পার্বতীপুরে আলোচিত শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের যাবজ্জীবন

উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক:

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার পর দিনাজপুরের পার্বতীপুরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার বিচারের রায় দেওয়া হয়েছে! রায়ে মামলার প্রধান আসামী সাইফুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দ্বিতীয় আসামীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। শিশুটির পরিবারের বরাত দিয়ে এই খবরটি জানিয়েছে আমরাই পারি জোট।

সংগঠনটির এক অনলাইন বিবৃতিতে বলা হয়, ছোট্ট জীবনে বড় যুদ্ধ পার হতে হতে শিশুটি একদিন বলেছিল, ‘আমি তো সারাজীবন কষ্ট করেই গেলাম’! ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট শিশুকে দিনাজপুরে ৩৮ বছর বয়সী সাইফুল ধর্ষণ করেছিল। ধর্ষণের আগে ব্লেড বা ধারালো কিছু দিয়ে মেয়েটির যৌনাঙ্গ কেটে দেয়ার পাশাপাশি সারা গায়ে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিল। ধর্ষণের পরে মেয়েটির হাত-পা বেঁধে, মুখে টেপ পেঁচিয়ে হলুদ ক্ষেতে ফেলে রেখেছিল ধর্ষক। সে অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করেছিল তার পরিবার। তারপর থেকেই এই পুরো পরিবারের জীবনটাই পাল্টে গেছে।

ঘটনার পর থেকে মেয়েটি প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। সম্প্রতি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে এবং সহযোগী অধ্যাপক (ইউরোলজি) মো. ফয়সাল এর সহায়তায় শিশুটির ‘ব্লাডার নেক রি-কনস্ট্রাকশন’ সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত সপ্তাহে শিশুটি বাড়ি ফিরে গেছে। বাড়ি ফেরার এক সপ্তাহের মধ্যেই আজ তার মামলার রায় এলো।

২০১৬ সালে দায়ের হওয়া ধর্ষণের মামলাটি আটকে ছিল দীর্ঘ চার বছর। সেই সময়ে মামলাটি যাতে পুনরায় চলমান হয় এবং শিশুটি যাতে ন্যায়বিচার পায় সে লক্ষ্যে আমরাই পারি জোট মামলাটির বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে। মামলার কাজ ত্বরিত গতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরাই পারি জোট ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বরে হাইকোর্টে আবেদন করলে হাইকোর্ট ২০২১ এর মার্চের মধ্যে মামলাটি সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেন। হাইকোর্ট নির্দেশিত সময়ের দশ মাস পেরিয়ে যাবার পর অবশেষে মামলাটি রায়ের মুখ দেখে।

বিভিন্ন ধারাবাহিকতায় আমরাই পারি জোট শিশুটির চিকিৎসা, আইনি এবং অর্থনৈতিক সহায়তার পাশে থাকার জন্য নেটজ বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় সংগঠন পল্লীশ্রীসহ একাধিক সংগঠনকে যুক্ত করে। পাশাপাশি শিশুটির ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীরাও নিরলসভাবে অবদান রেখে গেছে। শিশুটিকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করেছে।

ঘটনার পর দীর্ঘ সময় শিশুটি বাবা ছাড়া আর অন্য পুরুষ মানুষকে ভয় পেত। সবার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় ধীরে ধীরে তার সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিক উন্নতি ঘটছে।

ছয় বছর আগে নির্মমভাবে একজন ছোট্ট শিশুর জীবন থেকে রঙ্গিন শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল একদিন। তারপর ব্যক্তি, সংগঠন হাজার মানুষের ভালোবাসায় শিশুটি আজ নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী সাহসী এই কন্যার ভবিষ্যৎ জীবনের সারথি হিসেবে থাকার আশ্বাস রাখি আমরা। আমাদের মেয়েরা হারবে না কখনো। শত ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও অবিচল হয়ে রক্তাক্ত গোলাপের মত ফুটে থাকবে তারা।

শেয়ার করুন: