নাদিয়া ইসলাম: “আমার বাসার বুয়া চুরি করে রেগুলার, জানেন? আমার বাসার জামিলা দারোয়ানের সাথে প্রেম করে, ইসমাইলকে বিশ্বাস নেই, ও আমার গাড়ির নতুন টায়ার বেঁচে দেয় বলে মনে হয়, রওশনকে দিয়ে জানেন ভাবী একটা কাজও হয় না- আমার জার্মানি থেকে কেনা রাসেল হবসের ননস্টিকের ফ্রাইং-প্যানটা জানেন ঘষে ঘষে সাদা বানিয়ে ফেলেছে, কী অপদার্থদের নিয়ে আমার চলতে হয় আপনি বুঝবেন না!”
ইত্যাদি গল্প থিকা শুরু হইয়া কাজের লোক পিটানো, উনাদের মাইরা ফেইলা আত্মহত্যা বইলা চালায়ে দেওয়া- বাংলাদেশের উচ্চ, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মহিলাদের নিত্য-নৈমিত্তিক ডাল-ভাত, না ধুর, ডাল-ভাত খায় কে? এইসব প্রতিদিনকার ওয়াটারক্রেসের ফ্রায়েড রাইস বা ইজুমির সুশি’র মতো ঘটনা বইলা মনে হয় আমার।
গত সপ্তাহে আমার ফেইসবুকিয় এক বন্ধু তাদের বাসার ১৪ তলা থিকা পইড়া যাওয়া (?) একজন কাজের মেয়ের লাশের বর্ণনা দিয়া আমারে জিগাইলেন এইটা আত্মহত্যা কীনা। ব্লান্ট-ফোর্স ট্রমা নিয়া লাশ না দেইখা বলা সম্ভব না হইলেও লাশের শরীর থিকা এক ফোঁটা রক্ত বাইর না হওয়ার ঘটনা “অত্যন্ত অস্বাভাবিক” হওয়ায় আমি সেই বন্ধুরে আমার খুনের সন্দেহের কথা জানাইয়া অত্যন্ত আগ্রহ নিয়া পত্রিকার পাতায় সেই খবর দেখার জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম।
এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরেও দেশের প্রভাবশালী অন্ততঃ দশটা পত্রিকায় তার নাম-গন্ধ-দ্রাব্যতা দেখতে না পাইয়া বুঝলাম, কাজের মেয়ের বাড়িওয়ালা বাংলাদেশের প্রভাবশালীদের কেউ একজন হবেন। উনারা কাজের মেয়ের দারিদ্রজনিত মূক ও বধির মা-বাপের হাতে হয়তো সান্ত্বনা পুরস্কার-স্বরূপ পাঁচ-দশ-বিশ হাজার টাকা ধরায়ে দিবেন এবং বাপ-মা লাশের বিনিময়ে এককালীন একটা বড় অঙ্কের টাকা পাইয়া বাজার থিকা একটা ছাগল বা দুইটা মুরগি কিনা ময়মনসিংহে বা জামালপুরে ফেরত যাইতে যাইতে মেয়ের কথা ভুইলা যাবেন।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কাজের লোকেরা ভয়ংকরভাবে সস্তা। মাত্র দশ হাজার টাকা এবং ঈদের সময় দুইটা সস্তা ইন্ডিয়ান শাড়ি, একটা শার্টের কাপড়, বছরে তিনদিনের একটা ছুটি নিয়া উনারা আপনারে দিনে চব্বিশ ঘন্টা সেবা দেন, আপনার ও আপনার কুত্তা-বিলাইয়ের গু-মুত-বমি পরিষ্কার করেন, আপনার শুকনা পটকা “একদমই খেতে না চাওয়া” ২৩ কেজি ওজনের বাচ্চারে কোলে নিয়া একতলা-দোতলা উঠেন- নামেন, আপনার প্যারালাইজড বাপ-মা’রে আপনে যেহেতু দেখার সময় পান না, তাই উনারাই খাওয়াইয়া দেন, গোসল করাইয়া দেন, চুল আঁচড়াইয়া দেন, আপনার মাতাল হইয়া ফেরার অপেক্ষায় রাত তিনটা পর্যন্ত ওয়েস্টিনের বাইরে গাড়ির গরমে বইসা থাকেন, আপনার বাড়ির পার্টিতে একশ’ চল্লিশজনের পিছনে প্লেট-বাটি- ট্রে নিয়া গলদঘর্ম দৌড়ান, আপনার আমেরিকা থিকা আগত বিয়াল্লিশ কেজি লুই ভিতনের সুটকেস মাথায় নিয়া হাঁটেন, আপনে কাদা পায়ে মচমচাইয়া ঘরে ঢুকলে আপনার পিছন পিছন ঘর মোছার ন্যাকড়া দিয়া সাদা মার্বেলের মেঝেতে উপুড় হইয়া পড়েন, সকালে আপনি ঘুম থিকা উঠার আগে আপনার সকালবেলার বরফঠান্ডা ডিটক্স ফলের জুস এবং আগুন-গরম নাস্তা রেডি করেন, আপনার জুতা পলিশ করেন, আপনার কাপড় ইস্ত্রি করেন, আপনার মুখের উচ্ছিষ্টওয়ালা খাবারের প্লেটটাও উনারা ধুইয়া দেন।
বিনিময়ে আপনি কী করেন? হ্যাঁ, বেতন তো অবশ্যই দেন! বেতন দিবেন না ক্যানো? আপনার মত মহানুভব মানুষ দুনিয়াতে আর একটাও আছে নাকি? আপনে এইসব লোকরে বেতন দিয়া একটা কর্মসংস্থান করতেছেন, একটা পরিবাররে দাঁড়া করায়ে রাখতে পারছেন, কম কী? বেতন দেওয়ার বিনিময়ে আপনে উনারে খাটাইয়া নিবেন না তা ক্যামনে হয়, কন? দুই টাকা বেতন দেওয়ার বিনিময়ে আপনার চাইতে বয়সে বড় একজনরে আপনে “তুই” বইলা ডাকবেন, তারে আপনার ক্রিস্টালের গ্লাস ঠিকমত পরিষ্কার না হওয়ার জন্য জনসম্মখে চড় মারবেন, তারে ঘিঞ্জি একটা অস্বাস্থ্যকর ফ্যানহীন ঘরে শুইতে দিবেন, তারে টিভি দেখতে দিবেন না, আপনার বাসা থিকা একটা সাবান বা একবোতল শ্যাম্পু বা দুইটা মিষ্টি চুরি করার অপরাধে গরম খুন্তি দিয়া ছ্যাঁকা দিবেন, অসুবিধা কী? কথায় আছে না, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, আছে না?
আপনে রামপালে, বড়পুকুরিয়ায়, বাংলাদেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে যা চুরি করেন, করেন, প্রবলেম নাই, কিন্তু বাসায় তো আপনে অত্যন্ত সৎ! আপনার বাসায় কোনো অনৈতিকতা চলবে না! আপনে বাসায় বৌ রাইখা অফিসের কলিগদের সাথে শুইয়া আসলেও আপনার বাসার খালেকের সাথে পারভিনের চিঠি চালাচালি হইতে দেখলে আপনি কোনো নোংরামি বরদাস্ত করবেন না!
ঠিকই তো! আপনে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়া আপনার প্রাডো কী মার্সেইডিজ কিনলেও সেই গাড়ির একটা টায়ার যদি আপনার ড্রাইভার বাপের চিকিৎসার জন্য গোপনে বেইচা দেন, তাইলে আপনি তারে পিটায়ে মাইরা ফেলবেন, এবং সেইটারে কইবেন আত্মহত্যা, পুলিশ আর আইন বিভাগ আর এ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু আপনার খালাতো ভাই, তারাও আপনারে জিগাইবেনও না “আপনি কী এমন করেন উনার সাথে যে উনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হইলেন?”- অবাক হওয়ার কী আছে কন? আছে কিছু?
না, অবাক হওয়ার কিছু নাই। বাংলাদেশের মত গরীব দেশে আপনার দুই পয়সার বড়লোকি দেইখা অবাক হওয়ার কিছু নাই। উন্নত যেকোনো দেশে ডমেস্টিক সেবা কিনার সামর্থ্য শুধুমাত্র অসম্ভব পয়সাওয়ালা এবং অসম্ভব ক্ষমতাওয়ালাদের থাকে। এবং সেইসব দেশে আইনও এত কড়াকড়ি যে আপনি আরেকজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষরে বেহুদা ধমক দেওয়ার আগে দুইবার ভাববেন।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়া কাজ করানোর চিন্তা তো দূরের গল্প, আন্টি! বাংলাদেশের খাইতে না দেওয়া, বাসি ও পঁচা খাবার খাওয়ানো, অমানুষিক পরিশ্রম করানো, কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা, অশ্রাব্য গালিগালাজ করা, অপমান করা, লজ্জা দেওয়া ও রেস্টুরেন্টে নিয়া গিয়া খাইতে না দিয়া বসাইয়া রাখা আপনার মত এইসব “ছোটলোক” মধ্যবিত্ত ও বড়লোকরাই অবশ্য আমেরিকা ইয়োরোপে গিয়া নিজের গু নিজে পরিষ্কার কইরা চোখের পানি নাকের পানি এক করেন। আশার কথা হইলো, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি যেই পথে যাইতেছে, তাতে ভবিষ্যতে সস্তায় কাজের লোক পাওয়া আর সম্ভব না বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তর। ততদিনে আশা করি আইন কইরা শিশুশ্রম নিষেধের পাশাপাশি গৃহকর্মী আইন কড়াকড়ি হবে এবং বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত মানুষের আর আপনার মত “ছোটলোক” বড়লোকের ১৪ তলা থিকা খুন হইয়া লাফ দিয়া আত্মহত্যা নামের নাটক করতে হবে না!
আশা করতে দোষ কী কন! আর তা যতদিন না হইতেছে, ততদিন পর্যন্ত আপনার বাসার কাজের লোকরে আরো বেশি কইরা চুরি করতে, প্রেম করতে ও আপনারে ভাঙ্গাইয়া খাইতে পরামর্শ দিয়া আপনার মতো ছোটলোক বড়লোকরে আমি থুতুই মাইরা যাবো।
I don’t agree with your point of view. Many of them are extremely ungrateful no matter how much you do for them. Let alone physical abuse, telling them anything about their work, makes them leave their job.Mar ora oder nije der dosh ei khai.Ar bhodrolok mar dei na karon ek Jon mar khele baki der bole o tokhon oi bashai onno kaj er lok ashe na kaj korte . Mar je dei net loss tar i
My regards to the writer. May Allah bless you abundantly for this social reporting.