তাসকিন, আপনি ব্যাখ্যা দিতে গেলেন কেন?

সুদীপ্তা ভট্টাচার্য্য রুমকি:

মি. তাসকিন আহমেদ, ফেইসবুকে নিজের সন্তানের জন্ম সম্বন্ধিত আপনার ব্যাখ্যামূলক কমেন্ট দেখে I am really shocked. আপনি এটা কী করলেন? নিম্ন মানসিকতার অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মানুষের কাছে নিজের বিয়ের দিন থেকে সন্তানের জন্মের দিন পর্যন্ত যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করে বিবাহ পরবর্তী সন্তান ধারণের অংক মিলিয়ে তাদের কাছে কেন সন্তানের জন্মের বৈধতার পরীক্ষায় পাশ করার প্রমাণ পত্র দাখিল করলেন, বিষয়টা বোধগম্য হলো না।
এর মাধ্যমে আপনি আপনার স্ত্রী, সন্তান সর্বোপরি আপনার নিজের পরিবারটাকে কী পরিমাণ ছোট করে ফেললেন আপনি হয়তো বুঝতেই পারলেন না।

যারা চিন্তা, চেতনা, মেধা, মননে নর্দমার কীট সমতুল্য, তারা আপনার কাছে এতো গুরুত্ব বহন করার কারণও বুঝলাম না। আমাদের সমাজে এমন পার্ভার্ট চিন্তার পুরুষ ও নারী আছে, যারা এসমস্ত নোংরা ভাবনা সবসময়ই নিজের মধ্যে ধারণ করে। কোনো সুস্থ চিন্তা তারা কখনোই করতে পারে না। নিজেরা অসুস্থ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এদেরই সন্তান হয় ডাস্টবিন এ পাওয়া যায়, এরাই সন্তানের দায়িত্ব এড়িয়ে পালায়, আবার এরাই অন্যের সন্তান বৈধ কী অবৈধ তার হিসাব কষতে বসে নিজের পিরিয়ড এর ডেট যে মিস হয়ে গিয়েছে তা ভুলে যায়। ফলশ্রুতিতে এবরশনের মাধ্যমে সাধ্বী সেজে অন্যের সন্তানের বৈধতা নিয়ে কথা বলতে আসে। চাল-চুলো কিছু নেই, দুই টাকার মুরোদ নেই, এরাই যখন সংসার, সন্তান কিছুরই মর্যাদা দিতে জানে না, তখন আপনি যে অবস্থানে আছেন, সেই অবস্থানে থেকে এই বয়সে হিতাহিত জ্ঞান সম্পূর্ণ সমুন্নত রেখে ভদ্র, সভ্য মেয়েকে বিয়ে করে কী করে সুন্দরভাবে সংসার করা যায়, তা তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কুলোয় না। তাই অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এরা অন্যের ব্যক্তি জীবনে নাক গলাতে আসে।
নিজেদের মতো সবাইকে ভাবতে এরা জন্মগতভাবে অভ্যস্ত। কাউকে সুখী দেখলেও এরা নিজে অসুখী বোধ করে।

একজন নারীর কথা জানি যিনি নিজের জা এর বিয়ের ১৫ বছর পর সন্তান জন্ম নেয়ায় সেই সন্তানকে অবৈধ বলতেন, কারণ বৈধ হলে এতো বছর হলো না কেন…ভয়াবহ লেগেছিল শুনে যখন নিজের পুত্রবধূকেও আর্লি কনসিভ করায় উল্টাপাল্টা কথা শোনাতেন প্রেমের বিয়ে বলে, যদিও দুইজনের অবস্থান ছিল দুই শহরে। পরে শুনেছিলাম নিজের ছেলে আর ছেলের বউ ও বাচ্চা নিয়েও শ্লীলতাবহির্ভূত কথা তিনি আত্মীয়-স্বজনকেও বলতেন। যেখানে এইধরনের মানুষ নিজের ঘরের মানুষকেও ছাড়ে না তাদের বিষাক্ত চিন্তার রসদ হওয়া থেকে, সেখানে আপনি তাসকিন এই কারণে আপনাকে কেন ছাড়বে?

তাদের কলুষিত মনের স্থুল প্রশ্নের ফাঁদে পড়াই আপনার উচিৎ হয়নি।

আমরা যখন সন্তানের বাবা কিংবা মা হই, তখন থেকে আমাদের কাঁধে দায়িত্ব বর্তায় আমাদের সন্তানটির সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রাখা। আপনি এই কমেন্ট করে আপনার সদ্যোজাত শিশুকে অসম্মান করেছেন। তার এখতিয়ার আপনার আছে বলে আমি মনে করি না।

বাবা একটা সন্তানের কাছে আদর্শ। তার দৃষ্টিতে হিরো। সেই মানুষটাকে মাথা উঁচু করে তার সুরক্ষায় অবিচল হিসাবে শিশুটি দেখতে চায়। অধমের কাছে কোনো কারণ ছাড়া নত মস্তকে দাঁড়ানো বাবা কিন্তু সন্তানের চোখে জিরো হয়ে যায়। নিজের আত্মজের চোখে হিরো সাজা বেশি প্রয়োজন, সমাজ সংসারের কিছু অনাকাঙ্খিত বিকারগ্রস্থ মানুষ নামের অমানুষের মন যুগিয়ে চলার চেয়ে।

সারাবিশ্ব আপনাকে কী মূলায়ন করলো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনার সন্তানের চোখে আপনি কী! সেই চোখে নিচে নেমে যাওয়া মানুষ আসলেই মানুষ হিসাবে মূল্যহীন। ছোটলোকের জন্য নিজের সন্তানকে ছোট করবেন না। আপনার কমেন্টটা দয়া করে ডিলিট করে দিন। যারা এমন তাদের আপনার ব্যাখ্যায় কিছুই আসবে যাবে না,তারা আরও কিছু খুঁজে বের করবে।

কাল বউ নিয়ে প্রশ্ন করেছে তো আজ বাচ্চা নিয়ে, পরশু করবে সংসার নিয়ে, আর আপনি একের পর এক অংক কষে ফল মিলিয়ে বামপক্ষ সমান ডানপক্ষ ব্র্যাকেটে প্রমাণিত লিখতে থাকবেন?

শেয়ার করুন: