মেয়েরা কেন বেকার ছেলে বিয়ে করে না!

বৈশালী রহমান:

বাংলাদেশের ফেমিনিজম বিরোধী পোলাগুলার (এবং তাদের চরণদাসী মেয়েগুলারও) দুইদিন পর পর মাথায় একটা ক্যারা উঠে। সেইটা হলো, মেয়েরা যে এতো সমান অধিকার, সমান অধিকার করে, তারা কেন বেকার ছেলে বিয়ে করে তার “ভরণপোষণের দায়িত্ব” নেয় না।

বৈশালী রহমান

ওহে শ্যালকপুত্র বরাহশাবকেরা শোনো, বাংলাদেশের কোনো পোলা প্রকৃতপক্ষে কোনো “বেকার মেয়ে” বিয়ে করে না। তোমরা এবং তোমাদের জাতভাইয়েরা এতো মহৎ ও উদার না। বিয়ে করার সময় শ্বশুরবাড়ির লোকজনরে সর্বস্বান্ত করে যে নিজেদের চৌদ্দগুষ্টির খানা দানা আর “উপহার সামগ্রী” আদায় করো সেই হিসাব নাহয় বাদই দিলাম। কোনদিন কোন মেয়েকে তোমরা বসায়ে বসায়ে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে বিয়ে করছো ভাই? জীবনে একদিন ঘর ঝাড়ু দাও না, বাচ্চার একটা কাঁথা ধোও না, ভাত খেয়ে থালাটা বেসিনে ফেলে পর্যন্ত আসো না, ধোয়া তো বাদ দিলাম। নিজের আন্ডারওয়ার পর্যন্ত “বেকার বউ”রে দিয়ে কাচাও। নিজের বাপ মার সেবা করার সামর্থ্য নাই। সেটাও “পরের মেয়ের” দায়।
তোমাদের শুধু টাকা রোজগার করে দায় শেষ বলে মনে করো। আর বাকিটা তো খাওয়া পরার খরচ দিয়ে “বেকার বউয়ের” উপরে চাপায়ে দাও। তোমাদের মতো অপদার্থ বেকারদের বিয়ে করে কোনো চাকরিজীবী মেয়ে টানবে কীসের জন্য? সামর্থ্য আর যোগ্যতা থাকলে যাও, পশ্চিমা দেশগুলোতে ঘুরে আসো। দেখো গিয়ে কতো আত্মনির্ভরশীল মেয়ে নিজের স্পাউজরে আর্থিক সাপোর্ট দিচ্ছে। কারণ সেখানে জেন্ডার রোল বলে কোনকিছু নাই। একটা থালা ধোয়ার জন্য, দুইটা ভাত রাঁধার জন্য, বউ লাল শাড়ি পরে শাশুড়ির পায়ে বিড়ালের মতো ঘুরঘুর করবে এই আশায় সেখানকার ছেলেরা বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে না। সেখানে ছেলেরা ইকুয়াল পার্টনার পাওয়ার জন্য়ে বিয়ে করে, “বাপ মার জন্য দাসী” আর ঘরের জন্য কামলা আনতে বিয়ে করে না।

আর বাইরের দেশে যেতে হবে কেন, বেকার ছেলে বিয়ে করে এই দেশে অর্থ উপার্জনকারী মেয়েদের কী দশা হয় সেটা তো এই দেশের গার্মেন্টসগুলোতে কাজ করা বা বাসাবাড়িতে কাজ করা মেয়েদের জীবন দেখলেই বোঝা যায়। প্রায় প্রত্যেকেরই বাসায় একটা করে “বেকার স্বামী” থাকে। যার কাজ হলো মদ খাওয়া, নিয়ম করে বউ বাচ্চা পিটানো আর বউয়ের পয়সায় আরাম আয়েশ করা। কেউ তো ঘরের একটা কাজ করে না, উল্টা ওই চাকরিজীবী বউকেই ঘরের কাজও সামলাতে হয়। এরকম ডাবল ডিউটি পালন করে জীবন নষ্ট করবে কোন গাধায়? তোমরা নিজেরা করবে? বরং আমি তো দেখি স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে বাইরে কাজ করলেও ঘরের কাজের সিংহভাগ বউয়ের ঘাড়েই চাপে।

মোট কথা, চাকরিজীবী মেয়েদের বেকার ছেলে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা তোমাদের। যদি বেকার অবস্থায় চাকরিজীবী মেয়ে বিয়ে করে ঘাড়ে চাপার শখ থাকে, তবে বিয়ের পর সেই মেয়ের সাথে তার বাড়িতে গিয়ে তার বাপ মায়ের সেবা করার মানসিকতাও থাকতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসগামী বউয়ের মুখের সামনে চা নাস্তা এগিয়ে দিতে হবে। বউয়ের ছাড়া কাপড়চোপড় ধুতে হবে। বাচ্চা রাতে কাঁদলে বউয়ের অফিস যেতে সমস্যা হবে বিধায় বাচ্চাকে রাতে ঘুম পাড়ানো এবং বার বার উঠে ডায়াপার বা কাঁথা পাল্টানোর দায়িত্ব নিতে হবে। মোট কথা, একজন চাকরিজীবী ছেলের গৃহিণী বউ হিসেবে একজন মেয়ে যেসব দায়িত্ব পালন করে সব দায়িত্ব পালন করতে হবে। বউয়ের কেরিয়ারে যেন অসুবিধা না হয় সেজন্য নিজের কেরিয়ার পড়াশোনা এইসব বাদ দিতে হবে। নয়তো বেকার ছেলে হয়ে চাকরিজীবী মেয়ে বিয়ে করার এইসব “হাউশ” বাদ দাও।

দেয়ার ইজ নো ফ্রি লাঞ্চ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড, বোঝা গেছে?

বিঃদ্রঃ “ছেলেরা তো বেকার মেয়ে বিয়ে করে মেয়েরা কেন বেকার ছেলে বিয়ে করে না” বলে কান্নাকাটি করা লোকজনকে বলছি, তোমরা কেন বেকার মেয়ে বিয়ে করো? বিয়ের সময় বুড়া ধামড়া হয়েও কচি মেয়ের খোঁজ করার জন্য তোমাদের কি আমরা সাধছিলাম?

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.