নারীবাদ বুঝতে হলে কনটেক্সট জানা জরুরি

দিলশানা পারুল:

যেকোনো সামাজিক থিউরির সীমাবদ্ধতা কনটেক্সট এ ফেলে টেস্ট না করলে বোঝা যায় না। সামাজিক থিউরির যে ধাপগুলো পরিবর্তন হয় সেইটা মূলত এই সীমাবদ্ধতাকে এড্রেস করতে গিয়েই হয়।

দিলশানা পারুল

ধরেন বাংলাদেশে ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ল্ডে প্রথমে নিড বেইজ কাজ করেছে, দেখেছে আসলে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না তখন তারা রাইট বেইজ এপ্রোচে চলে গেছে। নারীবাদের ওয়েভগুলোও তাই। ফার্স্ট ওয়েভ এর সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য সেকেন্ড ওয়েভ, সেইটার সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে উত্তরনরে জন্য থার্ড ওয়েভ। আবার শুধু যে সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ, তা না।
দেখা যায় অনেকগুলো ইন্ডিকেটর ফুলফিল হওয়ার পরও ইটস নট ইনাফ। কিছু বৈষম্য নতুন করে চিহ্নিত হয় সেইগুলো ফুলফিল করার প্রয়োজন পরে, আবার সময়ের সাথে নতুন বৈষম্য তৈরিও হয়। কাজেই সব মিলিয়েই আন্দোলনের দাবি বা বক্তব্যকে নতুন ভাষা দেয়ার প্রয়োজন পরে। সেই জায়গা থেকেই তিনটি ওয়েভের জন্ম, কিন্তু কোনটা থেকে কোনটা বিচ্ছিন্ন না। ওয়েভ না বলে বাংলা ভাষায় যদি ধাপ শব্দটা ব্যবহার করি ইট মেইকস মোর সেন্স। নারীবাদের প্রথম ধাপের সফলতা বিফলতার উপর নির্ভর করে নারীবাদের সেকেন্ড ধাপের আবির্ভাব, আবার সেইটার উপর নির্ভর করে তার পরেরটা।

দ্বিতীয় ওয়েভের সবচেয়ে বড় সমালোচনা ছিলো এইটা শুধুমাত্র পশ্চিমের হোয়াইট এবং এলিট শ্রেণির মেয়েদের নিয়েই কাজ করেছে, কথা বলেছে। এই সীমাবদ্ধতাকে এড্রেস করে থার্ড ওয়েভে কালো এবং শ্রমিক শ্রেণির মেয়েদের ইনক্লুড করা হয়।

এবং থার্ড ওয়েভের সবচেয়ে পপুলার শ্লোগান ছিলো মাই বডি মাই রাইট। এইটার ইন্টারপ্রিটেশনও আবার জনে জনে ভিন্ন।

এখন মজার বিষয় দেখেন আমাদের দেশে নারীবাদী বলে যে গুটি কয়জন কথা বলে বা পপুলার, এরা কিন্তু থার্ড ওয়েভের এই শ্লোগানটাকে সাংঘাতিকভাব ঠিক মনে করে এবং চর্চা করে। তার মধ্যে স্বেচ্ছায় পতিতা বৃত্তি উইমেন রাইট, নগ্ন নারীদেহ প্রদশর্ণ আমার রাইটা, কিংবা নগ্ন নারীদেহ পণ্যায়নের সমস্যা নাই এই সমস্ত যুক্তিই আসছে থার্ড ওয়েভের মাই বডি মাই রাইট এই বক্তব্যকে ডিফেন্ড করে।

এবার আমি আবার কনটেক্সে ফিরে যাই। বার বার আমি একটা কথা বলি সামাজিক তত্ত্বের জন্য কনটেক্সটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নারীবাদের ফার্স্ট ওয়েভের দাবিগুলো কী ছিলো? নারীর ভোট দেয়ার অধিকার. নারীর শিক্ষার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, সম্পত্তিতে অধিকার বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা, বিয়ের সিদ্ধান্ত। এখন আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি ফার্স্ট ওয়েভের কোন কোন দাবিগুলো আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা অর্জন করতে পেরেছি? আমাদের মেয়েরা কেবল ভোট দেয়ার অধিকার পেয়েছে। ক্লাস ফাইভে উঠলে বিয়ে হয়ে যায়। মাত্র ১০% মেয়েও মনে হয় আমরা কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারি নাই।

০.১ ভাগ মেয়েরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে, প্রেম করলে এখনো এই দেশে সবচেয়ে বড় অপরাধ। তাহলে আমার সমাজ ব্যবস্থার জন্য আসলে কোন ওয়েভটা প্রযোজ্য? হইতে পারে ফার্স্ট ওয়েভের সময়কাল ছিলো পশ্চিমে ১৮ শতকের মাঝখান থেকে ১৯২০, আর আমরা এখন আছি
একবিংশ শতকে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পশ্চিমের তুলনায় কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? সেইটা কে ভাববে? আমার সমাজ যদি একশ বছর পিছানো থাকে আমি একশ বছর এডভান্স তত্ত্ব এপ্লাই করলে সমাজ সেইটা এবজর্ভ করতে পারবে?

ওই জন্যই বলি কনটেক্সট খুব জরুরি। আবার সবচেয়ে ফানি হচ্ছে আমরা একলাফে চলে যাচ্ছি থার্ড ওয়েভে, কিন্তু দাবিদাওয়া বা বক্তব্য যা সাজাচ্ছি সেইটা কিন্তু সমাজের এলিট শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্ব করছে। অথচ নারীবাদের থার্ড ওয়েভ বলছে এইটা সেকেন্ড ওয়েভের সীমাবদ্ধতা ছিলো এলিট শ্রেণির মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা, এইখান থেকে বের হতে হবে।

আর আমরা শুরুই করছি যেইটাকে সীমাবদ্ধতা বলে ডিক্লেয়ার করা আছে সেইখান থেকে।

শেয়ার করুন: