ইমতিয়াজ মাহমুদ:
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কেন গ্রেফতার করেছে? তিনি নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। এইটুকু খবর পড়লেই তো আপনার বিরক্ত হবার কথা, রেগে যাওয়ার কথা, নাকি? একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার জন্যে কেন একজন নাগরিককে গ্রেফতার করা হবে? সরকার প্রধানকে নিয়ে কটুক্তি করার জন্যে যদি কাউকে গ্রেফতার করতে হয়, বা জেলে পাঠাতে হয়, তাইলে তো পৃথিবীর যে কোনো সভ্য দেশেরই জনগণের একটা বড় অংশ জেলে আটকা থাকার কথা।
কী করেছেন মাহফুজা আখতার, যার জন্যে তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছে? প্রিয় ডট কম থেকে তুলে দিচ্ছি:
“মামলায় উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ক্রীড়ামোদি। তার সম্পর্কে গত ০৮ মার্চ তারিখে বেলা ৪.৩৫ মিনিটের সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বি.এফ.এফ হাউজ মতিঝিল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন কিরণ।

সেদিন কিরণের ভাষ্য ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব খেলাই তার কাছে সমান। সেখানে কেন দু’চোখে দেখবে? মেয়েরা ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন। গিফট তো পরের কথা, অভিনন্দন তো দিতে পারে, মিডিয়ায় কি কোনো অভিনন্দন জানাইছে? বিএফএফের টাকা কেন প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে দেয়াব? বিসিবির অনেক স্বার্থ আছে। বিসিবি সরকারের অনেক ফ্যাসিলিটিজ নেয়। চুন থেকে পান খসলেই প্লট পেয়ে যায়, গাড়ি পেয়ে যায়। বিএফএফ সরকারের কাছ থেকে কোনো ফ্যাসিলিটিজ নেয় না।’”
এই কথার জন্যেই নাকি শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেফতারি পরওয়ানা এবং আজকে গ্রেফতার। গ্রেফতারের পর জামিন না দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছে জেলে।
মাহফুজা আক্তার কিরণ কে, আর তিনি কীরকম মানুষ, কী রাজনীতি করেন, এইসব আমি ঠিকঠাক জানি না। তিনি মানুষ ভালো কি মন্দ, সেটাও জানি না। এইসব জানার তো দরকারও নাই। যে কথাগুলি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলির জন্যে একজন নাগরিককে গ্রেফতার করতে হবে? এই গ্রেফতারের আদেশ আমাদের দেশের একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে- ভাবতে পারেন? তারপর তাঁকে করতে হাজির করার পর তাঁকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে সেও একজন ম্যাজিস্ট্রেট- ভাবতে পারেন? আমাদের দেশটা কোথায় আছে বুঝতে পারছেন? গণতন্ত্র আইনের শাসন মাগরিকদের অধিকার বলে কি দেশে আর কিছু আছে?

শোনেন, প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করার জন্যে নাগরিকদের গ্রেফতার করা এটা খুবই অন্যায় কাজ, বাজে রকমের অন্যায় কাজ। প্রতিটা নাগরিকের অধিকার আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা। সেই সমালোচনার ভাষা যত তীব্র আর তীক্ষ্ণই হোক না কেন, সমালোচনার অধিকার তাতে খর্ব হয় না। এমনকি সমালোচনা যদি বস্তুনিষ্ঠ নাও হয়, বক্তব্য যদি ভুল হয় তাতেও আপনি চট করে একজনকে গ্রেফতার করতে পারেন না।
নাগরিকেরা যখন সরকারকে বা প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করেন, সেটা দাঁড়িপাল্লা দিয়ে বা স্কেল দিয়ে মেপে করতে পারবে না। সমালোচনা হবে মুক্ত, দ্বিধাহীন, অবারিত, তীব্র, তীক্ষ্ণ এবং ঝাঁঝালো। প্যানপ্যান করে মিষ্টি সুরে ‘গঠনমূলক’ সমালোচনা কোন সমালোচনাই না। দুনিয়ার দিকে তাকান, দেশের বাইরে চারপাশে তাকান- দেখেন, মানুষ তাদের দেশের সরকার প্রধানকে কীভাবে, কত রকমভাবে সমালোচনা করে। আর বিদেশেই কেন?
দেশেই আপনার চারপাশে তাকান। রাজনীতিবিদরা বা আমি, আপনি আমরা রোজকার কথাবার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে কীভাবে, কী ভাষায় সমালোচনা করি? এখন যে কথার জন্যে মাহফুজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেইটাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে যদি গ্রেফতার করতে হয় তাইলে কি আপনি জেলের বাইরে থাকার কথা?
নিন্দাযোগ্য কাজ এটা। অত্যন্ত অন্যায় কাজ। গর্হিত কাজ হয়েছে এটা। আর আপনারা যারা সরকারের সমর্থক আছেন, বিশেষ করে মহান ‘বিকল্প নাই’ পার্টির ‘বিজ্ঞ’ ভাই ও বোনেরা- আপনারাও একটু মুখ খোলেন। নিজেদের স্বার্থেই আপনার প্রভুদেরকে একটু বলেন। এইসব আচরণের ফলাফল ভালো হয় না।