যেভাবে রোজ খুন হই, আর প্রতিবেলা ধর্ষণ

আনা নাসরীন:

পরীক্ষা দিতে গেছি, একটা অচেনা বখাটে মত দেখতে ছেলে ভয়ংকরভাবে পেছনে লেগে গেলো। ছেলেটা দেখতেও বেশ ভয়ংকর! আমি আতংকিত হয়ে বারবার পালিয়ে যাচ্ছি। বারবারই সে আমাকে খুঁজে বের করে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এবার যখন পালাতে যাচ্ছি সে পকেট থেকে একটা কাঁচের বোতল বের করে আমাকে হুমকির স্বরে বললো “দৌড় দিলে ছুড়ে মারবো”। আমার মনে হলো বোতলে এসিড। আমি আরও জোড়ে দৌড়াতে লাগলাম। পেছনে না তাকিয়ে শুধু ছুটছি, মনে হচ্ছে সে বুঝি আমাকে ধরে ফেললো। বাইরে বেরিয়ে রিকশা, সিএনজি কিছুই পেলাম না, শুধু ছুটছি। আর মনে হচ্ছে এই বুঝি আমাকে ধরে ফেললো। কেবল এক মুহূর্তের জন্য পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সে বেশ অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। জোয়ান তাগড়া ছেলেটা কেন আমার সাথে দৌড়ে পারছে না, তা বুঝলাম না! তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে বেশিক্ষণ সময়ও নষ্ট করলাম না, আবার দৌড়াতে লাগলাম।

নির্জন পথ, দু’ধারে অগভীর জঙ্গল। এরই মধ্যে একটা মাত্র চায়ের দোকান, কোনো কাস্টমার নেই। দোকানি বৃদ্ধা এক নারী। দোকানি হয়তো খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা, দোকান ছেড়ে ছুটে এসে শক্ত করে আমার হাত ধরে বললেন “নানু আমার সাথে আসো”। বৃদ্ধার কারণে দৌড় ছেড়ে আমি তার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করে হাঁটতে শুরু করেছি। কিন্তু অনেক জোরে জোরে হাঁটছি বলে বৃদ্ধার আমার সাথে তাল মেলাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। বৃদ্ধা আমার উদ্বেগ উপশম করতে জানালেন – দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই, গুন্ডাটার একটা পা খোঁড়া। পায়ে নাকি কোপ খেয়েছিলো কয়েক বছর আগে। এতক্ষণে বুঝলাম কেন সে আমাদের থেকে এতো পেছনে পড়ে গেছে।

খুব বেশি আর হাঁটতে হলো না, একটা বাঁক ঘুরেই আমরা ঢুকে গেলাম বেড়ার একটা জীর্ণ ঘরে। ঢোকার সময় একবার পেছন ফিরে দেখে নিলাম – গুন্ডাটাকে দেখা যাচ্ছে না, বাঁক ঘোরায় আমরা আড়ালে পড়ে গেছি। একটু নিশ্চিন্ত হলাম যে আমার আশ্রয়স্থল সে যেহেতু জানতে পারলো না, আমি এখন নিরাপদ। ঘরে ঢুকেই বুঝতে পারলাম এটা বৃদ্ধারই বাসস্থান। বৃদ্ধা তার নাতি-পুতিদের আদেশ দিলেন রামদাটা হাতে নিয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে, আর লুলাটা (বৃদ্ধার ব্যবহৃত শব্দ) ঘরে ঢুকতেই এক কোপে কবজি ফেলে দিতে। এমন আদেশ শুনে আমি ভীষণ আঁতকে উঠলাম! আর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম “সে তো আমাদের ঘরে ঢুকতে দেখেনি, তাহলে সে বুঝবে কিভাবে আমরা কোথায় আছি? না দেখে এখানে সে আসবেই বা কী করে!” বৃদ্ধা জানালেন গুন্ডাটা তার বাসা চেনে, যেহেতু আমাকে বৃদ্ধার সাথে আসতে সে দেখেছে তাই সে অবশ্যই এখানে আসবে। আমি এবার ভয়ে কেঁদে ফেললাম, আমি থরথর করে কাঁপছি, আর কাঁদছি। আমার মাথা কাজ করছে না, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না!

এরই মধ্যে ভেজানো দরজা ঠেলে ঝটিকা কারও আগমন লক্ষ করে আমি এক লাফে খাটের নিচে ঢুকে গেলাম। দরজার আড়ালে রামদা হাতে প্রস্তুতি নিয়ে থাকা বৃদ্ধার নাতিপুতিরা তাৎক্ষণিকভাবে কোপ বসালো আগন্তুকের উপর। গুন্ডাটা হাত দিয়ে ফেরাতে গিয়ে তার একটা হাতের আঙ্গুল কাটা পড়লো। ফিনকি দেয়া রক্ত আর রক্তাক্ত কয়েকটি কাটা আঙ্গুল ছিটকে এসে পড়লো আমার সামনে। সাথে সাথে খাটের নিচে জড়োসড়ো হয়ে লুকিয়ে থাকা আমি নিজের লুকিয়ে থাকার কথা ভুলে বিকট চিৎকার করে উঠলাম! গুন্ডাটা কখন জানি না রামদাটা দখলে নিয়ে অন্য হাতে ধরে আমার আশ্রয় দাতা পরিবারের কয়েকজনকে ঝটিকা কোপাতে লাগলো। আমি খাটের নীচে হাঁটু মুড়ে কুকুর-কুণ্ডুলি পাকিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে থেকে সমানে চিৎকার করছি। হঠাৎ টের পেলাম রামদাটা আমার ঘাড়ে!

স্নিগ্ধ আলোয় রেওয়াজ করবো বলে দুপুরে ইলেকট্রিশিয়ান ডাকা হয়েছিলো বাসায় কিছু ল্যাম্প ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে। কাজ শেষে তাকেই বলা হয়েছিলো কিছু স্যানিটারির কাজ আছে, প্লাম্বার পাঠাতে। বিকেলে প্লাম্বার আসলো। তাকে কাজ শুরু করতে দেখে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। আগের দুইরাত ঘুম হয়নি, ভেবেছিলাম এই ঘুমেই ভোর করে দেবো। এক নারী কণ্ঠের কান্নাজড়িত চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো রাত সাড়ে আটটার কাছাকাছি সময়ে। জানালায় কান পেতে মনে হলো চিৎকারের সাথে পেটানোর শব্দও পাচ্ছি, আর কন্ঠটা পরিচিত। প্রায়ই মেয়েটা এভাবেই উচ্চস্বরে কেঁদে কেঁদে ঝগড়া করে, একক কণ্ঠের ঝগড়া! ঝগড়ায় শুধুমাত্র মেয়েটার কন্ঠ ব্যতীত আর কোনো কণ্ঠস্বরের অংশগ্রহণ কখনোই শোনা যায় না! মেয়েটির কান্নাজড়িত ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে অভিযোগের কোনো বক্তব্যও ভেসে আসা কোনো বাক্যে স্পষ্ট বোঝা যায় না। শুধু শোনা যায় মেয়েটার কান্না মিশ্রিত ঝগড়া, আর মাঝে মাঝে পেটানোর শব্দ। যে শব্দের সাথে মেয়েটার চিৎকার বাড়ে, ঝগড়া বাড়ে। মাঝেমাঝে মধ্যরাতেও সে কাঁদে। মধ্যরাতের সে কান্নাটা ভিন্নরকম হয়, কণ্ঠস্বরটা একই। শুনে ধারণা হয় বয়স পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। রাতে সে কাঁদে খুব চাপা স্বরে, মধ্যরাতের কান্নার সাথে কোনো শারীরিক আঘাতের শব্দ মিশ্রিত থাকে না, তখনকার শব্দের সাথে মিশে থাকে কেবল হৃদয়ের আঘাত। আমি মধ্যরাতেই বেশি লিখি। অনেকদিন লিখতে বসে মধ্যরাতের ভেসে আসা সে কান্নায় আমার লেখা ভেসে গেছে। আমি বারান্দায় গিয়ে কান পেতে বোঝার চেষ্টা করি শব্দটা ঠিক কোন ফ্ল্যাট থেকে আসে। বোঝা যায় না, মধ্য রাতের চাপা স্বরে কান্নাটা শুনে মনে হয় কোথাও দূর থেকে ভেসে আসা শব্দ। খুব কষ্টে কান্নাটা আটকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা।

শরীরটা সারাদিন বেশ খারাপ, মাথাটা ভারি হয়ে আছে। সকাল থেকেই ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। নাকটা বন্ধ, কানটাও স্তব্ধ। গত দুইরাত ঘুম হয়নি, গা গুলাচ্ছে। ভীষণ ঘুম প্রয়োজন, মেয়েটার কান্নাও থেমেছে। এক গ্লাস দুধ আর এক স্লাইস ব্রেড খেয়ে ডিমলাইট জ্বালিয়ে আবারো শুয়ে পড়ি রাত প্রায় দশটার দিকে। সাধারণত আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়, আজ তেমন হচ্ছে না। বিছানায় গা মেলতেই ঘুম এসে যাচ্ছে। আর ঘুমের সাথে সাথেই ভেসে উঠছে সারাদিনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সাথে আরও কয়েকদিন আগের পুরোনো অতি সাধারণ একটা বাস্তব ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর তার সাথে আরও কিছু বিবর্ণ কারুকার্য যুক্ত হয়ে বিভৎস করে তুলছে জরুরি ঘুমটাকে।

শুনতে পাই বাসায় কাজ করতে আসা সেই ইলেকট্রিশিয়ানের কিছু সন্দেহজনক ইঙ্গিতপূর্ণ ফোন কনভারসেশন। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন প্লাম্বারও কাজের ফাঁকে ফাঁকে একই ভঙ্গিতে কথা বলে তার নিজস্ব সেলফোনে! মনে হলো যেন সে কাউকে ইঙ্গিতে এটাই বোঝাতে চাইছে যে “এই বাসায় কয়েকটি ইয়াং মেয়ে আছে, যেখানে কোনও পুরুষলোক বা বয়স্ক ব্যক্তির উপস্থিতি নেই”। প্লাম্বার চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আসলো বিল্ডিংয়ের গার্ড। তার নাকি জ্বরজ্বর ভাব, আমাদের কাছে নাপা আছে কিনা জানতে এসেছে।

এর মধ্যে সবগুলো ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছিলো, শুধু ইলেকট্রিশিয়ান ও প্লাম্বারের ওই সন্দেহজনক ফোন কলগুলো ব্যতীত। গার্ড যেদিন এসেছিলো প্যারাসিটামল খুঁজতে তখন ঘড়িতে আনুমানিক রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মত হবে। নিশ্চিতভাবেই সেই সময় দোকান খোলা। বাসার খুব কাছেই ওষুধের দোকান থাকতেও এই সময় কেন ঠিক আমাদের বাসায় ওষুধ খুঁজতে আসলো বিল্ডিংয়ের এতগুলো ফ্ল্যাট বাকি রেখে এরকম প্রশ্ন বাস্তবে যদিও সেদিন আমাদের মনে আসেনি, সেদিন যদিও আমাদের কিছুই অস্বাভাবিক লাগেনি। আজ স্বপ্নে ইলেকট্রিশিয়ান আর প্লাম্বারের ইঙ্গিতপূর্ণ ফোন কলের সাথে মিলিয়ে তাদের প্রস্থান পরবর্তীতে গার্ডের ওষুধ খুঁজতে আসাটা আমার স্বপ্নে একটা হিডেন মিনিং ক্রিয়েট করলো। স্বপ্নের নিয়মে এক অদ্ভুত অলৌকিক ক্ষমতার বলে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম যে গার্ডটি আসলে এটাই বুঝতে এসেছিলো – এই মুহূর্তে আমরা ঘরে ঠিক ক’জন বা কে কে আছি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী যে বোনটা সে আছে কিনা। আজ আমাদের উপর আক্রমণ হলে আমরা নিজেদের কতটুকু প্রটেক্ট করতে পারবো?

গার্ড ওষুধ নিয়ে চলে যাবার পরক্ষণেই কারা যেন এসে বাইরে থেকে চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে আমাদের ফ্ল্যাটের মূল দরজা। আমরা আতঙ্কিত যে ভেতর থেকে ছিটকিনিটা ঠিকঠাক আটকানো আছে কিনা। কিন্তু আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমরা এতোটাই হতভম্ভ ও স্থবির হয়ে আছি যে আমরা কেউ দরজার কাছে গিয়ে তড়িৎগতিতে ছিটকিনিটা আটকানোর চেষ্টাও করতে পারছি না! কিন্তু স্বপ্নের অদ্ভুত অলৌকিক নিয়মে না দেখেও ফিল করতে পারছি দরজার ওপাশে ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার ও আমাদের গার্ড সহ আরও কিছু লোক আছে যারা আমাদের অচেনা!

ঠিক এই সময় বেঁচে গেলাম ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায়, ঘটনা বাস্তব নয় বোঝার পরও আমার ঘন হার্টবিট টের পাচ্ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ! ভাবছি আজ আর একা ঘুমানোর চেষ্টা করা ঠিক হবে না। যেদিন আমি দুঃস্বপ্ন দেখি সেদিন বারবার দেখি! এই সময় একা থাকলে আমার দুঃস্বপ্নের প্রবণতা বাড়ে, ঘুমের মধ্যেও সম্ভবত নিজেকে অবচেতনে একা অনুভব হয় বলে ভয়টাও ভিবৎস রকমের অনুভূত হয়। ভাবছি উঠে গিয়ে ছোট বোনদের সাথে ঘুমাবো, কিন্তু উঠতেও কষ্ট হচ্ছে। আবার মনে হচ্ছে এখন হয়তো গভীর রাত, ওরা সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার মোবাইলে এলার্ম দিতে গিয়ে ভুলে টাইম ওলটপালট করে ফেলেছি বলে সময় সম্পর্কে কিছুই ধারণা করতে পারছি না। তবে স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যে সুদীর্ঘ একটা জার্নি হলো তাতে করে মনে হলো এখন রাত দুই কি তিনটার কম হবে না, আমি যেহেতু ঘুমিয়েছিলাম দশটায়। ওরা যদি ঘুমিয়ে থাকে ডাকবো না, রাতটা জেগেই পার করে দেবো এরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে গেলাম। দেখি ওরা পড়াশোনা করছে। রাত বেশি না, মাত্র সাড়ে এগারো! আমি ওদের সাথে বসে একটু স্বস্তিতে কিছুক্ষণ দম নিয়ে উঠে দু’গ্লাস পানি খেয়ে এসে ওদের রুমেই শুয়ে পড়লাম।

লাইট জ্বালানো অবস্থায় আমার সাধারণত ঘুম আসে না, আমি শুধু ডিমলাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই। ডিমলাইটটা জ্বালিয়ে রাখি কারণ আমি প্রায়ই ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখি, আর দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙার পর যদি চারপাশ অন্ধকার থাকে তখন স্বপ্নের ঘোরটা সহজে কাটে না। ভয়ে তখন আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসার মত অনুভূতি হয়! ওরা পড়াশোনা করছে, তাই আলো নেভাতে না বলে আমি চাদর দিয়ে মাথা ভালো করে মুড়ে নিলাম। এটা খেয়াল করে ছোট বোন লাইট অফ করে টেবিলে ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিলো। অল্প আলোতে আমার মুহূর্তেই ঘুম এসে গেলো।

এই ঘুমেই চলে গিয়েছিলাম আমি সেই পরীক্ষার কেন্দ্রে, কী পরীক্ষা তা জানি না। বখাটে ছেলেটা যে কে, তাও চিনি না। কোনও দিন দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। শুধু স্বপ্নের সেই অদ্ভুত যাদুকরী নিয়মে বাস্তব কিছুর সাথে রিলেট করে যেমন অজানা অনেক কিছুও জানা মনে হয়, সেভাবেই আমার মনে অনুভব হলো ব্লগে কিংবা পোর্টালে একেকটা লেখা ছাপা হবার পর মাঝেমধ্যেই আমার কাছে ইনবক্সে রেইপের ইঙ্গিতপূর্ণ বা সরাসরি যে হুমকিগুলো আসে – আমাকে তাড়া করে এসিড হাতে দৌড়ানো খোঁড়া সেই বখাটে যুবক ঐ হুমকিদাতাদেরই কোনো একজন। ঠিক আমার ঘাড়ের উপর রামদাটা যখন ধরা হলো আমি বুঝতে পারি না, সে কি আমাকে মেরে ফেলবে, নাকি রেইপ করবে, নাকি একে একে দুটোই। ঠিক তখনই রক্ষা ঘুম ভেঙে যাওয়ায়….!

ঘুম ভেঙেও আমি ভয়ে কাঁপছি, হৃদকম্পনের অস্বাভাবিক গতি টের পাচ্ছি। হঠাৎ গায়ে জ্বরজ্বর অনুভব হচ্ছে। ছোট বোনরা এখনো টেবিলে বসে পড়ছে, ঘড়িতে মাত্র দেড়টা। এরপর ঘুমাতে অনেকটা সময় লাগলো। তিনটার দিকে আবার ঘুমালাম ভোর সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। আবারও বেশ কিছু ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দুঃস্বপ্ন! অবচেতনে চাপা অসহ্য আতঙ্কের অনুভূতি। এবারকার স্বপ্নগুলো মনে নেই, ঠিক কী কী দেখেছি। শুধু মনে আছে ভয়ংকর কিছু যেন হয়ে গেছে!

এভাবে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে আমরা প্রতিদিন খুন হই। প্রতিবেলা হই ধর্ষণের শিকার চৈতন্যে বা অবচেতনে। কোনও শ্রেণী, কোনও বয়সেই আমরা নিরাপদ নই এই তল্লাটে। নই বাস্তবে কিংবা নিদ্রায় ক্ষণিক শঙ্কামুক্ত! খুন আর ধর্ষণ প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে তাড়িয়ে আমাদের ঘুমন্ত মস্তিষ্ককেও বানিয়ে দেয় মানুষ থেকে নিরেট মাংসপিণ্ড।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.