নতুন মায়েদের প্রপার যত্নটুকু আমরা নিচ্ছি না কেন?

ফারিয়া রিশতা:

গত দুইদিন যাবত ফেসবুক হোমপেজে একটি সংবাদ নিয়ে সবাই হতবাক হয়ে গেছে যে চারদিনের শিশু সন্তানকে ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে মা নিজেও লাফিয়ে পড়ে সুইসাইড করেছে।
প্রথম দফাতেই নিউজটা ভাইরাল হওয়া মাত্রই অনেকেই বাংলাদেশের চিরায়ত ধারা বজায় রেখে ডাক্তার আর হাসপাতালের দোষ খোঁজা শুরু করে দিলেও পরবর্তীতে জানা যায় যে প্রবাসী স্বামীর সাথে ঝগড়ার পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েটি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

‘তোর বাচ্চা আমি পালুম না, দেখিস সকালে উঠে আমি কী করি!’ এটা ছিল স্বামীকে বলা তার শেষ কথা!

এবার চলুন এই ঘটনাটাকে একটু অন্যভাবে দেখি।

আমাদের দেশে পিরিয়ড, সেক্স আর প্রেগন্যান্সি নিয়ে যে ট্যাবু ছিল, তা বর্তমান সময়ে এসে অনেকটা দূর হয়েছে, ইয়ং জেনারেশন নিজেদের মধ্যে এই স্বাভাবিক বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে কথা বলা, নিজের মত প্রকাশ করছে।
সিনেমা, নাটকের দৌলতে প্রেগনেন্সির সময়ে মেয়েদের মুড সুয়িং বা অন্যান্য বেসিক সমস্যাগুলোও মানুষ জানছে, বুঝছে।
অতীতে আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা যেভাবে একটা প্রেগন্যান্ট মেয়ে একটু অসুস্থ হলে কথা শোনাতো – ‘ আমাদের কি বাচ্চা হয়নি, তাই বলে আমরা কি এমন বিছানায় পরে আদিখ্যেতা করেছি’ সেটা অনেকখানি কমে গেছে এই সময়ে৷

কিন্তু সবার অগোচরে থেকে যায়, একটি নতুন মায়ের মানসিক চেঞ্জটা।
একটা প্রশ্ন করি আপনাদের, একটা বাচ্চা জন্মানোর আগে যে পরিমাণে হবু মাকে আমরা এটেনশন দিই, বাচ্চাটা জন্মাবার পর সেটা দিই কি? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তখন সদ্যোজাত বাচ্চাটা আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে।

এতো ভূমিকা কেন দিলাম?
কারণ একটা বিষয় আমরা অনেকেই জানি না যে, বাচ্চা জন্মাবার পর নতুন মায়ের মাঝে অনেকরকম চেঞ্জ আসে তার অনেকখানি মানসিকও। নতুন ভবিষ্যৎ এর চিন্তা, হরমোনাল চেঞ্জ সব মিলায়ে একটা নতুন মাকে মানসিকভাবে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয়।

মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং এই সময়টাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে Postpartum Psychosis. গুগলের হেল্প নিয়ে যা পেলাম তা হলো, ‘ Postpartum psychosis (or puerperal psychosis) affects thousands of women in the each year. It is a severe episode of mental illness which begins suddenly in the days or weeks after having a baby. Symptoms vary and can change rapidly. They can include high mood (mania), depression, confusion, hallucinations and delusions. Postpartum psychosis is a psychiatric emergency. ‘
লাস্ট লাইনটা দেখুন, সায়কিয়াট্রিক ইমার্জেন্সি!
অথচ কত অবলীলায় একটা নতুন মাকে একলা নিজেকে সামলাতে দিই।

গুগল আর বিভিন্ন জার্নাল মোতাবেক, এই Postpartum Psychosis এক একটা মায়ের এক এক রকমের হয়, কেউ খুবই স্বাভাবিক রাখতে পারে নিজেকে, আর কেউ এই মেয়েটার মত কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। খোদ আমেরিকায় (সালটা মনে নাই) এক মহিলা তিনটা বাচ্চা হওয়ার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, বোকা হাজবেন্ড মনে করেছিল, আরেকটা বাচ্চা হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চার নাম্বার বাচ্চা হওয়ার পর সেই মহিলা পুরোপুরি পাগল হয়ে নিজের চারটা বাচ্চাকেই খুন করে ফেলেছিল।
তাই এই Postpartum Psychosis যে হেলাফেলার বস্তু নয়, এটা সকলের বোঝা উচিত।

যাক, লেখা আর লম্বা না করি, আমার পুরা লেখাটা লেখার একমাত্র উদ্দেশ্যে হলো, শুধু বাচ্চা জন্মানো পর্যন্তই নয়, পরবর্তিতেও নতুন মায়ের যত্ন নেয়াটা জরুরি। তার শারিরীক, মানসিক দুই ক্ষেত্রেই খেয়াল রাখুন, তার ওভার ইমোশনাল হওয়া বা মুড সুয়িং এ বিরক্ত না হয়ে তার পাশে থাকুন, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। সন্তান জন্মাবার পর কিছুদিন পর্যন্ত নতুন মায়ের সাথে কেউ থাকা উচিত, কথা বলার জন্য হলেও।

ফর গড সেক! সে একটি সন্তান জন্মদানের মতো অসাধারণ ম্যাজিকাল একটা ব্যাপার ঘটিয়েছে, নিজের শরীরের সবটুকু দিয়ে একটি সন্তানকে দশ মাস যত্নে রেখেছে, নিজের জীবনটা সঁপে দিয়েছে বাচ্চাটার জন্য, আর সেটার বিনিময়ে প্রপার কেয়ারটুকু কি সে ডিজার্ভ করবে না?

ভালো থাকুক জগতের সকল মা এই চাওয়াটা কি খুব বেশি?

বিঃদ্রঃ যদি আপনার বউ, বোন অথবা চেনা যেকোনো মেয়ের মাঝে সন্তান জন্মদানের পর মানসিকভাবে কোনো চেঞ্জ লক্ষ্য করেন, তাহলে অতিসত্বর চিকিৎসক অর্থাৎ মানসিক চিকিৎসকের সহযোগিতা নিন। প্রপার কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

শেয়ার করুন: