হ্যাঁ, সুখী বিবাহ বিচ্ছেদ বলেও কিছু হয়!

শেখ তাসলিমা মুন:

আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ একটি অভিশাপ হয়ে আসে। অথচ বিবাহ বিচ্ছেদ একটি সুখের বিষয় হতে পারে। এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের পরও অত্যন্ত দায়িত্বশীল সংবেদনশীল মাতাপিতা হওয়া সম্ভব।

খুব ছোটবেলা থেকেই বিয়ে আমাদের সামাজিক জীবনে দুটি নরনারীর ভেতরের সম্পর্ককে দেখা হয় না। সম্পর্কটি পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, আইনগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক। তারপরও যে সম্পর্কটিতে যে ভালবাসার একটি পর্ব প্রত্যাশা করা হয়, সেটাই অবাক বিস্ময়ের। তবু সেই অলীক প্রত্যাশাকে ঘিরেই আশাভঙ্গের বেদনার কারণ ঘটে, আমাকে বরং সেটাই অবাক করে।

যে সম্পর্কটি এতোগুলো বিষয়ের, সেখানে ভালবাসা বিষয়টি নির্দেশনামার মতো। এবং সে নির্দেশনামা মেনে ভালবাসতে হবে কাজ করবে, সেটাই তো এক আশ্চর্যের বিষয়।

আমি বলবো, যে বৈবাহিক সম্পর্কগুলো তবুও ‘ভাল’ বলে প্রতীয়মান হয় তার বেশীর ভাগই ‘ভালবাসা’ নয় দুটি বিবেচনা সম্পন্ন মানুষদের সহাবস্থান। সেটিই আপাতদৃষ্টিতে একটি সফল বিবাহ। কিন্তু ‘ভালবাসা’ যে সেটি কিন্তু নয়। বিপত্তি হয় তখন, যখন দুটি মানুষ ‘বিবেচনা’ বোধের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারে। তাদের জীবন হয়ে ওঠে ভয়াবহ। ‘ভালবাসা’ বিহীন সম্পর্ককে টেনে নিয়ে যেতে না পারার দণ্ড আমরা তাদেরকে চারিদিক থেকে দিতে থাকি।

পৃথিবীতে সব কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু ‘তোমাকে ভালবাসতেই হবে’ এ ভার কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আর ভালবাসাহীন সম্পর্কে বাস করার যে নরক যন্ত্রণা তারা নিজেরাই সৃষ্টি করতে পারে, তাতে মরার পরে আলাদা কোন নরকের দরকার হয় না। আর সেই নরকেই বাস করে যাওয়ার জন্য আমাদের সমাজের ৯৯% পরিবার এমন কোন প্রচেষ্টা, ফাঁদ, নিষ্পেষণ নেই যা তারা করে না।

এর পেছনের অনেক কারনের ভেতর একটি কারণ, তারা জীবন নয়, হৃদয় নয় প্যাটার্নে বাস করে। তারা ‘খেলাঘর’ কল্পনা করে সেখানে একটি অলীক কাল্পনিক জীবনকে দেখে। জীবন কী সেটা নয়, জীবন কী হওয়া উচিত সেটাকেই গুরুত্ব দেয় এবং এর বাইরের কিছুকে বাঁধা দেয় প্রাণপণে।

একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ে নিজেকে বিকশিত করে। মানুষ জীবনের ইতিবাচক ‘স্পিরিটে’ নিজেকে ‘গুড সৌল’ হিসেবে তৈরি করতে পারে। আর তার প্রেক্ষিতে সে সৃজনশীল চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারে। যা কেবল তার নিজের জীবনের জন্য নয়, মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত দরকারি। পৃথিবীর জন্য দরকারি। কিন্তু এই ইতিবাচক স্পিরিটের অভাবে মানুষের নিয়ত থেমে যাওয়া এবং পতন ঘটতে থাকে। নেতিবাচক যুদ্ধ তাকে মানুষ হিসেবে প্রতিদিন সীমাবদ্ধ করে ফেলে। মানুষ হিসেবে তার গুণাবলী বিকশিত হওয়ার বিপরীতে তার নেতিবাচক ব্যবহারগুলো বিকশিত হতে থাকে। যা মানব জীবনের এক বিশাল ক্ষতি।

নিয়ত ক্ষয়িষ্ণু গুণাবলী তাকে প্রতিদিন মন্দ মানুষে পরিণত করে। তার সৃজনশীলতা লোপ পেয়ে সে ডেস্ট্রাক্টিভ হয়ে ওঠে। সে অসহিষ্ণু এবং উগ্র অসুখী একজন মানুষে পরিণত হয়, যা পৃথিবীর জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমন ক্ষতিকর তার নিজের জন্য। আর এমন দুজন মানুষ প্রতিদিন তাদের ‘মন্দ’ লাগার আরশিতে নিজেদের কুৎসিত রূপ ফুটিয়ে তোলে। তখন প্রকৃতপক্ষে তাদের দেওয়ার মত আর কিছু থাকে না। তারা না পারে নিজের কিছু দিতে, না পারে পৃথিবীকে কিছু দিতে। তারা মানুষ হিসেবে নেতিবাচক দুর্বল নীতি নিয়ে ধুঁকে বেঁচে থাকে। অনেকের ভেতর দৌরাত্য বিদ্বেষ অত্যাচারী মনোভাব ডেভেলপ করে। সে সম্পর্কে শুরু হয় ক্ষমতার খেলা। ক্ষমতায় যে বড় তার কাছে অত্যাচারিত এবং নিগৃহীত হতে হয়। এখানে জেন্ডার বিষয়টি প্রকট হয়ে ওঠে।

এমন একটি সম্পর্কে সবচাইতে অসহায় এবং অনিরাপদ অনিশ্চিত বোধ করে সন্তানেরা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দু ধরনের প্যাটার্ন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এক, এক পক্ষ এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা সকল অত্যাচার অবমাননা মুখ বুজে সহ্য করে জীবন যাপন করে।

দুই, দুজন সমানভাবে নীচুতা প্রদর্শন করার প্রতিযোগিতা করে নিজেদের এবং চারপাশের সকলের জীবন অসহ্য করে তোলে। প্রথম প্যাটার্নে শিশুদের জেন্ডার বিষয়ে একটি ভয়ানক ক্ষতিকর ধারনা জন্মায় এবং সেই ধারনায় তারা বড় হয়ে ওঠে। আর তারা বড় হয়ে এই প্যাটার্নকেই নিজেদের জীবনে চর্চা করে। দ্বিতীয় প্যাটার্নে শিশুরা বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকে। তারা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তারা ধ্বংসাত্মক, বিশৃঙ্খল, অত্যাচারী, আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তারা মানুষের প্রতি এবং পিতামাতাদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা নিয়ে বড় হয়ে ওঠে। অফিসে আদালতে স্কুলে সকল জায়গায় যেসব অত্যাচারী এনারকিস্ট আমরা দেখি তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রায়শই সহিংস।

মানুষের মনে যুক্তি এবং বিজ্ঞানমনস্কতা কাজ না করলে মানুষে মনে আলো প্রবেশ করবে না। চিন্তাগুলো পরিষ্কার হবেনা। মানুষ শুধু যুক্তিগুলোর ব্যবহার শিখলে এগুলোর সমাধান খুব সহজেই সম্ভব।

সম্পর্কগুলোকে আলাদা করতে পারলে মানুষ কিন্তু একটি অসফল বিবাহের সমাধান করে দুজন ভালো মানুষ হিসেবে অবশিষ্ট থাকাকে সম্ভব করতে পারে। সমাধান করতে পারলে দুজন মানুষকে মানবিক গুন হারাতে হয় না। নিজেদের সম্পর্কজনিত ব্যর্থতার জন্য দুজন মানুষকে ‘খারাপ মানুষে’ পরিণত হবার দরকার হয় না। একইভাবে দুজন মানুষের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সম্পর্ক ব্যর্থ হলেও পিতামাতা হিসেবে খারাপ হবার দরকার পড়ে না।

কম শিক্ষিতদের কথা বলছি না, শিক্ষিত বাবা-মায়েরা এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু বেদনার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে তারাই বড় নজীর সৃষ্টি করে চলেছে, তাতে সমাজের কিছুটা পিছিয়ে পড়া মানুষদের জীবন ও তার উন্নয়ন পিছিয়ে পড়ছে।

দুজন মানুষ যখন বুঝতে পারে একাধিক চেস্টার পরও তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারছে না, তাদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মাটিতে পা ছোঁড়ার থেকে তাদের দুজনের দরকার সমস্যাকে অনুধাবন করা। তাকে স্বীকার করা। এবং সেগুলো এক্সেপ্ট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

আমাদের দেশে স্বামীস্ত্রী বিয়েকে এমন একটা স্ট্যাটাস হিসেবে দেখে যে বিবাহ বিচ্ছেদ তাদের জীবনে সুনামি প্রলয়ের থেকে ভয়াবহ হিসেবে আসে। তারা মনে করে তারা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে ভূপতিত হবে। তাদের সামাজিক মর্যাদা গুড়ো গুড়ো হয়ে মর্যাদাহীন মানুষ হিসেবে পরিণত হবে। অথচ এর ভিত্তি আর কোথাও নয়, অবস্থান করে একমাত্র মনে। এটা মন থেকে দূর করলে এর অস্তিত্ব আছে বলেই মনে হবে না।

‘’মনে থাকলে আছে, মনে না থাকলে নেই।’’ বিষয়টি এতো সহজ। বরং বলা যায় পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো নয়, হৃদয়ভিত্তিক কষ্টগুলো মোকাবেলা করা বেশি চ্যালেঞ্জিং বিশেষ করে যদি এক পক্ষ বিচ্ছেদের জন্য মোটেও প্রস্তুত না থাকে।

বিশেষ করে আমাদের দেশের নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদকে বিরাট অসহায়ত্ব হিসেবে দেখে। অথচ সম্পর্ক যে একটি সৎ ভিত্তির উপর তৈরি করতে হয় শুধু এটুকুর সাথে সমঝোতা হলেই বাকিটা বুঝতে এবং এক্সেপ্ট করতে মোটেও সমস্যা হবার কথা নয়। আমি একজনকে খুব ভালবাসতাম। কেউ আমাকে খুব ভালবাসতো। এখন আর সে আমাকে ভালবাসে না। ভালবাসা ছিল। ভালবাসা ফুরিয়ে গেছে। আর এ ফুরিয়ে যাওয়াটা পাপ নয়। এটা হৃদয়ভিত্তিক। একজনকে আমি খুব ভালবাসতাম, কিন্তু সে ভালবাসা আমি আর খুঁজে পাচ্ছি না। যদি আমি সৎ হই, সেটি আমি আমার পার্টনারকে বলবো সৎভাবে। নতুবা তার প্রতি অন্যায় করা হবে। নিজের প্রতিও। বিপরীত পার্টনারকেও এ সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

একজন মানুষ আমাকে একদিন ভালবাসতো প্রান দিয়ে সেটি সারা জীবন টিকে থাকবে সেটি কি কোনভাবে বাস্তবসম্মত হতে পারে? যদি একদিন ভালবাসা ফুরিয়ে যায়, কষ্ট হলেও সত্যকে গ্রহণ করতে কুন্ঠা থাকবে কেন? কষ্ট এক। আর সত্যকে সত্য হিসেবে মানা এবং গ্রহণ করা আরেক। বরং আমি যদি জানি একজন আমাকে আর ভালবাসেনা তার সাথে বসবাস করাইতো এক আত্মসম্মানহীনতার বিষয় নয়? ভালবাসা নেই। অনবরত মিথ্যের উপর বাস করে যাওয়াই কি এক ভয়ঙ্কর অসৎ জীবন যাপন নয়? আর যে আমাকে ভালবাসেনা, সেটা জেনেও তাকে প্রাণপণে অনুরোধ করা, ‘আমাকে ছেড়ে যেওনা।’ ওহ! কি ভয়ঙ্কর দেউলিয়া হলে সেটি করা যায়!

আমাদের মেয়েদের জন্য সমস্যা বহুমুখী। সমাজ। আর সেই সমাজই সুবিধাবাদকে আঁকড়ে ধরা শেখাচ্ছে। অসৎ জীবন শেখাচ্ছে। অথচ একজন ভাঙলে এরপরের জনে সেই সংখ্যা হবে দুই। তারপরের জনে তিন। তার পরের জনে চার এবং তার পরের জন ভাঙলে পাঁচ। এই পাঁচজন নিয়ে কিন্তু আরেকটি সমাজ গড়ে উঠবে। এজন্য ‘সমাজ’ গোত্র কোনদিন চিরস্থায়ী কোন বিষয় হয়নি।

মূল কথা, নিজেদের মনুষত্ব কোন কারনে না হারানো। নিজের মনুষত্ব এমন একটি বড় বিষয় সেটি হারিয়ে যা ই করতে চাইব সবটাই ব্যর্থ এবং বিপর্যয় ছাড়া কিছু নয়।
নারীকে তার আত্মমর্যাদা অনুভব করতে হবে। ভালবাসাহীন সম্পর্ক থেকে নিজেকে উইথড্র করার সাহস এবং আত্মমর্যাদা অর্জন করতে হবে।

একজন পুরুষ যদি সৎ হয়, তার দায়িত্ব বিষয়ে সে সচেতন হবে। প্রস্তুত থাকবে পুরাতন সম্পর্কে গড়ে ওঠা পরিবারের দায়িত্ব পালন করার। বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে সন্তানদের দায়িত্ব ভুলে যাওয়া নয়। দুজন দায়িত্বশীল মানুষ যখন বুঝবে, তাদের সম্পর্ক মরে গেলেও তারা তাদের সন্তানের বাবা মা তখন তারা যেখানেই থাকুক যেভাবেই থাকুক সন্তানের বিষয়ে তারা সমান দায় এবং দায়িত্ব পালন করবে। একটি কথা সম্মানের সাথে মনে রাখা দরকারি যে তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে খাপ খাওয়াতে না পারলেও তারা মা বাবা হিসেবে কিন্তু চমৎকার ভূমিকা পালন করতে পারে। যদি তারা দুজন মানুষ প্রাপ্তবয়স্কসুলভ আচরণ করে।

বাবা এবং মায়ে সন্তানদের অধিকার সমান। এখানে স্বামী স্ত্রীর ইগো নয়, সন্তান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্তান যাতে মা এবং বাবাকে সমানভাবে পায় সেটি খুব দরকারি একটি বিষয়। আর এটা যদি দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী এবং পুরুষ অনুধাবন করেন তাহলে সন্তানের এ প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা একেবারেই অসম্ভব নয়।

নিজেদের বিচ্ছেদের সময় আমরা নারীপুরুষ যা করি সেটা হলো নিজেদের কনফ্লিক্টে সন্তানদের টানাটানি করা। তাদেরকে প্রেশার করা। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করা। তাদেরকে ভিক্টিম করা। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলে সন্তানের মনে হিউজ পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করা। কিছু বাবা মা চেষ্টা করে তাদেরকে বেশি পছন্দ করাতে সন্তানদের প্রতি মানসিককভাবে চাপ সৃষ্টি করা। সেটায় ব্যর্থ হলে ছেলেমেয়েকে দায়ী করা। এগুলো যে কি বিধ্বংসী সেটা যদি একটিবার কল্পনাও করতে পারতো তাহলে সন্তানদের এমন ক্ষতিতে তারা অংশগ্রহণ করতে পারতোনা। এ সন্তানদের বেদনা বর্ণনা করাও আমার সাধ্যের বাইরে। অথচ বিপরীত হলে তাদের জীবন কত সহজ করে তোলা সম্ভব।

‘’আমার সাথে তোমাদের মা বা বাবার যাই ঘটুক না কেন তোমরা আমাদের কাছে সবচাইতে ভালবাসার, আনন্দের, গর্বের। কোনকিছু এর পরিবর্তন ঘটাতে পারবেনা!’ শুধু এ মেসেজ এবং সেই অনুযায়ী কাজ তাদের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। জীবন সম্পর্কে ভালবাসা সম্মান এবং স্পৃহা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। বাবা মা এক সাথে বাস করছেনা জন্য তাদের দুঃখ থাকতে পারে কিন্তু জীবন এবং বাবা মাকে তারা ঘৃণা করে বড় হবে না।

এটা না করে আমরা যেটা করি সেটি হলো, নিজেদের সংঘাতে তাদেরকে ইনভ্লভ করে নিজেদের কাসুন্দি তাদেরকে শুনাতে বাধ্য করি। পার্ট নেওয়ার জন্য বাধ্য করি। তারা সেটা না নিলে নিজেদের জীবন ব্যর্থ মনে করে কান্নাকাটি করে তাদেরকে ব্লেইম তাদের জীবন অতিষ্ঠ করি। অথচ বিবেক দিয়ে ভেবে যদি দেখি তাহলে বুঝবো তারা বাবা মায়ের বিচারক নয়। সমস্যাগুলো তাদের নয়। বাবা মায়ের পারস্পেক্টিভে এসে সেটা দেখতে তারা সক্ষম নয়। বাধ্য নয়। এবং দেখার কোন কারন নেই। তাদের দু প্যারেন্টসের প্রতি সমান ভালবাসা এবং লয়্যালটি। বরং সেখানে তাদের সহায়তা করলে তারা বাবা মা যেখানেই থাকুক তারা শ্রদ্ধা করবে। ভালবাসবে।

যেকোনো অবস্থায় সন্তান চায় বাবা মায়ের ভালবাসা আন্ডারস্টান্ডিং। বাবা মা তাদের সিদ্ধান্তের অপরিহার্যতা ট্রান্সপারেন্টভাবে বুঝিয়ে বলতে পারলে তারা বুঝবে। প্রাথমিক কষ্টকে পার করে বাবা মায়ের সাথে এক নতুন প্লাটফর্মে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদেরকে পাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

সব নতুনই মানুষের জন্য বিপত্তির হয়ে এসেছে। বুদ্ধিগুনে মানুষ তাকে জয় করেছে। মানুষ নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। নতুন আত্মিয়তার সাথে আত্মিয়তা গড়েছে। নতুন স্বজন তৈরি হয়েছে। মানুষের সম্পর্কের ডিজাইন বদলেছে। আত্মিয়তার সংজ্ঞা বদলেছে। পরিবারের সংজ্ঞা বদলেছে। হরাইজন পরিবর্তিত বিস্তৃত হয়েছে। ভালবাসা শ্রদ্ধা এবং উদারতায় মানুষ সম্পর্কে হিংস্র নয়, বিদ্বেষ পরায়ণতার উরধে উঠে সম্পর্কে সমৃদ্ধ হয়েছে। সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করেছে।

নারী পুরুষের জন্য বিচ্ছেদ সব সময় আকাশ ভেঙে পড়া নয়, বরং জীবনকে রক্ষা হিসেবেও দেখতে শেখাটা একটি অর্জন। যে জীবন নিঃশেষ হতে বসেছিল তার একটি নতুন শুরু। নতুন অধ্যায়, একটি নতুন পথচলা। এটি ধ্বংস নয়। সৃষ্টির সম্ভাবনা।

বিবাহবিচ্ছেদ সে কারনে সব সময় কেবল বেদনার নয়। সুখী বিবাহবিচ্ছেদ এবং সফল প্যারেন্টহুড প্রকৃতপক্ষেই ‘মিথ’ নয়।
সকল সীমাবদ্ধতার বসবাস আমাদের মনে।

শেয়ার করুন: