সুপ্রীতি ধর:
২০১৩ সালের এক ক্রান্তিলগ্নে যাত্রা শুরু হয়েছিল অনলাইন ব্লগ-পোর্টাল উইমেন চ্যাপ্টার এর। আজ ২০ মে, অষ্টম বার্ষিকী পোর্টালটির। বিশেষ দিনটি উপলক্ষে সকল পাঠক-লেখক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনও পথ চলছে উইমেন চ্যাপ্টার, তা কোনদিনও সম্ভব হতো না সবার অকুণ্ঠ সমর্থন আর ভালবাসা না থাকলে। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও সবাই এমন ভালবাসা দিয়েই জড়িয়ে রাখবেন উইমেন চ্যাপ্টারকে। এটা আমাদের সবার প্ল্যাটফর্ম, নির্বিঘ্নে কথা বলার মাধ্যম।
কেমন ছিল সেই আট বছর আগের দিনগুলো?
তখন শাহবাগ আন্দোলন উত্তুঙ্গে। দিনরাত আমরা হাজার হাজার মানুষ সেখানে পড়ে থাকি একটা পরিবর্তিত বাংলাদেশ দেখবো বলে। রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা পথ চলছিলাম তখন। চারদিক থেকে অক্টোপাসের মতোন আমাদের ঘিরে ধরছিল মৌলবাদী গোষ্ঠী, বিরোধী গোষ্ঠী। সেইসময়েই উত্থান ঘটেছিল হেফাজতে ইসলাম নামের নতুন মৌলবাদী সংগঠনের। যারা মাঠে নেমেই শাহবাগ আন্দোলনের সাথে জড়িত সবাইকে ‘নাস্তিক, কাফের’ আখ্যা দিয়ে কেবল তাদের শিরোশ্ছেদই করতে চায়নি, সমূলে বিনাশ করতেও উদ্যত হয়েছিল। নারীদের তারা কোণঠাসা করে দিয়েছিল ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে, নারীদের আবার বদ্ধ হেরেমে ফিরিয়ে নিতে তারা বেশ আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিল। ঠিক তখনই ফুঁসে উঠেছিল নারীসমাজ, সেইসাথে দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষ। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে মুখর ছিল তখনকার প্রতিটি দিন। তখনই মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি এই ধর্মদৈত্যকে রুখতে লেখালেখির একটা মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভূত হচ্ছিল, যেখানে প্রতিটি মেয়ে তাদের অনুভূতির কথা বলতে পারবে, প্রতিবাদ করতে পারবে। এমন সময়ই আত্মপ্রকাশ করে ‘উইমেন চ্যাপ্টার’।
শুরুতে খুব বেশি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেনি পোর্টালটি। যেহেতু সামনে কোন উদাহরণ ছিল না এক ‘বেগম’ পত্রিকা আর ‘অনন্যা’ ম্যাগাজিন ছাড়া, কাজেই ব্যতিক্রম কিছু হওয়া কঠিন ছিল বৈকি! কিন্তু সময়ই মূলত সব ঠিক করে দিয়েছে কোনদিক থেকে হাঁটতে হবে পথ, কোনদিকে এগিয়ে গেলে মেয়েদের একটা নি:শ্বাস ফেলার প্ল্যাটফর্ম হতে পারবে উইমেন চ্যাপ্টার। সত্যি বলতে কী, লেখক এবং পাঠকরাই ঠিক করে দিয়েছে এর চলার পথ। তাইতো অনেক অনেক বাধাবিপত্তি পাড়ি দিতে হয়েছে পোর্টালটিকে, হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে, দানবীয় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এ মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছে পোর্টালটির সাথে সংশ্লিষ্টদের, দেশত্যাগ করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদককে। এতোসব বিপত্তির মুখে কখনই দমে যায়নি উইমেন চ্যাপ্টার। হয়তো পথের গতি কমাতে হয়েছে। কিন্তু এই যে নিরবিচ্ছিন্ন পথচলা, এটাই উইমেন চ্যাপ্টারকে আজ অগ্রণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অতিমারীর এক বছরে পোর্টালটির পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন থেকে বেরিয়ে পোর্টালটি সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে কাজ করার অভিপ্রায় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে Women Chapter International (WCI), যা কিনা নারীর উন্নয়নে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে, বাক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লড়াইয়ে শামিল থাকবে আগামী দিনগুলোতে। গত এক বছরে বিভিন্ন ইস্যুতে উইমেন চ্যাপ্টার লাইভ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে সোচ্চার থেকেছে। দেশের ভিতরেই নয় কেবল, দেশের বাইরেও এর পরিচিতির গণ্ডি ছড়িয়ে দিয়েছে।
সারাবিশ্ব যেখানে করোনা মহামারীর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, উইমেন চ্যাপ্টারও তার ছোট্ট শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে পথ চলছে, খুবই সন্তর্পণে। পোর্টালটি আগের চেয়ে ম্যাচিউরড হয়েছে, তাই কখন একটু থামতে হবে, একটু থেকে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে, তা শিখে গেছে উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতায়। তবে বরাবরের মতোই এখনও আপোসহীন। এখানেই উইমেন চ্যাপ্টার অন্যদের চেয়ে আলাদা। পাঠক এবং লেখকদের অবদান এক্ষেত্রে বিশাল। সবাইকে সাথে নিয়েই ভবিষ্যতেও নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাবে উইমেন চ্যাপ্টার।
আজ অষ্টম বর্ষপূর্তিতে তাই সবাইকে শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহামারীকে জয় করে এগিয়ে চলুন সামনে। জয় হোক সবার। উইমেন চ্যাপ্টার আপনাদের সবার পাশে ছিল, থাকবেও ভবিষ্যতে।
সম্পাদক: সুপ্রীতি ধর