কল্যাণী রমা:
আমার কপালের টিপ আমার,
আমার চোখের কাজল আমার,
আমার কালো চুলে,
বেলিফুলের মালা আমার,
লাল পাড়, ঘিয়ে গরদের শাড়ি আমার –
আমার শরীরের রক্ত যেমন আমার।
তোমরা এর কিছুই
কেড়ে নিতে পারবে না
মুছে দিতে পারবে না।
আমি বাঙালি।
আমার পরিচয়
চাঁদের হাসির সাথেই
উছলে পড়বে।
আমেরিকায় একটি কথা খুব শুনি। Politically correct হওয়া। শুনি বিশেষভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও একটি মেয়ের কপালে টিপ পরবার আর হিজাব, বোরখা পরবার স্বাধীনতা এক কথা নয়। এটা যার যা পোশাক পরতে ইচ্ছে করছে তাকে তা পরতে দেওয়াও নয়।
আজকের বাংলাদেশে এই চারদিকে হিজাব ছড়িয়ে পরাটা ইসলামি আগ্রাসন। বাঙালি মেয়ের চিরদিনের পোশাক শাড়ি, টিপ, খোঁপায় বেলিফুলের মালা ঢেকে দেওয়ার এক চক্রান্ত। এটা political correctness নয়। কই, আমাদের ছেলেবেলায় তো এমন দেখিনি। এটা ভারতে বিজেপির গেরুয়া রঙ ছড়িয়ে পরবার মতই। এইসব আসলে ধর্মের নামে সমাজে বিষ ছড়িয়ে দেওয়া।
নেটিভ আমেরিকানরা পায়ে, হাতে সেলাই করা মোকাসিন জুতা পরে। একইভাবে বাঙালি মেয়েদের পোশাকের অংশ তার কপালের টিপ। এ থেকে বঞ্চিত করা মানে তাদের সংস্কৃতিকে গলা টিপে হত্যা করা।
সে অনেকদিন আগে, ছেলেবেলায় মরুভূমির মাঝে আমি কিছু বেদুইন মেয়ে দেখেছিলাম। আজো মনে পড়ে একটি মেয়ের গায়ে ছিল নীল রঙের সারা শরীর ঢাকা পোশাক। কিন্তু তার কালো নেকাবের ফাঁক দিয়ে আমি দেখতে পেয়েছিলাম হাস্যোজ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত দু’টো টানা টানা চোখ। অপূর্ব, স্বাভাবিক সেই মেয়েটিকেই আমার মরুদ্যান বলে মনে হয়েছিল।
মাঝে মাঝে দেখি বাংলাদেশে ছেলেরা সালোয়ার পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অস্বীকার করবো না মনটা দমে যায়। মনে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের বর্বরতার কথা। আমি রক্তের বেদনার ইতিহাস ভুলতে পারি না। সালোয়ার পাকিস্তানের ছেলেদের দৈনন্দিন জীবনের পোশাক।
এখন পোশাকের সাথে ধর্ম আগ্রাসী হ’য়ে এগিয়ে আসছে। পোশাকের সাথে আমাদের নিজ দেশের সংস্কৃতির মৃত্যু হচ্ছে। আসলে একটি জাতির কোন পোশাক সহজাত আর কোন পোশাক চাপিয়ে দেওয়া, তাতো আমাদের বুঝতে শিখতে হবে।
লেখক কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বই:
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।