মুখ বন্ধ রেখে নিরাপদ জীবন কি আদৌ সম্ভব?

আসমা খুশবু:

কয়েকদিন পরপর একসাথে অনেক মানুষের মৃত্যুতে চমকে উঠি। আমার মতো সাধারণের এই সব মৃত্যুতে কিচ্ছু করার নেই। কারণ, সময় অনুকূলে না। ধর্ম নিয়ে কথা বলা যাবে না, রাজনীতি নিয়ে কথা বলা যাবে না, আইন নিয়ে কথা বলা যাবে না।

মোটকথা, নিরাপদে জীবন যাপন করতে চাইলে মুখে কুলুপ এঁটে ঘরে খিল দিয়ে টিভিতে বাংলা সিরিয়ালে মনোনিবেশ করতে হবে। কিন্তু এমনটি তো হবার কথা ছিল না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যে কারও যে কোন বিষয়ে বলার অধিকার থাকে। আজ বলার জন্যও মানুষ মরে। তার বিচার প্রক্রিয়াও কোথায় যেন আটকে যায় অথবা ধীরে চলে। মুখ বন্ধ রাখতে রাখতে আমরা আসলে জানিই না এসব ব্যাধি যখন উঠোন পেরিয়ে আমার ঘরে ঢুকবে, তখন আমার করণীয় কী!

মনে চাইলো তাই কোন সাইকো আমেরিকার স্কুলে ঢুকে গান হাতে একসাথে মেরে ফেললো অনেক বাচ্চাদের।। ধর্মীয় দলাদলিতে পাকিস্তানে স্কুলে বোমা ফেলে মেরে ফেলা হয় কয়েক’শ শিশু কিশোরকে। রাজনৈতিক দলাদলি সিরিয়াতে মারা যায় লক্ষ লক্ষ শিশু। যে কোন যুদ্ধে টার্গেট থাকে সেই দেশের নারী ও শিশু। কিছু হয়তো করার নেই, কিন্তু মানুষ হিসেবে গলাটাতো উঁচু করা যায়। কাফনের কাপড় জড়ানো সিরিয়ান শিশুগুলিকে দেখে মানুষের বোধে কী একটুও নাড়া লাগেনি আজ!

আমার খুব মন খারাপ হয়, কোথাও কোন নিরাপদ জায়গায় নিজের বাচ্চা দুটোকে নিয়ে লুকোতে ইচ্ছে হয়। তার ঠিকানা যদিও জানা নেই! ইচ্ছে হয় হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে এইসব শিশুদের কাছে, তাদের মায়েদের কাছে। কোনো শরণার্থী দেখলে আমার ভীষণ লজ্জা লাগে। কিচ্ছু করার নেই! কিছু না করতে পারার এইসব অক্ষমতা বড্ড পীড়া দেয়। এই পৃথিবীর ভয়াবহতায় যতটুকু সৌন্দর্য অবশিষ্ট আছে তার অবলোকনেই দিন যাপন চলে। দিন শেষে শ্রীদেবীর সুন্দর মুখশ্রীর হঠাৎ চলে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে ঘুমুতে যাই।
সকল হানাহানি বন্ধ হোক। পৃথিবী সকল শিশুর বসবাসের উপযোগী হোক।।

লীলা মজুমদারকে খুব মনে পড়ে –

উঃফ্! বড্ড বাঁচা বেঁচেছিস রে প্রাণ
ছায়া ধরে ক্যায়সা জোরে লাগিয়েছিল টান!
চন্দ্রবিন্দু পড়ে যেত নামে আগায়,
ঘুঁচে যেত কলা খাওয়া, মরি হায় হায়!
বাদুড়ে বুদ্ধুর খুঁড়ে শতশত গড়,
চাচা আপনা বাঁচা বলে পেঁপেগাছে চড়!

শেয়ার করুন: