নারীবাদ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের যৌন স্বাধীনতা

কাজল দাস:

বাংলাদেশে যারা নারীবাদ চর্চা করছেন ও নারীবাদী লেখা লিখছেন, তারা নাকি মূলত সেক্সুয়াল ফ্রিডম বা যৌন স্বাধীনতাকেই সবচেয়ে বেশি মেইনস্ট্রিমিং করছেন। তারা নাকি নিজেদের যৌনতা ছাড়া আর কোনো কিছুর কথা বলছেন না। নিজেদের শরীরকে উপস্থাপন করা ছাড়া তারা নাকি আর কোনো উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু নিয়ে লিখছেন না। এমনকি এটিও বলা হচ্ছে যে, কোনো নারী কিভাবে কাপড় পরবেন, কিভাবে ঘুরবেন, কার সাথে সঙ্গ ও সঙ্গম উদযাপন করবেন, তিনি চরম পুলক (orgasm) লাভ করতে পারলেন, নাকি পারলেন না, সেটিই নাকি এখানকার আলোচনার মূল বিষয়।

যারা এই অভিযোগ করছেন এদের দলে যেমন পুরুষ রয়েছেন, তেমনি নারীরাও রয়েছেন। এমনকি নিজেকে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বা উদারনৈতিক বা প্রগতিশীল বলে দাবি করা লোকেরাও রয়েছেন-যারা মনে করছেন যে নারীরা শুধুই কার সাথে সেক্স করা যায় বা কিভাবে নিজের এই ইচ্ছাকে পূরণ করা যায় তা নিয়েই কথা বলছেন। তারা এই কথা বলার সময় প্রথিতযশা মনীষীদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছেন।

কেউ বলছেন বিদ্যাসাগরের চাওয়া নারীবাদে এসব ছিল না। রোকেয়ার নারীবাদে এইসব ছিল না। সুফিয়া কামালের নারীবাদে এসব ছিল না। তারা বলছেন-নারীদের এইসব দাবি-দাওয়া নাকি তৃতীয় প্রজন্মের নারীবাদে (third wave feminism) থেকে এসেছে। তৃতীয় প্রজন্ম নাকি এসব চাওয়া উস্কে দিয়েছে। এই নারীবাদ নাকি তৃতীয় প্রজন্মের দ্বারা দুষ্ট নারীবাদ!

অবশ্য গোটা নারীবাদের ষোল আনার চৌদ্দ আনাই একটি পশ্চিমা ধারণা বলেই এই দেশে মনে করা হয় এখন পর্যন্ত। এমনকি খুব দুঃখের বিষয় হলো-এই দেশে নারীর স্বাধীনতা চাওয়াকে পশ্চিমের সাথে তুলনা করা হয়। কোনো নারী যদি স্বল্প কাপড় পরেন, তাহলে তাকে বলা হয় এটা পশ্চিম চল, এটি এখানে বেমানান। যদি কেউ যৌন স্বাধীনতা নিয়ে মুখ খুলেন, তাহলে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হয় -এটি রক্ষণশীল সমাজ। এখানে যা খুশি তা বলা যাবে না।

আমার বোধগম্য হয় না-তারা যখন এসব উদাহরণ দেন তখন তারা এটি কেন বলেন না যে- তোমরা নারীরা পশ্চিমের মতো এদেশেও সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিয়ে যাও। রাতের রাস্তা-ঘাটে তুমি নিরাপদ, যেমন ইচ্ছা সেভাবে চলো। তোমার বয়স হলেই তুমি বিয়ে করো-এটা নিয়ে আমাদের মাথা-ব্যথা নেই। তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি তাকেই বিয়ে করো। সন্তানটা তোমার নিজের ইচ্ছাতেই নাও; এটা তোমার নিজস্ব বিষয়। আগে তুমি নিজের পড়ালেখা করে ক্যারিয়ার গুছিয়ে নাও, দেন বিয়েটা করো। কিংবা কোনো নারী যখন বিয়ের পর বুঝতে পারে ঐ লোকের সাথে সে সহাবস্থান করতে পারবে না, তখন তাকে বলা হয় না যে-তুমি আপাতত তাকে ছাড়াই থাকো। কিছুদিন আলাদা থেকে চিন্তা করো। যদি না ফিরতে না পারো, তাহলে সম্মানজনকভাবে বিদায় নাও।

আমরা তাকে বলি না-এটা সম্পূর্ণ তোমার বিষয়। উলটো বলি-চেপে থাকো, মুখ বুঁজে থাকো, পরিবারের মান-সম্মানের ব্যাপার এখানে জড়িয়ে আছে। আমরা নারীর কাপড় পরা বা যৌন ইচ্ছাকে যতটা পশ্চিমা ছাঁচে ফেলে ঢালাই করে মাপি, ততটা অন্যকিছু মাপি না। আমরা বরং তখন তার উপরে একটি পিতৃতান্ত্রিক বংশ আর পরিবারের ঐতিহ্য আর উত্তরাধিকারের দায় চাপিয়ে দেই। যারা এখন নারীবাদীদেরকে যৌন স্বাধীনতার জন্য অভিযুক্ত করছেন, তাদের সাথে এইসব প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের মিল রয়েছে।

এদেশে এখন নারীবাদ খুব বিকশিত হচ্ছে, বিকশিত হবার কারণে তাকে সবাই খুব মাপজোক করছে। নারীবাদী শুনলে সবার হাতে একটি বাটখারা চলে আসে। নারীবাদ এটি না, নারীবাদ ঐটা না, এসব কথা আসে মজ্জাগত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে। নারীবাদী আদর্শ যদি কাউকে খুন না করে বা কারো অনিষ্ট না করে, তাহলে সে তার ইচ্ছামতো বিকশিত হতে পারে। কেউ চাইলে নিজের যৌন স্বাধীনতার জন্যও নারীবাদের বিকাশ ঘটাতে পারে। যৌন স্বাধীনতার জন্য নারীবাদ কেউ চাইলে আমাদের সমস্যাটি কোথায়? সমস্যাটি চিন্তায়। প্রায় পাঁচ হাজার বছরের ভগ্ন আর অসুস্থ মানসিকতায়।

আমরা যদি মানব সমাজের সমাজের যৌনতার ইতিহাসকে আলোচনা করি, তাহলে দেখা যাবে-ইতিহাসের একটি পর্যায়ে এসে নারীকে যৌনতার কারণে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। তার পুনরুৎপাদনের ভূমিকার জন্য যে বিশেষ শ্রম বিভাজন সমাজে দেখা দিয়েছিল এটিই তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। নারী যখন থেকে সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেই সময় থেকে তার যৌনতাও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

যৌনতার ইতিহাসে বিয়ে কাঠামো স্থির হবার প্রধান কারণই ছিল নারীর যৌনতাকে একক পুরুষের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। ইতিহাসের সব জায়গায় দেখা গেছে- কোনো পরাজিত রাজ্যে নারীরা যুদ্ধবন্দী হিসেবে অন্যান্য ভূমিকার সাথে যৌন ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। নারীদাস যে অর্থে যৌন ও শারীরিক নির্যাতন ভোগ করেছে-পুরুষ দাসকে সে অর্থে তা করতে হয়নি। সমাজে পতিতাবৃত্তির যে ইতিহাস সেখানেও দেখা যায়-ধর্মীয় উৎসর্গের জন্য মন্দিরে নারী ভোগ অথবা জীবিকার দায়ে নারীকে বিক্রি করা হয়েছে। নতুন কোনো বন্দরে নারীকে কেনা-বেচা হয়েছে তাকে দিয়ে যৌন ভূমিকা পালন করার জন্য।

সমাজে যত এগিয়েছে ততই নারী-পুরুষের যৌন ভূমিকাতে নারী হয়ে পড়েছে খুব নিষ্ক্রিয়, আর পুরুষ সেখানে হয়েছে সক্রিয়। আদমের পৃথিবীতে আসাকে মনে করা হয়েছে নারী হাওয়ার পাপের ফল। নারীর পাপ হলো তার সাথে পুরুষের যৌনক্রিয়া। আদম-হাওয়ার সঙ্গমে লিঙ্গক্রিয়া থাকলেও পাপের দায়টা হাওয়ার যোনির একা। হিন্দু পুরাণে ছিল-অপ্সরারা। ঋষিদের ধ্যানভঙ্গ করার জন্য ছলনাময়ীর কাজটা অপ্সরাদের দিয়ে করা হতো। শুধুমাত্র যৌন কারণে নারীই হয়ে উঠেছে রাজা আর বাদশাহদের উপঢৌকন। হেরেম খানায় থাকা শ’য়ে শ’য়ে নারীকে নিজের জীবন আর যৌন ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে কেবলমাত্র একজন পুরুষের কর্তৃত্বের জন্য। নারী ও পুরুষের যে যৌনতার ইতিহাস সেটা হলো নারীর অবদমিত যৌনতার ইতিহাস। এই ইতিহাস এখন যখন ভাঙ্গার সময় এসেছে, তখন বেঁকে বসেছে পুরুষতান্ত্রিক বিবমিষা।

যারা নাওমি ওলফের ভ্যাজাইনা বইটি পড়েছেন-সেখানে দেখতে পাবেন, শুধুমাত্র যৌনতার কারণে নারীর যোনির উপস্থাপন কীভাবে ঘটেছে সমগ্র ইতিহাসে। একসময় যে যোনি বিস্ময়ের কারণে পূজিত হয়েছে তাকেই আবার দণ্ডিত করা হয়েছে। যোনি শরীরের একটি অঙ্গ ছাড়া কিছুই নয়। অথচ ইতিহাসে তার উপস্থাপন ঘটেছে ভয়াবহভাবে। নাওমি উলফ তার বইয়ে এসব বিষয়ের বিস্তার আলোচনা করেছেন। পুরুষের লিঙ্গের ভূমিকা যুগে যুগে স্থির থাকলে নারীর যোনির ভূমিকা ছিল পরিবর্তিত। আদিম মানুষের সরল চিন্তার কারণে জন্ম হয়েছে রহস্যময় যোনির। এই যোনিকে পূজা করা হতো। এই একই যোনি যুদ্ধের সময় বন্দি হবার কারণে ট্রমাটাইজড হয়েছে। ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। সকল যুদ্ধেই নারীর উপরে যত আঘাত হয়েছে, তার সবই হয়েছে যোনিগত কারণে আঘাত। একাত্তরের যুদ্ধে এই দেশের নারীদের সাথে কী করা হয়েছিল?

এই যোনিই আবার মধ্যযুগে এসে হয়েছে নানান অধ:স্তনের শিকার। মধ্যযুগের যোনি ছিল সাবজুগেটেড যোনি। এটি নারীর শরীরের অঙ্গ হলেও তার উপর মালিকানা চেপে বসেছিল চার্চের। আরবে সেটা হয়েছে মসজিদের। আর ভারতবর্ষে মন্দির আর পুরোহিতের। গোটা ইউরোপের আদি থেকে শেষ সময়কালের মধ্যযুগ পুরোটাই নারীকে ‘ডাকিনী’ মনে করেছে যোনির কারণে। মধ্যযুগের খ্রিশ্চিয়ানিটির ক্যালেন্ডারে বছরের ৪০% সময় নারীর সাথে যৌন মিলন নিষিদ্ধ ছিল। কারণ যোনি আর যৌন ক্রিয়া অপবিত্র।

এমনকি মধ্যযুগের গোঁড়ার দিকে জন্ম দেয়া হয়েছিল ‘ভাইটাল হিট’ তত্ত্বের। যার জনক ছিলেন বিখ্যাত রোমান দার্শনিক ক্লদিয়াস গ্যালেন (১২৯-২১০)। পরবর্তীতে এই তত্ত্বকে বিকশিত করেছেন আরেক দার্শনিক থমাস ল্যাকুয়ের। এই তত্ত্বের মূল কথাই ছিল – সন্তান জন্মের মূল কারণ হলো-নারী আর পুরুষের মধ্যকার স্পার্মের গলন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া। গলন সম্পন্ন না হলে সন্তান জন্ম হয় না, এটিই তার মূল কথা। গ্যালেনের ভাইটাল হিটের তত্ত্ব অনুযায়ী মনে করা হতো-পুরুষের উত্তাপ তৈরির করার ক্ষমতা বেশি, তাই তার লিঙ্গ বাইরে প্রসারিত। অপরদিকে নারীর শীতলতা বেশি তাই তার লিঙ্গ ভেতরে থাকে। নারীর যোনি হলো ভেতরে থাকা লিঙ্গ। এসব ধারণার উপর ভিত্তি করে নারীকে শারীরিক কারণে অপূর্ণাঙ্গ বা অবিকশিত হিসেবে চিন্তা করা হয়েছে। এবং এইসব চিন্তা ভিক্টোরিয়ান যুগ পর্যন্তও সমাজে শক্তিশালীভাবে প্রচলিত ছিল। এমনকি নারীরা যোনিগত কারণে বিকশিত এই চিন্তা থেকে বের হতে পারেননি মহামতি ফ্রয়েড নিজেও। তিনিও বলেছেন-বালিকা হলো বালকের ‘মিসিং’। কারণ তার লিঙ্গ নেই। তার বাইরে প্রসারিত কিছু নাই। এটাই ঐতিহাসিক ইলেক্টা কম্পলেক্স।

এই আধুনিক যুগে এসেও যোনির ভিন্ন ভূমিকা বদলায়নি। আজকের দিনের লিবারেটেড নারীর যোনিকে দিয়ে সবচেয়ে বড় ইন্ড্রাস্ট্রি খোলা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে পর্নো ইন্ড্রাস্ট্রি। যোনিকে দিয়ে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আধুনিক যুগের লিবারেটেড যোনি এখন বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় ট্রেড মার্ক। গোটা ইতিহাস জুড়ে নারীর যোনি ভূমিকাকে যত পরখ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, পুরুষের লিঙ্গকে তা করা হয়নি। সেই যে কবে থেকে লিঙ্গের ভূমিকা পূজিত হয়েছিল, সেই থেকে আজ অব্দি সে পূজনীয়। আজকের দিনে এসে যারা নারীর যৌন স্বাধীনতাকে মেনে নিতে চায় না। মেনে নেয়ার কথা এলেই যারা বেঁকে বসেন, তারা আসলেই নিজের লিঙ্গের সেই পূজনীয় ভূমিকাকেই ধরে রাখতে চান।

শুরু করেছিলাম নারীবাদ দিয়ে, তা কী করবে সেটা নিয়ে। নারীবাদ কী করবে সেটি সর্বজনবিদিত না হলেও এটি ঠিক যে, নারীবাদ নারীর নিজের কথা বলবে। সে তার অর্থনৈতিক অধিকারের কথা বলবে। সেইসাথে কথা বলবে তার যৌন অধিকার নিয়েও। সমাজ তাকে অর্থনৈতিক অধিকার যদি দিতে চা,য় তাহলে তার যৌন অধিকারও দিতে হবে। কারণ নারীর সকল বঞ্চনার মতো তার শরীরও বঞ্চিত। সে সুখ থেকেও যেমন বঞ্চিত হয়েছে; তেমনি তাকে ক্ষত বিক্ষতও করা হয়েছে যৌনতার দিক থেকে। সমতার অধিকারের সাথে অর্থনৈতিক মুক্তি যেমন জড়িত, তেমন নারীর যৌন অধিকারও যুক্ত রয়েছে। তার এই ভাষাকে বলতে দিতে হবে।

প্রথম প্রজন্মের নারীবাদ কথা বলেছে নারীর অধিকার নিয়ে, তার ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার নিয়ে, কাজের অধিকার নিয়ে। দ্বিতীয় প্রজন্মের নারীবাদ কথা বলেছে- তার কাজের স্বাধীনতা নিয়ে, পরিবারের ভূমিকা নিয়ে, কীভাবে সে সন্তান নেবে বা পালন করবে সেটি নিয়ে। আর এখন তৃতীয় প্রজন্মের নারীবাদ কথা বলছে নিজের শরীর নিয়ে, যৌনতার অধিকার নিয়ে। সে চাচ্ছে সকল প্রকার অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক বন্দিত্ব থেকে নিজের যৌনতাকে মুক্ত করতে।
সে জোরালোভাবে লিঙ্গ সমতা নিয়ে কথা বলছে। এটি নারীবাদী আন্দোলনের চলমান অগ্রযাত্রা, এটি তার যাত্রা বিকাশের পরিচায়ক।

রোকেয়া যেভাবে কথা বলেছেন বা সুফিয়া কামাল যেভাবে কথা বলেছেন-নারীবাদ সব সময় সেই ভাষাতেই কথা বলবে না। যোগসূত্র স্থাপন করে নারীবাদী আন্দোলন এগিয়ে যাবে এটিই স্বাভাবিক। আগে নারীরা এইদেশে যৌন অধিকার চায়নি, এখন চাচ্ছে। এটি সময়ের দাবি। বাস্তবতাকে পুরষতান্ত্রিক রক্ষনশীলতা দিয়ে আটকে ফেলার কোনো সুযোগ নাই। ইউরোপে যখন ১৯৬০ এর দশকে নারীর শরীর আর যৌনতা নিয়ে আলোচনা করে তাদের দাবি দাওয়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, স্বীকৃতি হয়ে গেছে সেখানে এদেশে এইসব আলোচনা এখন মাত্র শুরু হয়েছে। এই আলোচনা চলুক।

যারা বলছেন নারীবাদ শহুরে নারীতে আটকে আছে, পোশাকি নারীতে আটকে আছে; তারা এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। এইদেশে অর্থনীতির একটি অসম বিকাশ ঘটেছে। এখানে গ্রামের পুরুষের যেমন গরীব, তেমনি নারীও। এইদেশে শহরের পুরুষ যেমন এগিয়ে, তেমনি নারীও এগিয়ে। অবিকশিত পুজিবাদ আর কদর্য নগরায়নের ফলে যে নারীরা এগিয়ে এসেছে তারা যদি যৌন স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলে সেটি দোষের না।

একদিন গ্রামের নারীরাও তার সাথে যুক্ত হবে। সকল নারীর সমস্বরে কথা বলাটা যেমন একসাথে হয়ে উঠে না, তেমনি সবাই মিলে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলাটাও হয়ে উঠে না। শ্রেণির বিভাজন সব জায়গায় আছে। আবার বিভাজিত শ্রেণির ভেতরে এগিয়ে থাকা নারী যৌন স্বাধীনতার বিষয়কে এগিয়ে নিলে তার সুফল প্রান্তিক নারীরাও ভোগ করবে। একইভাবে সমাজের মুক্তির বিষয়টাকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়ে উঠবে দীর্ঘদিন বন্দি থাকা নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক।

শেয়ার করুন: