এই ‘পিশাচ’দের গণপিটুনিতে শায়েস্তা করুন

শান্তা মারিয়া:

প্রিয় বোন লাবণী মণ্ডলের একটি স্ট্যাটাস পড়ে আপনা থেকেই হাত চলে গেল কি-বোর্ডে। প্রথমে তার স্ট্যাটাসটি সংক্ষেপে বলি। আজিমপুর এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও হালকা বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাচ্ছিলেন লাবণী। এর মধ্যে রাস্তার পথচারী আরেকটি মেয়েকে এক লিঙ্গসর্বস্ব পিশাচের দ্বারা আক্রান্ত হতে দেখে ছুটে যান। কিন্তু ওই হারামি ততক্ষণে পালিয়ে যায়। মেয়েটি হতভম্ব হয়ে পড়েছিল। সংক্ষেপে এই হলো ঘটনা।

রাস্তায় অথবা অন্য কোথাও জীবনের কখনও না কখনও এইভাবে পিশাচ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ের আছে। এখানে কোন শ্রেণি-বিভেদ নেই। যিনি গাড়ি চড়ে চলেন তিনিও বাড়িতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা কোথাও না কোথাও আত্মীয় অনাত্মীয়, চেনাজানা কারও না কারও দ্বারা যৌন আক্রমণের শিকার হোনই। শারীরিক না হলেও মৌখিকভাবে হোন।

ধনী ঘরের সন্তান শাজনীনও ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছিলেন। বাংলাদেশে এই সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাসে তো এখন চড়লেই আতংকে থাকতে হচ্ছে প্রতিটি নারীকে। রিকশাযাত্রী, সিএনজিযাত্রী, পথচারী কারও রেহাই নেই।
এটা ঠিক যে এই ধরনের অপরাধগুলো সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদের বিষাক্ত উপজাত হিসেবেই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নারীকে যখন পণ্য বা ভোগ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে, তখনই এরকম অপরাধ বাড়তে থাকে। সোভিয়েত আমলে মস্কো নারীর প্রতি যৌন আক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল। চীনও দেখেছি এমন অপরাধ থেকে মুক্ত। আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নারীর প্রতি যৌন আক্রমণে জিরো টলারেন্স রাষ্ট্রীয় নীতি অতি প্রয়োজন।

কিন্তু এসব বুলি কপচিয়ে আর চলবে না। এখন সময় এসেছে প্রতিরোধের। সামাজিক বিপ্লব কবে হবে, কবে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে সেই আশায় বসে থাকার দিন শেষ। বিপ্লব আকাশ থেকে পড়ে না। প্রতিটি ব্যক্তি মানুষের সচেতন প্রতিবাদই গড়ে তোলে সামষ্টিক প্রতিবাদ।

লাবণী মণ্ডল, লিটন নন্দী (যিনি পহেলা বৈশাখে নারী নিগ্রহকারীদের প্রতিরোধে তৎক্ষণাৎ ভূমিকা রেখেছিলেন) এবং অন্য সব ভাই-বোনদের বলতে চাই, আসুন, আজকে থেকেই আমরা সংঘবদ্ধ হই। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাঠে নামি। লাবণী যখন প্রতিবাদ করলেন, সেসময় যদি সমমনা আরও কয়েকজন সেখানে থাকতেন, তাহলে ওই ঘৃণিত পিশাচটা পালাতে পারতো না। এই যৌন আক্রমণকারীগুলোকে আমি ‘শুয়োর’ বলতে চাই না। কারণ শুয়োর খারাপ প্রাণী নয়। কুকুর তো বলতে চাই-ই না। কারণ কুকুর অনেক ভালো একটি প্রাণী। জলাতংকে ভোগা কুকুরের চেয়েও এরা ভয়ংকর। এরা বিকৃত যৌনতায় ভুগছে। এদের দেখামাত্র গণপিটুনি দিয়ে শায়েস্তা করতে হবে।

প্রতিটি নারী, সচেতন পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ সকলে এগিয়ে আসুন। এই যৌন আক্রমণকারীদের হাতে আমরা কেউ নিরাপদ নই। এরা কারও বাপ-ভাই হতে পারে না। কারণ এরা যদি সত্যিকারের বাবা বা ভাই হতো, তাহলে নারীর প্রতি এতো কুৎসিত চিন্তা ও আক্রমণ করতে পারতো না। এরা কারও পুত্রও হতে পারে না। কারণ পথচলতি নারীর স্তনে হাত দেওয়ার আগে তার নিজের মাতৃস্তনের কথা মনে পড়তো। এই ঘৃণিত যৌন আক্রমণকারীদের হাতে তার মা-বোন-মেয়ে কেউই যে নিরাপদ নয়, সেটা তো আমরা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে প্রায়ই দেখতে পাচ্ছি।

আসুন আজকে থেকে আমরা দল গঠন করি। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দল থাকুক। যেখানেই নারীর প্রতি এইভাবে আক্রমণ ঘটবে সেখানেই গণপিটুনি দিয়ে আক্রমণকারীকে পঙ্গু করে দিতে হবে। দু’চারটা পিশাচ মরলে বাকিগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

আর যে পুরুষ বা নারী বলবে যে নারীর পোশাকের কারণে ধর্ষণ হয়, তাকেও গণপিটুনি দিতে হবে। আসুন আমরা নারী-পুরুষ সকলে মিলে সংঘবদ্ধ হই। আমি এখনও বিশ্বাস করি অপরাধীর তুলনায় ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো ভালো মানুষগুলো চুপ করে থেকে অপরাধীকে আশকারা দেয়। আর চুপ থাকা চলবে না। আমাদের দলে কোনো সভাপতি, সেক্রেটারি, জুনিয়র, সিনিয়র নিয়ে দলাদলি থাকবে না। আমরা সব সমমর্যাদায় এক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

আসুন বোন, আসুন ভাই। জেগে উঠুন। প্রমাণ করুন বাঙালি ধর্ষকের জাত নয়। বরং সমাজের সর্বস্তর থেকে যৌন হয়রানি হটিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করুন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.