হামিদ মোহাম্মদ:
১৯৯১ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সূত্র ধরে বাংলাদেশে প্রথম সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। আমরা তখন সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পাড়া পাড়ায় নেমে পড়ি। ছাত্র ইউনিয়ন-যুব ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পাটির কর্মীরা স্কোয়াড গঠন করে পাহারা দিতে থাকি সনাতন হিন্দু পাড়াসমূহ। সে সময় দেখলাম, কোনো ধর্মপ্রাণ ও ন্যায়বান মুসলমানই কোনো ধরনের অপকর্মে যুক্ত নয়।
কিন্তু কিছু লোক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল বের করছে। মিছিলের শ্লোগান উগ্র, হিন্দু বিদ্বেষী। এরা কারা?
চিহ্নিত করতে সময় লাগলো না। যারা কৌশলে সংখ্যালঘুর সহায়-সম্পদ দখল করার হীনচিন্তা পোষণ করে সেই চিরাচরিত ‘ভূমিখেকো’ চক্র উসকানি দিচ্ছে। সরলপ্রাণ কিছু তরুণকে উসকে দিয়ে মিছিলে ভিড়িয়েছে।
সেদিন আমাদের মানবঢালের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিল, প্রতিহত হয়েছিল।
এই ভূমিখেকো চক্র আজও সক্রিয়। বাংলাদেশে যতো সংখ্যালঘু হিন্দু বসতি দখল, লুটপাট কিংবা মারধরের ঘটনা ঘটেছে, সবখানেই এই ভূমিখেকো চক্রের হাত রয়েছে। এদের মদদদাতা হিসেবে বিভিন্ন সময় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে মৌলবাদীগোষ্ঠী।রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায়ও তাদের অবস্থান মজবুত রাখতে নানা কূটচাল ফন্দি চালায়।
এই ছোট্ট মহলটি সমগ্র দেশকে কোনো কোনো সময় বিব্রত করে তুলে, সমাজকে অস্থির করে ফায়দা লুটে। কিন্তু আমরা সকলেই জানি, এই চিহ্নিত মহলটির শক্তি তেমন নেই। কিন্তু তাদের হাত মৌলবাদী ও অপ-রাজনীতিক মহলের কাঁধে। এসব অপশক্তিকেই তারা ব্যবহার করে টিকে আছে।
কিন্তু এদের উপড়ে ফেলা যায় না কেন?
এর উত্তর সহজ। উপড়ে ফেলতে গেলে টান পড়ে ঐমহল বিশেষের নাড়িতে। যোগসূত্রটাই এমন—যার জন্মদাতা ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্ব। সবাই বলেন ভারত ভাগ হয়েছিল তখন। আমি মনে করি, ভৌগোলিক ভাগটা আমরা চোখে দেখি। দেখি না মানসিক ভাগটা। বড় অর্থে তখন ভারত ভাগ হয়নি, ভাগ হয়েছে প্রীতি, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব সর্বোপরি মানবিকতা। বাঙালি জাতি হয়ে গেল দুই সম্প্রদায়। একে অন্যের শত্রু। একে অন্যের সম্পদ দখল, লুটপাট, এমনকি ধর্মান্তর করার হীন চক্রান্ত শিখে গেলাম আমরা সকলেই।
আমরা যে একে অন্যের শত্রু হলাম বা যারা এর জন্য দায়ী, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? যদি ভেবে থাকিও, আমরা কি উপড়ে ফেলতে চেয়েছি? আসলে তলে তলে লালন করেছি, এই বিষবৃক্ষটি—যার নাম ‘সাম্প্রদায়িকতা’।
আসুন, ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামের এই বিষবৃক্ষটি বাঙালি সমাজ থেকে উপড়ে ফেলি। রুখে দাঁড়াই মদদদাতা মৌলবাদ ও ভূমিখেকো চক্রকে। আমাদের ভালোবাসার বন্ধন হউক মানবিকতা।
লেখক: Hamid Mohammad
(Published as part of social media campaign #BeHumaneFirst to promote Secularism in Bangladesh)