পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বিষয়ে জানাটা কেন জরুরি?

রোকসানা বিন্তী:

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কী জিনিস এটা বোঝার ক্ষমতা অধিকাংশ বাঙালীরই এখনও হয় নাই! সবাই জানে, কিন্তু কেউ বোঝে না! বুঝতে চায়ও না!
সোজা বাংলায় বলতে গেলে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মায়ের শরীর ক্রমাগত কিছু হরমোন উৎপাদন করতে থাকে, বাবু হয়ে যাবার পর দুম করে এই হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবার কারণে মায়ের মনমেজাজ সবসময় খিটখিটে হয়ে থাকে, অনেক সময় সে কী করছে, কী বলছে তার উপর কন্ট্রোল থাকে না! সেই সাথে সদ্যোজাত একটি শিশুর দায়িত্ব!

নানাজনের নানা উপদেশ, আদেশ! মা একপ্রকার দিশেহারা হয়ে যায়! এই দিশেহারা ভাবটার নামই হলো পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন! শুনেছি বিদেশে নাকি বাচ্চার পাশাপাশি মায়েরও যত্ন নেয়া হয়! আর আমাদের দেশে এই যত্নের (!) ভাষা হলো -“আরও শক্ত হও, এতো নরম হইলে বাচ্চা পালবা কেমনে? আমরা আর বাচ্চা পালি নাই?” তারপর বাচ্চা হওয়ার দশ মিনিট পর কে কত কাজ করেছে তার লম্বা ফিরিস্তি! আর বাচ্চা পালার তরিকা নিয়ে অযুত নিযুত উপদেশ! বাচ্চা ব্রেস্ট ফিড করে বলে মা লাউ আর কালিজিরা ছাড়া আর কিছু খেতে পারবে না! তো একবার চিন্তা করেন মেয়েটার দশা!

নাই ঘুম, নাই খাওয়া, শারীরিক অসুস্থতা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, আশেপাশের আদেশ -উপদেশে জর্জরিত! বাচ্চার দায়িত্ব! কারও কোন সহানুভূতি নাই, দুইটা ভালো কথা নাই! উল্টা বাচ্চার সামান্য কিছু হলে সব দোষ তার! সে বেশিক্ষণ লাগায় গোসল করেছে বলে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগেছে! সে একটু আলুভর্তা খেয়েছে তাই বাচ্চার পেট ব্যথা করছে! সে একটুকরা গরুর মাংস খেয়েছে তাই বাচ্চার পুপ শক্ত হয়ে গিয়েছে-
ইত্যাদি ইত্যাদি আরও হাজারও ভ্যানতারা….

এইসব হবেই! লোকে হাজার কথা বলবেই! কিন্তু এর মধ্যে থেকেই পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে নতুন মায়েদের! কীভাবে?
কিছু তরিকা যেগুলো আমি নিজের উপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছি সেগুলিই সবার সাথে শেয়ার করছি-

১. প্রথমেই এইটা ভাবা শিখতে হবে যে, এই পরিস্থিতি সাময়িক! কয়েকদিন পর বাবু একটু বড় হয়ে গেলেই আপনি আপনার আগের লাইফ অনেকটাই ফেরত পাবেন!

২. যদি রাত জাগার সঙ্গী কাউকে পান তাহলে ভালো, আলহামদুলিল্লাহ! যদি না পান তাহলে এই সময়টা মজা করে কাটানোর চেষ্টা করুন! বাবু না ঘুমালে ওর ছবি তুলুন, ভিডিও করুন! আর যদি কোলে নিয়ে বসে থাকতে হয় তাহলে সাবটাইটেলসহ একটা মুভি ছেড়ে দিয়ে বসুন! অথবা কোন ভিডিও দেখুন! আমি একেক রাতে তিনটা করে মুভি দেখেছি পর পর!

৩. নিজের হবি মনে করার চেষ্টা করুন! এই সময় আপনি কিছু করার সময় পাবেন না, কিন্তু ভাবনা চিন্তা করতে তো বাধা নেই! আমি যেমন ভাবতাম- কী কী কালার কম্বিনেশন করে গয়না বানাবো, ড্রেস বানাবো – এইসব!

৪. পিডিএফ আকারে বই পড়ার অভ্যাস থাকলে মোবাইল ফোনে বই পড়তে পারেন! আমি অনেক বই পড়েছি ওই সময়গুলোতে! আগের পড়া বই আবার পড়তাম! তাতে করে অর্ধেক পড়ে আর না পড়তে পারলেও সমস্যা হতো না!

৫. ফিউচার প্ল্যান করুন! বাবুকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবেন, কোথায় খেতে যাবেন, কার কার বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাবেন, কাকে কাকে বাসায় দাওয়াত দিবেন – এসব নিয়ে ভাবুন! দেখবেন, ভালো লাগবে!

৬.বিএম বেবী হলে আপনি হয়তো বেশি সময় বাইরে যেতে পারবেন না! তাই শপিং করতে ইচ্ছা করলে অনলাইন থেকে কিনে নিতে পারেন! ফেসবুকই এখন অনেক বড় মার্কেট!

৭. কিছু জানার থাকলে গুগল করুন! আশেপাশের অনেক বিশেষজ্ঞদের(!) সাথে লড়াই করে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে হলে জানার কোন বিকল্প নাই!

৮. খুব বেশি মন খারাপ হলে বাবুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবুন – “এই বাবুটা আমার!” দেখবেন, একটু হলেও ভালো লাগবে!

সর্বোপরি যেভাবেই থাকবেন ভাল থাকার ট্রাই করবেন! আপনি ভালো থাকলে আপনার বাবুটাও ভালো থাকবে!

লেখক পরিচিতি:
উপ পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংক

শেয়ার করুন: