“তবুও বন্ধু …মন হলো না আপন!”

জহুরা আকসা:

বন্ধু । বন্ধু তো সেই, যার সঙ্গ ভালো লাগে, যাকে সব কথা বলা যায়, যে বিপদ আপদে পাশে থাকে, মানসিক শক্তি জোগায়, যার কাছে গেলে আশ্রয় পাওয়া যায়। কিন্তু এমন বন্ধু কি সবাই পাই?

কত শত বন্ধুত্ব দেখি! দেখি তাদের হইচই আর পার্টি, কখনো হ্যাংআউটের মনোরঞ্জক ছবি! এইগুলি দেখতে বেশ ভালো লাগে। মনে হয় এর কতোই না ভাগ্যবান! ইস আমার যদি এমন বন্ধু থাকতো ?
আচ্ছা সত্যি সত্যিই কি এরা এতো আপন? একে আপরের বিপদের সাথী? নাকি সবই সুখের পায়রা? হিসাব কষার বন্ধু! কতটুকু দিলাম আর কতটুকু পেলাম তা ঠিক বুঝে নেয়। কম বেশি হলেই , কীসের বন্ধুত্ব আর কীসের কী? তুমি তোমার রাস্তা মাপো!

এই দেশে এসে দেখলাম , লোকে বন্ধুত্ব করে স্বার্থ আর পয়সা দেখে। অনেকেই মোটা অংকের টাকা ধার পাওয়া যায় সেই ব্যবসায়ীক চিন্তায় টাকাপয়সা দেখে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে!

হ্যাঁ, বন্ধুর বিপদে বন্ধু হাত বাড়িয়ে দিবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু  শুধুমাত্র দেনাপাওনার আর ধান্দার চিন্তায় বন্ধু্ত্ব গড়ে তোলা অবশ্যই খারাপ। এমন বন্ধুত্ব স্বার্থসম্পন্ন হলেই শেষ হয়ে যেতে বাধ্য। এসব বন্ধুদের আপনি নিজের সুখ দুঃখে আর খুঁজে পাবেন না । অথচ এমন স্বার্থপর বন্ধুদের সাথেই দুর্বল আর অসহায় মানুষগুলি তাদের জীবন অনেক মধুর সময় কাটিয়ে দেয়।

কিছু বন্ধু আছে যারা বন্ধুর জন্য যদি কিছু করে তা সবাইকে জানিয়ে বেড়ান। দুই টাকা দিয়ে দশ টাকা শুধু আদায় করেন না, তা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলেও বেড়াবেন ! আমাদের সমাজে কিন্তু এমন কুটনি বন্ধুর অভাব নাই। উঠতে-বসেত যারা বলবে, আমি তোমার জন্য এই করেছি, সেই করেছি। অন্যদেরও বলবে, বলতেই থাকবে।

অনেকেই আছেন যারা বন্ধুদের মনের দুঃখ , সংসারের দুঃখগুলি অন্যের সামনে বলে বেড়াতে পচ্ছন্দ করেন। তা নিয়ে অন্যদের সাথে মজা করে বিচ্ছিরি আনন্দ পান । অথচ তারা ভুলে যান যে যাদের নিয়ে তারা কুৎসা গাইছেন, তাদের সাথেই এতোদিন তারা মেলামেশা করেছেন , একত্রে সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন । আজ ঐ লোকগুলিরে নিয়ে কুৎসিত কথাবার্তা বলতে তাদের একটুও রুচিতে বাঁধে না ।

সব বন্ধু যে খারাপ আর স্বার্থপর হয় তা কিন্তু না। আবার ভালো হয়, তাও না। তবুও সম্পর্ক চালিয়ে নিতে হয়। নিঃসঙ্গ জীবন তো আর সবাই মেনে নিতে পারে না। আবার কখনো কখনো ভালো বন্ধুটিও হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে!

বন্ধুর সাথে মতের অমিল হবে , ঝগড়া হবে , মনোমালিন্য হবে । যদি আবার মিল হয়, ভালো। যদি মিল আর না হয় , তা কষ্টের। কিন্তু তা নোংরাভাবে সমাপ্ত ঘটানো ঠিক না । আবার বন্ধুত্ব যদি বোঝা লাগে, তখন ঐ বন্ধুত্ব থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো ।

পাঁচ বছর আগে আমাদের প্রিয় বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়েছিল । মনের চাপা কষ্টের কথা তীব্র ভাষায় বন্ধুকে বলেছিলাম । যে কষ্টগুলি বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম । কেউ কাউকে ছাড় দেইনি। ১৫/১৬ বছরের বন্ধুত্বের এখন আর কোনো খবরও নেই।
ওর কথা আমি কখনও কাউকে বলি না । বলতে ইচ্ছেও করেনি। জানি সে বেশ ভালো আছে । বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। আমিও আছি আমার মতন।

এই পাঁচ বছরে আমি কখনোই তার নামে কুৎসা রটাইনি , না এই ব্যাপারে কোনো কথা বলেছি । এর একটাই কারণ, আমার বন্ধুর প্রতি ভালোবাসাটা সত্যই প্রবল ছিল। হয়তো আছে এখনো !

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.