মনিকা বৈষ্ণবের খোঁজ মেলেনি ১৭ দিনেও

উইমেন চ্যাপ্টার:

একজন মানুষ, একজন রাজনৈতিক, সংস্কৃতি সচেতন মানুষ মনিকা বৈষ্ণব। দিনে-দুপুরে তিনি গায়েব হয়ে গেছেন। গত ১৭ দিন ধরে তার কোনো খোঁজ পরিবারের কেউ পাচ্ছেন না। তিনি কি বেঁচে আছেন? নাকি নিজেই কোথাও চলে গেছেন? সত্যিটা যতো নির্মমই হোক না কেন, তা জানা দরকার। পুরো পরিবার উন্মুখ হয়ে আছে একটিমাত্র খবরের আশায় যে তাদের বোন, তাদের মেয়ে এখনও বেঁচে আছে।

পরিবার থেকে বলা হয়েছে, সেদিন মনিকা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন টিউশনির উদ্দেশে, আর ফিরে আসেননি। উনার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এরপর থেকে। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশও কোনো হদিস জানাতে পারছে না। শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে এ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। একটি সূত্র বলছে, তাদেরকে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তাব দিলে তারা পরিবারের ভাবমূর্তি বা সম্মানের কথা ভেবে বিরত আছেন বলে জানিয়েছেন।


গত কদিন ধরেই মনিকার দুই বোন মন্টি বৈষ্ণব আর নন্দিতা বৈষ্ণবের হাহাকার আমরা দেখছি, কিন্তু শত ঘটনার নিচে বারবারই চাপা পড়ে যাচ্ছে তা।

নন্দিতা বৈষ্ণব লিখেছেন, “একটা মানুষ শুধুমাত্র কা‌রোর স্ত্রী নয়। একই সা‌থে কা‌রোর বন্ধু, কা‌রোর বোন, কা‌রোর মে‌য়ে, কা‌রোর মা। এমন আ‌রো আ‌রো সম্পর্কের হাত ধ‌রে সাম‌নে হাঁ‌টে মানু‌ষের জীবন। স‌তে‌রো-আঠা‌রো দিন প‌রেও ফ্যা‌মি‌লি প্র‌ব্লেম? একটা মানুষ হাওয়া হ‌য়ে গে‌ছে। আমরা তো এটা‌কে শুধুমাত্র ফ্যা‌মি‌লি প্রব্লেম হিসা‌বে মান‌তে পার‌ছি না”।

তিনি আরও লিখেছেন, ‌প্রশাস‌নের কোথায় গে‌লে, কার কা‌ছে গে‌লে দি‌দির খোঁজ পাওয়া যা‌বে জা‌নিনা। উপর মহ‌লের চাপ না থাক‌লে একটা নি‌খোঁজ মানুষ‌কে কি আর খুঁ‌জে পাওয়া যা‌বে না কোন‌দিন? এভা‌বে দিন যে‌তে যে‌তে একসময় সব নি‌খোঁজ সংবাদই চাপা প‌ড়ে যায়। ম‌নিকা যেখা‌নে যেভা‌বেই থাকুক, আমরা তার খোঁজ চাই।

ফেসবুকে হাহাকারগুলো এভাবেই গুমড়ে মরছে। “খোঁজ চাই স্বজ‌নের। খোঁজ চাই ম‌নিকার। আমা‌দের একান্নবর্তী প‌রিবা‌রের প্র‌ত্যেকটা মানুষ চরম উ‌দ্বিগ্নতা আর উৎকন্ঠার ভিতর দি‌য়ে দিন কাটা‌চ্ছি। বা‌রো থে‌কে চব্বিশ, মা‌ঝে বা‌রোটা দিন। দিন পে‌রি‌য়ে রাত আস‌ছে, আবার রাত পেরু‌লে দিন। নি‌খোঁজ সংবা‌দের কোন কূল কিনারা পাই না। আমা‌দের কা‌ছে কোন খোঁজ আস‌ছেনা স্বজ‌নের। প্রশাসন‌ চেষ্টা কর‌ছে।‌ সেটা‌রো কোন অগ্রগ‌তি আ‌ছে কিনা জানা নেই। শুধু জা‌নি, আমার বড়‌দি কা‌রো কা‌ছে হার মান‌তে পা‌রে না। যে জীবনকে সে ভা‌লোবা‌সে তারই হাত ধ‌রে আবার সে সাম‌নের দি‌কে হাঁট‌বে”।

ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা গেছে,

মনিকা চট্টগ্রামের একজন সংগীত শিল্পী ও সংগীত শিক্ষক, চট্টগ্রামের একজন সাংবাদিকের স্ত্রী।পৈতৃক নাম মনিকা বৈষ্ণব, বৈবাহিক সূূত্রে মনিকা বড়ুয়া, ডাক নাম রাধা। একসময় মনিকা সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রিতরঙ্গের সঙ্গীত বিভাগের একজন সদস্য ছিল। মনিকা গত ১২ এপ্রিল ‘১৮ থেকে নিখোঁজ রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় গত ১২ এপ্রিল দুপুরে লালখান বাজার বাসা থেকে বের হয় মনিকা গানের টিউশনি করতে। ফেরার সময় বাসায় ইলিশ মাছ নিয়ে ফিরে আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘরে ফিরেনি মনিকা। ওই দিন দুপুর ২টা ১৫মিনিটে তাঁর অবস্থান ছিল ওয়াসা মোড় এলাকায়। ২টা ৪০ মিনিটে অবস্থান ছিল কর্ণেল হাট এলাকায়। এর পর থেকে নিখোঁজ । খুলশী থানায় জিডি হয়েছে। জিডি নং-৬২২,।
কয়েকটি ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলে নিউজও হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যান মেলেনি। আমরা পুলিশ প্রশাসন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সর্বোচ্চ তৎপরতা কামনা করছি। অামরা অবিলম্বে মনিকাকে তার পরিবারে দেখতে চাই। দেখতে চাই মনিকার দুই কন্যার পাশে, তার আত্মিয়-স্বজন আর অসংখ্য গুণগ্রাহীর পাশে।

১৭ দিন ধরে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী মনিকা বৈষ্ণব নিখোঁজ। কোন খোঁজই কেউ দিতে পারছেন না… ১৭টা দিন অনেক সময়। অনেক… আমি জানি খুব ভালো ভাবে জানি এই মানুষ যে হারিয়ে গেছেন এতে আমাদের কারোই তেমন কিছুই এসে-যাবে না। কিন্তু একটি পরিবার জানেন কেবল, যাদের ঘরের মানুষ ঘরে ফিরেন নি তারা জানেন এই অনুভূতি কেমন স্তব্ধ করে দেওয়ার মতোন… আমি জানি না এই প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তনে কিচ্ছু এসে-যায় কী না। আমি দিনের পর দিন উনাদের পোস্ট-নিউজ-স্ট্যাটাস দেখি, আমার গলায় ভার ভার জমে!

তদন্তের কোন অগ্রগতি নেই… অথচ কী স্বাভাবিকভাবেই দেখছি, দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি ব্যাপারটাকে আমরা…
সাধারণ ঘরের একজন মানুষ হারিয়ে গেলে কি তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না? রাষ্ট্র আর কতদিন একইভাবে ‘উদ্ধারের চেষ্টা’ চালাবে?
খোঁজ বের করার ক্ষেত্রে কারও পক্ষে কোন রকম সাহায্য-সহযোগিতা করার সুযোগ বা লিঙ্ক থাকলে জানাবেন প্রত্যাশা রইলো …

সবার সহযোগিতা চাচ্ছি বিনীতভাবে আমাদের মনিকা বৈষ্ণবকে ফিরে পাবার জন্য।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.