‘দোজখের আগুনের চেয়ে দুনিয়ার আগুনের তাপ কি কম?’

সারা নুর:

নুসরাত জাহান রাফি নামের মেয়েটি বড় ধর্মবিশ্বাসী ছিলো, এবং একটা ধার্মিক পরিবারের সন্তান ছিলো। সাধারণত বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যারা অতি ধার্মিক মনোভাব পোষণকারী, তাঁরাই তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়ান। মেয়েটি একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলো এবং ধর্মীয় আইনকানুন ও পর্দাপ্রথা মেনে বোরখা পরতো। নুসরাতের বাবাও একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

আমাদের সমাজে যৌন নিপীড়নের কোনো একটি ঘটনা ঘটা মাত্র, একদল পুরুষ বলা শুরু করেন যে মেয়েটি ‘পর্দা’ করলে এইরকম ঘটনা ঘটতো না। মেয়েরা নিজেদের শরীর ঢেকে রাখলেই যৌন নির্যাতন/ যৌন হয়রানি/ ধর্ষণ আর ঘটবে না! যৌন নিপীড়কসহ এই জাতীয় সব ঘটনার ধর্মীয় সমাধান হচ্ছে তাদের মতে ‘পর্দা’। যেই শ্রেণির লোকেরা এই ধরনের কথাগুলো বলেন তাদের মধ্যকার একটি বড়সংখ্যক পুরুষ প্রবলভাবে ধর্ম মানেন, প্রচলিত ভাষায় তাদের ‘হুজুর’ হিসেবে চিনি আমরা।

এইরকম একজন হুজুর সোনাগাজী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ-দৌলা, তিনি নিজেও নিশ্চয়ই অসংখ্যবার এই কথা বলেছেন যে পর্দা না করার কারণেই মেয়েরা নানান নির্যাতনের শিকার হয়! কিন্তু পর্দানশিন নুসরাত রাফি কিন্তু পর্দাপ্রথা মেনেও, নিজেকে ঢেকে রেখেও বাঁচতে পারেনি।

বাঁচতে পারেনি একজন প্রতিষ্ঠিত ধর্মপ্রাণ ব্যাক্তির হাত থেকে যিনি কিনা সমাজে ধর্মশিক্ষা দেন, রীতিমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান।

দোজখের আগুনের ভয়ে কিনা যেই মেয়েটি ধর্মকর্ম করতো, পর্দা মেনে চলতো, সেই দোজখের ভয় দেখানো এক ধর্ম ব্যবসায়ীই তাকে পৃথিবীতেই আগুনে পুড়িয়ে মারলো! পৃথিবীর আগুনের কি তাপ কম? কিছুমাত্র কম কষ্ট হয়েছে নুসরাত রাফির?

ধর্ম আর পর্দার দোহাই দিয়ে বহু নারী নির্যাতনের ঘটনাকে এই আপনারা তুচ্ছ করেছেন, বহুবার বলেছেন ‘পর্দা’ করলে ধর্ষণ/নির্যাতন ঘটতো না। আজ তাহলে এই মেয়েকে পুড়ে মরতে হলো কেনো? জবাব দিন। জবাব দিতেই হবে।

শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন: