প্রসঙ্গ: পটেনশিয়াল রেপিস্ট

শাহরিয়া দিনা:

‘পটেনশিয়াল রেপিস্ট’ শব্দটা নিয়ে ট্রল হচ্ছে আজকাল। ধর্ষণের মহামারির এই সময়ে সবাই যখন প্রতিবাদ মুখর তখনও কেউ কেউ দোষ চাপাতে চায় নারীর উপর। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার পর সেই একটা শ্রেণি পড়ে থাকে মেয়েদের পোশাকের কাপড়ের দৈর্ঘ্য নিয়ে। ঘরে বাইরে থাকার সময় নির্ধারণে। চলাফেরার ত্রুটি অন্বেষণে। আর কত ঘটনার পরে এরা স্বীকার করবে যে পোশাক অথবা চাল-চলনে নয়, ধর্ষণ থাকে ধর্ষকের মস্তিষ্কে।

পটেনশিয়াল রেপিস্ট বা সম্ভাব্য ধর্ষক তারাই যারা ধর্ষণের শিকার নারীটির ত্রুটি অন্বেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরা একটা ধর্ষক মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সুযোগ বা লোকলজ্জার ভয়ে দর্শক হয়ে রয়। এই শ্রেণিটা ভয়ংকর। সমাজে খারাপ মানুষগুলো যতটা না সমস্যার, তার চেয়ে বেশি সমস্যার হচ্ছে তারা, যারা যুক্তিতর্ক দিয়ে সেই খারাপ কাজটাকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণবিরোধী জ্বালাময়ী পোস্ট দিয়ে নারীর প্রতি সংহিতার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ভালো কথা। সাধুবাদ জানাই। কিন্তু নিজের চেহারা আয়নায় দেখেছেন কি? কোন মেয়ে আপনার দ্বারা হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছে না তো! ফ্রেন্ডলিস্টের মেয়েদের নক দিয়ে ডিস্টার্ব করা, ইনিয়ে-বিনিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতে বিছানায় নেবার ধান্ধাবাজিটা নেই তো আপনার মধ্যে? হাতেপায়ে ধরে ছবি নিয়ে সেটা দিয়ে আবার ব্ল্যাকমেইল করছেন না তো কোন মেয়েকে? যদি থাকে, নিজেকে আগে সংশোধন করুন। নিজেকে সুস্থ না করলে আপনি সমাজকে সুস্থ করতে পারবেন না তো!

মানুষ কমবেশি সবাই মুখোশধারী। কুপ্রবৃত্তি মানুষ মাত্রেই থাকতে পারে সেটা নিয়ন্ত্রণ করাই মানুষের কাজ। মানুষের আবেগের পাশাপাশি বিবেক আছে আর অন্য প্রাণীদের থেকে মানুষের ভিন্নতা এখানে। আপনি বিবেক সেজে বড় কথা বলছেন, অথচ আবেগীয় মুহূর্তে কারো বিপদের কারণ হচ্ছেন, তবে আপনি একজন সম্ভাব্য ধর্ষক ছাড়া আর কিছুই না।

নারীমাত্রেই মাংসের দলা না, আর আপনিও কোন মাংসাশী জন্তু না, সুতরাং মানবিক হোন। আজ যে ধর্ষক তার শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে আপনার ঘরের নারী সদস্যরাও নিরাপদ না এটাই সহজ কথা। একজন ধর্ষকের কাছে তার পরিবারের নারীরাও কত অনিরাপদ তা-ও উঠে আসে খবরে। আপনজন কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হলে মেয়েটা বিশ্বাস করবে কাকে?

ধর্ষণের শিকার একটা মেয়ে কতটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যায় আজীবন, তা হয়তো অনেকের চিন্তার বাইরে। মেয়ে একা চলতে পারবে না, পছন্দের পোশাক পরতে পারবে না এ কেমন দুনিয়া! এই অনলাইন দুনিয়ায় একটা ছবি দেখে আপনি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছেন মেয়েটার চরিত্র কেমন কিংবা ধর্ষণ করাটা ঠিক ছিল প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, কী মানসিকতা আপনাদের!

পৃথিবীকে মেয়েদের বাসযোগ্য করতে না পারলে একদিন হয়তো কেউ আর কন্যা সন্তান জন্ম দিতে চাইবে না। প্রাণপ্রিয় সন্তানকে কে ছেড়ে দিতে চাইবে হিংস্র প্রাণীর খাদ্য হতে? রেইপের শিকার মেয়েটি আরও একবার রেইপ হয় এইসব পটেনশিয়াল রেপিস্ট দ্বারা।

একজন ধর্ষক পুরুষের জন্মও কোন নারীর গর্ভে, পৃথিবীর আলো দেখেছে নারীর যোনী ছিন্ন করেই। জোর-জবরদস্তিতে নারীর আর্তচিৎকার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে, তাদের বিবেক ছুঁয়ে যায় না। বিবেকহীন মানুষের পৃথিবীতে বাঁচার কোন অধিকার নেই। নিকৃষ্টতর শাস্তিই এদের প্রাপ্য। নিজের ধর্ষকামী মনোভাব ছেড়ে নিজেকে সংশোধন করাটাও প্রতিবাদ।

শেয়ার করুন: