মুনিয়ার মতো মেয়েদের দালাল কারা? ক্রেতাই বা কারা!

সালমা লুনা:

মুনিয়া নামের বাচ্চা একটি মেয়ের মৃত্যুর ট্রমা আর অল্প কিছুদিন থাকবে আমাদের কারও কারও মাঝে। তারপর মুনিয়ার কবরে ঘাস গজানোর আগেই আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে ফ্ল্যাশ করে দেবো মুনিয়াকে আর তার মৃত্যু রহস্যকে।

তার আগে কিছুদিন আমরা লেখালেখি করবো ও পড়বো। টক শো করবো ও দেখবো। অনুসন্ধানী ভিডিও বানাবো ও দেখবো। মুনিয়া আর আনভীরের চরিত্র নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলবো। একে অন্যকে টিটকারি দেবো।
আর হ্যা, আরেকটু ট্রেন্ডি হতে চাইলে আমরা হ্যাশট্যাগ বয়কট বসুন্ধরা বলে চেঁচিয়ে ফেসবুক পাড়া মাত করবো।

কিন্তু আমরা যারা টয়লেট টিস্যু থেকে শুরু করে নিজের স্বপ্নের জমি বা ফ্ল্যাট সহকারে বসুন্ধরার সাথে সকাল-সন্ধ্যা মিলেমিশে থাকি মোরা আত্মীয়হেন – হয়ে আছি তারা এগজাক্টলি কী করবো!
আমরাও কি বসুন্ধরাকে বয়কট করবো?

তার আগে কি আমরা একটু ছোট্ট করে জানতে চাইবো না তরুণী মুনিয়া এতো অল্প বয়সেই কয় হাত ঘুরে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে আনভীরের কব্জায় ধরা দিয়েছিল?
তারা কারা যারা কুমিল্লার মতো একটা মফস্বলের পরিবার থেকে বাচ্চা, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে ঢাকায় এনে টানা তিন/চার বছর শুধু ব্যবহারই করেছে?
অবশেষে মেরে ফেলেছে বা মরতে বাধ্য করেছে?

এইরকম মেয়েদের দালাল কারা?
কারাই বা ক্রেতা?

ঘরে বউবাচ্চা রেখে, লোকদেখানো সুখী সংসার রেখে নিজের কন্যার বয়সী মেয়েদের শয্যাসঙ্গী হিসেবে পেতে দালালদের কাছে নিত্য হত্যে দেয় কারা ?
বেশ্যালয় ছাড়াই গোপনে অভিজাত পাড়ার বাসাবাড়ি, হোটেল, রিসোর্ট, অবকাশযাপন কেন্দ্রগুলিতে কারা হাঁটুর বয়সী মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করতে যায়? মেয়েদের পেছনে টাকা ছড়ায়? তাদের লোভী করে তোলে? তাদের শখ আহ্লাদ মেটানোর খরচ জোগায়?

আজকাল যেকোনো ঘরোয়া আড্ডায় পর্যন্ত শোনা যায় কত টাকা হলে নামকরা অমুক-তমুক সেলিব্রেটিকে পাওয়া যায় একরাতের জন্য।
এসব ওপেন সিক্রেট কবে থেকে হলো? এমন নৈতিক অধঃপতনের চিত্র কী ইঙ্গিত দেয়?

আনভীর যেমন ধোয়া তুলসি পাতা না, তেমনি আনভীরের মতো ব্যবসায়ীরাই কেবলমাত্র লম্পট না যারা ঘরে বউ রেখে টাকার গরমে নারী পোষে, নোংরামো করে বেড়ায়! রাজনৈতিক নেতা থেকে সাংবাদিক, প্রশাসনের বড় মাঝারি এমনকি ছোটখাটো আমলারাও এখন এই জগতের নিয়মিত খরিদ্দার।
তাদের আছে সাহস আনভীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার? ব্যবস্থা নিতে গেলে নিজেরও কাছা খুলে পড়ার ভয় কি নেই?

আনভীরের মা যে কীনা মুনিয়াকে ডেকে নিয়ে ধমকে দিয়েছে তার ছেলেকে ছেড়ে দেবার জন্য। যার নাম আসছে বারবার যে আনভীরই নাকি ভয় পেয়ে মুনিয়াকে বলেছিল, মা জানলে বিপদ হবে। সেই মিসেস বসুন্ধরাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আদৌ? এখন পর্যন্ত কোন জিজ্ঞাসাবাদ কি হয়েছে?

যে রাষ্ট্রব্যবস্থা এইরকম ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে তার প্রতিটি কাঠামোকে পুঁজিপতিদের দাসানুদাস বানিয়ে রেখেছে, দুর্নীতির চারণভূমি সৃষ্টি করে জনগণের সেবকদেরও ধনকুবের বানিয়ে দিয়েছে, যারা হয়ে উঠেছে নারীমাংসলোভী একেকটা হায়েনা, তারা এখন একত্রে মিলেমিশে ভাগবাটোয়ারা করে খেতে শিখে গেছে।
সেই এক পাতে খাওয়া ব্যবস্থায় এই ধনী ব্যবসায়ী খুনে পরিবারটির বিচার হবে, এটি ভাবাও তো দিবাস্বপ্ন। দিবাস্বপ্ন শুধু নয়, পাগলামিও।

তাই সন্দেহ হয় রাষ্ট্র এবং তার আইন এই লোকের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। আর আজকাল তো পাড়ার উঠতি মাস্তানটিও বলে বেড়ায়, এইটা বাংলাদেশ। এখানে আবার আইন আছে নাকি!
আমরা অবশ্য আইন একেবারেই নাই এইটা বলার গুস্তাখি করবো না। কারণ আমরা জানি আইন আছে এবং তা এদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।

আমরা তাই সকালে বসুন্ধরা টয়লেট টিস্যু দিয়ে ইয়ে সাফ করবো। চা নাশতা খেয়ে বসুন্ধরা ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে মুখ মুছবো। রান্না করে বসুন্ধরা কিচেন টিস্যু দিয়ে তেল ঝোল মুছে ফেসবুকে এসে মুনিয়ার জন্য শোক করবো। আর চোখের জলও মুছবো ওই টিস্যু দিয়েই। বিকেলে গাড়ি করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের জমিটা দেখতে যাবো। আপাদমস্তক কলিজাওয়ালার বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে আসতে আসতে ঘৃণার পিচিক থুতু টিস্যুতে মুছে ওরা কতবড় হারামি সেটা গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরবো।

ফেসবুকে ঝড় তুলবো না হ্যাশট্যাগ বয়কট বসুন্ধরা। কারণ আমি জানি বসুন্ধরা কেন, কোন লুম্পেনের বাপেরও সাধ্যি ছিল না এইরকম মেয়েবাজি করার, তাদের শখ মিটে গেলে কিংবা বশ করতে না পেরে খুন করার, ধর্ষণ করার, যদি আমার রাষ্ট্র ঠিক থাকতো। যদি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতারা সেই রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চালনা করতো।

তাই আসেন আমরা কয়েকটা দিন পাগলামি করি। কারণ আসল জায়গায় হাত দেয়ার মুরোদ নাই, তাই পাগলামি করেই আমাদের মন ভরাই। হ্যাশট্যাগ চলুক পাগলামি।

শেয়ার করুন: