সামাজিকভাবে বৈধতা পায় নারীদের প্রতি ঘৃণা বা অবজ্ঞা বা মিসোজিনি।
সমাজবিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া হিল কলিন্স এর মতে, মিসোজিনি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা যা নারীদের উপর প্রভুত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক। সব মিলে লকার রুম টক এই ঘৃণার সংস্কৃতিকে প্রচার করে, যা রেইপ কালচারের পক্ষে ভূমিকা পালন করে, আর ফলত এর কারণে বৃদ্ধি পায় ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা।
যাই হোক, আমার এই পোস্ট আসলে এই ফেনোমেনাটা ব্যাখ্যা করার জন্য নয়। আরও বেশি কিছু বলতে এসেছি এখানে। আমি আরও গভীরে ঢুকতে চাই। পুরুষেরা কেন এরকম আচরণ করে, সেখানে, কারণ সমাধান করতে চাইলে সেখানেই ঢুকতে হবে। আমি এখানে তাই এই বিষয়ে পপুলার আলোচনাগুলো একটু দূরে সরিয়ে রেখে পুরুষ কেন এরকম আচরণ করছে সেখানেই যেতে চাই। আপাতত কয়েকটা দিক তুলে ধরছি –
১. সামাজিক শিক্ষা এবং মানসিকতা: পুরুষদের প্রায়শই ছোটবেলা থেকেই এমন সামাজিক শিক্ষা দেওয়া হয় যে তারা নারীদের উপর আধিপত্য করতে পারে বা তাদের যৌনভাবে পণ্য হিসেবে দেখতে পারে। এই মানসিকতা প্রায়শই বন্ধুদের মধ্যে মজার ছলে প্রকাশ পায়, যা পরবর্তীতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। আলবার্ট বান্দুরার সোশ্যাল লার্নিং থিওরি মানুষের আচরণের বিকাশের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বান্দুরা মনে করেন, মানুষ তাদের আশেপাশের পরিবেশ থেকে শেখে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করে। এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা লকার রুম টকের মতো আচরণকে বিশ্লেষণ করি। বান্দুরা বলেন যে, শিশুরা বা যুবকরা যখন দেখে যে বড়রা বা তাদের বন্ধুরা নারীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলে এবং সেটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়, তখন তারা এই ধরনের আচরণ শেখে এবং সেটিকে মডেল করে। লকার রুম টক প্রায়শই একটি বন্ধুসুলভ বা মজার আলাপচারিতা হিসেবে শুরু হয়, কিন্তু এর মধ্যে নারীদের প্রতি অসম্মান এবং যৌন উদ্দীপনা থাকে, যা পরবর্তীতে সামাজিক আচরণের একটি অংশ হয়ে ওঠে। বান্দুরা তার “Social Learning Theory” (1977) বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের আচরণগুলি প্রায়শই পরিবেশ থেকে শেখা হয় এবং মডেলিংয়ের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়।
২. মাচো কালচার ও হাইপারমাসকুলিনিটি এবং হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি : মাচো কালচার বা হাইপারমাসকুলিনিটি এমন একটি সামাজিক ধারণা, যেখানে পুরুষদেরকে শক্তি, ক্ষমতা, এবং প্রায়শই হিংস্র আচরণের মাধ্যমে তাদের পুরুষত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়। এই সংস্কৃতির মধ্যে পুরুষদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকে, যেখানে নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, তাদের অবমাননা করা, এবং লকার রুম টকের মাধ্যমে যৌন উদ্দেশ্যমূলক আলাপ করা পুরুষত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়। রেবেকা র্যানফেল্ড (Rebecca Ransford) এই ধারণাকে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, মাচো কালচার পুরুষদের মধ্যে নারীদের প্রতি নিন্দাসূচক ও অসংলগ্ন আচরণের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে আরো আলোচনা করা হয়েছে “Gendered Lives: Communication, Gender, and Culture” (1994) বইয়ে, যেখানে পুরুষত্বের এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব হিসেবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এরকম আরেকটি কনসেপ্ট হচ্ছে রেইউন কনেলের হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি। তত্ত্বটি পুরুষত্বের এমন একটি রূপকে চিহ্নিত করে যা সামাজিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে এবং অন্য সমস্ত পুরুষত্বের ধারণাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরনের পুরুষত্ব সাধারণত শক্তি, কর্তৃত্ব, এবং নারীদের উপর আধিপত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি পুরুষদের একটি মডেল বা আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা অন্যান্য পুরুষদের জন্য অনুসরণীয় হয়। এটি এমন একটি আদর্শ যা সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলে এবং মাচো কালচার ও হাইপারমাসকুলিনিটির ধারণার সঙ্গে মিলে যায়। এই তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি কেবল নারীদেরই নয়, বরং অন্যান্য পুরুষদেরও প্রভাবিত করে, যারা এই আদর্শের সাথে মানানসই নয়। সমাজে শক্তিশালী এবং ক্ষমতাবান পুরুষদের দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি বলে পরিচিত। এই ধারণাটি সমাজে লকার রুম টক, নারীদের প্রতি অসম্মান, এবং শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরুষত্ব প্রমাণের প্রবণতার মূল কারণ হিসেবে কাজ করে।
খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না যদি বলি এই তত্ত্বের ডেভলপমেন্টে মার্ক্সবাদী দার্শনিক অ্যান্টোনিও গ্রামসির (Antonio Gramsci) প্রভাব আছে, যিনি তার হেজিমনি তত্ত্বে বোঝাতে চেয়েছেন যে, সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো কেবলমাত্র শক্তির মাধ্যমে নয়, বরং সাংস্কৃতিক এবং আদর্শগত নেতৃত্বের মাধ্যমে শাসন করে। তারা নিজেদের আদর্শ ও মূল্যবোধকে সমাজের মধ্যে এতটাই মূর্ত করে তোলে যে, সেগুলো সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষদের কাছেও স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। কনেল কেবল এই সাংস্কৃতিক হেজিমনিতে পুরুষত্বের দিকটাকে নিয়ে আসেন।
৩. ড্রামাটারজিকাল বিশ্লেষণ (Dramaturgical Analysis): আরভিং গফম্যানের ড্রামাটারজিকাল অ্যানালাইসিস মানুষ কিভাবে তাদের নিজস্ব পরিচয়কে বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে, তা ব্যাখ্যা করে। গফম্যান মনে করেন যে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে, মানুষ বিভিন্ন রকম ভূমিকা পালন করে এবং তারা প্রায়শই তাদের সামাজিক পরিচয়কে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন করে। লকার রুম টকের ক্ষেত্রে, পুরুষরা একদিকে নারীদের সামনে সম্মানজনক এবং ভদ্র আচরণ করে, কিন্তু অন্যদিকে বন্ধুমহলে তারা নারীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক এবং যৌন উদ্দেশ্যমূলক কথা বলে। এটি সামাজিক মুখোশের একটি উদাহরণ, যেখানে ব্যক্তি তার সামাজিক চাহিদা এবং প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মুখোশ ধারণ করে। এই তত্ত্বটি গফম্যানের বই “The Presentation of Self in Everyday Life” (1959) বইয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
৪. হীনম্মন্যতা ও প্রতিস্পর্ধা (Inferiority Complex and Compensation) – সাইকোঅ্যানালিস্ট আলফ্রেড অ্যাডলারের তত্ত্ব ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্স ও কমপেনসেশনের ব্যাপারটাও এখানে প্রাসঙ্গিক। এই অ্যাডলার প্রথম জীবনে ফ্রয়েডের শিষ্য ছিলেন, পরে ফ্রয়েডের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের সাইকোঅ্যানালিস্ট ধারা গড়ে তোলেন। তো অ্যাডলার বলেন যে, মানুষ যখন নিজেদের কম মূল্যবান বা হীনম্মন্য মনে করে, তখন তারা এই অনুভূতিকে কাটিয়ে উঠতে অন্যদের অবমাননা করে বা নিজেদের উচ্চতর প্রমাণের চেষ্টা করে। লকার রুম টক প্রায়শই এই হীনম্মন্যতার প্রতিফলন, যেখানে পুরুষরা নিজেদের মূল্যবান বা ক্ষমতাবান প্রমাণ করতে নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করে। তারা এই ধরনের আচরণকে নিজেদের মানসিকতার একটি অংশ হিসেবে দেখে, যা তাদের নিজেদের হীনম্মন্যতাকে ঢেকে রাখে। এই তত্ত্বটি আলফ্রেড অ্যাডলারের বই “Understanding Human Nature” (1927) বইয়ে বিস্তারিতভাবে পাবেন (আমার নিজেরই আলাদাভাবে এটা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে নিয়ার ফিউচারে)।
তো, এই আলোচনা থেকে আমরা এই বয়েস লকার রুম ফেনোমেনার একটা সল্যুশনের ইঙ্গিত পাই। সামাজিক শিক্ষার দিকটা ট্যাকল করতে শিশুদের উপর ফোকাস করতে হবে। জীবনের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের মধ্যে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও সমান অধিকার মেনে চলার শিক্ষা দিতে হবে। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষত স্কুলগুলোতে লিঙ্গ সমতা এবং নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণের গুরুত্ব শেখানো উচিত। মিডিয়া এবং সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোকেও এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে উৎসাহিত করা উচিত যা নারীদের সম্মানজনকভাবে উপস্থাপন করে। মাচো কালচার দূর করতে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে যেখানে পুরুষত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা তুলে ধরা হবে। পুরুষত্ব মানে শুধুমাত্র শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং সমানাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি দূর করতে সমাজে লিঙ্গ সমতার ধারণা প্রচার করা এবং পুরুষত্বের বিকল্প মডেলগুলো তুলে ধরতে হবে যা সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং সমানাধিকারকে গুরুত্ব দেয়। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্মে প্রচলিত পুরুষত্বের মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে এমন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যা পুরুষদের জন্য নতুন, ইতিবাচক, এবং সমতাভিত্তিক পুরুষত্বের ধারণা তুলে ধরে। একই সাথে এই হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি নারী ও পুরুষকে ছাঁচে বেঁধে ফেলতে চায়, যে পুরুষকে এগুলোই করতে হবে, নারীকে ওগুলোই করতে হবে।
এখান থেকে বের হবার জন্যেও কাজ করতে হবে। লিঙ্গ-পরিচয়ের যে সমাজভিত্তিক কাঠামোগত ধারণাটা রয়েছে সেটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। হীনম্মন্যতা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আত্মসম্মান এবং আত্মমূল্যবোধ তৈরি করতে হবে, লোয়ার সেলফ এস্টিম থাকলে সেই সেলফ এস্টিমকে বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে প্রফেশনাল হেল্প নিতে হবে (কাউন্সেলিং সেশন, গ্রুপ থেরাপি, এবং মানসিক সহায়তা কর্মসূচি ইত্যাদি), যাতে বয়েস লকার রুমে কোন ছেলেকে একজন মিসোজিনিস্ট বা সেক্সিস্ট কথা বললেই তার সাথে তাল মেলাতে না হয়, বদলে প্রতিবাদ করা যায়। আর এটা মেয়েদের জন্যেও প্রযোজ্য।