বাঁচার জন্য নিরাপদ বন্ধুত্বের খোলামেলা ক্ষেত্র চাই

আনন্দময়ী মজুমদার:

অলকানন্দা রায়ের কাছে শিখেছি বেদনার কথা বলতে নেই। বলে কোনো লাভ নেই, যদি না সকলে মিলে যৌথ এম্প্যাথির জায়গা থেকে ‘আমাদের বেদনা’ বলে চেনা যায়। ‘আমাদের’ বলে চেনা গেলে সব বেদনা আর সব আনন্দই ঐশ্বর্যময়।

একটা মেয়ের কথা মনে পড়ে। কিছু দিন আগে মেয়েটা মারা গেছে। আত্মহত্যা যাকে বলে। কয়েকটা ব্যাপার মনে আসে সব সময়। মেয়েটা খুব শিক্ষিত ছিল। হাসিখুশি। আমি জানি না কী ভাবে এমনটা ঘটেছিল।

কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর ধার ঘেঁষে হাঁটছেন এমন কিছু মানুষকে আমরা বোধহয় অনেকে দেখেছি।

ক্রনিক ডিপ্রেশনে ভোগেন এমন অনেক মানুষ আছেন। নারীর সংখ্যা এক্ষেত্রে বেশি। পুরুষও আছেন। আমি ডিপ্রেশনের রোগী নই। যদিও হলে কবুল করাটা দোষের কিছু না।

আমার ধারণা আমার দেখা অনেক মেয়ের আত্ম-অবসানকে নিঃসঙ্গতা আর ডিপ্রেশন দিয়ে চিহ্নিত করা যাবে।

ডিপ্রেশন একটা অসুখ হতেই পারে। কিন্তু সংযোগের অভাব, অর্থাৎ নিঃসঙ্গতা এই অসুখকে অনেক সময় ট্রিগার করে, আর বাড়ায়। অন্তত একজন নিঃসঙ্গ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একমাত্র উপায় মানবিক সংযোগ। যেকোনো মানুষই মানুষ। শ্রেণী, ধর্ম, শিক্ষাগত যোগ্যতা আর জেন্ডার দিয়ে দেখবেন না।

দলছুট নারীদের জন্য এই সংযোগ নানা কারণে অসুবিধের। প্রথমত নারী বলে। আরো, দলছুট বলে। যাদের তেমন রিসোর্স নেই, অভাব বা অন্যান্য সমস্যা আছে, সাপোর্ট সিস্টেমের অভাবে তারা কোণঠাসা হয়ে যান।

সমাজে কিছু নারসিসিস্টিক শক্তি আছে যারা নাজুক মানুষকে দুঃখ দিতে পারলে কিছু চায় না। সমস্যা হলো নারসিসিস্টরা পেছনে থাকেন, অদৃশ্য হয়ে, তারা অনেকের জীবন-মরণ পরিচালনা করেন এবং এক সময় মাটির পুতুলের মতো কোনো নারীর জীবন চুরমার হয়ে যায়। সেটা কিন্তু তাদের দোষে নয়। ব্যাটারি চার্জ না দিলে দুনিয়ার সব চেয়ে দামি মোবাইল ফোনটাও একদিন থেমে যাবে। মানুষের জীবনী শক্তির জন্যও চার্জ দরকার। সেটা সাপোর্ট সিস্টেম থেকে আসে।

একটু খেয়াল করবেন। সাপোর্ট সিস্টেম খুব জরুরি। ফাঁকা উপদেশ, অকরুণ রায়, তির্যক মতামত, পেছনে পেছনে বিদ্রুপ, এবং সামনে পেছনে জেরা এদের জীবনকে আরেকটু নিঃসঙ্গ করে, আরেকটু দুঃখী করে পৃথিবী।

তাঁদের একটা স্বাভাবিক জীবন চাই। এবং তাঁদের সন্তানদের জন্য, নিজের জন্য, কিছু ঝুঁকিহীন নিরাপদ বন্ধুত্বের খোলামেলা ক্ষেত্রও দরকার। পারলে তাঁদের সঙ্গে থাকুন। সমাজের নারসিসিস্টিক শক্তিগুলোকে বরং চিহ্নিত করুন।

শেয়ার করুন: