ফাহমি ইলা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম দর্শনের সুযোগ হয় ২০০৬ এ। তখন আমি এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কোথাও ঘুরতে যাবার প্ল্যান করে বন্ধুদের একটা বিশাল গ্রুপসমেত আমরা জাহাঙ্গীরনগর চলে গিয়েছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে জাহাঙ্গীরনগরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করেছিলো! ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠার কারণে এতো সবুজ, পদ্মভর্তি লেক, শীতের পাখি দেখে পুরো পরিবেশটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। কেবলই মনে হয়েছিলো-‘এত সুন্দর এর আগে আমি কোথাও দেখিনি’।

দ্বিতীয়বার গিয়েছিলাম ঠিক পরের বছর ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্য। আরো দু’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হওয়ার পরও জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হই (বা আমাকে ভর্তি করানো হয়)। কারণ বাকি দুটোর রেজাল্ট দিতে দেরি হয়েছিলো। তাছাড়া আমার মনের ভেতর সেই কলেজ জীবনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছবি আঁকা হয়েছিলো সেখান থেকেই জাবি (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ) ছিলো আমার প্রথম পছন্দ।
আমার পরিবার যখন সিদ্ধান্ত নিল আমাকে জাবিতে ভর্তি করাবে তখন তাদের শর্ত একটাই ছিলো- আমাকে ঢাকা থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে, কারণ হলের মেয়েরা নাকি ভালো হয় না। আমার কাজিন জাবি’র শিক্ষক হবার সুবাদে তাকে বলে পরিবারকে রাজি করানো হয় আমাকে হলে সিট নেবার জন্য, কারণ সবসময় ঢাকা থেকে গিয়ে ক্লাস করা সম্ভব ছিলো না। আমাকে যেদিন বাক্স-প্যাটরাসমেত হলে দিয়ে যাওয়া হয়, বিধিনিষেধের একটা বিশাল লিস্টিও ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
যেমন- পড়াশোনা মন দিয়ে করা, আড্ডাবাজি না করা, সন্ধ্যের আগে হলে ঢোকা, হলের ক্যান্টিন বা ডাইনিংয়ে খাওয়া-দাওয়া করা, রাত জেগে মেয়েদের সাথে বেশি আড্ডা না দেয়া, ছেলেদের সাথে বেশি না মেশা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বাড়াবাড়ি রকমের জেদি মেয়ে ছিলাম, সেটা আমার বাবা-মা খুব ভালোভাবে জানতেন। ফলে যেটা হলো, আমি হলেই বেশি থাকা শুরু করলাম। কারণ হলের মেয়েদের ব্যাপারে যেসব কথা আমাকে বলা হয়েছিলো, তা ক’দিনের মধ্যেই আমার কাছে মিথ্যে প্রমাণিত হলো।
এদিকে যেসব আত্মীয়-স্বজন সারাজীবনে কখনো খোঁজও নেয়নি, তারাও আম্মাকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলেন-‘জেসমিন, এত বড় ভুল তুমি কীভাবে করলে! মেয়েকে হলে থাকতে দিলে? ও তো নষ্ট হয়ে যাবে!’ আম্মা আমাকে প্রায়ই তাগাদা দিতেন বাসায় আসার জন্য। আর আমি একমাত্র বৃহস্পতি কিংবা শুক্রবার ছাড়া বাসায় আসতাম না। কারণ হল লাইফ, ক্যাম্পাস লাইফে আমি সম্পূর্ণ মজে গিয়েছিলাম। ফলে মাসখানেক পরে আমাকে শায়েস্তা করবার জন্য টাকা পাঠানো বন্ধ করা হলো।
আব্বা বললেন- ‘দুদিন পর পর টাকা নিয়ে যাবে, মাসের টাকা তোমাকে একবারে দেয়া হবে না। কারণ টাকা দিলেই তুমি আর আসছো না।’ আমার মনে আছে আমি ছ’মাসের মাথায় টিউশনি ম্যানেজ করি এবং দেড় বছরের মাথায় পার্টটাইম জব। এটা ছিলো একধরনের নীরব প্রতিবাদ। তারা ধরেই নিয়েছিলেন যেহেতু তাদের ওপর আমার আর্থিকভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে সেহেতু তাদের দেয়া বিধিনিষেধের ঝুলি কাঁধে তুলে আমি ‘ভালো মেয়ে’ হয়েই থাকবো, কারণ ‘হলের মেয়ে’ হলে ভালো বংশে বিয়ে হবে না।
আব্বাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম-‘আমি বিয়ের জন্য পড়াশোনা করছি না।’ এরপর তাদের সাথে আমার সম্পর্ক কিছুটা শীতল হলেও, কিছুদিনের মাঝে তারা মেনে নিতে বাধ্য হোন। আমার মা’কে আমি তথাকথিত টিপিক্যাল নারীর চেয়ে কিছুটা আধুনিক মানসিকতার দেখে এসেছি সবসময়। কিন্তু পারিবারিক, সামাজিক চাপে মা সবসময় নিজের ইচ্ছেগুলোকে প্রকাশ করতে পারতেন না। আমার মনে হয়েছিলো আমার এ সিদ্ধান্তে মা কিছুটা খুশিই হয়েছিলেন কারণ তিনি আজীবন চেয়েছেন তার কন্যাসন্তানেরা নিজের পায়ে দাঁড়াক, সমাজে তাদের একটা অবস্থান তৈরী হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর দু’মাসের মাথায় আমি থিয়েটারে যোগ দেই। স্কুল-কলেজে যে মেয়ে শুধুমাত্র পরীক্ষার আগে বই নিয়ে বসতো, তার নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকবার কোন কারণ ছিলো না। তখন একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আন্দোলন চলছিলো। সবার সাথে আন্দোলনে যোগ দিলাম স্বাচ্ছন্দে। এরপর ক্যাম্পাসে যতগুলো যৌননিপীড়নবিরোধী, ভিসিবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, সবগুলোতেই সামিল থাকার চেষ্টা করেছিলাম।
না, আমি কোন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সাথে সংযুক্ত ছিলাম না। কারণ আমার মনেপ্রাণে ছিলো নাটক, থিয়েটার। কিন্তু প্রতিবাদ করতে হলে কোন সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতেই হবে এ কথা আমি মানতে নারাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। এছাড়াও হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান, দাম বৃদ্ধি, সিট বরাদ্দ, ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়েও আমরা কম আন্দোলন করিনি।
প্রশ্ন হলো– বাসা থেকে রেগুলার শুধু ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে গেলে এগুলো করতে পারতাম? এগুলো বাদ দিয়েও ক্লাস করা, ক্লাস শেষে দলবেঁধে বটতলায় খাওয়া শেষে আড্ডা দেয়া, বিকেলে থিয়েটার করা, মেহেরচত্বর টারজানে আড্ডা দেয়া, সন্ধ্যেয় লেকের পাড়ে বসে গিটার নিয়ে গলা ছেড়ে গান গাওয়া, উৎসবের সময় রাত জেগে রোড পেইন্টিং করা- এসব করা যেত? বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন একটা মানুষের মানসিকতাকে কীভাবে পূর্ণরূপ দান করে আমি এর বড় সাক্ষী এবং এ ব্যাপারে আমার সাথে হলে থাকে, এমন শিক্ষার্থীরাও একমত হবেন আশা করি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বিভিন্ন সাব-কালচারের ছেলেমেয়েদের সাথে মিশে, তাদের ধ্যান-ধারণার সাথে পরিচিত হয়ে শহুরে আমি যে কীভাবে আমূল পাল্টে গেলাম তা আজ ভাবলে নিজের সেই জিদ, বাবা-মার সাথে প্রতিবাদের প্রতি নিজেই কৃতজ্ঞ হই।
নিজের জীবনের কথা বলবার সাথে সাথে জাবি’র মেয়েদের সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চাইছিলাম।
অনেক মেয়ে আছে যারা ক্লাস-হল-পড়াশোনা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না, আবার অনেক মেয়ে আছে যারা রাজনীতি করছে সংগঠন করছে, অনেকে প্রেম করে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। কথা হচ্ছে জাবি’র মেয়েরা কোন দিক দিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের থেকে আলাদা? এদের নিয়ে এতো প্রশ্ন কেনো? এতো কানাঘুষা কেনো? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলজীবন কি কাছাকাছি বা একইরকম নয়?
আমার ধারণা- খুব কাছেই রাজধানী থাকা সত্ত্বেও গাছগাছালী ভরপুর (কারো কাছে জঙ্গল) মফস্বলের মতো একটা জায়গায় একটা মেয়ে অভিভাবক ছাড়া থাকছে এটাই চোখে লাগার মতো বিষয়। তারওপর সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হবার কারণে হুটহাট বাইরের মানুষ এখানে ঢুকে পড়তে পারে না, চাইলেই খোঁজখবর পায় না। এজন্যই তাদের মনে সারাক্ষণ একটা প্রশ্ন-‘কী হয় আসলে এই বাউন্ডারির ভেতরে?’
সমরেশ মজুমদারের একটা বইতে পড়েছিলাম যে, কলকাতায় সত্তরের দশকে অনার্স পড়তে আসা মেয়েদের মাঝে যারা হোস্টেলে থাকতো, তাদেরকে বাড়ি থেকে পড়তে আসা মেয়েরা নাকি এড়িয়ে চলতো। কারণ তখন হোস্টেলের মেয়েদের সম্পর্কে বাজে ধারণা কাজ করতো।
২০১৬ সালে এসে কি সেই ধারণা খুব পাল্টে গেছে?
অনেকে বলেন- ‘জাবিতে হরদম যৌন নিপীড়ন, লাঞ্ছনার খবর পাওয়া যায়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পাওয়া যায় না।‘ প্রশ্ন হলো- কিভাবে পাওয়া যায়? যে লাঞ্ছিত হচ্ছে সে যদি মুখ না খোলে তাহলে পাওয়া যেত? তার মানে নিপীড়িত হয়ে, লাঞ্ছিত হয়ে জাবির মেয়েরা প্রতিবাদ করে এসেছে, করছে। আর করছে বলে সারাদেশে খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। সেজন্য জাবি’র মেয়েদের গায়েই ট্যাগটা লেগে যাচ্ছে!
এখন যদি লাঞ্ছিত হয়ে কোনো মেয়ে চুপ থাকতো তাহলে তো কেউ জানতো না, খবরও বেরুতো না। তখন জাবি’র মেয়েরা ভালো – সুবোধ – সতী থাকতো!! তাছাড়া হলে থাকা মেয়েরা যে স্বাধীনতাটুকু ভোগ করে সেটাও পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার পুরুষদের মেনে নেবার কথা নয়। স্বাধীনতা তো শুধু ছেলেদের জন্য, মেয়েরা যতটুকু ভোগ করবে, ততটুকুতে তার মাথায় একজন পুরুষের ছায়া না থাকলে সে নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট মেয়েরাই হয়, ছেলেরা কখনো নষ্ট হয় না কারণ তাদের সাথে সতীত্ব বা যৌনতার ট্যাগ সিল মেরে লাগানো নেই।
এখনো হলে থাকা মেয়েদের নিয়ে নানারকম গুজব শিক্ষিত অশিক্ষিত মহলে ছড়িয়ে আছে। আমার এক বন্ধু আড্ডার ছলে চট করে বলে ফেলেছিলো-‘কিরে মেয়েদের হলে খাটের নিচে নাকি বেগুন, শসা প্রচুর পাওয়া যায়?’ তৎক্ষণাৎ রাগ চেপে আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম-‘তোদের তো ওসবের প্রয়োজন হয় না কারণ তোদের হাত আছে!’
ব্যস! আশপাশের মেয়েরা লালে লাল হয়ে উঠে গেলো, আর ছেলেগুলো এমনভাবে আমার দিকে তাকালো যে, এই প্রথম তারা কোন ভিনগ্রহের এলিয়েনকে দেখছে। আমার কথা হলো, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্য নয় এবং আমি নিজেই কখনো চোখে দেখিনি সেটা নিয়ে আমাকে ঘায়েল করতে এলে আমি হুজুর হুজুর করে সাফাই গাইবো কেনো, সত্য-মিথ্যার ব্যাখ্যাই দিতে যাবো কেনো?
কেউ কেউ নারীর যৌনতা নিয়ে কথা বলে স্রেফ একধরনের শিশ্নসুখ পায়। আমার উত্তর, তাদের পছন্দ না হলেও পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে বিস্তর নেতিবাচক আলোচনা হয়েছিলো শুনেছিলাম। অবশ্য তাতে আমার জীবনের এক চুল পরিমাণ কোন ক্ষতি হয়নি, বরং এরপর থেকে তারা কথা বলতে গেলে সাবধানে বলতো।
বেশিরভাগের ধারণা- বেশি স্বাধীনতায় নাকি মেয়েরা নষ্ট হয়ে যায়। বেশি স্বাধীনতায় ছেলেরা নষ্ট হয় না? যে ছেলেটা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে থাকে, পড়াশোনা না করে সারাদিন আড্ডা দিয়ে বেড়ায়, সে কোনোভাবে নষ্টের কাতারে পড়ে না? অবশ্য ‘নষ্ট’ শব্দটা নারী আর পুরুষের ক্ষেত্রে একইভাবে ব্যবহৃত হয় না। এটা পুরুষের চরিত্রের সাথে আর নারীর যৌনতার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় এক অভিভাবক তার ছেলের বৌ হিসেবে আমাকে পছন্দ করেছিলেন। আমার সম্পর্কে জানতে গিয়ে যখন শুনলেন, হলে থাকি, তখন আর আমার আব্বা-আম্মার সাথে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেছিলেন- ‘হলে থাকো কেনো মা? হলে থাকলে নাকি নষ্ট হয়ে যায় সবাই।’
উত্তর দিয়েছিলাম-‘আপনার ছেলেটিকেও হল থেকে বাসায় নিয়ে আসুন। সেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’ বোঝাই যায়, হলে এসে মেয়েরা যে স্বাধীনতাটুকু ভোগ করে সেটা এ সমাজ মেনে নিতে চায় না। মেয়েদের জন্মই হয়েছে বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবার জন্য, সে যতই লেখাপড়া করুক।
আহা, কত সুন্দর মানসিকতা নিয়ে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে বসে আছি! আর নারীরাও সবাই যে এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসেছে তা বলব না। হাজার বছরের পুরুষের দাসত্বের যে কুজ পিঠে তৈরী হয়েছে তা ঝেড়ে ফেলে মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে যথেষ্ট ধৈর্য, সাহস, শাণিত কণ্ঠ, প্রতিবাদ করবার মানসিকতা থাকা দরকার।
হলে যেসব মেয়েরা থাকে তাদেরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। কেউ পড়াশোনায় ব্যস্ত, কেউ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন করছে, কেউ পড়াশোনা বাদে আড্ডা দিতেই ভালোবাসে। রাতে যখন হলের গেইট বন্ধ হয়ে যায় তখন বিভিন্ন রুমের মেয়েরা একসাথে হয়ে আড্ডার আসর বসায়, পিকনিক করে।
কতদিন ভোরে বেরিয়ে হলের পেছনের পাঁচিল বেয়ে ছাদে উঠে আম, কাঁঠাল, জলপাই, কামরাঙ্গা, চালতা, আমড়া পেড়েছি। হুটহাট হলসুপারের সামনে পড়ে গেলে তাঁর রাগিচোখের সামনে মুখ হাসি হাসি করে দু’তিনটে জলপাই হাতে গুঁজে দিয়ে চলে আসতাম। কিংবা বঁড়শি নিয়ে হুটহাট মাছ ধরতে চলে যেতাম, সেই মাছ দিয়ে রাতে হতো বারবিকিউ পার্টি। ছেলেবন্ধুরা হলের গেইটে এসে বসে থাকতো, আমরা রান্না শেষে বাটি ভরে তাদের দিয়ে দিতাম। আবার কারো জন্মদিন থাকলে মেয়েদের হলের বাগানে ফুল না থাকলে ছেলেদের হলের সামনে গিয়ে ফোন দিতাম, তারা তাদের বাগান থেকে ফুল ছিঁড়ে দিলে তা দিয়ে রাতে বান্ধবীটিকে চমকে দিতাম। এইতো সুখের হললাইফের চিত্র।
জাবিয়ান মেয়েদের নিয়ে যত কানাঘুষা তা যদি নিরক্ষর, অর্ধশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত মানুষেরা করতো তাহলেও একটা কথা ছিলো, শিক্ষিত প্রগতিশীল মানুষদেরও এ নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। নারীর যৌনতার বিষয়ে এক কাতারে আসতে হয় না এদের, অটোম্যাটিক এসে যায়।
এদের যদি প্রশ্ন করা হয়-‘ক’জন জাবি’র মেয়েকে দেখেছেন?’
হয়তো বলবে-‘একটা দু’টো’ কিংবা বলবে-‘দেখিনি, শুনেছি’।
জাবি’রই এক তথাকথিত ভদ্র ছেলেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো-‘ বিয়ের ব্যাপারে কি ভাবছো?’ সে সরাসরি উত্তর দিয়েছিলো-‘জাবি’র মেয়ে বাদ দিয়ে মেয়ে খুঁজছি’। এই ভদ্র(!)ছেলেটি দু দু’টো প্রেম করেছিলেন, টেকেনি। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম-‘জাবির মেয়েরা খারাপ হয়, কারণ বাপ-মা ছাড়া থাকে, অবাধ স্বাধীনতায় থাকে, প্রেম-ফ্রেম করে বসে। এজন্য সতী সাবিত্রী মেয়ে খুঁজছেন যে কিনা আপনাকে ছাড়া কাউকে ছুঁয়েও দেখেনি। আপনি নিজে তো দু’টো প্রেম করেছেন, ছুঁয়েছেনও বটে। নিজেতো নষ্ট হয়েছেনই, সেইসাথে দু’টো মেয়েকেও নষ্ট করেছেন আপনি?’ ছেলেটি এরপর আমাকে পারতপক্ষে এড়িয়ে গেছে বাকি ক্যাম্পাস লাইফ।
শুনেছি তিনি বাবা-মায়ের পছন্দে সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা এক কিশোরীকে বিয়ে করেছেন। এইতো ভালো মেয়ের সংজ্ঞা! যার গায়ে পুরুষের হাত পড়েনি, যে এখনো স্বাধীনতার মানে বুঝতে শেখেনি, যাকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে গড়ে নেয়া যায়, যে শাসনে মাথা নুইয়ে রাখে, শোষণে মুখ বুজে থাকে, আর ভোগের বেলায় চুপচাপ চোখ বুজে পড়ে থাকে। কিন্তু এই মেয়েই যদি কখনো প্রশ্ন তোলে তার নিজ অধিকারের ব্যাপারে, তাহলে সে হয়ে উঠবে সাক্ষাত মুখে বুলি ফোটা নষ্ট মেয়ে।
ভালো মেয়ের সংজ্ঞাটা আজো কি কারো কাছে ক্লিয়ার? এটা বড্ড আপেক্ষিক, মানুষ আর তার মানসিকতার প্রেক্ষিতে। ভালো মেয়ে মানে যে বাবা-মা কিংবা স্বামীর কথা মানে, সবকিছু মানিয়ে নিতে পারে, উঁচু গলায় প্রতিবাদ না করে নীরবে সয়ে যায়, রাস্তাঘাটে লাঞ্ছিত হলেও চিৎকার চেঁচামেচি করে না, পুরুষের লাঞ্ছনা অত্যাচার মেনে নেয় নিজ নিয়তি মনে করে, যে নিজেকে আত্মত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত করে, সংসার সন্তানের জন্য জীবনকে বেচে দেয় এবং আরো অনেক কিছু। পুরুষের এই তৈরীকৃত বলয় থেকে যারা বেরোয় বা বেরিয়ে আসতে চায় তারাই খারাপ, নষ্ট মেয়ে বলে বিবেচিত হয়।
যারা জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষিত মেয়েদের নিয়ে কটাক্ষ করেন তারা কি জানেন আপনাদেরকে অনুকম্পা দেখাবার মত সময়টুকুও আমাদের হাতে নেই! আপনাদের কথা শুনে স্রেফ আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে করুণার হাসি দেই। এই সেই জাহাঙ্গীরনগর যেখানে দেশের প্রথম যৌননিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ধর্ষক জসিমউদ্দিন মানিকের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশে প্রথম যৌননিপীড়নবিরোধী নীতিমালা তৈরী হয় এখান থেকেই। এইতো বছর তিনেক আগে এক নারীশিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলো পুরো ক্যাম্পাস। শুধুমাত্র দু’হাজার মেয়ে নিয়েই একটা মিছিল হয়েছিলো। যেই মিছিল দেখে ভয়ে অপরাধীর হলের গেইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো নতুবা সেদিন হলে ঢুকে তাকে টেনে রাস্তায় নামাতাম আমরা। এত মেয়ের একসাথে মিছিল দেখে প্রশাসন পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিলো। আমরা শিক্ষক নিপীড়নের বিরুদ্ধে মাথা তুলে প্রতিবাদ করেছি, সান্ধ্য আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি- যাকে শ্লীলতাহানি করা হয় লজ্জ্বা তার নয়, বরং অপরাধ সেই পুরুষের। আর পুরুষের বিরুদ্ধে এই গলা উঁচু করে প্রতিবাদটাই বোধহয় তথাকথিত ‘আপনারা’ মেনে নিতে পারেন না। কারণ নারী হবে কোমল, নরম, লতিকালতা। হাসবে নীরবে, কাঁদবে নীরবে, সহ্যও করবে নীরবে। তার গলা উঁচুতে ওঠা মানে ‘আপনাদে’র মুখোশটা খসে পড়ে যাওয়া।
যারা জাবি’র মেয়েদের নিয়ে, হলের মেয়েদের নিয়ে হাজার রকমের কানাঘুষা, কুৎসা রটান তাদেরকে বলি- নিজেকে একবার প্রশ্ন করেছেন এইসব স্বাবলম্বী প্রতিবাদমুখর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা মেয়েদের আপনি যোগ্য কিনা? জাবি’র মেয়েদের নিয়ে যত কানাঘুষাই হোক না কেনো ভাই, এরা কিন্তু শিক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বসে নেই। বিসিএস ক্যাডার থেকে শুরু করে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাকুরী করছে, নিজেকে স্বাবলম্বী করছে, এমনকি অবিবাহিত হয়ে জীবন পার করছে না। আপনার চেয়েও যোগ্য কাউকে খুঁজে নিয়ে সুন্দর সুখে আছে তারা।
তাহলে এতো যে কথা বলেন সেগুলো কি স্রেফ নারীকে ওপরে উঠতে দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে? নাকি অধঃস্তন করে রাখতে পারলেন না বলেই নারীর স্বাধীনতা ভোগ করতে দেখে নিজের পুরুষালী মনস্তাত্ত্বিক হাতমুখ নিশপিশ করে? নারী আপনার সমানে পৌঁছেছে বা এক ধাপ ওপরে উঠেছে, তার সাথে চোখ তুলে কথা বলতে গেলে হাজার বছরের লালিত কোনো একটা জায়গায় যেনো বাড়ি লাগে, তাই না?
থাকুন আপনারা আমাদের নিয়ে মুখর হয়ে। এতে আমাদের মেয়েদের কিচ্ছু আসবে যাবে না। আপনারা নন, আমরাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
অসাধারণ একটি লেখা ।
জগ্লু দের মতন সুশীলরাই এত বাজে চিন্তা ভাবনা ভাবতে পারে ।
তাদের বোঝা উচিত মুদ্রার দুইটা পিঠ রয়েছে ।
Dear Joglu,
I feel sorry for you. keno sorry feel korchi, shai bakhay ar na jai. oneke apnake er modhe onek kotha bole feleche. amar shudhu kichu proshno ache apnake jiggesh korbar. shudhu Dhakate noy puro desh jure onek potitaloy ache jar khobor meyeder mohole thakuk ar na thakuk chelera thik e shai khobor rakhe. ar apni nischoi ekhon bolben na je shai potitaloygulo meyeder projon metate sristi hoyeche…..shekhane geleo onek kichu dekha ba jana jay. ekhon amar proshno holo apni jevabe shob kichu shadharonikoron kore montbbo korechen tate ekivabe chinta korle ei shob potitaloygulur kotha bibechona kore amader mayeder apnader moto vodro cheleder niye kivabe chinta kora uchit?
university er vetore kothao jodi kichu hoy ba hoye thake ( apnar vashomote) dujon manush nijer echate ja e koruk shata apnar chokhe pap, tahole apni bolben ki apni keno ba ki uddeshe ajachito hoye shaishob jaygay giyechilen? apni jemon valo manush, tate shathe kono meye niye shakhane apni jete paren na. tobe ki taka khoroch kore potitaloy a jabar kingba ghore boshe nijeke tripto korbar upay na thakay bina khoroche nijer chokh ka tripto korte cheyechilen?
অসাধারণ একটা লেখা। পড়ে ভাল লাগল। বাংলাদেশের অধিকাংশ পাব্লিক ভার্সিটি র চিত্রে মুল বিষয়গুলো একি। যারা বাহির থেকে মন্তব্ব করেন তাদের সুযোগ দেয়া উচিত পাব্লিক এ নতুন করে পড়ার। কিন্তু ধারনার পরিবরতন হবে কিনা নিশ্চিত না। কারন ঢেকি সরগে গেলেও ধান ভানে।
নষ্ট হবার যে বিষয় সেক্ষেত্রে আমার মনে হই যে খারাপ হবার সে পাব্লিকে পরলেও হতে পারে আবার না পরলেও হতে পারে। খারাপ কেও কাওকে করতে পারেনা।মানুষ নিজ থেকে হই। দোষ চাপানর একটা জায়গা দরকার তাই হাতের কাছে সুবিধাজনক কিছু পেলেই সহজে সবাইকে খাওয়ানো যায় আর বিশেষ করে যে বেপারে সবার আগে থেকেই ভ্রান্ত ধারনা থাকে সেটা সত্য প্রমাণিত হবার জন্ন্য সবাই মানসিক শান্তি নিতে পারে।
পাশাপাশি আঙুর এর বেপারটাও সত্ত্য।
আর আমদের দোষ এটাই আমরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করিনা।
সে যাই হক, কারও কথাই কিছু এসে যাবেনা। একটা সময় সবার ভুল ভাঙে। সমাজের পরিবর্তন আমরা চিরকাল সবশেষে মেনে এসেছি আর এখনো তাই। তাই বলে তাদের মৌলবাদি বলবেন তাতেও বিপদ।
@জগলু ভাই.
আপনি নিজে এত সচেতন এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর এত কিছু সম্পর্কে তা দেখে একজন জাবিয়ান হিসেবে মুগ্ধ হচ্ছি. আশা করছি এ জীবনে আপনি আমাদের জাবি এর 700 একর জায়গার ত্রিসীমানার মধ্যে আসবেন না এবং আপনার পরিবার পরিজন দের এখানে আসা থেকে রক্ষা করবেন. আপনার মত নীতিবান পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহক দের জাবির দরকার নেই. এই বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা এগুলো নিয়ে পড়ে থাকে না. তারা অনেক ক্যারিয়ার সচেতন এবং জীবনকে বিস্তৃত পরিমন্ডলে আরো বাস্তব সম্মত ভাবে দেখে আমরা অভ্যস্ত. আপনি বরং নিজে নিজের নীতি অনুযায়ী চলুন. আপনি মহামানব.
Thanks
Asole ,protita jiniseroy positive ebong negative ase. Fahmi ila apu positive dik r Nam na Jana vai negative dik bolse. Asole amora nizeder onek adunik boli. Adunik ek jinis r valo manus ek jinis. Jodi valo manus hote chai . Tahole amader sokole adorso manus holen hazrot Mohammad (s). R Quran holo amader jibon bidhan. Tay jonno Quran porlen r chumu kheye thake reke dilen . Ete kono kaze asbena. Quran buje Porte Hobe. Allah bolse. Ey prithi bi somporke tumi joto gean Ni nauna keno , Jar majhe Quran er gean ney, se murkho. R amora etho pora sona korsi . Ete Ki lav. Morar por ey pora sona amader Koto tuko kaze asbe. Naki ey pora sona amader kal hoye darabe. Amora ekta sotto dese bosobas Kori. Vougolik vabe emon ekta dese bas Kori. Jekane soro ritur des. Amor onno deser cheye onek arame thaki. Kintu ta upologdhi korte Pari na. Ejonnoy ek arob biggani Bangladesh somporke bolsen . Bangladesh holo ekta sundor norok. Amora ekta sundor des peye norok kore rekhe si. Tar por prothi bosor aponader motho valo valo students ber hosse . Bcs cedar hosse. Kintu dese santhi assena. Asole vai aponara du joni aponader dristi vongi theke thik asen. Aponader motho sobay thakle to des valo hoyey jeto. Onnek sele meye ase Kara biyer aag porjonto nijer sotitto thik rake. Eta kub kosele meye pare. Karon Allah amader mone valo basar sristi korese. Jar Nam sex. Keu etea kontrol korte pare , keu pare na. Ey prithibi te sobchayte boro nesa sex, er por mod gaja baba hero etc, er por juya er por etc. Oooh takar nesa to asey. R egula holo saythan er hatiyar. Arro onnek kisu bolar silo. Amar kono kotha vul hole maf korben ba bujiye deben . Karon manus matroy vul kore. Aponader dujoner kothay valo legese. Valo thakben . Allah hafiz.
অসাধারণ লিখেছেন আপু। জবিতে পড়া আমার এক বন্ধু বলে, তার রুমমেটের এক কাজিন নাকি জাবির হলে থেকে পড়াশোনা করেছে, এখন তার বিয়ে হচ্ছেনা। আমার বন্ধু এটা প্রচার করা তার মহান দায়িত্ব মনেকরে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে। এমনি আমার এলাকার(গ্রামে) এটা ভাইরাল করা শেষ। এদের মত কিছু লোকের জন্য এসব কথা অযথা ভাইরাল হয়। আমার কাছে যখন বলতে এসেছিল,সেইরকম ধুয়ে দিয়েছি।
সলিড রাইটিং আপু। খুবই সুন্দর লিখেছেন। অপ্রকাশিত কথাগুলোই লিখেছেন। হ্যাটস অফ!
ফাহমি ইলার লেখাটা ভালো লেগেছে আমার অনেক কিছুর সাথেই ওর লেখনীর মিল পেয়েছি শুধু জাবির মেয়ে নয় হলে থাকা মেয়েদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সমাজের অনেকেই পোষণ করে আমি আমার প্রয়োজনেই হলে থেকেছি কে কি ভাবলো তাতে কিছু যায় আসে না যেটাতে আমার সুবিধা হয় সেটাই করেছি ভার্সিটি হল পেরিয়ে যখন কর্মজীবি হলাম তখন যাতায়াত এর সুবিধার্থে সিনিয়রের চেম্বারে কাজ করার প্রয়োজনে নীলক্ষেত কর্মজীবি মহিলা হোষ্টেলে থেকেছি চার বছর এটাও একটা বিশাল অভিজ্ঞতা আবারো ধন্যবাদ লেখাটার জন্য নারীকে এগুতো হবে
আমার অনেক বান্ধবী জাবিতে ভর্তি হলো না তারা নাকি “দলের নেতাদের নজরে পড়লে জীবন শেষ” হয়ে যাবে এই ভয়ে। জাবি তে এরকম কিছু হয়েছে বলে তো আমার জানা নাই, আর যদি হতেও যায়, তবে কি আমরা সাধারণ ছাত্র জনতা চুপ করে থাকবো? দেশের মানুষের চিন্তাটা বদলানোই যাচ্ছে না।
জাহাঙ্গীরনগরিয়ান মেয়েঃ ফাহমি ইলার বুলি বনাম বাস্তবতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর মেয়েদের গুণকীর্তন আর তাদের কে প্রগতিশীল পরিচয়ে প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা হিসেবে জনৈক ফাহমি ইলা “women’s chapter” ব্লগে বেশ সাড়া জাগানিয়া একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত এবং বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর মেয়েদের কৃতিত্ব বিশেষ করে বলতে নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর এর মেয়েদের লড়াই সংগ্রাম এর চিত্র তুলে এনেছেন।
তিনি নিজেও উক্ত লেখায় স্বীকার করেছেন, ভালো মেয়ের সংজ্ঞা পরিষ্কার না। কেনো জাহাঙ্গীরনগর এর মেয়েরা প্রগতিশীল সেই আলোচনা অস্পষ্ট রেখে বিভিন্ন “গুণকীর্তন আর সমোলচকদের ইচ্ছেমত ফাপর” দিয়েই মূলত উনার লেখা সাজানো।
জাহাঙ্গীরনগর এর মেয়েদের একক ভাবে আলোচনায় না এনে আমি উনার লেখার সাথে দ্বিমত পোষণ করে সমগ্র জাহাঙ্গীরনগর এর বাস্তব চিত্র তুলে ধরতেই এই লেখার উপস্থাপনা করছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের নিকট ৭০০ একর ক্যাম্পাসের মধ্যমনি তথা জনপ্রিয় কয়েকটি নাম হচ্ছে “বৃন্দাবন” “স্ট্যাটের চিপা” “রেজিস্টার এর চিপা” “সুইমিংপুল” “পুরাতন কলার আবডাল” “সেন্ট্রাল ফিল্ড” “ছবি চত্বর” “বোটানিক্যাল গার্ডেন” প্রভৃতি। এসব স্থানগুলো জাবিয়ানদের কাছে খুবই বিখ্যাত, জনপ্রিয় এবং “রমরমা প্লেস”। পাঠক আশা করি, স্থানগুলোর নামকরণ পড়েই এসব স্থানের মাহাত্ম্য অনুমান করে নিতে পারছেন। তারপরও খোলসা করি, এসব স্থান মূলত অবাধ যৌণকর্ম চরিতার্থ করবার স্বর্গসম স্থান। ৭০০ একর জমিনে এরকম ৮/১০ টি বিখ্যাত স্থান-ই রয়েছে যেগুলো সমগ্র জাবিয়ানের নখদর্পনে যে এখানে হরহামেশা ধুমছে চলে সভ্যতার সবচেয়ে নগ্ন বেহায়াপনার উৎসব। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই এখানে কথিত প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঢল নামে সেক্স সেলিব্রেশনের জন্য। আপনি এসব প্লেসে ঢু মারলেই কম-বেশি কনডমের পরিত্যক্ত প্যাকেট দেখতে পাবেন।
১ম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের জাবি কে চেনার আগ্রহের ৮০% শুধু এইসব প্লেসের জমকালো আয়োজনের সাথে পরিচিত হওয়া। হল থেকে এ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া থাকে “সেক্স সেলিব্রেশন শো” স্বচক্ষে দেখে আসার জন্য। জাবিয়ানদের অঘোষিত নিয়ম হচ্ছে অবাধ যৌণাচার কে সমর্থন করা। খোলামেলা সেন্ট্রাল ফিল্ডে সন্ধ্যে হলেই বিচ্ছিরি নগ্ন শৈল্পিক আয়োজন থেকে ঝোপেঝাড়ের রতিক্রিয়া জাবিয়ানদের ঐতিহ্যের অন্তর্গত হয়ে পড়েছে। জাবির বুকে প্রতিটা সন্ধ্যা মানেই “বেহায়াপনা, সেক্স সেলিব্রেশন শো”। অবাধ যোণাচার ছাড়া জাবির একটি দিনও কল্পনা করা যায় না।
৭০০ একরের এসবের পাশাপাশি রয়েছে জাবির সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত “গেরুয়া” “ইসলামনগর” “আমবাগান” “কলাবাগান” প্রভৃতি গ্রামে ভাড়া করা ফ্লাট বাসায় বিবাহ বহির্ভূত ছেলে মেয়ের বসবাস এবং যৌণাচার। জাবিয়ানদের কাছে এসব খুবই তুচ্ছ বিষয়। তাদের কাছে ইথিকসের সংজ্ঞা একদম ভিন্ন। ইথিকস নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাবিয়ানরা প্রতিষ্ঠা করেছে “একখন্ড ইউরোপিয়ান কালচার বেজড সোসাইটি”।
এইতো গেলো জাবিয়ানদের অবাধ যোণাচারের গল্প, হলগুলোতে ১ম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের জাবিয়ান বড়ভাইদেত দিক-নির্দেশনা শুনলে রীতিমতো ভিমড়ি খাবেন। আপনি কিভাবে আপনার ছেলে মেয়েদের হলে রাখার সাহস পাবেন যখন জানতে পারবেন, আপনার সন্তান কে হলে বিকৃত রুচির “চটি গল্প” বানিয়ে বড় ভাইদের শুনাতে হয়, একজন বন্ধু কর্তৃক আরেক বন্ধু কে “সেক্স এক্সপ্রেশন সহকারে সেক্সুয়াল পজিশনে সেক্স করার অভিনয়” করতে হয়, তাকে বিতর্ক করতে হয় বিকৃত রুচিকর টপিকে যেমনঃ “গুড মারার চেয়ে পোদ মারা শ্রেয়” প্রভৃতি ( আমি দুঃখিত প্রকৃত তথ্য উপস্থাপনে আমাকে লিখতে হলো)।
তারপর, জাবি হচ্ছে গাজা খাওয়ার আদর্শ ক্যাম্পাস। এখানে প্রতিটা রাতে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে বসে গাজার আসর। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে এই গাজা সেবনে জাবিয়ানরা (ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে) অভ্যস্ত এবং অঘোষিতভাবে সমর্থিত। এমনকি সকল জাবিয়ান গাজাসেবীদের সংঘটিত গাজার আসর বসে বছরে ১বার যা “মাতম” নামে অবহিত। বিভিন্ন উৎসব আয়োজন, প্রোগ্রাম আয়োজনে হলে হলে (ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে) মদের আসর বসে। মদ এবং গাজা সেবনে জাবিয়ানরা ঢের প্রগতিশীল। ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ড, মুরাদ চত্বর, মুন্নি চত্বর, চারু ছায়া, সেন্ট্রাল ফিল্ড, টারজান, পুরাতন মেডিকেল, সুইজারল্যান্ড, সুইমিংপুল, পাম্প, পানি রিসার্চ কেন্দ্র, সমাজবিজ্ঞানের ছাদ, রাত ১১ টার পর বিভিন্ন বন্ধ হওয়া চায়ের দোকানে প্রতিদিন চকে গাজার আসর। বন্ধুদের জন্মদিনে জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয় অফুরন্ত গাজা বিতরনের মাধ্যমে। গাজার আসর বসে নাই, এমন একটি দিনও জাবির ইতিহাসে নেই। জাবিয়ানদের “গাজা আথিতেয়তা” জাবির বাহিরেও গাজাসেবীদের অজানা নয়। “কলমা” এবং “আলী” এই দুই নাম জাবিয়ানদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় শুধুমাত্র গাজার সাথে সম্পর্কিত বলেই। কলমা থেকে ৮০% গাজা সরবরাহ করা হয় এবং জনৈক আলী নামক এক ব্যক্তি প্রকাশ্যে ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে “জাম্বুরা তলায়” বা “পোস্ট অফিসে” গাজা বিক্রি করে থাকেন।
এখন এই তথ্যগুলো জানার পর, আপনারাই বিচার করুন, ফাহমি ইলা জাবি সম্পর্কে যতো বড় বড় কথা আর হাকডাক ছাড়লেন তার কতোটুকুই সত্যতা মেনে বকা আর বাস্তবতার সাথে তার ফারাক কতটুকু।
রাজধানী থেকে একটু অদূরে সবুজ শ্যামলিমায় মনোরম পরিবেশে জাবি নিয়ে মানুষের হিংসা নাকি আদতেই জাবির প্রকৃত স্বরূপ এতোটাই বিকৃত রুচির আর জঘন্য যে কোন অভিভাবক তার সন্তানের সুশিক্ষার ব্যাপারে এখানে ভরসা করতে পারেন না।
জাবি সম্পর্কে যা প্রচলিত তা হয়তো আরো কিছু রং-চং মিশিয়ে প্রচারিত হয়, তবে তা পুরোটাই মিথ্যে নয়, বরং বেশিরভাগ অংশই সত্য। তাই, শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয়, জাবির ছেলেদের ক্ষেত্রেও “নষ্ট” হয়ে যেতে পারার আশংকা শতভাগ যৌক্তিক। পুরো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নষ্ট দের আখড়া, সেখানে গুটিকয়েক ভালো জাবির এই স্বরূপ বদলে দিতে পারে না। জাবির স্বরূপ জাবিয়ানরা নিজেরাও খুব ভালো করেই জানে, কিন্তু তাদের “ইগো” সমস্যার দরুণ তারা এইসব বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে নিজেদের খুব মহান রূপে চিত্রিত করতে চায়।
ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে, নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে জাবির মেয়েরা যেমন কৃতিত্ব দেখিয়েছে ঠিক তেমনি জাবি যে “নষ্টদের আখড়া” তার প্রমাণ তারা “বৃন্দাবন, স্ট্যাটের চিপা, রেজিস্টারের চিপা” প্রভৃতি নামকরণ এবং এইসব প্লেসের বিকৃত কর্মের মধ্যেই রেখেছে।
Well done. They also think that they are alone progotishil, no one else…eshob bepare tara jotota expert, not as expert in the professional field
আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ভাই?
এতগুলো অভিযোগ যে করলেন তাতেও কি জাবি’তে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী কম ভর্তি হচ্ছে? আপনি জাবি’র স্টুডেন্ট কি নাা জানি না, তবে এই যে সরলীকরণ করলেন তাতে যে কেউ আপনার বক্তব্য পড়লে মনে করবে-এইসব ছাড়া জাবি’তে কিচ্ছু হয় না। আপনি রাজি থাকলে একদিন ক্যাম্পাসে আসতে পারেন, তারপর আমরা যেতে পারি ঐ জায়গাগুলোতে। কতভাগ সত্যি আপনার বক্তব্য তা দেখা জরুরী (আমার জন্য না, আপনার জন্য)। আমার জন্য না এইজন্যই যে আমার লেখাটা যাদেরকে উদ্দেশ্য করে তাদের দলে এই কমেন্ট পড়ে। কি সরলীকরণ করে প্রায় হাজার বিশেক শিক্ষার্থীকে এক কাতারে ফেলা যায়! যে কয়টা জায়গার কথা বললেন তা কি নিজ চোখে দেখে বলেছেন নাকি শুনে?
Chomotkar Likhecho Fahmi! Proud of you! Ami JU 25th batch er. I completely agree with your argument. Please do keep going!
জগলু সাহেব জাহাঙ্গীরনগরে পড়া তো দুরের কথা, মাদ্রাসা পাশ করেছেন কিনা এখনো সন্দেহ। উনি একটু “হর্নি” টাইপের হুজুর মনে হচ্ছে। মাথার মধ্যে খালি সেক্স, কনডম ঘোরাঘুরি করে। সাথে একটু গাজা।
আর র্যাগিং কে মেইনস্ট্রিম বলে উনি বেশ চালিয়ে দিলেন। আমি নিজেও এক্সট্রিম র্যাগিং এর বিপক্ষে। উনি যেভাবে চটি লেখিয়ে অভিনয়ের বর্ননা দিয়েছেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা কালেভদ্রে ঘটে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (এমনকি বুয়েটেও) বিভিন্ন হলে একই মাত্রার অশালীন র্যাগিং হয়ে থাকে। তবে এরকম ঘটনা ঘটে প্রতি ১০০তে ১বার, বা তারও কম। ক্যাম্পাসের সব ছেলে চটি হাতে নিয়ে একে অন্যের পশ্চাতদেশে হাম্পিং করে বেড়াচ্ছে উনার এমন চিত্রায়ন সঠিক নয়। তারপরও, র্যাগিং বন্ধে প্রশাসন কে সচেষ্ট হতে হবে। কোন ধরনের র্যাগিং ই কাম্য নয়।
Carry on junior…Proud of you.
Like the way of your writing..
Darun