উইমেন চ্যাপ্টারকে অভিনন্দন

উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক:

মনজুন নাহার:

“উইমেন চ্যাপ্টার” এই নামই বলে দেয় তার স্বপ্ন এবং কাজ, আর তাহলো তৃণমূল থেকে বৈশ্বিক পর্যায়ে সামষ্টিক আন্দোলনকে জোরদার করে তোলা এবং নারীর প্রতি বিরাজিত সকল প্রকার বৈষম্যকে লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা। তার এই যাত্রায় উইমেন চ্যাপ্টার’ তার ভাবনা চিন্তাকে কখনই আবদ্ধ করে রাখেনি। সময়ের সাথে সাথে সে নারী মুক্তির আন্দোলনে যোগ করেছে জেন্ডার বৈচিত্র এবং প্রান্তিকতাকে। কেননা নারী’ এই সমাজের একক কোন প্রান্তিক মানুষ নয়। তাই তার মুক্তির জন্য প্রয়োজন অপরাপর লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষের মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে নারীবাদের আদর্শের উপর ভিত্তি করে সেসকল নিপীড়িত, প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে যাবার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

আমরা দাবি করবো না যে, শতভাগ মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে পেরেছি বা পারছি, তবে তা আমাদের প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি, উইম্যান চ্যাপ্টার’ কখনই মনে করেনা যে, নারী মুক্তিi প্রশ্নে সকলের চিন্তা/ ভাবনা একইরকম হবে, যদিও লক্ষ্য এক। তাই বরাবরই সে ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা তর্ক, বিতর্কের মধ্য দিয়ে এই প্লাটফর্ম নারী মুক্তির আন্দোলনের চিন্তার খোরাক যোগায় এবং এটাই তার শক্তি।

উইমেন চ্যাপ্টার’এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী লগ্নে এই শুভেচ্ছা বার্তায় আবারো বলতে চাই, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চা, রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন ব্যতীত নারী মুক্তি অসম্ভব। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, আর্থিক উপার্যন, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তাকে ক্ষমতায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথ, কিন্তু তার সার্বিক মুক্তির জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন যেখানে লিঙ্গ, শ্রেণী, বর্ণ, ধর্ম, পরিচয় নির্বিশেষে সবাই অধিকার ভোগ করবে, এবং যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। উইমেন চ্যাপ্টারকে অভিবাদন আর শুভেচ্ছা। এগিয়ে যাক তার ব্রত নিয়ে, মুক্তি হোক প্রান্তিক মানুষের, মুক্তি হোক নারীর।

 

আফসানা কিশোয়ার লোচন:

স্বপ্ন এমন এক অনুভূতি যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হওয়ার আগে থেকে আমাদের স্বপ্ন ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা, সেজন্য আমরা হেঁটেছি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে। তারই ফলশ্রুতিতে একসময় সামষ্টিক স্বপ্ন বা দাবির বহিঃপ্রকাশ হয় গণজাগরণ মঞ্চ দিয়ে। গণজাগরণ মঞ্চ চলমান থাকার সময়ই আমরা দেখতে পাই আন্দোলন সংগ্রামে বিরোধী পক্ষ পুরুষকে যেভাবে রাজনীতির দৃষ্টিতে দেখে, সেই একই চোখ দিয়ে নারীকে দেখে না। মুখে মুখে কমরেড বললেও নারীর জন্য আছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেয়া ও ক্যারেক্টার এসাসিনেশনের এক নিদারুণ তরিকা।

সম্মুখভাগে থাকা নারীদের নিয়ে যেমন মিডিয়া হাউজ নেতিবাচক গল্প লিখে, তেমনি অনলাইনে আপত্তিকর সাইটে ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিয়ে নারীর আন্দোলনে থাকাকে প্রশ্নবিদ্ধ্ব করে দিতে এক মুহূর্ত দেরি করে না বিরোধীরা।

এমন যখন পরিস্থিতি তখন বাংলাদেশের নারী, নারীবাদ ও নারী-পুরুষের সাম্যে বিশ্বাসী অথবা অবিশ্বাসীদের সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করে প্রথম নারীবাদী অনলাইন পোর্টাল উইমেন চ্যাপ্টার।

স্বপ্ন সাকার হওয়ার পথ তো কখনোই মধুর হয় না। আর্থিক কারিগরি অনেক বাধাই ছিলো, এখনও আছে। আছে মতান্তরের অভিঘাত ও বিচ্ছিন্নতা। সব মোকাবেলা করেই উইমেন চ্যাপ্টার আরেকটি বছর পার করলো।

বাংলাদেশের অনলাইন ইতিহাস যতদিন লেখা হবে,ততোদিন উইমেন চ্যাপ্টারের নাম আসবে এবং এ পোর্টাল নিয়ে একসময় গবেষণা হবে। স্বপ্ন যপখন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় তখনই অন্তরে শান্তির প্রলেপ পড়ে।

উইমেন চ্যাপ্টারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনেক অনেক শুভেচ্ছা এ স্বেচ্ছাসেবকের পক্ষ থেকে।

 

রোকসানা আক্তার ঝর্ণা:

আজ উইমেন চ্যাপ্টারের অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত আট বছরে বহু বাধা বিপত্তি, এবং প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নারী নির্যাতন রোধে এবং একটি বৈষম্যমূলক সমাজে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে পোর্টালটি কাজ করে যাচ্ছে। আমি এর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আমাদের মতো একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশে নারীরা যুগ যুগ ধরে কখনো সমাজের প্রচলিত প্রথা কখনো বা ধর্মীয় রীতির নিচে নিষ্পেষিত হয়ে আসছে। এমনকি এখনো আমাদের সমাজে এবং পরিবারে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। প্রতি বছর নারী নির্যাতনের হার বাড়ছেই এবং সেইসাথে বাড়ছে নারী হত্যাকাণ্ড। একটা বাচ্চা মেয়ে থেকে মধ্যবয়স্ক নারী পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এহেন অবস্থার জন্য এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকেই সবকিছুর জন্য দোষারোপ করা হয়। এদিকে সমাজে শিক্ষার ক্ষেত্রে , চাকুরীর ক্ষেত্রে , সমাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এমনকি উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির বন্টনের ক্ষেত্রেও নারী লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই নারী নির্যাতন রোধ , সমাজে নারীর সম অধিকার আদায় এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের জন্য একটা ভয়েস বা একটা প্লাটফর্ম খুব জরুরি ছিল।

সেই স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন নারী সংগঠন থাকার পরও নারীদের পক্ষে কথার বলার কোন ক্ষেত্র বা প্লাটফর্ম তৈরি হয়নি। উইমেন চ্যাপ্টার সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সমাজে নারীদের কথা বলার স্বাধীনতা যেমন কম, তেমনি নারীদের লেখার ক্ষেত্রটা আরও বেশি কম ছিল। উইমেন চ্যাপ্টার সেই ক্ষেত্রটি তৈরির পাশাপাশি নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার কাজটি যেমন করে যাচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন নারী লেখক তৈরি কাজটিও করে যাচ্ছে।

উইমেন চ্যাপ্টার নারী আন্দোলনের যে প্ল্যাটফর্মটা তৈরি করে দিয়েছে তা সত্যিই আমাদের মত একটা পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য বিরাট বিপ্লব।
এই বিগত আটটি বছরে উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক, এর সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন এবং লেখক, সবাই প্রচুর বাধার সম্মুখীন হয়েছেন, এমনকি অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে তাদের, কিন্তু তারা মাথা নত করেননি, বরং সাহসের সাথে সব বাধা ডিঙিয়ে এই উইমেন চ্যাপ্টারের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আপনাদের এই জয়যাত্রা আরো এগিয়ে যাক। হয়তো পরবর্তী সেঞ্চুরিতে স্বর্ণাক্ষরে নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসাবে উইমেন চ্যাপ্টারের নাম লেখা থাকবে। জয়তু উইমেন চ্যাপ্টার।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.