অরিত্রীর আত্মহত্যা এবং আমার কিছু অভিজ্ঞতা

নাঈমাহ তানজিম:

নিজের ছাত্রজীবনের কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। আমি মোট চারটা স্কুলে পড়েছি (ফুলকুঁড়ি, অক্সফোর্ড, ডা. খাস্তগীর, এবং মণিপুর)।

ফুলকুঁড়ি বা অক্সফোর্ডের কথা আমার মনে নেই। তবে আমি অক্সফোর্ড ছেড়ে আসার পরে আমার কাজিন এর কাছে শুনেছিলাম, সেখানকার সায়েন্স টিচার সুনীল স্যার আমাদের ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চাদেরকে নিয়মিত অ্যাবিউজ করতো। হাফ ইয়ারলি এবং ফাইনাল পরীক্ষার পর ভাইভা বা ওরাল টেস্টের সময় সে একটা রুমের মধ্যে ওরাল টেস্ট নিতো, এবং সেখানে যার ভাইবা হচ্ছে, সে ছাড়া আর অন্য কোনও স্টুডেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এমনকি কোনও ফিমেল টিচারও থাকতেন না। এই সুযোগে সেই লোক থ্রি-ফোরের সব মেয়ে বাচ্চাদের ইচ্ছামতন মোলেস্ট করতো।

এবার আসি ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে। প্রথম ২-৩ বছর ভালোই কাটছিলো। আমি খুব ফাঁকিবাজ ছিলাম তাই কখোনই আমার রেজাল্ট ভালো হতো না। মাঝামাঝি টাইপ ছাত্রী ছিলাম। তবে স্কুলের বই বাদে ‘আউটবই’ পড়ার প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিলো। সুকুমার রায়, রবীন্দ্রনাথ নাথের ‘কৈশরক’, হুমায়ূন আহমেদ এর বাচ্চাদের বইগুলো,মুহাম্মদ জাফর ইকবালের অ্যাডভেঞ্চার, সায়েন্স ফিকশন একদম ভাজা ভাজা করে ফেলেছিলাম। অথচ আমার টিচাররা তো বটেই, আমার বাবা-মাও মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হতেন আমার এই গল্পের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে।

ক্লাস সিক্সে ওঠার পর ঘটলো বিপত্তি। আমার মায়ের সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো তখন বেশ খারাপের দিকে। আম্মু সবাইকে সন্দেহ করতো, এমনকি আমার বাবাকেও। বাবাও বুঝতে পারতেন না যে, এটা একটা অসুখ। (বুঝবে কীভাবে? সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে ২০০১ সালে বাংলাদেশে কি আদৌ কোনও সচেতনতা ছিলো?)। তারপরেও বাবা আমার মাকে নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান, সেই ডাক্তার অনেক ঘুমের ওষুধ দেন। ফলাফল আমার আম্মা কিছুদিন ওষুধ খেয়ে বন্ধ করে দেন, এবং আমার বাবাকে আরও বেশি সন্দেহ করা শুরু করেন।

আমার আম্মুর ১৭ বছর আগের অসুখের কথা এতো বিতং করে লেখার কারণ হচ্ছে, এই অসুখের কারণে আমাকে প্রচুর সমস্যায় পড়তে হয়। একদিকে Domestic violence, আরেকদিকে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর টিটকারি, আরেকদিকে আমার বাবার অসহায়ত্ব। যেহেতু আমি একমাত্র সন্তান, সমস্ত ঝড়ঝাপটা আমার উপর দিয়েই যেতো। আমি অসম্ভব হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম।

ফলাফল আমার রেজাল্ট অসম্ভব খারাপ হলো। যে আমি কোনও বিষয়ে ৬০ এর নিচে নম্বর পেতাম না, সে আমি ১ম সাময়িক পরীক্ষায় গণিতে ১০০ তে ২৮, এবং বিজ্ঞানে ৩৬ পেয়ে, ২ বিষয়ে ফেল করলাম।

২০০১ সালে কোন ছাত্রী ফেল করলে অভিভাবক ডাকার রেওয়াজ ছিলো না। তাই আমার ক্লাসটিচারসহ আরো একজন শিক্ষিকা আমাকেই সমস্ত দোষারোপ করলেন। অভিভাবক ডাকলে অন্তত আমার বাবা বুঝিয়ে বলতে পারতেন যে, আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে।

সে বছরই শেষের দিকে আমার মা আমাকে নিয়ে নানুর বাসা (ঢাকায়) চলে আসলেন। আমি খুব খুব মিস করতাম বাবাকে। ঢাকায় আমাকে একটা স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে মা ভাবলেন, এইবার আমার পড়াশোনা ভালো হবে। কিন্তু কীভাবে হবে? আমার শুধু বাবার কথা মনে পড়তো, আগের স্কুলের বান্ধবীদের কথা মনে পড়তো। তাই আমার বাবা যখন আমাকে নিতে আসলেন, আমি মাকে না জানিয়ে, আমার ছোট মামার সাথে লুকায়ে, বাবার কাছে চলে গেলাম। ( ভাগ্যিস গেছিলাম! তার মাত্র এক বছর পরই আমার বাবা মারা যান)। সে বছরটা আমার পড়াশোনা বেশ ভালোই হচ্ছিলো। আহামরি ভালো না হলেও, একেবারে খারাপ না।

তারপর ২০০৩ সাল, আমার বাবা হঠাৎ করে স্ট্রোক করে মারা গেলো আমার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার মাত্র ছয় দিন আগে। পরীক্ষা শেষ হবার পর স্কুলে গেলাম, ক্লাসে ভীষণ অমনোযোগী থাকতাম, এমনকি গল্পের বই পড়তেও ভালো লাগতো না। বাবার এরকম আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে আমার আরও অনেক সময় লেগেছিলো। ক্লাস টেস্টে খারাপ করতাম, হোমওয়ার্ক করতে ইচ্ছা করতো না, পড়া শিখে গেলেও টিচারের সামনে গিয়ে ভুলে যেতাম।

একদিন ইংরেজি ২য় পত্র ক্লাস চলছিলো, আমি একদম পিছনের বেঞ্চে বসে রচনা মুখস্থ করছিলাম। ম্যাডাম বারবার পিছনের বেঞ্চের মেয়েদের ডাকছিলেন, কিন্তু আমি আরও রিভাইস দিচ্ছিলাম, কারণ আমি জানতাম আমি ম্যাডামের সামনে গিয়ে ভুলে যেতে পারি।

ম্যাডাম সবার পড়া ধরা শেষ করে আমার কাছে আসলেন, আমাকে নিয়ে গেলেন টিচার্সরুমে। সেখানে আমার ক্লাস টিচারের কাছে আমার সম্পর্কে অনেক অভিযোগ করলেন। আমার ক্লাসটিচার উনার সামনেই আমাকে বকাঝকা করে বললেন, “তোমার বাবা মাত্র কয়েকমাস আগে মারা গেছেন, তুমি তো আরো বেশি ভালো করে পড়বা।” কিন্তু একথা আমার ইংরেজি ম্যাডাম শুনেও না শোনার ভান করলেন, এবং বাকি টিচাররা আমার ক্লাসটিচারের কথায় সায় দিলেন।

আচ্ছা, যে মেয়েটার বাবা মাত্র তিন মাস আগে তার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেছে, সে কীভাবে মন দিয়ে পড়তে পারে? আমাকে কেউ জানাবেন? জানালে আমি নিজেকে একটু হলেও দোষী ভাবতে পারি।

ঘটনা এখানেই শেষ না। টিচার্সরুম থেকে বকাঝকা শুনে ক্লাসে ফিরে দেখি ততক্ষণে ইসলাম শিক্ষা ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। “হুজুর আসতে পারি?” জিজ্ঞেস করতেই হুজুর খেঁকিয়ে উঠে বললেন,
“আসার দরকার কী? এতক্ষণ যেখানে ছিলি সেখানেই যা।”
“হুজুর টিচার্সরুমে ডেকেছিলেন আপারা।”
“সেটা কী এমনি এমনি ডাকছে? বেয়াদ্দবি করছোস, তাই ডাকছে। এইবার গোটা ক্লাসের সামনে কান ধরে দাঁড়ায়ে থাক।”

আমি সেদিন টানা ৩০ মিনিট সমস্ত ক্লাসের সামনে কান ধরে, মাথানিচু করে দাঁড়ায়ে ছিলাম। আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিলো।

আমি সে বছর ২য় সাময়িক পরীক্ষায়ও বসতে পারিনি।

আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত ছিলাম। আমার অবস্থা দেখে আম্মু আমাকে নিয়ে, আমার নানুরবাড়ি ঢাকায় চলে আসলো।

২০০৪ সালের জানুয়ারিতে আমি ভর্তি হলাম, মণিপুর হাই স্কুলে। প্রথম একবছর আমি একদম চুপচাপ বসে থাকতাম। কোন পড়া পারলেও হাত তুলতাম না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়ে থাকতাম। তবে দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনাটা করতাম। কারণ, পড়াশোনা করা ছাড়া যে আমার আর কোনও উপায় নেই, সেটা তখনই বুঝতে পেরেছিলাম।

নাঈমাহ তানজিম

৮ম, ৯ম এবং ১০ম শ্রেণি আমি মণিপুর স্কুলেই পড়েছিলাম। প্রথম দুই বছর কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু ক্লাস টেনে উঠতেই সমস্যা শুরু হলো। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় জীবনে প্রথমবারের মতন কেমিস্ট্রিতে ফেল করলাম। প্রিটেস্ট এর রেজাল্ট আরও খারাপ। তখনো বুঝিনি যে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা, ‘এসএসসি পরীক্ষা মুখের কথা নয়’, এইটা বুঝানোর জন্য আমাদের খাতা দেখেছিলেন ভয়াবহভাবে, যাতে আমরা নাক-মুখ বন্ধ করে পড়ি, এবং উনাদের প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ সংখ্যক GPA 5 এনে দিয়ে, উনাদের আরো ভর্তিবাণিজ্যের ব্যবস্থা করে দেই।

এছাড়া স্যারদের বাসায় ব্যাচে না পড়ার কারণে উনাদের ব্যক্তিগত একটা ক্ষোভ তো ছিলোই।

প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পরপরই আরেকটা সমস্যায় জড়ায়ে গেলাম। কয়েকমাস আগে আমার জন্ডিস এবং টাইফয়েড একসাথে হওয়ার কারণে আমি খুব দুর্বল হয়ে গেছিলাম, প্রায়ই স্কুল কামাই করতাম। এজন্য আমার আম্মুকে আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস ডেকে পাঠান। আম্মু যেদিন স্কুলে গেছিলো, আমি সেদিনও বাসায় ১০১ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে শুয়ে ছিলাম। আম্মু অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস ম্যাডামের রুমে গিয়ে আমার নাম বলে নাঈমা। আম্মু ম্যাডামের সাথে কথা বলে, আমার অসুস্থতাজনিত কারণে ঘনঘন অনুপস্থিতির ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেন। কিন্তু আমি যে সেদিন স্কুলে যাইনি সেটা আম্মু আলাদা করে বলে নাই। বলার দরকার ছিলো না, কারণ হাজিরা খাতা দেখলেই তো দেখা যাবে যে, আমি সেদিন অ্যাবসেন্ট ছিলাম।

দুর্ভাগ্যবশত আমার আরেক ক্লাসমেটের নাম ছিলো নাইমা। এবং সেদিনই সে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে স্কুলে যায়নি। স্কুলড্রেস পরেই বাসা থেকে বের হয়েছিলো। তারপর কোথায় গেছিলো, কেউ জানে না।

অতএব নাঈমাহ্ আর নাইমাতে গুলিয়ে যায়। যেহেতু দুজনই সেদিন অনুপস্থিত ছিলো, তাই অনেকে আমাকেই ‘স্কুল পালানো নাইমা’ ট্যাগ পেতে হয়েছিলো।

(এখানে বলে রাখি, স্কুলপালানো ব্যাপারটাকে আমি অপরাধের দৃষ্টিতে দেখি না। আমাদের স্কুলগুলোর পাঠ্যসূচি, কতিপয় শিক্ষকের ব্যবহার, হোমওয়ার্কের চাপ, মুখস্থনির্ভর পড়াশোনা ইত্যাদির অত্যাচারে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই স্কুল পালানোর কথা।
তবে বাসায় স্কুলে যাওয়ার কথা বলে অন্য কোথাও যাওয়া অসততার পর্যায়ে পড়ে।)

এরপর আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেলো। আমার ক্লাস টিচার, যিনি সাধারণ গণিত ক্লাস নিতেন, তিনি পরদিন থেকেই আমাকে নিয়ে অতি-অপমানজনক ঠাট্টাতামাসা করা আরম্ভ করলেন। তারপর আমাকে পাঠালেন অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস ম্যাডামের রুমে, যেন উনার কাছ থেকে ক্লাস করার পারমিশন নিয়ে আসি। ম্যাডাম আগেরদিনই আমার আম্মুর সাথে কথা বলেছেন, তাই উনার আমাকে নিয়ে কোন সন্দেহ ছিলো না। উনি স্লিপ লিখে দিলেন আমি ক্লাসে ফেরত আসলাম।

ক্লাসে এসে শুনি আমার ক্লাসমেটরাও আমার হয়ে স্যারকে বুঝিয়েছিলো যে, আমি ওই নাইমা না। আমি গতকাল বাসাতেই ছিলাম, স্কুল পালাইনি, এবং আমার মা জানেন যে, আমি বাসায় ছিলাম। তবে আমার ক্লাসটিচার সেকথা বিশ্বাস করেছিলেন কিনা সেটা তাদের জানা নেই।

এরপর শুনলাম সবচেয়ে অদ্ভুত কথাটা। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই নাকি স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন,

“এই মেয়ের বাবা কি আসলেই মারা গেছে? নাকি বাপ-মার ডিভোর্স হইছে? নাকি কিছুই হয় নাই, সিমপ্যাথি আদায়ের জন্য এইসব বলে??”

আমি আমার জীবনে অনেক অদ্ভুত কথা শুনেছি। কিন্তু এই কথাটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বাবা মারা না গিয়ে, বাবা-মার ডিভোর্স হলে কি সেই বাচ্চাটার যন্ত্রণা, মানসিক অবসাদ, গ্লানি কোনওভাবে কমে যায়? আর বাবা-মা দুইজনই বেঁচে থাকা অবস্থায় কোনও সন্তান শুধু সিমপ্যাথি আদায়ের জন্য মিথ্যা কথা বলে?
এই প্রশ্নটা করে উনি উনার ছাত্রীদের কাছে ওইদিনই কি সম্মান হারিয়ে ফেলেননি?

যাই হোক অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর আমি শেষ পর্যন্ত উনাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম যে আমি সেদিন স্কুল পালাইনি, এবং আমার বাবা সত্যি মারা গেছেন। এরজন্য আমার মাকে উনার সাথে দেখা করতে হয়েছিলো।

এতোকিছুর পরেও আমার ক্লাসটিচার আমার সাথে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করতো। একদিন একটা উপপাদ্য মুখস্থ পড়া নেওয়ার সময় সে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে, জামার উপরেই ব্রা ধরার চেষ্টা করছিলো।

প্রিটেস্ট এর পর শুরু হলো ‘এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোচিং, এবং ২টা মডেল টেস্ট। বলাই বাহুল্য, এইটা অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের আরেকটা উপায়। (যতদূর জানি, প্রতিটা প্রাইভেট স্কুলেই এই বাণিজ্য হয়)।

টেস্ট পরীক্ষার পরই আমাদের কোচিং বন্ধ হয়ে যায়, এবং মডেল টেস্ট শুরু হয়। মডেল টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর আমাকে ওই স্যারের চেহারা দেখতে হয়নি।

শুধু এসএসসির রেজাল্ট এর পর যেদিন ট্রান্সক্রিপ্ট আনতে গেছিলাম, সেদিন উনাকে দূর থেকে দেখেই লুকায়ে গেছিলাম।

এবার অরিত্রীর প্রসঙ্গে আসি। ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যা করেছে।

অরিত্রী অধিকারী

অরিত্রীর বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ ছিলো। আচ্ছা, তার মোবাইল ফোনটা তো পরীক্ষার হলেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিলো। তার ফোনের গ্যালারি কি চেক করা হয়নি? সে কি আসলেই নকল করছিলো কিনা এটা বের করা তো খুব কঠিন কিছু না।

আচ্ছা ধরে নিলাম, অরিত্রী নকলই করছিলো। সেটাতে আসলে কার ব্যর্থতা বেশি? অরিত্রীর? তার বাবা-মায়ের? নাকি খোদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের?

যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবছর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর, দেখেও না দেখার ভান করে, এবং ফলাফল প্রকাশের পর, ‘ঢাকা বোর্ডে অমুক স্থান অর্জন’ এর বড়াই করে, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুলের ক্লাস এর চেয়ে, স্যার-ম্যাডামদের বাসায় ব্যাচে পড়তে উৎসাহ দেয়, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অলিখিত নিয়ম করে দেয় যে, সামনের দিকে যাদের রোলনম্বর তারাই শুধু ভালো ছাত্র, আর পিছনের দিকে যাদের রোল নম্বর তারা মানুষ এর পর্যায়ে পড়ে না, তাদের কাছ থেকে কীভাবে একজন ছাত্রী সততা শিখবে?

(এখানে আমি শুধু ভিকারুন্নেসা স্কুলের কথা বলিনি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ, সবকটি বিভাগীয় শহরের স্কুলগুলিতে কি আমরা প্রতিনিয়ত এইসব দেখে আসছি না?)

অরিত্রীকে শাস্তি দিতে চাইলে তার বাবা-মাকে অপমান না করেও দেওয়া যেতো। তার বাবা-মাকে ডেকে কি ভদ্রভাবে অভিযোগ করা যেতো না? তাকে সামনে না রেখে তার বাবা-মার সাথে কথা বলা যেতো না?

এইটুকু মেয়ে কেন নকল করছে, সে কি কোনও পারিবারিক সমস্যা প্রত্যক্ষ করছে কিনা, সে কি মানসিক বা শারীরিক অবসাদের কারণে পড়াশোনায় ফাঁকি দিচ্ছে কিনা, সেকি হঠাৎ মিথ্যা বলা শুরু করেছে কিনা, সে কাদের সাথে মিশছে, তার সাথে কি ইদানীং কোনও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে কিনা?- এইসব জিজ্ঞেস করে কি অরিত্রীর অভিভাবকদের সাথে অধ্যক্ষ একটা সাবলীল সম্পর্ক তৈরি করতে পারতেন না?

কেন অপমানই করতে হবে? কেন ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা মেয়েকে এটা বোঝাতে হবে যে, ‘তুমি তোমার পিতা-মাতার অযোগ্য সন্তান’!

ঘুমাও অরিত্রী, আমরা তোমাকে ভালোবাসি।

“Give me another life, I wanna grow up once again.”

শেয়ার করুন: