‘ঈশ্বর’ পুরুষের ভণ্ডামিই যখন বৈধ

ফারজানা জহুরা আকসা:

শোনরে অপু, তোরা যতোই শাকিবদের জন্য কান্দবি, শাকিবরা ততোই বুবলিদের জন্য পাগল হবে। বৌ-বাচ্চা ফেলে “ঈশ্বর পুরুষ” যখন নতুন শরীরের গন্ধে খুঁজে, সমাজ তখন সেই প্রেমকে “মহান” “শাশ্বত” নাম দিয়ে কাব্য রচনা করে। সেই স্বার্থপর শরীরভিত্তিক প্রেমকে “ভালোবাসা” নাম দেয়। যেখানে মূল্যবোধ আর দায়বদ্ধতা কিংবা মানবিকতার কোনো স্থান থাকে না।

কী বিখ্যাত, কী অখ্যাত, বাড়ির অল্পবয়সী কাজের মেয়ে আকলিমার স্বামীও যখন তাকে আর তিন বছরের ছেলেকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে, তখনও আমি অবাক হই না। টিভিতে কতো প্রেমের নাটক দেখি। কি প্রচণ্ড প্রেমরে বাবা! যেখানে চার বাচ্চার মাকে ফেলে কচি শরীরের মোহ বেশি! কী মহান সেই প্রেম! সমাজও তা ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে চুপ করে যাই। অল্পবয়সী নতুন বৌয়ের সে কী মিথ্যা প্রেমের অহংকার!

মূল্যবোধহীন এই সমাজ, কখনও দেখবে না তোদের আত্মত্যাগ। কখনও বুঝবে না ভেতরের রক্তক্ষরণ। মাতৃত্বের মহান কাঠগড়ায় তোদের দাঁড় করাবে। তোর মাতৃত্বকে বারবার প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে। তুই যতোই কলিজা কেটে বাচ্চারে খাওয়াস না কেন, তুই হইলি ডাইনি। তোরাই হইলি রাক্ষুসি।

বাচ্চা পেলে, বাসাবাড়ি কাজ করে, কিংবা সংসারের সকল দায়দায়িত্ব বহন করেও নারী কখনও ঈশ্বর হতে পারে না। বাড়ির বাইরে থাকা, সংসারের খোঁজ খবর না নেয়া পুরুষই এই সমাজের ঈশ্বর।

কারণ সে পুরুষ! সে পিতা! হোক সে বিশ্ব প্রেমিক। তার দায়িত্ববোধ না থাক। তবুও সে ঈশ্বরের রূপ। তার বিরুদ্ধে তুই দাঁড়াস কিভাবে? দুনিয়াতে ক্ষমতা যার, সম্মানও তার। হোক সে প্রতারক স্বামী, ফালতু পিতা। তবুও সেই মহান পুরুষ।

সে তো প্রেমিক পুরুষ! প্রেম কি কোনো নিয়ম মানে? তাই পুরুষ বারবার প্রেমে পড়বে। চকচকে মলাটে সেই প্রেমের বই আর নাটক বিক্রি হবে। সবাই চোখ ভিজিয়ে সেই ভালোবাসাকে মেনে নিবে। আর সুখের ঢেকুর তুলবে।

তুই আর তোরা মুখ খুলতে পারবি না। কী সমাজ! কী বুদ্ধিজীবী নারী! সবাই ঐ প্রতারক স্বামীর প্রেম নিয়ে মহান উক্তি দিবে। তোদের সংসার ধর্ম পালনের ব্যর্থতার গীত গাইবে। মানুষের তো রুচি পাল্টাবে, তাই প্রেম পাল্টাবে। একটি বৌকে কেন সারাজীবন ভালোবাসতে হবে? তাই পুরুষের দরকার অনেক বৌ আর রক্ষিতার। কী হুজুর, কী বুদ্ধিজীবী পুরুষ, সবাই সেই প্রেমের বৈধতা দিয়ে দিবে।

ঈশ্বর পুরুষ দুনিয়াতে থাকে। সমাজই এই প্রতারক প্রেমিক আর দায়মুক্ত বাবাদের ঈশ্বর বানায়। কী আস্তিক, কী নাস্তিক! সবাই ঈশ্বর পুরুষে বিশ্বাসী।

ঈশ্বর পুরুষ আসলেই ঈশ্বর। তার প্রতারণাও প্রেম! তার লোভও ভালোবাসা! তার ভণ্ডামি পূজনীয়!

শেয়ার করুন: